জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
অভিজ্ঞতায়
বুঝেছি, তথাকথিত সাংবাদিকতার আধুনিকতা থেকেও,, যাকে মানুষ আত্মবিক্রীত
সংবাদ মাধ্যম বলে চিনেছেন, সমাজ-চেতনাহীন সাংবাদিকদের যারা আত্মবিক্রয়ের
পেশায় নেমেছেন -- তারা ইতিহাস বোধের পক্ষে ক্রমেই বিপদজনক হয়ে পরছেন।
সাম্যবাদী
দলগুলি সংসদীয় রাজনীতিতে থেকে, পুজিতান্ত্রিক কিংবা এমন কী অনেক সময়
সামন্তিক বা ব্রাহ্মান্যবাদী সামাজিক কাঠামোতে, সাম্যবাদী অভিমুখ ধরে কাজ
করেন সে জন্য, এসব দলের কাজকর্মের যাচাই করতে হলে, কিছুটা সমাজ বিজ্ঞান তথা
সাম্যের উদ্ভভ কিংবা বিকাশের নিয়মগুলি জানতে হয়। অন্যথায় নিশ্চিতভাবে,
পড়ন্ত উদারবাদী, যাকে বলা যাবে পড়ন্ত রেঁনেশার আলোতে যদি কোন সাম্যবাদীদের
রাজনৈ্তিক লাইনের বিচার করতে যাওয়া হয় তখন
-----
মানুষের জ্ঞান সত্বার উপরেই শুধু হামলাই হয়ে যায়, তাকে ভাবে এবং সংস্কৃতিতে
ক্রমে নিচে টেনে নামাতে থাকে।সব থেকে বেশী ক্ষতিটা যে হয় সাম্যবাদ নিয়ে
চর্চা করছেন, এমন সব নেতা কর্মী এবং গবেষকদের, সেটা একসময় তাদেরই বুদ্ধির
বাইরে চলে যায়। বুঝতেই পারেন, না তাদেরকে কখন কিভাবে ইতিমধ্যেই সাম্য
থেকে টেনে এনে পঁচা পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আগেকার
দিনে যখন ভারতে রাজনীতিটা সাধারনভাবে, অর্থনীতির স্বয়ংসম্পুর্নতায়
উত্তোরনকে নিয়েই যেমন আবর্তীত হয়েছে, তেমনভাবেই সাংবাদিকতাকে দেখা হয়েছে।
তখন সাংবাদিকতার উপর এতো বিপুল অংকের বিদ্যালয় কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক
ব্যবস্থা ছিলো না, কিন্তু সাংবিদকতায় একটা নিম্নত্ম পর্য্যায়ের পবিত্রতায়
একমত হয়েছেন বলে দেখা যেতো।
এমন
কি যারা সাম্যকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছেন, সেটা বেপোরোয়া ভাবেই করেছেন,
কিন্তু সেটা সাম্যকে তার ভিত্তিভূমিতে রেখেই করেছেন। সেকালে কত কী না
হয়েছে, কিন্তু মার্ক্স কিংব লেনিনকে নিয়ে, চরিত্রের আজব গল্প বানিয়ে সংবাদ
তৈ্রী কিংবা গল্প বানানো হোত না। অধ্যাপক হীরেন মুখার্জীর আত্মজীবনী মুলক
লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি যখন ১৯৫২ সালে এম পি হওয়ার পর, সংসদীয়
কমিটিকে নিয়ে, অষ্ট্রেলিয়ায় গেলেন - - সেই সাম্যসৌ্ম্য প্রৌঢ়টি প্রতিদিন
সকালে কোন ' 'শিশুর মস্তিস্কের' রোষ্ট করে খান কি না, সে সম্পর্কে অনেক
গল্প হয়েছিলো। কিন্তু সেকালে এতো 'অসভ্যতার আয়োজন হয় নাই।
আসলে,
'সামাই' যে একপ্রান্তে 'মেহনতকে' সামনে এনে মনুষ্য জাতির ইতিহাসে
ইতিহাসের একটা সুত্রবদ্ধ রুপকে আবিস্কৃত করেছে। সাম্যই, এই মেহনতকে ঘিরেই,
জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাকে মানুষের দুঃখের পাহারের মধ্যে
আবিস্কার করে, মানবিকতাকে, ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে, উঠিয়ে এনেছিলেন। একেই
রবীন্দ্রনাথ মহামানবিকতার সাগরতীরে এবং বিশ্ব ভারতীতে সেতুবন্ধন রচনা করার
সুযোগ পেয়েছিলেন।
ভারতে
যখন ইতিধ্যে সাম্য পোড়াকপালী মাটির ফাটলের সিঁড়ি ভেঙ্গে মনুষ্যহৃদয়ে
জলসিঞ্চিত দুর্বাদলে কিঞ্চিত মধুরিমা নির্মান করার সুযোগ পেলো সাম্য
-----
সেদিন থেকেই রাষ্ট্রশক্তি যেমন হুরমুড়িয়ে পরলো, তেমনি, আদর্শের উপরে
উদারবাদীদের পাল্টা অস্ত্র ধরেই আক্রমনশানিত হোত।সেখানে যুক্তি দাড় করাতে
হোত। বাংলায় সে সময় আনন্দ বাজারকে আক্রমনের ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
আনন্দবাজার নিজেও, সেই আঘাতকে কতো তীভ্র করা যায়, সে দিকে নজর রেখে,
এককালের সাম্যবাদী কলমকেই খুজে পেতে এনেছিলেন। অনুরুপভাবে, সমরেশ বসুর মতো
কিছু সাহিত্যিক যারা সাম্যেতেই লালিত পালিত হয়েছেন, তাদের সাসনে রেখেই
নন্দন তত্ব এবং তার প্রয়োগের উপর আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে।
এসব
প্রত্যাঘাতের ভেতর দিয়েই, সাম্যকে, একপ্রান্তে ময়দানী লড়াই এবং সেই
অভিজ্ঞতায়, ভারতীয় পঠভূমীতে, বিশ্বের নবাগত শ্রেনীর, ভাবসত্বাকে খুজে পেতে
হয়েছে,
----- মানব সভ্যতার ইতিহাসে দর্শনের সর্বোচ্চ
চূড়া এবং অখন্ড জ্ঞানের অভিমুখ খুজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে।সাধারনভাবে, ইতিহাসে
যে শ্রেনীর পূর্ণ বিকাশই ঘটে নাই তার 'নবজাগরনের' প্রশ্নে নেই। আর এমনিতে
ইতিহাসে কোন শ্রেনীর 'নব জাগরনের' বিধান নেই। যে যায় সে চলে যায়
------
সেখারেনি আমেরিকান অর্থনীতিবাদীরা, শ্রমিক শ্রেনীর জাগরনটাই যে পূর্ণশশীতে
বিকশিত হওয়ার পথে, সেটা গোপন রাখতেই, চেচিয়ে চলেছেন, এই বলে 'ইতিহাসের
নাকি পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
দর্শনের সর্বোচ্চ শিখরে মার্ক্সবাদ এবং প্রয়োগশাস্ত্রে লেনিনবাদ সেই সিংহচুড়ায় অধিষ্টিত হলেও
-----
ইতিমধ্যে উদারবাদের অপ্রাসংগিক হয়ে যাওয়ায় অন্যপ্রান্তে সাম্যের জ্ঞান ও
সাংস্কৃতিক সত্বার সৃজনমুখীনতার উৎসমুখ সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ায়, সাম্যের
তত্বগত অভিমুখগুলি যেমন এলো মেলো হয়েছে, তেমনি উদারবাদের সাথে সাথে
'রেনেঁশার' পাতাল যাত্রা করানোর কারনে, ইতিমধ্যে স্বল্প কালের হলেও
ফ্যাসিবাদের পূনঃজাগরনের কারনে
----- সাম্যবিরোধী
তত্বের তরঙ্গে বিপুল কাদা-মাটির সাথে সাথে অসভ্যতা ঢুকে গেছে। এই অসভ্যতার
পঁচাপুজ রক্ত অতিক্রমনে সাম্যের জলতরঙ্গে যে ভাংগা-গড়ার প্রবনতা দেখা দেবে,
সেটা তো স্বাভাবিক ।
আজকের
দিনেনের সেই আনন্দবাজারকে কিংবা তার ইলেকট্রনিক অভিমুখকে খুজে পেতে যদি
সেই প্রতিরোধের কালের আনন্দবাজারের আয়নায় দেখার চেষ্টা হয়
-----
তবেই বোঝা যাবে, এদের পচনের যায়গাটা কাঁদামাটি থেকে পুজরক্তে নেমে এসেছে।
এতে সাম্যবাদী অভিমুখও অনেক সময় পথ হারিয়ে ফেলার অবস্থায় চলে যায়। অবশ্য,
পরিস্থিতির অতলতার পরিমাপে সাম্যবাদী গবেষনা এক নিষ্করুন অকার্য্যকারীতায়
নেমে আসায় সংকট বেড়েছে।
আজকাল, এ বি পি আনন্দ তো সব
সময় একটা মুখেই ঢেকে রাখতে বার বার সেই মুখকে জামা বদল করে মঞ্চে তুলতে
হয়। আগে সাম্য, উদারনীতিবাদ, ফ্যাসিস্ত বিট আলাদা থাকতো। এমন কদ্যাপি
হয়েছে, একজনকেই সকালের দিকটাকে 'তৃ্নমুলকে' বিকেলটা বিজেপি' আবার কখনো
ছিটেফোটা বামদের দিতে হচ্ছে।
----- সেই সুত্রেই, সেই
একই মুখকে বছরে একদিন 'জাপানের বুলেট ট্রেন' কয়েকদিন বিশ্ব অলেম্পিক, আবার
একদিন সেই 'তাকেই' জাতীয় অর্থনীতি,
------ মাঝখানে
একদিন সেই 'নেতা নেত্রীর, ব্লাউজের কাপড় রংগের সাথে নেতার জামার রংগের
মেচিং এর আচলোচনায় উভয়কেই জাতীয় চেতনাকে কলুষিত করার জন্য মঞ্চে উঠিয়ে আনতে
হয়। নেতা এখানে, সন্তানসন্ততি সমেত স্ত্রীকে ফেলে দিয়ে, অন্য জনের
কাছাকাছি থাকতে নিজ সংসারেই নেতাকে এনে তুলেছেন।
আলোচনা
এগুতে থাকবে, তবে এই লেখায় একটি সুত্র রেখেই , সর্বস্তরের কর্মী নেতা এবং
গনতান্ত্রিক মানুষকে, সাম্যের আবিস্কারে নতুন করে আত্মনিয়োগ করতে এবং এই
আবিস্কারে 'শ্রমের' গুনগত উত্তোরন কাল এবং শ্রমের যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত
রুপটাই যে এই আবিস্কারে
---- পালতোলা নৌকোর কাজ করবে সে কথাটিকেই স্মরন করিয়ে দেবো।
আরো
স্মরন করিয়ে দেবো, উধারবাদীরা যে তাদের পালয়ন পথে পোড়ামাটি নীতির নিয়ম
ধরেই রেনেশাঁকে ফ্যাসিস্তদের হাতে বিসর্জন দিয়েই, নিজে যখন আশ্রয় খুজতে,
-----
তখন খুব বিপদজনক পথ বেয়ে চলতে হবে ঠিক। কিন্তু মেনে চলতে হবে, 'এটাই সময়' -
তত্বে, সংগ্রামে, ন্যায় এবং নীতিতে, সাম্যের সেতু ধরেই সমাজতান্ত্রিক
গনতন্ত্রের পথে মানুষকে যেমনভাবে এগিয়ে দেওয়া যাবে
------ তেমনভাবেই, উদারবাদীরা তাদের অপ্রাসংগিকতাকে অতিক্রম করিয়ে নব রুপে নতুন এক বিপ্লবী রেনেশায় সমৃদ্ধ হয়ে মানুষের কাছে
ফিরে
আসবে। সর্ত একটাই। সে সর্ত হোল, যুদ্ধ কালিন দ্রুততায় শ্রমিক শ্রেনীকে
নবরুপে নব অস্ত্রে সজ্জিত করে,সুদীর্ঘ গ্যারেজবাস সমাপ্ত করে রনক্ষেত্রে
পাঠানোর ব্যবস্থা করা। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours