প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 

বিনিময়ে বাহুবেষ্টন করে আছে কুসুম সম্ভার৷ বিকশিত ফ্রেমে কাঙাল প্রেমিক সুর,  ভূর্জপত্রে খণ্ডিত বীণাপাণি ছুঁয়েই তো আছি..  তবু যে ভালোবাসি। 

সময়টা ১৮৭৯ সাল। রবীন্দ্রনাথ তখন লণ্ডনে। তবে কি নড়েছে জল, বীজের আত্মগত ভুবন বেয়ে  বাতাসে আড়ভাঙা উৎসব, অনিন্দ্যসুন্দর কিশোর৷ কিন্তু, প্রথম প্রেম তো ইন্ধন জুগিয়েছিল বিলাতে পূর্ব প্রবেশের পথেই, তবে এটাই তো ভূমিষ্ট বীজের নবজন্ম আবার৷ 

কিশোর রবীন্দ্রনাথ সেবার অতিথি হয়েছেন বিদেশী লুসি স্কটের৷ ডক্টর ও মিসেস স্কটের  ছোটো মেয়ে লুসি স্কট,  ধাবমান বাতাসে প্রদীপ্ত কিশোরের তখন একমাত্র সঙ্গী৷ জাগরণের ফেরিঘাটে একমাত্র লুকানো সম্পদ। সৌরলোকের প্রবল উচ্ছ্বাস তো জলস্তম্ভকে উপরে তুলবেই। ইশারা যদি,  মৃত্যু নদীর দ্বার ছুঁয়ে এসে একবার অনন্তে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়, তবে যে দীর্ঘশ্বাস উপেক্ষার নয়। উপেক্ষার অদূরে মৃদু হাসির ললিত হাসিই তো আত্মরতির বাতিঘর। ও মুখে আদর ছুঁয়ে দেবে খুনসুটির ঝড়, শূণ্য মরুর বুকে শিরে শির রেখে অমৃত প্রণয় পান, দেহ শোষিত জল। 

লুসির পিয়ানোয় সুর; কন্ঠের অনর্গল আবেদনে হিল্লোলে সুরেলা বাঁধন, "ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়।। " সুরের আগুনে সৌজাত্যের টান৷ আজ যে কিশোর বোঝে যে, সে তো ভরা মৌতাতে  নিমগ্ন মানুষ। সাড়া আহ্বানে উষ্ণ সুরে মিস লং, মিস ভিভিয়ান, মিস মূল.. লাবণ্যময় পারিপাট্য।  আজ কি হলো রবীন্দ্রনাথের!!  ও সুরে যে, ফাগুন সমীরণ একাই  অভিমান। 

এখন একা তো লুসি নয়, গ্রাউনের সম্ভারে ইনট্রোভার্ট জীবন তো নিমগ্ন। মগ্ন উষ্ণতা তো  সংশয়ের লজ্জা ভাঙে, তবে আজ অন্যথা কেন? ও তো ভালোবাসার বুনোন, মিলনের দেহে হৃদয় ভরা আচ্ছন্নতা আজ অনুপস্থিত। কিন্তু কোথাও কি রবীন্দ্রনাথ দেহ থেকে হৃদয়কে ছিনিয়ে নিচ্ছেন!!  সংশয়ের ঘনছায়া শুয়ে আছে নীরব মাটিতে। আর মিস মূল, ছায়া সংকোচনে অধৈর্য্যে ত্রস্ত তিমির। লুন্ঠনের সুখে চিরকালের স্বপ্ন। ঘাটের ধারে সেই ব্যাকুল অঙ্গন, প্রদোষের চুম্বন, নাকি!! অস্ফুট চাঁপা কুড়ির বুকে অজানার ভাষা। 

আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ কি ভুলে গেলেন তাঁদের কথা!! সূক্ষ্মরেখায় শুষ্কমাল্যের কূজন, সে তো অযাচিত প্রেমরস। নেপথ্যভূমিতে বিস্ময়ের রঙ্গমঞ্চ স্পর্শ করে জীবনরচনা। অক্লিষ্ট, অমলিন স্মৃতিতে একবার চুম্বন করলে আচ্ছন্নের জল আসে চোখে.., ভালোবাসার৷ পরস্পরের বাঁধনে দাঁড়িয়ে ঝরাপাতার বিসন্নতা৷ বসন্তের পরশে জীবন দিয়েই ছেদ অকস্মাৎ। স্মৃতি উজলিয়ে বাঁধ ভাঙা বন্যার  আয়োজন। কান্নায় ভাঙা প্রেমে সেদিন কি আভিজাত্যের প্রেম কথা দিয়েছিল, "ভুলে যাবে না তো! " নিঃশব্দের মুখে এ কেমন কান্না!  এ যে প্রতিশ্রুতির আদর ছুঁয়ে যায়। 

পরিণতি তো লুসির - কোনোদিন বিবাহ করেন নি। তবে কি আজ আবার বলবো,হে নারী, তুমি তো গোছানো ঘরে ঢুকে অঙ্গে সংগীতের তান এঁকে গেলে। চাপা ভালোবাসার জন্য যে উচাটন, তা কি সত্যিই নীরব হতে বাধ্য হয়!!  অছিলার তীরটা বড়ো মালিন্যহীন হয়ে আছে কাগুজে বুকে। ভালোবাসার ঘরে লুসি তো একক নারী, আর রবীন্দ্রনাথ কালের সারথি। ক্ষণ নয়, কাল নয়, আজ হৃদয় তন্ত্রী স্থবির ভাবনামুক্ত নদী..  ভালোবাসি।
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours