মুসবা তিন্নি, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

মানুষ একবার জন্মে, একবারই মরে। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানের সময়টায় অধিকাংশ মানুষ নিজ ও নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। কিছু মানুষ থাকে ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমগণ সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, ধর্মের জন্য, মানবতার জন্য, ন্যায়ের জন্য তথা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যানকর কিছু মহৎ কর্ম করে যান । তাঁরা স্বমহিমায় ইতিহাসের বিষয়বস্তু হন, বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেন। শতাব্দীর মহাকাল পেরিয়েও তারা বেঁচে থাকেন । কর্ম তাদের অমরত্ব দান করেন। দেহ পরপারে যাবার পরও মানুষের হৃদয়ের গহীনে শ্রদ্ধায়, ভক্তিতে তাঁরা বেঁচে থাকেন শতাব্দীর পর শতাব্দী । বিশ্বময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব মহৎ মানুষদের জীবন, কর্ম, চিন্তা, বাণী, লেখনী নিয়ে যুগ যুগ ধরে গবেষকগণ গবেষণা করেন। অভিসন্দর্ভ রচনা করে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন ।
বাংলার প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নমাতা শেখ হাসিনা এমনই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। সবচেয়ে সংযমী ৫ বিশ্বনেতার একজন শেখ হাসিনা নাইজেরিয়ার সংবাদপত্র দ্য ডেইলি লিডারশিপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের অন্যতম সংযমী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বলে জানিয়েছে নাইজেরিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। তিনি তাঁর সময়কে, কাল কে, নিজ রাষ্ট্রের সীমানাকে অতিক্রম করে আজ এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, উন্নয়ন কর্ম, কল্যান সাধন এবং পরাক্রমশালী বিশ্ব মোড়লদের নিকট মাথা নত না করে সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ়চেতা পথ চলা তাঁকে সমকালিন বিশ্বে এক ভিন্ন মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে ।
হাইকমিশন জানায়, পাঁচজন বিশ্বনেতাকে নিয়ে ‘ওয়ার্ল্ডস মোস্ট অস্টিয়ার প্রেসিডেন্টস’ শীর্ষক একটি ফিচার প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে শেখ হাসিনার খুব সাদামাটা মাসিক বেতনের (৮০০ মার্কিন ডলার) বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে জানানো হয় যে ফোর্বসের ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী একশ নারীর তালিকায় তিনি ৫৯তম অবস্থানে আছেন। পত্রিকাটি আরও জানায়, শেখ হাসিনার সবচেয়ে অসাধারণ দুটি অর্জন হল তার নেতৃত্বের ভূমিকা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি ও ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের সফলতা ওয়েবসাইট।
১৭ মে বঙ্গবন্ধু-কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩ যুগ পূর্ণ হলো। এই তিন যুগ তিনি দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দলের সভাপতি। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে আজকের এই দিনে স্বজনহারা স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন এতিম, অসহায় শেখ হাসিনা। পিতা, মাতা, ভাই, ভাবী, স্বজন হারানোর সমুদ্রসম বেদনা বুকে পাথর চাপা দিয়ে তাঁকে দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। পদে পদে হত্যার লক্ষ্যে পরিচালিত হামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। নিজ দলে, নিজ দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জনতাকে সাথে নিয়ে বন্ধুর পথ চলতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার তিন যুগের অধ্যবসায়, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, দেশের মানুষ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি নিগূঢ় ভালবাসা, জ্ঞান অর্জন ও বিশ্রামহীন অমানবিক পরিশ্রম তাঁকে দলের গন্ডি পেরিয়ে দেশের, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও কল্যানের দক্ষ কারিগরের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি আজ ক্ষুধা মুক্তি, দারিদ্র্য মুক্তি, সন্ত্রাসবাদ মুক্তির দিশারী। উন্নয়ন ও কল্যানের রূপকার। এই তিন যুগের মধ্যে মাত্র এক যূগ এক বছর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। সরকার যায়, সরকার আসে, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী যায়, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী আসে। এটিই সত্য রীতি। কিন্তু শেখ হাসিনা বারবার আসেন না। তিনি একজনই এবং তাঁর তুলনা কেবলই তিনি। খুব কম রাষ্ট্রনায়কের পক্ষে তাঁর মত উন্নয়ন ও কল্যান করা সম্ভব হয়েছে এবং একটি বিশ্ব অস্থিতিশীল সময়ে নিজ দেশে শান্তি বজায় রাখা এবং সহযোগিতার বেশে এসে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে পেরেছন। বাংলাদেশ ও বাঙালির যতগুলো বড় বড় অর্জন তার অধিকাংশই হয় পিতার নেতৃত্বে অথবা কন্যার নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে।
বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন এ জাতির সবচেয়ে বড় ও মহত্ত্বম অর্জন। এরপরের সবচেয়ে বড় অর্জন সব মানুষের ভাত খাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন। এমনি আরও অনেক বড় বড় অর্জন রয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালির। যেমন: মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ, বিনা রক্তপাতে বিশাল সমুদ্র বক্ষে বাংলাদেশর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মহীসোপান পর্যন্ত একক অর্থনৈতিক অধিকার লাভ, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমানা বৃদ্ধি করন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গ্যারান্টি ক্লজ সহ গঙ্গা পানি চুক্তি সম্পাদন, তলাবিহীন ঝুড়ি অপবাদকারীদের মুখে ছাঁই দিয়ে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ সৃষ্টি, স্বল্পতম সময়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১.৫ গিগাওয়াটে উন্নীতকরন, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানী আয় ৩০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টির মাধ্যমে অসহায় সিনিয়র সিটিজেনদের বেঁচে থাকার পথ রচনা, গণতন্ত্রের ধারা নিরবিচ্ছিন্ন করন, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও বিজিবি, কোস্টগার্ডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে জাতীয় নিরাপত্তা সুসংহতকরন, পুলিশ বাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতকরণ ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা, তৃনমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ই-সেবা চালুকরন, সবার জন্য শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, ক্রিকেটের বিশ্বমর্যাদা লাভ, আইপিইউ ও সিপিএর মত মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ লাভসহ বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা লাভ বাঙালীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য অর্জন।
এছাড়াও মানবতার অন্যান্য প্রশ্নে, নিপীড়নের প্রশ্নে, শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নে শেখ হাসিনা বিশ্বনেতৃত্বের প্রথম কাতারে অবস্থান সৃষ্টি করে নিয়েছেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শতবর্ষী করলে এবং অসীম রহমতে তাঁকে কর্মক্ষম রাখলে তিনি এ পৃথিবীকে আরো অর্ধেক মহৎ কিছু দিতে পারবেন। ইতিমধ্যেই উন্নয়ন মাতার কর্মকৌশল নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বেড়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাঁর কর্মকৌশল অনুসরণ করা শুরু করেছে। তিনি বিশ্ব রোল মডেলে উন্নীত হয়েছেন।    
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এসব অর্জন এসেছে জাতির পিতার হাত দিয়ে, নয়তো তার আদরের কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। জাতির পিতার মৃত্যুর পর অনেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু কারও হাত দিয়ে বড় মাপের মহৎ কৌন অর্জন হয় নাই। এখানেই উন্নয়নমাতা শেখ হাসিনার বিশেষত্ব। শুধু দেশেই নয়, তার কর্ম, নেতৃত্ব ও সাহসিকতা আজ দেশের মানচিত্র অতিক্রম করে বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করেছে। আয়তনে ছোট, জনশক্তিতে বড় রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব জলবায়ু আন্দোলনের শীর্ষভাগে আসন নিয়েছেন। অভিবাসীর প্রশ্নে তিনি উচ্চকন্ঠ ও আপোষহীন। জঙ্গী সৃষ্টি ও জঙ্গী ইস্যু করে মুসলমান নিপীড়নের বিষয়ে বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম শাসক নিরব ও আপোষকামী। অকূতোভয় শেখ হাসিনা এই ইস্যুতেও সোচ্চার, উচ্চকন্ঠ ও প্রতিবাদী। মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে তিনি জঙ্গী উৎপাদন ও অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে নির্ভীক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের মুসলমান রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের মধ্যে মুসলমানদের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বাপেক্ষা সোচ্চার। তাঁর মত সাহসিকতা নিয়ে মুসলমানের পক্ষে আর কেউ বলেন না।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours