জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
একদিকে আমায় আজকালকার বিজেপি'কে ভালোই লাগে। ওরা যে কী সেটা স্পষ্ট করেই যখন বলছে, তখন খুব সহজ এবং সরল পথেই ওদের রাজনীতি এবং ভাবাদর্শের সাথে সেতুবন্ধন ঘটিয়ে
----- কী যে করতে যাচ্ছে, খুব স্পষ্ট ভাষাতেই বলে দিচ্ছে। আমাদের মতো যে সব কারখানা শ্রমিক, কারখানা বা খনিমুখ ধরে রাজনীতিতে এসেছেন এবং এই সুত্র ধরেই, ভাবাদর্শের মুখটা পেয়ে গেছে
------ তাদের কিন্তু,এক মুহূর্তের জন্য অসুবিধা হয় নাই, বুঝতে। আপনি যদি - একপ্রান্তে 'তিন তালাক' এবং ৩৭০ এর সাথে ভাষা সম্পর্কে বিজেপির অভিমতগুলিকে নিয়ে মালা গাথতে সক্ষম হয়ে যান, তবে
----- এক দলিয় শাসন সংক্রান্ত শ্রী অমিত সাহের ভাষনের পর জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় ভারতীয় সংবিধানের যে সব সংশোধন কোন পথে হবে। লিখে নিন, 'জনগনমম' যে কত অচল এবং ভারতের জাতীয় পতাকাটা 'ম্যারমেরা' সে কথাটা উঠতে বেশী দেরী নেই।
সেদিক থেকে সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিশেবে শ্রী অমিত সাহকে আমার, শ্রীমোদির থেকে বেশী পছন্দ। স্পষ্ট করেই তিনি ভাব এবং রাজনীতি এক যায়গায় এনে বলে দেন। কেবল 'সংগঠনের' দিকটা গোপন রাখেন। বিশ্ব রাজনীতিতে, শ্রী মোদির সর্বশ্রেষ্ট বন্ধু ইসরাইলের নির্বাচনে ভালো নেই। ইতিহাসের বড় খবর, মানুষ সেখানে সুস্থ্যতার দিকে যেতে চাইছে। কিন্তু এখন বিষয় সেখানে নেই। ইসরাইলে নরনিধনের সাংগঠনিক চালচিত্রকে যে, শ্রীমোদি খুব কাছ থেকে পর্য্যবেক্ষন করে থাকেন সেটা সবাই জানেন। আর সব কিছুই যখন জার্মানীর 'আলোতে' হচ্ছে, সেটা সবাই জানেন। কাজেই সংগঠনটা না বল্লেও বুঝে নেওয়া যায়।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে দেখুন। অর্থনীতির দিক থেকে ওরা যে কী এবং কোথায় দেশকে নিয়ে যেতে চাইছেন, সে সব কথা দলিলের আকারে, কেউ কী কখনো বলেছেন বলে শুনেছেন? এ বিষয়ে, কংগ্রেস এবং বিজেপির সম্পর্ক নিয়ে সুন্দর একটা গল্প আমাতে রয়েছে। শ্রী মনমোহন সিং যখন বিরাষ্ট্রীয়করনের নীতি নিলেন, তখন বিজেপি জানিয়ে দিলো, কর্মসূচীটা আসলে তাদের। অন্যদিকে মনে আছে, অটলা বিহারীর আমলে যখন জাহাজঘাটা নিজিকরন হচ্ছে, তখন মাননীয় প্রনব বাবু রাজ্যসভার সদস্য। উনি এম পি না হওয়া পর্য্যন্ত, সব সময় একদিনে উনার সাথে আমি শপথ নিয়েছি।
তখন বিরাষ্ট্রীয়করন বিরোধী সংগ্রামে জীবন রায় নেতা। কাজেই, প্রনব বাবুকে ধরলাম কংগ্রেস দল কী করবে। তিনি আমায়, মেনে নিতে পরামর্শ দিয়ে বোঝালেন - "দাঁড়াও না, ওদেরকে দিয়ে নর্দমার নোংড়াটা আগে সাফ করিয়ে নি।
সব মিলিয়ে এটা বোঝা দরকার, কংগ্রেস দল যেমনভাবে, নিজেকে ভাবাদর্শহীনতার শিকার করেছেন, তেমনভাবেই, বিজেপি ভাবাদর্শ এবং রাজনীতির সেতুবন্ধন করার সুযোগ পেয়েছে। ওরা যেটা করেছে, সেটাকেও যদি কোন ভাবাদর্শের মোরকে প্রচারে রাখতে পারতো, তবে এই দুর্গতি দেশের হোত না।
অন্যদিকে এটাও ঠিক কংগ্রেস যে অর্থনীতি নিয়ে দেশকে, গনতন্ত্র বোঝানোর চেষ্টা করেছে, সেটা একেবারে নির্জলা ঠাট্টা। লিখাপড়া করারো অনেক অসুবিধে। আপনি একপ্রান্তে দেশ বিক্রী করবেন, প্রতিরক্ষায় চাকরামী করবেন - সেটা সোনার-পাথরবাটী।
তাই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে, কংগ্রেস নামক জাহাজটিকে চেপেই ভারতে বিজেপি নামক ফ্যাসিস্ত শক্তিটি ক্ষমতায় এলো। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয়বারের শাসনকালে সাফল্যজনক ভাবেই, রাজনীতি, ভাবাদর্শ এবং সংগঠনের একটি সেতুবন্ধনের ধারনা মানুষকে, বুঝিয়ে দিতে পেরেছে।
এই সুত্রেই বুঝতে হবে, এটা কিঞ্চিৎ ঠিক হলেও, সাধারনভাবে মিথ্যা যেন, বিজেপির জোর বেড়ে যাওয়ার জন্য কংগ্রেস ও এন সি পি থেকে বিজেপিতে ঢোকার মিছিল চলেছে। আসলে ভাবভ্রষ্টতাই কংগ্রেসের বিপর্য্যয়ের কারন।
অন্যদিকে, বিজেপি মানে যে ভাবের দিক দিয়ে, শেষ লড়াইটা ওদের হবে সাম্য এবং বামপন্থিদের সাথে। সে জন্য দেখেছি, বিজেপির জাদরেলরাও অনেক সময় সাম্যকে সমিহ করেই চলেন।
------ অন্যদিকে সাম্য যদি মোকাবিলা না করতে পারে, তবে শ্রমিকশ্রেনী মারা পরবে উলুখাগড়ায় প্রান যাওয়ার মতো। বাকিরা পালাবে। সে কারনে, আজকের দিনে সাম্যবাদীরা একটা শক্ত ভাবাদর্শের উপরে সোজা হয়ে দাড়ান, সে প্রয়োজন শ্রমিকদেরই সব থেকে বেশী।
হয়তো সবাই দেখছে, জীবন রায় অন্ধ, তাই দেখতে পাচ্ছেন না - প্রশ্নটা এখানে সাম্যবাদী রাজনীতি কোথায়ো কী এখন ভাবের সাথে বাধা আছে? ভাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াটাই যে সাম্যবাদী কেন, শ্রমিক আন্দোলনেরো যে সব থেকে বড় সমস্যা - সেটাই বোঝার চেষ্টা হচ্ছে বলে বুঝতে পারছি না।
অথচ সেকালে খুব একটা দলীয় রাজনীতিতে না থাকলেও বুঝেছিলাম,- ষাটের দশকের শেষ দিকে, সংগ্রামে যেমন জোয়ারের টান ধরছিলো,
অসংখ্যভাব এসে শ্রমিক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ছিলো -
---- কিছুই বুঝতাম না, তবু বুঝতাম - একটা ভাবাদর্শগত অবস্থান না নিলে সেই ঝড়ে ইউনিয়ন যাবে, শ্রমিক একতা যাবে, তার সাথে ভারতের গৌরব, শ্রমিকদের চোখের মণি, দুর্গাপুরের কারখানাটাই ভেসে যাবে।
আজকের কালে, যার নিজদের বড় বড় নেতা মেনেছেন, তারা যেটা এখনো বুঝে উঠতে পারেন নাই
------ আমাদের কিন্তু সেটা বুঝতে হয়েছিলো বাধ্য হয়েই। দুর্গাপুরকে যতই স্থানীয় কিংবা রাজ্যরাজনীতিতে বাধার চেষ্টা হোক না কেন, এর ভাবাদর্শগত অবস্থান আন্তর্জাতীক এবং সর্বভারতীয়। তাই শ্রমিক আন্দোলনের যারাই যে সময়, দুর্গাপুরকে, একেবারে রাজ্যরাজনীতির আদলে দেখেছেন, তারা নিজেরা ডুবেছেন এবং শহর সমেত কারখানাকে , ডুবিয়েছেন।
রাজ্য রাজনীতির সাথে সাথে কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতেই হয়েছে, সাথে সাথে শিল্প অন্যদিকে
---- , একপ্রান্তে শ্রমিক আন্দলনের দিক থেকে, অপর প্রান্তে বিভিন্ন দল - বিশেষ করে বাম পন্থীদের বিভিন্ন গ্রুপের রাজনীতিতে ভাবাদর্শগত অবস্থানটিকে সব সময় হিসেবে রাখতে হোতই। সেই ভাবাদর্শের নিরিখেই
বিচার করতে হয়েছে।
এইভাবে সেকালে, চলমান রাজনীতিকে যতটা সম্ভব পাশ কাটিয়ে কাটিয়ে, সাধারন রাজনীতির সাথে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতির সেতুবন্ধন করার জটিল পথ ধরে এগুতে গিয়েই,
------- কারখানা গেটের সাথে নেতাদের আপনত্ব। রাজনৈতিক দলগুলির ভাবাদর্শের বিচারে, কংগ্রেস দলকে দক্ষীন প্রান্তের দলগুলির কেন্দ্র হিসেবে রেকে, তাকে শ্রমিক আন্দোলনের ডান দিকে রাখার চেষ্টা হয়েছে।
---- --- কংগ্রেসের বা দিকে, কিন্তু সাম্যবাদের দক্ষীন দিকে সিপিআই এর জন্য স্থান রেখে
----------বোমা-বারুদের রাজনীতিকে অতিবামে রাখতে শিখলাম। ইস্পাতের মতো শিল্পে শিক্ষিত শ্রমিকদের বিপুল সমাগম থাকার কারনে, ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিকে ঢেলে সাজাতে অসুবিধা হোলো না।
এই পথেই, ইস্পাত আন্দোলন ক্রমে অতীতের দাতা-গ্রহীতা সম্পর্কের আধারিত, শারিরীক ক্ষুদা সম্পর্কীত ট্রেড ইউনিয়নের শেকল ভেংগে, শ্রমিক আন্দোলনের ভাব জাগতে এক বৈপ্লবিক জাগরন নিয়ে আসলো। ---------এই আন্দোলন যে কেবল একের পর এক শিল্পে জাতীয় ভিত্তিক মজুরীনীতির প্রতিষ্ঠা করলো তাই নয়, বাংলায় একপ্রান্তে ১২জুলাই কমিটির মাধ্যমে সাদা এবং সবুজ কলার শ্রমিকদের মিলনে লাল কলার ছড়াতে লাগলো, অন্যপ্রান্ত সরকারী শ্রমিকদের সরভারতীয় ভিতির বিস্তারের সাথে সাথে
এইভাবে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি, ক্রমে ভাবাদর্শের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে নিজেকে স্বচ্ছ এবং বিপ্লবী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো।
এই ইতিহাসের অভিমুখ ধরেই, যদি বিচার করতে হয়, তবে মানতে হবে রাজনীতির অভিমুখে ভাবাদর্শকে রাখার প্রবনতাকে প্রথমে সংকুচিত এবং ক্রমে , কার্যতঃ বর্জন করার কারনেই, এদেশের বর্তমান রাজনৈ্তিক সংকটে,
----- অতি দক্ষিনীরা কার্য্যত প্রতিরোধহীন হয়ে পরেছে। গনসত্বা জ্ঞান এবং সংস্কৃতিহীনতার শূণ্যতায় ক্রমে ঝড়াপাতায় বদলে যাচ্ছে।
------ এ কাজটার শুরু হোল, শ্রমিক আন্দোলনের ভীষ্ম পিতামহের মৃত্যুর পর থেকে। এর প্রভাব বিপুল ভাবে সাম্যবাদী আন্দোলনের উপর পড়েছে।
----- আজ যদি দেখাযায়, সাম্যবাদী আন্দোলন নিজেই, ভাবাদর্শবর্জিত রাজনীতির শিকার হয়ে, ফ্যাসীবাদ বিরোধী মঞ্চে নির্মান করতে পারছে না, কিংবা সেই মঞ্চের কেন্দ্রে যেতে পারছে না
----- এরো প্রধান কারন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের 'শরীর ক্ষুদা সর্বস্ব' রাজনীতি যেমন ভাবে শ্রমিক আন্দোলনকে ভাবাদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, তার রাহুগ্রাস দলেও পরছে। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours