দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
শিক্ষক দিবসে সবুজের আহ্বানে নীল গ্রহের মানুষ।
পাঁড়ুই
থানার বাঁধনবগ্রাম গান্ধী বিদ্যাপীঠের ইংরেজি শিক্ষক তাপস সিংহ ও তাঁর
স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তোলা নাট্যগোষ্ঠী
"আবাহন" তুলে ধরছে সেই বার্তা, নীল গ্রহ অর্থাৎ পৃথিবীর কাছে। পরিবেশ
সচেতনতা মূলক এই নাটকের নাম " নীল রঙের গ্রহটি"। রচনা করেন শিক্ষক তাপস
সিংহ নিজেই।
আমাজন রেইন ফরেস্ট দাউ দাউ করে জ্বলছে!
আর এই ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে স্কুলের কিশলয়দের। ভাবিয়ে তুলেছে পাঁড়ুই
থানার বাঁধনবগ্রাম গান্ধী বিদ্যাপীঠের ইংরেজি শিক্ষক তাপস সিংহকে। একদিন
স্কুল ক্যাম্পাসে হল রিহার্সাল নাটকের।
ডেভিড
এটিনবোরোর তথ্যচিত্র "দ্য ব্লু প্ল্যানেট" সি লাইফকে তুলে ধরা হয়েছে।
স্কুল পড়ুয়ারা তা দেখেন নি ঠিকই। তবে আমাজনের রেইন ফরেস্টে বিধ্বংসী
অগ্নি কাণ্ডের খবর তাদের নখ দর্পণে। তাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সৌমিক
ঘোষ ও সিম্পা চট্টোপাধ্যায়রা বলে, আমাজনের রেইন ফরেস্টের কথা তারা তাপস
স্যরের কাছেই শুনেছেন ও বুঝেছেন প্রকৃতি এভাবে ধ্বংস হলে একদিন মানুষের
অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
নাটকের মহড়ায় দেখা গেল
স্কুল পড়ুয়ারা কেউ লতা পাতা দিয়ে সেজেছে গাছ। কেউ মাথায় সাপের মাথা
লাগিয়ে সেজেছে সাপ। আবার কেউ পাখনা লাগিয়ে কোন পাখি। কেউ আবার কাঠুরে।
যারা কুঠার হাতে গাছ কাটার দায়িত্বে। নাটকের মোচড় সেখানেই যেখানে জটা ও
কেষ্টর নামে দুই কাঠুরিয়ার আত্মোপলব্ধি। এ যেন রত্নাকরের বাল্মীকি হয়ে
ওঠার গল্প। অনাবৃষ্টির জন্য মানুষকেই দায়ী করে। তাদের মতো মানুষকে অকৃতজ্ঞ
বলে। সব কিছু উজাড় করে দিয়েও, তাদের কেটে ফেলার বিলাপ শোনা যায় তাদের
কন্ঠে।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শিক্ষক দিবসে
"নীল রঙের গ্রহটি" নাটক পরিবেশন করার জন্য সবাই মহড়ায় ব্যস্ত। দম ফেলার
সময় নেই কারোর। এই নাটকে রবি ঠাকুরের "খাঁচার ভিতর পোষা পাখি" কবিতার
কাহিনীর মত নাটকের সব চরিত্রই প্রকৃতির কথা বলে। আবার তারাই হয়ে ওঠে ছোট
গল্প বলাইয়ের শিমুল গাছের প্রতি ভালোবাসার জীবন্ত ছবি!
আর
এসবের কারিগর তাপস সিংহ। ২০০৫ সালে বাঁধ নবগ্রাম গান্ধী বিদ্যাপীঠে যোগদান
করেন। ছাত্র পড়ানো ছাড়াও, লেখালেখির ঝোঁক। আমাজন রেইন ফরেস্টে বিধ্বংসী
অগ্নি কাণ্ড তাঁকে ভাবিত করে তোলে। তিনি বলেন, "লেখা লেখি করা তাঁর অভ্যাস।
নাটকের মধ্যে দিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁর সময়টা বেশ কেটে যায়। এই কাজে
প্রাণিত করার জন্য সহকর্মী ও প্রধান শিক্ষককে ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে
প্রকৃতির ধ্বংসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি। মানুষের লোভ তাঁকে
খুব পীড়িত করে। আর তখনই কলম তুলে নেন হাতে! মানব সভ্যতার অচেনা
চরিত্রগুলো যেন চরিত্র হয়ে ওঠে তাঁরই স্নেহ স্পর্শে!! আর তখনই নীল রঙের
গ্রহটি তার ফুসফুস নিয়ে আস্বস্ত হয়ে ওঠে!!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours