ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ  

 জগন্নাথ  বললেন," অবশ্যই  পারবে , তবে  সেটা  তোমার বাড়ীতে! এবাড়ীতে  তোমার  মতো  ওই  শিশুটিও  অতিথি ! তাই  এখানে তুমি  ওকে  শাসন  করতে  পারো  না! আর  শিশুটি  কি  এমন  অন্যায়  করেছিল  যে   তুমি  এমন  আঘাত  করলে  যে  ও অঞ্জান  হয়ে  গেল!?"
       উৎকন্ঠিত  ভবতারন  বললেন, "না  না  অঞ্জান  হবে  কেন? দিন  ওকে আমাকে  দিন"
      বজ্রগম্ভীর  কন্ঠে  জগন্নাথ  তর্কপঞ্চানন  বললেন," না  ভবতারন,তুমি  চিরকালের  জন্য  নাতনীকে  কোলে  নেওয়ার  অধিকার  হারিয়েছো! এখন  থেকে  ওর অবিভাবক  ওর  পিতা  রূপেন্দ্র!
      ক্ষুব্ধ  ভবতারন   ক্রোধে  অগ্নিশর্মা  হয়ে বললেন  " ও আপনি  তাহলে  ষড়যন্ত্র  করে  শিষ্যের  হাতে  তার  কন্যাকে  সমর্পন  করার  জন্য  আমাদের  নিমন্ত্রন  করেছিলেন. এই  শ্রাদ্ধ বাসরে ?"তবে  একটা  কথা  মনে  রাখবে  ফরাসী  গভর্নর  ডুপ্লেক্সের  দেওয়ান  ইন্দ্রনারায়ন  চৌধুরীর  নায়েব  ভবতারন  গাঙ্গুলীর  দাপটে  বাঘে  গরুতে  একঘাটে  জল  খায়! তাই  বলছি  কাজটা  যত  সহজ মনে  করছেন, তত  সহজ  নয়! ত্রিবেনী থেকে  হটীর  বাপ  সোঁয়াই  পর্য্যন্ত  পৌঁছাতেই  পারবে  না! আর  একটা  কথা পঞ্চানন  ঠাকুর, জীবিতকালে  আপনি  ঘনশ্যাম  সার্বভৌমের  প্রতি  অনেক  অন্যায়  করেছেন!তাঁর  শ্রাদ্ধটাও   সম্পুর্ন  হতে  দিলেন  না, নিমন্ত্রিত  ব্রাক্ষ্মন  অভুক্ত  ফিরে  যেতে  বাধ্য হবো, যদি  না  আমার  নাতনীকে  ফিরিয়ে  দাও!
 
       ভবতারন,শুধু  বললেন," সে  কথা তেমার  না  জানলেও  চলবে, তুমি  তোমার  মাকে  তৈরী  হয়ে  আসতে  বলো ! আমরা  এক্ষুনি  ফরাসীডাঙায়  ফিরে  যাবো, এখানে২ জল  গ্রহনও  করবো  না!"
       তুলসী তার  বাবাকে  কিছু  বলতে  যাচ্ছিল  এমন  সময়  সেখানে  এসে  উপস্হিত  হলেন  চতুষ্পাঠীর  একজন  অধ্যাপক ! তিনি  জানালেন, তাঁর  নাম  হরেরাম  বাচস্পতি! তারপর  বললেন, তাঁদের  দুজনকে  বৈঠকখানা  ঘরে  আহ্বান  করা  হয়েছে!
       বিদ্রূপ  করে  ভাবতারন  জিজ্ঞাসা " কে? আপনাদের  তুলো  পন্ডিত  পঞ্চানন -ঠাকুর?"
        ভবতারনের  বাচনভঙ্গীতে  বিরক্ত  হলেও  তা  প্রকাশ  না  করে  হরেরাম  বললেন," না  আমনাদের  ডেকেছেন  ফরাসীডাঙার  দেওয়ান  ইন্দ্রনারায়ন  চৌধুরী "
         ভবতারন  চমকে  উঠলেন! সেখানে  গিয়ে  দেখেন  তিনি  সস্ত্রীক  এসেছেন 
        ভবতারন, রূপেন্দ্র  ও বাচস্পতি  বৈঠকখানায়  দেখেন, আরাম কেদারায়  আধশোয়া  অবস্হায়  দেওয়ান  ইন্দ্রনারায়ন  চৌধুরী!
        ভবতারনকে  সম্বোধন  করে  বললেন  "এসো  এসো ভবতারন "রূপেন্দ্রকে  দেখে  বললেন," ইনিই  বুঝি  ভেষগাচার্য?মন্ত্রবলে  যিনি  বর্গীসর্দারকে  দামোদরে হাতিসমেত  ডুবিয়ে  মেরে  ছিলেন!"
  করজোড়ে  রপেন্দ্র  জানালেন  এ সমস্ত  রটনা  , দস্যুদের  প্রতিহত  করেছিল  গ্রামবাসী! তিনি  শুধু  বুদ্ধি  দিয়ে  সহযোগীতা  করেছিলেন!
       ইন্দ্রনারায়ন  বললেন," ও  তাই? তাহলে  বর্ধমানের  নায়েব   নগেন দত্তের  দ্বিতীয়া  স্ত্রীর  মৃগীরোগ  কে  সারালো? "
  
    জগন্নাথ  ভবতারনের  জ্বলন্ত দৃষ্টি  নিক্ষেপ  করে  ঘুমন্ত  হটীকে  কাঁধে  নিয়ে  অন্দর মহলে  চলেগেলেন! অন্তরাল  থেকে  তুলসী  সব  দেখছিল!সে  তাঁর  বাবাকে  জিজ্ঞাসা  করল," বাবা  হটীকে  নিয়ে জগন্নাথবাবু  কোথায়  গেলেন?"
 স্তম্ভিত  রূপেন্দ্রনাথ ***অনেক  শুভানুধ্যায়ী আমার  কাছে ব্যক্তিগত অনুযোগ  করেছেন রূপেন্দ্রর  কাহিনী  এত
দীর্ঘতর হচ্ছে  কেন? প্রকৃত  পক্ষে  অষ্টাদশ  শতকের  নারী  শিক্ষা  ও নারী  আন্দোলনের  মহীয়সী  হটী কে জানতে  হলে  তাঁর  পিতাকে  জানতেই  হবে! তবু  পাঠকরা  চাইলে  আমি  রূপেন্দ্র-কাহিনী  সংক্ষিপ্ত  করবো *****
(চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours