প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
শব্দের
থরে সেজে আছে প্রীতিপদ আহ্বান। আচ্ছা আত্মার অস্তিত্ব কি আছে!! নিভৃত
গৃহে মর্মরখচিত স্নিগ্ধ শিলাসন বেয়ে যদি, মুক্ত হয় অন্দরমহল তবে ক্ষতি
কি!!
মনে হতেই পারে এমন নির্বোধের মতো স্বচ্ছতোয়া
নদীর বুকে প্রকৃতিস্থ আবর্তন কি সম্ভব!! আপনি হয়তো বলবেন, বেশ তো আছি
বাপু, ইন্দ্রিয় সুখের ভোগ, অতীত হাহাকারের মুখে ছাই দিয়ে ক্ষুধিত পাষাণ, সে
তো দ্রাক্ষাবনের গজল, চেখে দেখি, আর গভীরে গেলেই লজ্জার উন্মত্ত নগ্ন
বিলাপ। তবে কি যারা আত্মা বলেন, তারা উন্মত্ত!! আত্মজ্ঞান পিপাসু মনে,
পিপাসার যদি উপশম না ঘটে তবে যে, ৯৯.৯ মানুষকেই বাতুলতা বলতে হয়!! অনুভূতি
বলে, একটি আমার বীজ থেকে কতো বৃক্ষ হয়, ছুঁয়ে যাই না কেন!!! আভরণের তো
চামড়া বদল হয়, হয় নাকি?? আর এই আভরণকে নিয়েই কতো অস্থিরতা আমাদের;
ইন্দ্রিয়াতীত জগতে যতোবার প্রবেশ করেছি, দেখেছি নিজেকে বার বার জ্বালাতে
হবে৷ মধুকুম্ভের দিকে মক্ষিকাকুলের মতো এমন দাসের ন্যায় অনুপ্রবেশ তো
ঘটবেই। স্রোতের বিপরীতে ক্ষুরের শানিত ধারের উপর দিয়ে চলা তো কষ্ঠকর
স্বাভাবিক৷ সরু সুতোর ফলার মতো করে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পথে অতিক্রান্ত যুবক
সে তো রত্ন হবেই৷ আর পথের বুকে হারাবার কিছু নেই, আছে কেবল তুরীয় স্তর। তবে
কি বিজ্ঞান তাকে অলীক বলবে!! আত্মজ্ঞান প্রহেলিকা হতে পারে না। আসলে এগিয়ে
যাওয়া পথে নিয়তি বাঁধা থাকে চিরকাল।
স্থূলবুদ্ধির
বিচারে আত্মজ্ঞান দেখলে তা সহজলভ্য নয়। কাগজে কলমে যোগ এখানে জীর্ণ।
তাৎপর্যের আড়ালে দেখলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দীপহীন প্রকাণ্ড ঘরে কেবল শিঞ্জিত
হাহাকার দেখা যায়। নাতিদীর্ঘ অন্বেষণে ব্রহ্মানন্দ সুখ নৈব নৈব চ। পৃথিবী
কার্য কারণের অধীন। কর্মফলের তরঙ্গ ছুঁতেই হবে মানুষকে৷ এখানে আমরা
কর্মফলের দাস৷ প্রয়াত হলে, প্রয়াণপথে কেবল কর্মফলই মূল কথা৷ দেহের প্রতি
প্রীতিভাজন হলে আসক্তির বিকার গতি নয়। হৃদয়ব্রহ্মে স্বরূপচৈতন্যের বোধ হলে
আর পার্থিব আসক্তি আসে না, যা নিত্য নয় তা.. শুদ্ধির স্তুতি হতে পারে
না।।
আত্মা তো ভোক্তা নয়,
কেবল দ্রোষ্টা। "হিরন্ময়ে পরে কোষে বিরজং ব্রহ্মনিষ্কলম।" নিষ্পাপ
হৃদব্রহ্ম তো ব্রহ্ম আধার। জীবাত্মা হলো অন্তরমনের অহং সত্ত্বার ভ্রমবুদ্ধি
তিমিরাবরণ৷ একটিমাত্র দীপশিখা নির্মল দেদীপ্যমান। শুদ্ধ ধ্যান, চিন্তন,
মনন জীবনের শ্রেষ্ঠ গতি দিতে পারে। কেন্দ্রীকরণই তো মূল করা৷ হৃদয়দেশে জীব
পরমাত্মার সাথে একই বৃক্ষে আশ্রয় করে মুহ্যমান হয়ে পরে।
সূক্ষ্মানুভূতিপ্রয়াসী আত্মা যোগসিদ্ধ হয়ে, সংযত বায়ুর সাথে ভ্রূসন্ধিতে
উপনীত হয়৷ ইন্দ্রিয়াতীত রাজ্যে আনন্দ প্রাবল্য প্রবল। অহং সত্ত্বা নিপাত
গেলে স্বতঃস্ফূরিত এক ব্রহ্মচৈতন্য আত্মবিলয় দর্শনে সূক্ষ্মতম
আত্মানুভূতির পরিণত হয়। অনুভূতিতেই তো আনন্দাতিশয্যা নেই। সূক্ষ্ম
বারিবিন্দুর সাথে অনন্ত বারিধির একভাবাপন্ন সম্পৃক্ততেই মলিনতাদোষ মুক্ত
হয়৷ ঐক্যানুভূতিই অনন্ত ব্রহ্মের আত্মস্থ আত্মজ্ঞ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভব
নিয়েই সচ্চিদানন্দ অনুভব সম্ভব।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours