মুসবা তিন্নি, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:
কাশ্মীরকে
বলা হয় 'ভূস্বর্গ'। পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য যেন একাই ধরে আছে এই জনপদটি।
ছবির মতো সুন্দর রাজ্য কাশ্মীরের একটি গ্রামের নাম যে 'বাংলাদেশ' এই তথ্যটি
হয়তো জানা নেই অনেকেরই। কাশ্মীরের বিখ্যাত হ্রদ উলার তীরে অবস্থিত এই
গ্রামটির সৌন্দর্য কিন্তু কম নয়। তিন দিকে পানি আর একদিকে সুউচ্চ পর্বত,
সেই সাথে সবুজ প্রকৃতি আর বরফে অসাধারণ এক নয়নাভিরাম গ্রাম 'বাংলাদেশ'।
কাশ্মীরে
সবমিলিয়ে ২২ টি জেলা। শ্রীনগর থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে গেলে যে জেলা পড়বে
তার নাম বান্ডিপুরা। এই বান্ডিপুরা জেলার আলুসা তহশিলে একটি গ্রামের নাম
বাংলাদেশ। বিখ্যাত উলার হৃদের তীরে ভাসমান এই গ্রামে বাইরের লোকজনের খুব
একটা আনাগোনা নেই। বান্ডিপুরা-সোপুরের মধ্য দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে পাঁচ
কিলোমিটার হাঁটলেই দেখা মিলবে বাংলাদেশের, মানে ওই গ্রামের।
এই
গ্রামের নাম 'বাংলাদেশ' হওয়ার পেছনের গল্পটি বেশ করুণ। ১৯৭১ সালের ঘটনা।
সে বছর জুরিমন নামের এক গ্রামে কয়েকটি ঘরে আগুন লাগে। গৃহহারা হয়ে অসহায়
হয়ে পড়েন এই মানুষগুলো। পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে খানিকটা দূরে একটি ফাঁকা
জায়গায় সবাই নতুন করে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। সে বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতা
লাভ করে। একই সময়ে এই গৃহহীন মানুষগুলো তাদের নতুন জীবন শুরু করেন। দুঃসময়
মোকাবিলা করে জয়ী হওয়ার বাসনায় তারা তাদের নতুন গ্রামটির নাম রাখেন
'বাংলাদেশ'।
উলার হৃদের তীরে এই গ্রামটি সৌন্দর্যে
কিন্তু কম যায় না! চারদিকে জল, পেছনে সুউচ্চ পর্বত, সব মিলিয়ে অসাধারণ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে। কিন্তু, নাগরিক কিছু
সাধারণ সুবিধা এখনো ঠিক ঠাক ভাবে পৌঁছে না গ্রামবাসীর কাছে। তাই তারা কোনো
বিদেশি দেখলে আশ্চর্য হয়। আর বিদেশিরাও তো সেখানে যান কদাচিৎ।
মাত্র
৭ বছর আগে কাগজে কলমে পৃথক গ্রামের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। বান্ডিপুরার
ডিসি অফিস ২০১০ সালে এই আলাদা গ্রামের মর্যাদা দেন। ৫/৬ ঘর থেকে শুরু হওয়া
বাংলাদেশ গ্রামে এখন আছে পঞ্চাশেরও বেশি ঘর। তবে এই প্রজন্মের অনেকে
গ্রামটির জন্ম ইতিহাস জানেন না। এই গ্রামবাসীর প্রধান জীবিকা মাছ ধরা।
পাশাপাশি তারা পানি আর বাদাম সংগ্রহ করে থাকে।
ভাসমান
এই গ্রাম, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, কাশ্মীর সব মিলিয়ে যেন আশ্চর্য কাকতালীয়
যোগাযোগ! কোথায় যেনো একটা মায়া কাজ করে শুনলে। বিশেষ করে যে গ্রামটির জন্ম
একাত্তরে, স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি জন্মের বছরে! এই হিম শীতল
দিনে এই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেই ‘বাংলাদেশ’র বসিন্দাদের প্রতি অনেক
শুভকামনা। ভালো থেকো বাংলাদেশ, যুগ যুগ এমনকি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours