দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

অনেক অলিগলি ঘুরে
মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে
বাবা এল (আসবে ঠিকই),
ছেলে এল না।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই কথাগুলো যেন বাস্তব হয়ে ছবি হয়ে গেল নানুরে...

রাধা অষ্টমীর দিন বাপ বেটাতে একসাথে মোচ্ছবে বসেছিল। ছিল গ্রামের আর সব মানুষ। হঠাৎ রে রে করে তেড়ে এলো রাজনীতি! বাবা ছেলে দুজনেই গুরুতর আহত। ছেলে গুলিবিদ্ধ। বাবার পা ভেঙে দেওয়া হলো। বাবা ফিরে আসবেন। তার আগেই ছেলে ফিরল লাশ হয়ে!

তারপর থেকে উত্তাল নানুর! স্বরূপ গড়াইয়ের স্ত্রী  সদ্য স্বামী হারা চায়না গড়াইয়ের মাথায় একমাথা সিঁদুর। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর দেহে চড়বে বৈধব্যের লেবাস চড়বে তাঁর গায়ে। তখনও সমানে কেঁদে চলেছেন। 
ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে দেখা যাবে। কোন শত্রু দেশের  লাইন অফ কন্ট্রোল এলাকায়। পুলিশ আছে। দুষ্কৃতীও আছে। তা সত্বেও হামলা চলছে। পুলিশ একবার সামনে, একবার পিছনে।  যখন একদল রুখে দাঁড়াচ্ছে, তখন পুলিশ সামনে চলে আসছে। আক্রান্ত ভাবছে,   প্রশাসন চলে এসেছে আর কিছু হবে না। আবার সেই একই রকম এ্যটাক। কথা গুলো কোন স্বগতোক্তি নয়। মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের  ভাই অনুপ কুমার গড়াইয়ের। 

পুলিশের উপর বিশ্বাস হারিয়ে তিনি তাঁর ভাই  স্বরূপ গড়াইয়ের মৃত্যুর সিবি আই তদন্তের দাবি করলেন এদিন।   এদিন মৃতের ভাই অনুপ কুমার গড়াই বলেন,  আমরা সি বি আই তদন্ত চাই।  যারা আমার ভাইকে মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই। এরপর একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দেন রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পুলিশের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছে।  আক্রান্ত দেহ আমি নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দিই। বোলপুরে নিয়ে যান, ওখানে কোন চিকিৎসা হয় নি। ওখান থেকে বর্ধমান পাঠানো হয়, ওখানে কোন চিকিৎসা হয় নি।  যার বুকে গুলি বিদ্ধ হয়ে আছে, তার কোন চিকিৎসা হল না।  ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে, তারপর গুলি বের করা হয়েছে।  

এদিন পাওয়া গেল নানুরে সংঘবদ্ধ আন্দোলনের পূর্বাভাস।  নানুর ক্ষোভে ফুঁসছে। তবে এদিন ছিল সংযত আন্দোলন।  মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের শবদেহ বাহী শকটের সামনে গ্রামের পথে কিছুটা পদযাত্রা! কোন রাজনৈতিক শ্লোগান ছাড়াই! পিছনে পরিবারের লোকজন। আগে ও পিছনে পুলিশের কড়া প্রহরা।  পুলিশি কড়া পাহাড়া নিয়ে এদিনও ক্ষোভ উগড়ে দেয় পরিবার। সামনে বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলকে দেখে হাতজোড় করে কান্না ভেজা গলায় মৃতের স্ত্রী ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন,   বিনাদোষে মারা গেল আমার স্বামী। দোষীদের ধরতে হবে। ওদের সাজা চাই। পুলিশ সাথে ছিল ! আমার কি অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন ! আশ্বাস দিয়ে শ্যামাপদ মণ্ডল বললেন,  প্রতিনিয়ত কোলকাতা থেকে ফোন আসছে।  আমরা আপনাদের পাশে আছি। পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী পূর্ব বর্দ্ধমান জেলার কাটোয়ার উদ্ধারণপুর ঘাটে স্বরূপ গড়াইয়ের শেষ কৃত্য হবে।  

 মৃতের ভাই অনুপ কুমার গড়াই বলেন, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ঘর ভেঙে টাকা লুঠ করেছে। বাইরে যা ছিল পুরো তছনছ করে দিয়েছে। ওরা পুরো প্ল্যান মাফিক কাজ করেছে, কারণ এইভাবে ওরা বিজেপিকে আনতে দেবে না।  বিজেপি যে করবে তাকে মেরে দেওয়া হবে।  থুপসরা অঞ্চলের তৃণমূলের বড় বড় নেতা আছে। জড়িতদের নামে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।  পুলিশ নিন্দাজনক  কাজ করেছেন। এন আর এসে আমাদের হাতে মৃতদেহ দেওয়া হয় নি। সেখান থেকে বডি লুকিয়ে বোলপুর হাসপাতালে নিয়ে চলে আসা হয়।  আমরা খবর পাই বডি আছে হাসপাতালে। বাড়িতে নোটিশ পাঠানো হয়।  আমার ভাই স্বরূপ গড়াই বিজেপির বুথ প্রেসিডেন্ট তাই তাকে মরতে হল। কি করে ছিলাম আমরা। রাধাষ্টমীতে গোটা গ্রামের সাথে মহোৎসবে খেতে বসেছিলাম আমরা। সেই সময় পরিকল্পনা মাফিক আমাদের উপর আক্রমণ হয়।  পুলিশের সামনেই সেটা হয়। আমার ভাইকে ওরা বাঁচতে দিল না চিকিৎসার অভাবে। মৃতদেহ নিয়েও আমাদের নাকানি চোবানি খাওয়ানো হল। কেন? উত্তরটা অন্তর্লীন হয়ে আছে সেখানে যেখানে তখনও শ্লোগান শোনা যাচ্ছে নানুরের  এই রামকৃষ্ণপুরে—“স্বরূপ গড়াইয়ের রক্ত, হতে দেব না ব্যর্থ!”
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours