শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
লিখতে
চেয়েছিলাম আসামের এনআরসি সংকট নিয়ে। আসামিজদের রয়েছে বীরত্বের ইতিহাস।
পাথরযুগেও তাদের খুজে পাওয়া যায়। সারা ভারতবর্ষ আরব, তুর্কি, আফগানরা সহজে
কাবু করলেও আসামকে পারনি। একজন খিলজি আসামের একটি গোত্রকে ধর্মান্তরিত
করে ইসমামের প্রসার ঘটিয়ে ছিলো। মোঘলেরাও আরামে থাকতে পারেনি আসামিজ
গেরিলাদের দাপটে। তবে, ইংরেজদের বন্দুকের সামনে টিকতে পারেনি। ভারতবর্ষে
সিরাজদৌল্লা সহ অনেক শাসক যেমন অসহায় ছিলেন। তেমনি আসামিজরাও আত্মসমর্পণ
করতে বাধ্য হয় ইংরেজদের কাছে। "বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস " মাও সেতুং
এর জন্ম, ও এ কথা বলার আগেই সত্য ছিলো। যদিও রুশোর ভাষায় এখন মনে করা হয়
"জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস।" পৃথিবীকে দুই ভাবেই শাসন করা হচ্ছে। কখনো
বন্দুকের নল দিয়ে কখনও জনমতের জোড়ে। লিখতে চাইলেও আজ আর এনআরসি নিয়ে লিখছি
না। কেন? সে কারনটাও বলছি।
একজন ফোন করে বলছেন ;
"ইদানিং তোমার লেখা বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে চলে যাচ্ছে।" আমি
বলেছিলাম, আমার অনেক লেখা আওয়ামীলীগের পক্ষে চলে যায়, আপনি ভালোকরেই
জানেন, আমি কখনোই আওয়ামীলীগ করিনি। আমি কমিউনিষ্ট আপনি তা ভালো করেই জানেন।
তারপর এও জানালাম, অবাক হয়েছি, তিনি আমার লেখা পড়েন তা ভেবে৷ তারপর আরো
বললাম, আপনি ফেসবুকে আছেন? আপনি আমার লেখা পড়েন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি
ফেসবুকে ফেক আইডিতে আছি। তুমি এবং অনেকেই তা একসেপ্ট করেছ। তবে কেউ জানে
না, এটা আমার আইডি। (তিনি কোন আইডিতে আছেন তা বলেন নি। সঙ্গত কারনেই তার
নামটা বলা গেলো না। তবে, তিনি প্রখ্যাত।) আমাকে আরো বিস্মিত করলো। তার ২য়
প্রশ্নে "তোমার সাথে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা হয় নাকি? " আমি জবাব
দিলাম ; আমি এত "বিখ্যাত" কেউ নই যে আমার সাথে বিজেপির কোন কেন্দ্রীয় নেতার
সাথে কথা হতে পারে। আমার সাথে হঠাৎ দু,একজন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির
কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা হয়। তিনি আবার বললেন, তাহলে (নাম বলে) সিপিএমের
সাবেক সাংসদের একটি লেখায় তোমার এত শক্ত কথা বলার সাহস হলো কি করে?
আমি
যারপর নাই অবাক হলাম, কেননা, তিনি আমার সব বিষয় খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েন তা
বুঝা গেলো। তা না হলে এ তথ্যটা জানতেন না। আমি বললাম, স্যার; আমি কেবল তার
তথ্যগত ছোট্ট একটা ত্রুটি স্মরন করিয়ে দিয়ে ছিলাম মাত্র। আর ভারতবর্ষের
কমিউনিস্টদের অবস্থা নিয়ে অতি অল্পবিস্তর কথা বলেছি। তারপর তিনি আমার
লেখার কিছু আলোচনা ও সমালোচনা করলেন। শেষে বললেন, আসামের এনআরসি নিয়ে নিয়ে
কিছু লিখো। তুমি তো আবার ভারতের বেশ কয়েটি প্রদেশে থেকেছো। তোমার কাছে
নতুন তথ্য থাকতে পারে। আমি বললাম, আজ এ নিয়েই "দ্য অফনিউজে" লিখতে
চেয়েছিলাম। তবে, যেহেতু আপনি পড়বেন তাই খ্যান্ত দিলাম। আরো তথ্য সমৃদ্ধ
লেখা লেখার জন্য।
আমি অনেক
শিশু, কিশোরী,যুবতী,তরুনী ও বৃদ্ধাদের প্রশ্ন করতাম; (এখনো করি) তারা
পুরুষ দ্বারা কখনো যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কি না? আমাকে যারা একটু কাছে
থেকে জানে; তাদের সকলকে আমি এই প্রশ্নটা করে থাকি! গত দুই দশকে এ পর্যন্ত
কয়কশ জনকে এমন প্রশ্ন করে ; মাত্র তিনজন নারী পেয়েছি যারা বলেছেন, তারা
জীবনে কখনোই যৌন নির্যাতনের শিকার হননি। একজন, আমার স্কুল জীবনের শিক্ষিকা,
একজন আমার মা, আরেকজন তরুনী যার সাথে আমার পরিচয় মাত্র এক বছর। তবে এই
তরুনীর কথায় আমার বিশ্বাসই হয়নি, সে কখনোই কোন পুরুষের যৌন নির্যাতনের
শিকার হয়নি। বিশ্বাস এ জন্য করতে হয়েছে যে, সে স্পষ্টভাষী। হলে, তা স্বীকার
করতো। অথচ, তারই এলাকার প্রায় ৫৫/৫৬ বছর বয়সী এক মহিলা আমার সাথে একা দেখা
করতে ভয় পেয়ে ছিলেন। এ জন্য যে তিনি ছোট বেলায় খুব কাছের পুরুষ
আত্মীয়দের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাই তার পুরুষ ভীতি
প্রবল।কথাটা তিনি ঢাকার হেলথ এন্ড হোপ হসপিটালে চেম্বারে বসে কুমুদিনী
হসপিটালের ডক্টর বিলকিস আারা চৌধুরী আপার সামনে বলেছিলেন। আমি অবাক হয়ে
বললাম, আপা, আপনার এত বয়স তারপরও আমাকে ভয় কেন? তার সাফ জবাব, পুরুষদের
চোখে আবার নারীর বয়স আছে নাকি! আমরা পুরুষরা নারীর চোখে যেন হায়েনা। তার এই
ভুল ভাঙানোর দায়িত্ব আমাদের পুরুষদেরই।
কদিন
আগে একজন নতুন ফেসবুক বন্ধু হয়েছেন। মহাখালিতে তার ব্যাবসা। আচানক তার
সাথে পরিচয় এক তরুনীর মাধ্যমে। আমি তাকে প্রথমে তাদেরে পরস্পরকে আত্মীয়
স্বজন মনে করেছিলাম। তিনি জানালেন, তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন উইস করে
ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছেন বলে, প্রায় তিরিশ জন বন্ধু তাকে আনফ্রেন্ড করে
দিয়েছে। ফ্রেন্ড আনফ্রেন্ড করা না করা যে কোন ব্যাক্তির একান্ত ব্যাক্তিগত
অধিকার। কিন্তু কোন ব্যাক্তিকে পছন্দ অপছন্দ করার জন্য কাউকে আনফ্রেন্ড করা
ভাবনার বিষয়। আমার জানতে ইচ্ছে করে যে ব্যাক্তিটি তসলিমা নাসরিনের জন্ম
দিন পালন করলে ব্যাক্তিগত ভাবে চেনা ব্যাক্তিটিকে আনফ্রেন্ড করে; সেই
ব্যাক্তিটি ৭২ এর ঘাতক কাদের মোল্লাকে যে "শহীদ' মনে করে তাকে আনফ্রেন্ড
করেছে কি না!
জামায়াত পন্থী এক তরুন আমাকে মেনশন
করেছিলো, শ্যামলী পরিবহনের এমডির নামে ছড়িয়ে দেয়া একটি দেশ বিরোধী
বক্তব্যের ভিডিও। তাতে মন্তব্য করতে বলেছিলো। আমি করিনি আমি। কেন
না,অনুমান করেছিলাম এটা ফেক ভিডিও । শ্যামলী পরে বহনের মালিক হিন্দু বলে
তার নামে ভিডিও ছেড়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালিয়ে ছিলো। অথচ ইসলামী ব্যাংক
এক সময় হিন্দুদেরও লোন দেয়, তা প্রমানের জন্য ইসলামী ব্যাংক এই শ্যামলী
পরিবহন ও মালিকের কথাও বুকলেটে প্রচার করতো। মেনশন করা তরুনটির ধারনা আমি
মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে কথা বলি। তার হয়তো
ধারনা নেই; কোন বিষয় সত্য হলে সংখ্যাগুরু হয়ে সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলা
ভদ্রতা। এছাড়া মানবতার প্রশ্ন তো আছেই। এখানে পক্ষ বিপক্ষের কিছু নেই।
একটি রাষ্ট্র কতটুকু গনতান্ত্রিক তা সংখ্যালঘুদের সাথে আচরনেই নির্ধারণ করে
দেয়। পরে দেখা গেলো যে ভিডিওটি শ্যামলী পারিবহনের এমডির নামে চালিয়ে দিয়ে
হিন্দু বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার আসলে তা শ্যামলী পরিবহনের এমডির নয়। এমনকি
হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠনের নামে ভিডিওতে যা বলা হয়েছে তাও এডিট করা।
বাংলাদেশে
ফেসবুকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে এমন ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। এর আগে
একজন সনাতনধর্মালম্বীকে এক বছর জেল খাটতে হয়েছে। যে ফেসবুক কি তাই জানে না।
ছিলো না তার অক্ষর জ্ঞান পর্যন্ত। অথচ তাকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে
ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার দায়ে ১ বছর জেলে থাকতে হলো।
ভারত
সরকারের, সার্কে বসবাস করা নির্যাতিতত সংখ্যালঘুদেের আশ্রয় দেয়ার
সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানিয়েছি। বরং আমার আরো একটি দাবি, সংযুক্ত করতে
চাই। তা হলো,পৃথিবীতে কেউ যদি নাস্তিক্যবাদ চর্চার কারনেও নির্যাতিত ও
নিপীড়িত হয় তাকেও ভারতে আশ্রয় দেয়া উচিত। কেন না, নাস্তিক্যবাদ ভারতীয়
শিক্ষা,সংস্কৃতি ও সভ্যতার অংশ। এখন তো পাঁচ হাজার বছরের ভারতীয় সভ্যতা ও
সংস্কৃতি নিয়ে অহংকার করা হচ্ছে; করা উচিতও। আরব তুর্কী, উজবেক, আফগান ও
ইংরেজরা শতশত বছর ধরে দাবিয়ে রেখে মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে ভারতবর্ষের মানুষ
পিছিয়ে পরা। আমরা ইংরেজি ভাষায় ভারতীয় ইতিহাস পড়ে তৃপ্ত হই। নিজেরা ভারতীয়
ইতিহাস, সভ্যতার খোঁজ রাখি না। আর অদ্ভূত এক প্রচার রয়েছে ভারতীয় সভ্যতা
মানেই হিন্দু সভ্যতা! বেদেগুলোর বয়স বড়জোর পাঁচ, ছ হাজার বছর। কিন্তু
ভারতীয় সভ্যতার বয়স কত আমরা তা খুজে দেখি না।
মুসলিম
সম্প্রদায়েরই দাবি, আরবরা মাত্র ১৫০০ আগেও "জাহেলিয়াতের" মধ্য ছিলো!
অনেকেই বলে ইউরোপীয়রা গুহায় বাস করতো। সেই ইউরোপীয়রাই আজ আবিস্কার করেছে
ভারতবর্ষ প্রাচীন সভ্যতা ও ইতিহাস।
এখন তো আর
বিদেশীরা ভারত শাসন করে না। ভারত সরকারের উচিত ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতির
প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলা। আর যারা আগ্রহী তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা।
শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলো বলেই তো ভিনদেশীয় পোশাক, শিক্ষা,সংস্কৃতি,
সাহিত্য,শব্দে ভারত ঋৃদ্ধ হয়ে হয়েছে। এখন প্রয়োজন নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি,
সভ্যতার কর্ষন করার। বহু আগেই ভারতবর্ষে বৈদিক সভ্যতায় বলা হয়েছিলো
"অন্নদান শ্রেষ্ঠদান।" তারপর আরব থেকে আসা ইসলাম জানালো ", প্রতিবেশিকে
ক্ষুধার্ত রেখে যে ঘুমায় সে মুসলমান নয়।
আমার
আরেক আরেক শুভাকাঙ্ক্ষী এই লেখাটা তৈরীর সময় ফোন করলো, "ভারত থেকে লাখ লাখ
লোক নাকি মোদী সরকার বাংলাদেশে পাঠাবে এ নিয়ে কিছু লিখছো না কেন?" আমি
বললাম, আমার লেখায় কিছু থামবে বা শুরু হবে কি ? টেনশন করার কিছুই নেই
আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালিন ভরাত সরকারই বলুন আর মোদী সরকার; বাংলাদেশে
কাউকে পুশব্যাক করবে না। তা নিশ্চিত থাকুন। তাছাড়া,কাশ্মীর পরিস্থিতি শান্ত
হলে আাসমের এই এনআরসি নিয়ে আলোচনাও স্থগিত হয়ে যাবে। কাশ্মীরের দৃষ্টি
ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য এনআরসি সামনে আনা হয়েছে। এতটুকু আপনার বুঝতে
পারছেন না! আর এনআরসি বিষয়ে আাসমিজদের সাথে চুক্তি হয়েছিলো কংগ্রেসের
রাজীব গান্ধী সরকারের সাথে। এটা কেবল মোদী সরকার বা বিজেপির বিষয় নয়।
আসামীজ বনাম বাঙালি ও কংগ্রেস । বিজেপি এটা নিয়ে টার্ম কার্ড হিসেবে
খেলছে। খুব শীঘ্রই, মার্কীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আাসমের এই "এনআরসি "
আলোচনায় অংশ নেবেন। অনেক কিছুই বলতে চাই। কিন্তু "সহজ কথা যায় না বলা
সহজে।"
Post A Comment:
0 comments so far,add yours