মুসবা তিন্নি, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে মাদক ব্যবসায়ীরা আলাদা করে মাফিয়া বা কোনো অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট নয়। মূলত এখানকার মাফিয়া বলতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী-তাদের প্রধান সহযোগী পুলিশ বাহিনী। মধ্যস্তরের যেসব মাদক ব্যবসায়ী গুলিতে মারা পড়ছে তাদের প্রত্যেকের পেছনেই কয়েকজন করে হ্যান্ডলার আছে। সেই হ্যান্ডলারদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ এরা সবাই আছে ! গত কয়েক বছরে ইয়াবার মত ভয়ানক সর্বনাশা ড্রাগ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষটির হাতেও পৌঁছে গেছে।

কিছু কিছু জিনিস নিয়ে তেমন কোনো লুকোছাপাও নেই। যেমন, সকল ইন্সপেক্টর কিন্তু পুলিশের ওসি হিসেবে নিয়োগ পান না। পুলিশের ওসি হিসেবে কেবল তারাই নিয়োগ পান যারা বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। থানা ভেদে সেই টাকার অংক ২০-৩০ লাখ থেকে শুরু হয়ে কোটি পর্যন্ত। এসব টাকার ভাগ পৌঁছে যায় পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন স্তরে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা নীতি নির্ধারকরা বছরের পর বছর ধরে এমনটি ঘটতে দিচ্ছেন- ফলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, এই টাকার ভাগ তাদের কাছেও পৌঁছায়।

বিপুল টাকা লেনদেন করে ওসি’র দায়িত্ব নিয়েই ঘটনা শেষ হয়ে যায় না। এরপরও নিয়মিত ভিত্তিতে নির্দিষ্ট অংকের টাকা (অবশ্যই অবৈধ) তাকে দিতে হয় উঁচু নীচু নানান পর্যায়ে। এসব টাকা কোথা থেকে আসে? আসে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের কাছ থেকে, অপরাধ অনুমোদনের ভিত্তিতে। সেসব অপরাধীদের মধ্যে চোর-ডাকাত-খুনী-মাদক ব্যবসায়ী সকলেই আছে। বিরাট এই লাভজনক ইয়াবা সমাজের নিম্নস্তর পর্যন্ত নিয়ে যেতে যাদের কথা বললাম, তারা সকলেই ভূমিকা রেখেছে। লেনদেন হয়েছে বিপুল বিপুল টাকা, লাভবানও হয়েছে এরা সকলেই।

সরকার যদি সত্যি সত্যিই আন্তরিক হয় মাদক দমনে, বিশেষত ইয়াবার মত ভয়াবহ মাদকের বিস্তার রোধে- তাহলে সেটা খুবই ভাল খবর। ইয়াবার খপ্পরে পড়ে স্রেফ একটা প্রজন্ম ধ্বংস হতে বসেছে। কিন্তু সেটা করতে হলে, বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ খুন করার দরকার নেই। সরকারকে আগে যেটি করতে হবে তা হল, রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়োজিত যেসব মানুষ টাকার লোভে ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িয়ে আছে তাদেরকে নিস্ক্রিয় করতে হবে। অন্যথায় যে ক’জনকে মারা হবে- খুব দ্রুতই তাদের বিকল্প হাত প্রস্তুত করে ফেলা হবে। তবে পাশাপাশি সরকারকে আরো একটি কাজ করতে হবে। সেটি হল, সরকারি দলের নেতাকর্মী বা মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি ও লুটপাটের পথ থেকে ফিরিয়ে আনা। কারণ, অন্যরা যখন দেখে যে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় বানাতে বাঁধা নেই- তখন ইয়াবা ব্যবসা করে টাকা বানাতেও তাদের কোনো এথিকাল সংকট কাজ করে না। অাসলে মানুষ তো দেখেই শেখে! মন্ত্রী, এমপিদের এমন অবৈধ্য অার্থিক অায়ের উৎস দেখে বাকিরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে অবৈধ ভাবে টাকা আয়ে, বড়লোক (আর্থিকভাবে ধনী হওয়ায় এখন সবার লহ্ম্যে!)!  কেবলই অন্যকে টক্কর মেরে টাকার ধনী হওয়া এখন কাম্য হয়ে গেছে সবার! 

কিন্তু মানুষের প্রয়োজনের একটা সীমা আছে।মানুষের ভালোভাবে বাঁচার জন্য কত কোটি টাকার প্রয়োজন? আমাদের দেশের ধনীরা তেমন দান করেন না। সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে।কিসের জন্য আমার ধারণা নেই। এতে কিই বা লাভ হয়? টাকা তো অার মৃত্যু অাটকাতে পারেনা! যার হাতে এই অবৈধ অর্থ যাবে তারা অনর্থ সৃষ্টি করবেই। আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে আপনার কত টাকা হলে আর বাড়তি প্রয়োজন নেই?
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours