জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
অন্যকথায় বলা যায়, ইতিহাসের গতিপথে যে আবর্জনা জমা হয়েছে, তাকে সাফ করে দেওয়া এবং তাকে সাগর পর্য্যন্ত পৌছে দেওয়া। সে নিজে গতিপথ নির্মান করতে পারে না। তাকে দেখতে হয়, যাত্রাপথে ইতিহাস পথ হারিয়ে না ফেলে। সে কারনেই বলা হয় তারাই ততটুকু সাম্যবাদী, যারা কু সাধারন শিক্ষার সাথে সাথে যেমনভাবে এবং যতটু সমাজ -ডাইনামিজমের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
এই সুত্রেই মার্ক্সবাদের সাথে যখন লেনিনবাদকে যুক্ত করা হয়, তখন ভেতর থেকে সাম্যবাদী এবং ঘোষনার মধ্যদিয়ে সাম্যবাদী, সাম্যবাদী সম্পর্কে, এই দুটো ধারনা সামনে এসেছে । লেনিনবাদ সেই সুত্রেই, ঘোষনার মধ্যে দিয়ে সাম্যবাদী এবং ভেতর থেকে সাম্যবাদীর অন্তসম্পর্কটা কি হবে, সেটা যেমন সাংগঠনিক পথে ঠিক করে দিয়েছেন, তেমনি যারা প্রকৃত অর্থে মিড-ওয়াইফের কাজ করবেন, রুপান্তরনের কার্য্যকারন সম্পর্কে সেটাকেও চিহিত করেছেন। সেটা করা হয়েছিলো ইতিহাসের আলোকেই।
মার্ক্সে নিজেই সর্বপ্রথম বলে গেলেন, কারখানার শ্রমিকরা একপ্রান্তে যেমন অর্থনীতির জীবন্ত সম্পর্কগুলির মধ্যেই কাজ করেন এবং সেই সুত্রেই উৎপাদনের সম্পর্কের কারনেই, সমাজে যে নিরন্তর বদলগুলি হচ্ছে সেই পরিবর্তন গুলি, শ্রমের সাথে একাত্ম হয়ে যায়, সে জন্যে শ্রমিক শ্রেনীই হবে, প্রকৃ্ত অর্থে রুপান্তরের গতি মুখ আগলানোর সৈনিকঃ একাধারে 'শ্রম' এবং শ্রমের বাহক। লেনিনের শিক্ষা অনুযায়ী, সেজন্য কারখানা কিংবা খনিমুখকে আমরা রুপান্তরকামীতাকে শক্তি ও সংরক্ষনের সুতিকাগার কিংবা নার্সিং হোম বলে জেনেছি।
এই সুযোগেই আরো একটা কথা লিখে রাখি, পরের আলোচনার সুবিধার্তে। এই যে আমরা নেতারা, আখছার যেমনভাবে যুক্তি তর্কে দর্শনকে এবং দর্শনের আলোকে ভারতীয় রুপান্তরের ধারাটিকে চিহ্নিত করতে না পেরে মার্ক্সকে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে সামনে আনি
----- এতে শত্রুকে এমন ধারনা প্রচারের সুযোগ করে দেয়, যেন মার্ক্সস, কমিউনিষ্ট বা শ্রমিক শ্রেনীর নেতা।
আসলে সেটা একেবারেই নয়। ভারতে রেনেঁশা যদি কারুর হাতে সব থেকে বেশি মুক্তি পেয়েছিলো, তিনি হলেন, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ। সে কারনে যেমন উনাকে কংগ্রেস দলের নেতা বলে চিহ্নিত করা যেতো না। এইভাবে রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখেই, বুঝতে হয়, মার্ক্সস যা লিখেছেন বা প্রমান করেছেন, সেটা রবীন্দ্র রচনার মতোই দর্শনেরই এক সর্বোচ্চ প্রতিরুপ । রবীন্দ্রনাথ যদি চিত্তমুক্তিতেই আটকে গিয়ে থাকেন মার্ক্স আরো অনেক এগিয়ে চিত্ত মুক্তির উপায় এবং সাম্যতেই যে প্রকৃত অর্থে মুক্তির কাজ শুরু হবে, সেটা বলে দিয়ে, দর্শনের প্রায় সব জমে থাকা প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেলেন। এইভাবে তিনি সর্বযুগের এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট দার্শনিকের আসন টি ছিনিয়ে নিয়ে ছিলেন।,
সমকালীন রাজনীতির অনেক, জটিল প্রশ্নের সমাধান করার অক্ষমতায়,মুর্খের মতো মার্ক্সেকে টেনে এনে, তাকে 'কমিউনিষ্ট' হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ করে দেওয়ায়, ইতিহাসের এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে ক্ষতির কারন হয়েছে।
---- শুধু রেনেশাঁ নয়, বিকট স্বার্থান্বেসি দের হাতে রেনেশার নিধনের সাথে সাথে, ইউরোপের গনতান্ত্রিক বিপ্লবের ধ্বসে যাওয়ার পর থেকে, বিপুল অন্বেষন চালিয়েই তিনি, পুজিতান্ত্রের পরবর্তি উত্তোরন হিসেবে সাম্যের পথে সমাজতন্ত্রকে চিহ্নিত করলেন, তখন তিনি শ্রমিক শ্রেনীকেই পেলেন ইতিহাসের উত্তর সাধাক হিসেবে। এটাই ইতিহাস। দল কিংবা মতের বিষয় কিছু নয়।
লেনিনবাদ এই ধারনাকে এগিয়ে দিয়ে, যদি বলে থাকেন - , কারখানা-খনিমুখ এবং বন্দর ইত্যাদি হবে, রুপান্তরের কারিগরদের জন্মদাতা নার্সিংহোম, সেটাও ইতিহাসেরই অবিমুখে, নানা উপচারের আয়োজন।
লেনিনের সময়েই, রেল ব্যবস্থা, আকাশ পথ ইত্যাদি সমেত কারখানা শিল্পেও যান্ত্রিকিকরন অনেক এগিয়েছে। ক্রমে যেভাবে কারখানা বা খনি শিল্পে, শ্রমের উন্নত ধারার সাথে জ্ঞানের অভিমুখ উন্মুক্ত হয়েছে, তেমনভাবেই, মার্ক্স-লেনিনবাদ ইতিহাসের দর্শন উন্মুক্তির বিশ্বের প্রধান দার্শনিক হিসেবে আবির্ভুত হলেন। তিনি যুক্ত করলেন, রুপান্তরের ধাপে ধাপে চিন্তন প্রকৃয়ার উন্মুক্তি ঘটতে থাকবে।
পুরানো লেখার অভিমুখটা খুজে পেতে, যে কথা কয়টি বলার প্রয়োজন ছিলো বলে নেওয়া হোল।
সেই সুত্রে এগিয়ে গিয়ে বলতে হয়, ভারতীয় সমাজের রুপান্তর প্রকৃয়াটি চিহ্নিত করতে যথাযথ ভাবেই কমিউনিষ্ট পার্টী মার্ক্সবাদী, সাম্য তো দূর অস্ত, সমাজতন্ত্রের কথাও বলে নাই।
---- মানুষের কাছে একটা শ্রেফ একটা সুত্রই উত্থাপন করেছে। বিদ্যমান গনতান্ত্রিক কাঠামো বা মানুষে মানুষে সম্পর্কের মধ্যে, ইতিহাসে অতীত হয়ে যাওয়া যে সব সম্পর্ক রয়ে গেছে সেগুলির অবসান ঘটাতে গিয়ে যে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন গুলি প্রয়োজন সেগুলি করা হোক।
---- সেখনে আরো এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে, সি পি আই এর প্রস্তাবকে মেনে নিতে সি পি আই এম অস্বিকার করেছিলো। সেখানে রুপান্তরনের প্রশ্নে শ্রমিকদের এগিয়ে দেওয়ার ভুমিকার বিষয়টি না রাখা এবং অর্থনৈ্তিক সংস্কারকে, দাসযুগীয় ও সামন্তিক দাসত্ব অবলুপ্তি পর্য্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখে ভারতীয় পুজিকে অবাধ রাখতে চাওয়া হয়েছিলো। পরে, পশ্চিম বাঙ্গালার বামফ্রন্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতেই বলবো, শ্রমিক নেতত্বের বিষয়টি বাদ দিয়ে, সোভিয়েত উত্তরকালের প্রাসংগিকতার নামে বাকি সব বিষয়েই তত্বগতভাবে , সিপিআই (এম) সিপি আই এর কাছাকাছি চলে আসে।
অবস্য ইতিমধ্যে, প্রমানিত বাকি সব চলে গেলে পর, শ্রমিক নেতৃত্ব কুজ্ঝটিকা হিসেবেই থেকে যায়। ভবিষ্যতে কোনদিন যদি শ্রমিক আন্দোলন 'শ্রম' আত্মমর্য্যাদায় ফিরে আসতে পারে, সেদিনই প্রমান হবে কর্মসুচীতিতে আপোষ কতটুকু প্রয়োজনের তাগিদে, কতটুকুই বা সরকারীয়ানার তাগিদে। ইতিমধ্যেই, অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত হয়েছি, আজ শ্রমিক আন্দোলনে আন্তর্জাতীকতার বিড়ম্বনা বাড়ার সাথে সাথে যে সাধারনভাবে সামাজিক নির্বুদ্ধিতা বেড়ে চলেছে।
যাইহোক, বর্তমান আলোচনা চালিয়ে যেতে, বিষয়গুলি অন্যকারনে আসছে। রুপান্তরেরনের পথে যখন 'মুক্তির' এলাকাগুলি যেমনভাবে ছোট করা চলতে থাকবে, তেমনভাবে একপ্রান্তে ভাবাদর্ষ্য গত অবস্থান গুলি দুর্বল হতে থাকে, অন্যপ্রান্তে, শত্রুর পক্ষে খব কাছাকাছি চলে আসার সুযোগ পেয়ে যায়।অন্যদিকে 'দাসত্ব'কেমন ভাবে তার ভাবাদর্শগত অবস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে?
কাজেই, কোন সামাজিক রুপান্তরে কোন সাম্যবাদী দলের অথবা লেনিনের কথায় মিড ওয়াইফের ভূমিকার সাথে সামাজিক ডাইনামিজমকে, পরিবর্তনকামী বা উত্তোরন মুখীনতায় নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে,
----- শ্রমিক শ্রেনীর ভুমিকা থেকেই যাবে, কেউ মানুক কিংবা নয়।
আগের লেখাগুলিতে, কোন রুপান্তরকামী আন্দোলনের গর্ভে যেমন নতুনের একটা শ্রোত থাকে, সেখানে কিভাবে পশ্চাতপদতার পুজ-রক্ত কিভাবে সেই ধারাকে অনবরত প্রভাবিত করতে থাকে এবং এসব প্রভাব যে কিভাবে, একপ্রান্তে প্রতিবিপ্লবকে শক্তি যোগায়,সাথে সাথে অন্যপ্রান্তে কিভাবে কখনো ভয়-ডরের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ঝোক, আবার কখনো গোলা-বারুদের ঝোক এনে কোন সংগ্রামকে
----- বিপথগামী করবে, সে সব কথা আগে উল্লেখ করেছি। শ্রমিক শ্রেনীর সামনে ইতিহাসের দায় এখানেই। প্রকৃত অর্থে, চিনের গ্রাম দিয়ে শহর ঘেড়াও করা লড়াই যেখানে অনেকটা কৃ্ষি বিপ্লবের সাথে বন্দুকের লড়াইটাই প্রধান হওয়ার কথা সেখানে সোভিয়েতে শহর (শিল্পাঞ্চল) থেকে গ্রামে ছরিয়ে পরায়, অনেক ইতিহাস চেতনা, ধৈর্য্য, সহনশীলতা এবং সর্বোপোরি মানুষ সম্পর্কে ধারনা অনেক অনেক গভীরে যেতে হবে।
এখান থেকেই কমরেড বি টি রনদিভের সেই পরামর্শকে বুঝতে হবে
---- একজন শ্রমিক নেতাকে, এই মহাবিশ্বের যে কোন ঘটনাকে এক লহমায় মহাবিশ্বের সাথে যুক্ত করতে শিখতে হবে।
এই জ্ঞান কেবল দুটো ভাষন দিয়ে দেওয়া নয় । রুপান্তরের সম্মুখভাগে কিংবা পশ্চাতভূমিতে শত্রু শিবিরের
----- প্রতিটি মুখায়বের রেখার অর্থ তাকে বুঝে নিতে হবে। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours