শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
মুসলিমানেরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত। তার মধ্যে অন্যতম শীয়া ও সুন্নী। শীয়ারা কয়েক ভাগে বিভক্ত। ঈমামীয়া, ইসমাইলিয়া, জায়েদীয়া, কীসানীয়া, ও গুলাত উপসম্প্রদায়ের বিভক্ত। সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপবিভাগ। মালিকি, হানাফি, সাফিয়ি, হাম্বলি, লা মাজহাবি, ওহাবী, উপসম্প্রদায়। এছাড়াও রয়েছে ; খারেজি, মুতাজিলা, আল মারজিয়া, জিন্দক প্রভৃতি।
এ লেখায় উপরিউল্লেখিত কোন সম্প্রদায় বা উপসম্প্রদায় নিয়ে আলোচনা করছি না। আলোচনা করছি ভারতীয় মুসলিম উপসম্প্রদায় নিয়ে।
ভারত যেমন বিচিত্র৷ বিচিত্র ভারতের মানচিত্র, ভাষা, সংস্কৃতি। তেমনি রয়েছে বিচিত্র কিছু মুসলিম উপসম্প্রদায়। যেমন, হুসৈনী ব্রাহ্মণ, মুসলিম পুরহিত, দেবদেবী পুজক মুসলমান।
হুসৈনি ব্রাহ্মণ সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত। এমনকি পরস্পর বিরোধী মতও রয়েছে। " অ্যা গ্লাোঁসরী অব দ্য ট্রাইব্স এন্ড কাস্টস্... " এর অনুসারে; হুসৈনি ব্রাহ্মণ ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দু। তারা পৈতা পরে, তিলক লাগায়, কিন্তু দানভিক্ষা মুসলমানদের কাছ থেকে নেয়। হিন্দুদের থেকে নয়। হুসেইনি ব্রাহ্মণ, সনাতন ধর্ম ও সংস্কারের প্রতি উদাসিন। এরা সনাতন ধর্মের শাস্ত্র পড়ে না। না পুজা করতে চায়, না মন্দীরে যেতে চায়। যদিও তাদের বিয়ে শাদী ব্রাহ্মণদের পরামর্শ ও নিয়মানুসারে হয়ে থাকে। এবং প্রায় সকল কিছু হিন্দুদের মতই।
প্রসিদ্ধ উর্দু কবি, যমুদাস (আক্তার) বলেন; " আমার সম্পর্ক মোহিয়ালোলীদের সাথে। আর আমাকে হুসেইনি ব্রাহ্মণ বলা হয়। কেন না, দশই মহরম আমরা হুসাইনের জন্য শোক পালন করি। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন সেদিন রোজা রাখি। ১৯২৬ সালে "আলনাতিক' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো; " শহীদানে কারবালা কি ফিদায়ে হিন্দু"র রিভিউ প্রকাশ হয়। যার লেখক নাজির হাসিমি। বৃটিশ
আমলে লিখিত গেজেটে পাঞ্জাবের তিন নগরে হুসেইনি ব্রাহ্মণদের আলোচনা রয়েছে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে, প্রসিদ্ধ ঈমাম বারা ঈমাম হুসাইনের চুল সংরক্ষিত আছে। যা কাবুল থেকে আনা হয়েছিলো। একজন হুসেইনি ব্রাহ্মণ তা সংগ্রহ করেছিলেন। ('কওমি আওয়াজ ' দিল্লি প্রকাশ ১৯৯৫)।
হুসেইনি ব্রাহ্মণদের সাথে ঈমাম হুসেইনের সম্পর্ক গভীর ছিলো। হুসেইনি ব্রাহ্মণদের পুর্বপুরুষেরা কারবালায় ঈমাম হুসেইনের সাথে 'শহীদ' হন। তাদের আরব থেকে ইরানে বহিস্কার করাও হয়। ( বিস্লোচৌঁ কি তারিখ,কবায়ল কে আয়নে মে) এমন কি এও মনে করা হয়, একবার ব্রাহ্মণদের একটি দল পয়গাম্বর হযরত মুহাম্মাদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন এবং কশল বিনিময় হয় এবং ভারতবর্ষের এই ব্রাহ্মণদের শুভ কামনাও করেন।( মালুফুজাতে- লেখক শাহ আ আজীজ)
এও প্রচলিত রয়েছে ; শিয়াল কোটের (আজকের পাকিস্তান) এক সন্ন্যাসী ( আরবী 'রাহাব') হুসেনের মস্তকের বদলে নিজের সাত সন্তানের কাটা মস্তক দিয়েছিলেন।( A glossary of the tribes & castes..) এ ছাড়াও কারবালায় হুসোইনি ব্রাহ্মণদের আরো বলিদানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
★ রাজস্থানে সুরাত নগরের কাছে, কিছু মন্দিরের পুরোহিত মুসলমান! এ নিয়ে আদালত পর্যন্ত যাওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় আদালত মুসলিম পুরোহিতের পক্ষেই রায় দেয়। ভারতের বিখ্যাত মন্দির বদরীনাথ। বদরীনাথ দেবী ও কুবেরের মূর্তী রয়েছে বদরীনাথ মন্দীরে। কিন্তুু এই মন্দীরের পৌরহিত্য যারা, করেন তাদের নামগুলো ইসলাম ধর্মের তথা মুসলমান।
ভারতে এমন কিছু মুসলিম রয়েছে, যারা ইসলাম ধর্ম পালন করলেও; তারা কখনো কখনো পুজাও করে থাকে। যেমন; বুলদানার দেশমুখ তথা দেশ পান্ডে সম্প্রদায় মুসলমান হলেও ইষ্টদেবের পুঁজা করে থাকে। গোপনীয় ভাবে ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণও করে থাকে। ( Indian Muslim)
বীজাপুর ও আহমদ নগরে কিছু মুসলিম, বিয়েশাদীতে কাজী ও ব্রাহ্মণ দুইজনকেই আনা হয়। দেবতার পুঁজাও করা হয়। ঘরেও মুর্তী রেখে থাকে।
মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের আশেপাশে কিছু মুসলিম রয়েছে, যারা, বেশভুষায় হিন্দুদের মতই। তারা মুসলিম হলেও ভবানীর পুঁজাও করে।( Indore state gazetteer) ভারতে এ রকম আরো মুসলিম উপসম্প্রদায় রয়েছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours