মুসবা তিন্নি, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:
বর্তমানে বাংলাদেশে স্ব-দলীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ ,বাংলাদেশে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগে সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের মধ্যে অস্বস্তি দিনকে দিন বাড়ছে। এছাড়াও এবারের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো রাজধানী ঢাকায় উন্নতমানের ক্যাসিনো । এই ক্যাসিনো গুলোর মূল পরিচালনার দ্বায়িত্বেও রয়েছে সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের নাম। এই ক্লাবের পাশেই কয়েকজন যুবলীগ নেতার কক্ষ রয়েছে। ক্লাবটি বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আলহাজ মোমিমুল হক সাঈদ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, আদর্শের চর্চা না থাকার ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা দুর্নীতিসহ নানান অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। সরকার দলীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, তাদের ব্যাপারে নানান আভিযোগ এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসেছে। সেজন্য গত শনিবার আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বলে এক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ দু'জন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এখন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এবং সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপুমণি সহ আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক দেরিতে যাওয়ার পর সেই অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে দলের অনেক নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছিলেন। এছাড়া কমিটিতে পদ দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি পেয়েছেন। এতোসব অনিয়ম সত্ত্বেও সেসকল নেতা কর্মীরা সরকালি মদদে এবংও পৃষ্ঠপোষকতায় এতোদিন চলে আসছিলেন । তাহলে এখন হঠাৎ করে কি এমন হলো নিজের দলের ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নিয়েছেন অবস্থান?
এবারে আসি ক্যাসিনো প্রসঙ্গে, ঢাকায় যতগুলো আধুনিক বৈদ্যুতিক ক্যাসিনো জুয়ার বোর্ড আছে, সেগুলো অপারেট করতে চীন ও নেপাল থেকে অভিজ্ঞ লোক আনা হয়েছে। তারাই এই বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে। বিনিময়ে প্রতি মাসে বেতন পায় তারা। বুধবারের অভিযানের পর এরকম কয়েকজন নাগরিকের পাসপোর্ট ও নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের কাছে ওয়ার্ক পারমিট আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ক্যাসিনো গুলোর ভেতরের রঙিন আলো ও আধুনিক সাজসজ্জা দেখলে যেকারও চোখ ঝলসে যাবে। এসি রুমের এসব ক্যাসিনোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনভাবে করা, যাতে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতেই ভয় পায়। উন্নত দেশের অধিক ব্যায়বহুল ক্যাসিনোগুলো যেমন হয় বাংলাদেশের ঢাকার ক্যাসিনো গুলোও তেমনি । এখন কথা হচ্ছে, ক্যাসিনো কি , যেখানে জুয়া,মদ,নারী এগুলো উন্মুক্ত থাকে । এই অবৈধ্য জায়গাগুলো গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়,সরকারি নেতাগুলোর মাধ্যমে । যাদের এতোদিন ছাড় দিয়ে রাখা হয়েছিলো । এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে শুধুই ক্যাসিনো , যে আদর্শিক জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র গঠিত হয়েছে সেই আদর্শের ছিটাফোঁটাও নেই। উল্টো ক্যাসিনো ও মাদকের আখড়ার ক্লাবে পরিণত হয়েছে এটি। ক্যাসিনোর ক্লাবে টাঙানো হয়েছে দেশের বর্ণাঢ্য মানুষের ছবি। ঢাকার গুলিস্তানের এই ক্লাবটির প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই নামাজের ঘর। তারপর ক্যাসিনোর কক্ষ। ক্যাসিনোর কক্ষের পর রয়েছে যুবলীগ নেতার ইসমাঈল হোসেন সম্রাটের কক্ষ। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছবি টাঙানো রয়েছে। ছোট ছোট কক্ষের ভেতরে বিছানা পাতানো দেখা গেছে। তাহলে মোদ্দা কথা, সম্পূর্ণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় , সরকারি মদদেই চলেছে এই রমরমা রঙিন ব্যবসাগুলা । তবে কেনো এখন এসে এই তোড়জোড় ? কেনো এখন নিজেদের তেল,নুনেই তৈরী করা সুঠামদেহি অপরাধগুলোকে এভাবে ধড়পাকড় চলছে ? তবে এটা কি রাজনৈতিক অন্যকোনো হাওয়া ? নাকি এই ঘটনাগুলো সামনে রেখে অভ্যন্তরে আরো বড়ো কোন ঘটনা হচ্ছে
Post A Comment:
0 comments so far,add yours