সহেলী চক্রবর্তী, ফিচার রাইটার, কলকাতা:

আসামের বাঙালি আসামে বহিরাগত, সব পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে দেশ ভাগের পর এসেছে- এই তথ্যকে পরিবেশন করা হচ্ছে। কিন্তু এই তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। আসাম প্রদেশ পুনর্গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে। অবিভক্ত গোয়ালপাড়া, কাছাড় সবই ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অংশ। আসাম প্রদেশের রেভিনিউ কম ছিল। রেভিনিউ বাড়াতেই ব্রিটিশ সরকার বাংলার একটা অংশকে আসামে জুড়ে দেয়। তাই আসামের জন্মলগ্ন থেকেই বাঙালি আসামে ভূমিপুত্র। অসমিয়াদের কথামতো অসমিয়ারা 'খিলঞ্জীয়া', আর বাঙালি 'ঘুসপেটিয়া' - এটা শুধু মাত্র মিথ্যে প্রচার। ঐতিহাসিক সারবত্তা নেই। অন্যদিকে তাই অহমরা (অসমিয়া) আসামে আসে বর্মা থেকে আনুমাণিক ১২০০ সালে। বাঙালি তো তার আগে থেকেই বসবাস করছে।

১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় ভারতের কোথাও গণভোট হয়নি। কিন্তু আসামের সিলেটে রেফারেন্ডাম হয়। আসামের কংগ্রেস নেতা গোপীনাথ বড়দলৈ চেয়েছিলেন আসামের বাঙালি অধ্যুষিত পুরো এলাকা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাক। গণভোটে বোঝাপড়া হয়, মুসলীম লীগের সাথে। এমনকি চা বাগানের শ্রমিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ৬ ই জুলাই ১৯৪৭ সালে সিলেট গণভোট হয়। ফলে গট-আপ করা গণভোটে একটা বড় বাঙালি এলাকা পুর্ব পাকিস্তানে চলে যায়, যা আজ বাংলাদেশের সিলেট। গণভোটের আগের দিন রাত্রিবেলায় লাইন এঁকে দেন র‍্যাডক্লিফ। তারপর দেশভাগের পর সিলেট এবং পূর্ব বাংলা থেকে মানুষ এসেছেন আসামে। যেটা খুবই স্বাভাবিক। 

যেটুকু বাঙালি এলাকা আসামে ছিল দেশভাগের পর সেটুকুও আসাম থেকে কেটে বাংলায় জুড়ে দিতে গোপীনাথ বড়দলৈ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে চিঠি লেখেন। এতটাই বাঙালি বিদ্বেষ!  আসাম শুধুমাত্র অসমিয়াদের হবে- এই ছিল পরিকল্পনা। তিনি লেখেন-

‘Maulana Sahib (e.g. Azad) seemed to come to the conclusion that the only alternative to this state of things is to separate the Bengali district of Sylhet and a portion of Cachar from Assam and join these with Bengal – a consummation to which the Assamese people are looking forward for the last 70 years.’

সেই তখন থেকেই অব্যাহত বাঙালি বিদ্বেষের ধারা। প্রথমে সিলেট গণভোটে চক্রান্ত করে আসামের বাঙালি অধ্যুষিত বড় অংশকে জুড়ে দেওয়া হল পূর্ব পাকিস্তানে। তারপর পঞ্চাশের দশকে গোপীনাথ বড়দলৈর নেতৃত্বে আসাম থেকে বাঙালি খেদাও অভিযান শুরু হল, যা 'বঙ্গাল খেদা' নাম কুখ্যাত।

তারপর ১৯৬১ র সেই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে মিছিলে চলল গুলি। জাতিবাদী আসাম পুলিসের গুলিতে শহীদ হলেন ১১ জন বীর বাঙালি, পৃথিবী পেল প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ, নাম কমলা ভট্টাচার্য। 

তারপর বারেবারে বাঙালি ভাষার কারণে খুন হয়েছে আসামে। সত্তর ও আশির দশকে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে আসাম। আসুর নেতৃত্বে বাঙালি বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে আসামে। ১৯৮৩ সালে নেলীতে হাজার হাজার মুসলমান বাঙালির রক্তে লাল হয়ে যায় আসাম, ১৯৮৬ তে শিলাপাথরে হয় হিন্দু বাঙালি গণহত্যা। 

এরই মাঝে ১৯৮৫ সালে যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় আসামে, তা আসামে বাঙালিকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দেয়। রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকার, আসাম সরকার এবং আসুর মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়, যা 'আসাম চুক্তি' নামে পরিচিত। বাঙালি চুক্তির কোনো অংশ ছিল না, অথচ আসামে বাঙালি প্রায় ৪০%. আসামের ভূমিপুত্রদের অধিকার সুরক্ষিত করতে বাঙালিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে দেওয়া হল। অথচ আসামে বাঙালি ভূমিপুত্রই। 

১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ এক্টে ২০০৩ সালে পরিবর্তন করেন অটল বিহারী বাজপায়ী। ২০০৩ সালে এই সিটিজেনশিপ এক্টের ক্লজে পরিবর্তন এবং আসাম চুক্তির মিলিত কারণে আসামে এন আর সি (National Register of Citizens) আসে। এন আর সি র মূলেই আছে আসাম তথা ভারত থেকে বাঙালিকে তাড়ানোর চক্রান্ত। ইতিহাস তাই বলে। অভিজিৎ শর্মার ফাইল করা PIL এর ভিত্তিতে সুপ্রীম কোর্ট আসামে এন আর সি নবায়ণের নির্দেশ দেয়। ১৯৭১ সালের ২৪ শে মার্চ মধ্যরাত্রির আগে থেকে যারা ভারতে বসবাস করছেন, তারাই বৈধ ভারতীয়। এই প্রক্রিয়ায় ধরে নেওয়া হচ্ছে একজন মানুষ বিদেশী, তাকে বৈধ ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে হবে।

এন আর সি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে বৈধ ভারতীয় প্রমাণ করতে দরকার হয় ৪০-৫০ বছর আগেকার নথি। ১৯৭১ সালের আগের জন্ম শংসাপত্র, স্কুলের শংসাপত্র,  LIC র নথি, ১৯৫১ র অসম্পূর্ণ এন আর সি লিস্টে নাম, রিফিউজি সার্টিফিকেট, ১৯৭১ সালের ভোটার লিস্টের নাম, জমি-বাড়ির দলিল ইত্যাদি ডকুমেন্টস দিয়ে বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যায়।  প্রথমে একজনকে প্রমাণ করতে হবে বাবা/দাদু ভারতে ১৯৭১ র আগে ভারতে বসবাস করতেন বা নিজেই ১৯৭১ র আগে থেকে ভারতে বসবাস করছেন। পারিবারিক যোগসূত্র প্রমাণ করতে হবে এবং নিজের সব প্রমাণ পত্র দিতে হবে সাথে। এই কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে একজনকে। কজন মানুষের কাছে ১৯৭১ র আগেকার সব ডকুমেন্ট আছে? থাকা সম্ভবও না। অসমিয়াদের কাছেও থাকা সম্ভব না। কিন্তু  OI (Original Inhabitant) এবং NOI (Non Original Inhabitant) ক্যাটেগোরি তৈরি করা হয় অসমিয়াদের বাঁচাতে। পদবী দেখে দেখে অসমিয়াদের OI (ভূমিপুত্র) বলে বাঁচিয়ে নেওয়া হয়, তাদের এসব ডকুমেন্ট দেখাতে হবে না। বাঙালিকে দেখা হচ্ছে বহিরাগত হিসাবে। তাই বাঙালিকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এন আর সি আসলে যে বাঙালিকে ধ্বংসের জন্য আরও একবার প্রমাণিত।

এবার আসা যাক, এন আর সি কারণে বাঙালির বর্তমান অবস্থায়। গতবছর ৩০ শে জুলাই এন আর সি র দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়। যাতে নাম বাদ পড়ে ৪০ লাখ মানুষের, যার মধ্যে প্রায় ৩৮ লাখ বাঙালি। উল্লেখ্য, এই ৩৮ লাখ বাঙালির ৩০ লাখ হিন্দু বাঙালি এবং ৮ লাখ মুসলমান বাঙালি। অথচ এন আর সি র মাধ্যমে অবৈধ বাংলাদেশী মুসলমান তাড়ানো হচ্ছে এই অপপ্রচার করা হচ্ছে। আসলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির নাম বাদ গেছে, মুখের ভাষাই বাঙালির দুর্দশার মূল কারণ।

আসামে ৩৩ টি জেলা আছে। যে ১৬ টি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষের নাম এন আর সি তালিকা থেকে কাটা গেছে তার মধ্যে ১১ টি জেলা হিন্দু বাঙালি অধ্যুষিত এবং ৫ টি মুসলমান বাঙালি প্রধান জেলা।

গ্রহণ করা হয়নি বৈধ নথিপত্রও। 'টেকনিক্যাল রিজন', 'নো রিজন', 'সফটওয়ার প্রবলেম' ইত্যাদি হাস্যকর কারণে অসংখ্য বাঙালির নাম বাদ পড়েছে। বিভিন্ন ডকুমেন্টে শুধুমাত্র নামের বানান না মেলায় অনেকের নাম বাদ পড়েছে। একই পরিবারের কারোর নাম আছে, কারোর নেই। বাবা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পেরেছেন, ছেলে পারেনি- এমন দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু হাস্যকর ঘটনাও ঘটেছে। দ্বিতীয় খসড়া তালিকায় এভাবেই বাঙালিকে টার্গেট করে নাম কাটা হয়েছে। রিফিউজি সার্টিফিকেট প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর ফলে পূর্ব বাংলা থেকে আগত হিন্দু বাঙালিরা নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন। আসামের মুসলমান বাঙালির অধিকাংশই আসামের মাটিতে ৭০-৮০ বছরের বেশি সময় আছে। তাই তাদের নাম কম বাদ গেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাদের ১০০ বছর আগেকার নথিপত্রও গ্রহণ করা হচ্ছে না। এভাবেই টার্গেট বাঙালিরা। আসামে প্রায় প্রতি বছরই ভেসে যায় ঘর বাড়ি। সেখানে ৪০-৫০ বছর আগেকার নথি গচ্ছিত রাখা প্রায় অসম্ভব। এর ফলে বিপদে গরীব বাঙালিরা।

গত ২৬ শে জুন একটি এক্সক্লুসন লিস্ট প্রকাশিত হয়, যেখানে আরও ১ লাখ ২ হাজার বাঙালির নাম বাদ পড়ে এন আর সি তালিকা থেকে, যার অধিকাংশ হিন্দু বাঙালি।

বিদেশী সন্দেহে বাঙালিকে দেখে দেখে 'ডি ভোটারে'র নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, যাদের বিচার হয় ফরেন ট্রাইব্যুনালে। আসামের ২৮ টি জেলায় মোট ১০০ টি ফরেন ট্রাইব্যুনাল চলছে। ১৯৮৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ফরেন ট্রাইব্যুনাল গুলি ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ জনকে বিদেশী ঘোষণা করেছে। যে ১০ টি জেলায় সবথেকে বেশি বিদেশী ঘোষিত হয়েছে তার মধ্যে ৬ টি মুসলমান বাঙালি অধ্যুষিত এবং ৪ টি হিন্দু বাঙালি প্রবণ জেলা। নওগাঁ জেলায় সবথেকে বেশি বিদেশী চিহ্নিত হয়েছে। হিন্দু প্রবণ জোড়হাট, কাছাড়, ডিব্রুগড়, হোজাই আছে সামনের সারিতে। প্রসঙ্গত ফরেন ট্রাইব্যুনাল গুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক্স-পার্টি রায় দেওয়া হচ্ছে, কারণ বেশিরভাগ গরীব মানুষ জানেনই না, তাদের নামে ডি ভোটারের নোটিশ আছে। জানানো হয়ও না পরিকল্পনা করে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল উচ্চতর আদালতে ফরেন ট্রাইব্যুনাল গুলির রায় ৮০-৯০% কেসে মিথ্যে প্রমাণিত হয়। দুঃখের কথা কজন গরীব মানুষ উচ্চতর আদালতে মামলা লড়তে পারবেন? তার ফলে ভুগছে গরীব বাঙালি। ফরেন ট্রাইব্যুনাল গুলোয় বাঙালির সাথে অমানবিক ব্যবহার করা হয়, হেনস্থার শিকার হয় বাঙালি।

বিদেশী সন্দেহে বাঙালিকে ডিটেনশন ক্যাম্প নামক জেলে ঢোকানো হচ্ছে। যেখানে গত ৩ বছরে ৪৩ জন বাঙালির মৃত্যু হয়েছে। ক্যাম্পের অবস্থা ভয়াবহ, সেখানে মানবাধিকার কর্মী কিমবা সংবাদমাধ্যম সকলেরই প্রবেশ নিষেধ। ১০২ বছরের বৃদ্ধ চন্দ্রধর দাসকে টেনে হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৃদ্ধা মধুবালা দাসকে ৩ বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে রাখার পর নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তি পেলেন বন্দি যন্ত্রণা কাটিয়ে। ৫৪ বছর বয়সী রতন বিশ্বাস ডিটেনশন ক্যাম্পে গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে হাতে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়। কারগিল যুদ্ধে সেনানী সানাউল্লাহ খানকে বিদেশী সন্দেহে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। বিখ্যাত আইনজীবী ইন্দিরা সিং জসওয়াল তাঁর পক্ষে গুয়াহাটি হাইকোর্টে লড়েন এবং মুক্তি পান সানাউল্লাহ খান। তিনি মুক্ত হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পের ভয়াবহ বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন। 

বর্তমানে প্রায় হাজার খানেক বাঙালি ডিটেনশন ক্যাম্পে আছেন। বাড়ানো হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পের সংখ্যা, বরাদ্দ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। আসামে বিদেশী ধরার জোর আয়োজন চলছে।

এন আর সি এবং ডি ভোটারের কারণে প্রায় ৫৭ জন বাঙালি আত্মহত্যা করেছে, ৪০ জন বা তারও বেশি হিন্দু বাঙালি। হিন্দু বাঙালি কথাটা উচ্চারণের মূল লক্ষ্য এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা যে আসামে বাঙালি ধর্ম দেখে না ভাষা দেখে আক্রান্ত। বাঙালি হওয়াই অপরাধ। 

আগামী ৩১ শে জুলাই এন আর সি র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্র সরকার বা এন আর সি কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়া কে পিছিয়ে দিতে চায়, কারণ যাদের নাম এন আর সি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এমন ২০% মানুষের নাম রিভেরিফাই করতে চায় জাতিবাদীরা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, ক্লেইমস এন্ড অবজেকশন প্রক্রিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ বাঙালির নামে অবজেকশন দাখিল করেছে অসমিয়া জাতিবাদীরা। পরিকল্পনা করে অবজেকশনের নিয়ম পরিবর্তন করেছে এন আর সি কর্তৃপক্ষ।

এটাই আসামার বাস্তবতা। এখন দেখার এন আর সির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর বাঙালির ভবিষ্যত কোন পথে এগোয়। এন আর সি ছুট বাঙালির ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে তা ভবিষ্যত বলবে। কিন্তু এন আর সি যে আসামের বাঙালিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র তা জলের মতো স্পষ্ট। ইতিহাস ক্রমে যে বাঙালিকে শেষ করার যে খেলা চলছে, তা সম্পূর্ণ করা হচ্ছে এন আর সি নামক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours