রুদ্র সান্যাল, লেখক, শিলিগুড়ি:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ যুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে আর কোন দিন হয়েছিল কিনা সন্দেহ। মানব ইতিহাসের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছিল এই যুদ্ধের কারণে। যে বিপুল পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চলেছিল এই যুদ্ধে, তা এক স্থায়ী ছাপ ফেলে যায় মানব মনে। যুদ্ধে উভয় পক্ষই জেতার জন্যে অনেক নারকীয় কাজ করেছিল। তবে জার্মানির নেতৃত্বে অক্ষশক্তির নারকীয়তা সব কিছুকে চাপিয়ে যায়। যদিও অনেক ঐতিহাসিকের মতে জাপানে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ সেই নারকীয়তাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল মিত্রসক্তি। তবুও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হয়তো এই পরমাণু বিস্ফোরণ যুদ্ধকে থামাতে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল। বিতর্ক থাকলেও এটা বলাবাহুল্যই।

অক্ষশক্তি বিভিন্ন দেশ দখল করার জন্যে যে পরিমান অবর্ণনীয় অত্যাচার চালায় তা মানব জাতির ইতিহাসে কেউ কোন দিন করেছে কিনা সন্দেহ। ইউরোপের নয় কোটি ইহুদিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ইহুদির প্রাণ ধ্বংস করে এই নাজি শক্তি। এই নারকীয় ঘটনা সহ অন্যান্য ঘটনার যাবতীয় বিচার করবার উদ্দেশ্য নিয়ে সেই যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়। তৎকালীন তিন মহা শক্তি, আমেরিকা ব্রিটেন আর সোভিয়েতের মধ্যে ১৯৪৩ সালে মস্কো চুক্তি স্বাক্ষরের পরেই অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন নারকীয় অত্যাচার আর গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গ ওঠে, এবং এই তিন মহাশক্তি ঘোষণা করে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন তাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।

ইউরোপে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যখন মিত্র শক্তি দেখতে পেল সারা জার্মানি সহ তাদের অধিকৃত অঞ্চলে কন্সট্রেশন ক্যাম্পের নামে মানুষ নিধন যজ্ঞের স্থান গুলিকে যেমন- Aushwitz, Dachau,Buchenwald, Treblinka প্রভৃতি। এই সব জায়গায় যেভাবে বিশ্ব মানবতাকে হত্যা করা হয়েছে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, তাতে যেকোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ দিশাহারা হয়ে যেতে বাধ্য। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ সালের ৮ই আগস্ট লন্ডনে, মিত্রশক্তির চারটি শীর্ষ দেশ ' ইউরোপীয় অক্ষশক্তির শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি লন্ডন চুক্তি নামে খ্যাত। এই চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবে আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতে। এই লন্ডন চুক্তির সাথে আর একটি চার্টার যুক্ত হয়, এই চার্টার ন্যুরেনবার্গ চার্টার নামে খ্যাত।

প্রাথমিক ভাবে বিচারের জন্য ন্যুরেনবার্গ শহরের কথা ভাবা হয় নি। লিপজিগ ও লুক্সেমবার্গের কথা ভাবা হচ্ছিল। আবার সোভিয়েতের পছন্দ ছিল থার্ড রাইখের রাজধানী বার্লিনেই এই বিচার হোক। শেষে সব দিক বিবেচনা করে ন্যুরেনবার্গ কথা ভাবা হয়। কারণ সেখানে প্যালেস অফ জাস্টিস নামে এক বিশাল ভবন এবং এর পাশেই এক বৃহৎ জেলখানা থাকায় এর সুবিধা হয়েছিল। তবে আর একটি কারণ ও ছিল, হিটলারের অন্যতম পছন্দের শহর ছিল ন্যুরেনবার্গ। নাৎসি পার্টির বার্ষিক র‍্যালি হতো এই ন্যুরেনবার্গ শহরে। এখানে প্রতিবছর নাৎসিরা তাদের যাবতীয় নীতি তৈরি করতো। তাই সারা বিশ্বকে বার্তা দিতেই এই খানেই বিচার কার্যের ব্যবস্থা করেছিল মিত্রশক্তি।
তবে সোভিয়েতকে সন্তুষ্ট করার জন্যে বার্লিনকে ট্রাইব্যুনালের সদর দপ্তর বলে ঘোষণা করা হয়। যা ন্যুরেনবার্গ ট্রাইব্যুনালের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্বীকৃতি লাভ করে।

৮ ই আগস্ট ১৯৪৫ সালে যে লন্ডন চুক্তি হয়েছিল মিত্র শক্তির নিজেদের মধ্যে, সেই চুক্তি মূলত ৭ টি অনুচ্ছেদের সমষ্টি।এই চুক্তি তেই আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জার্মান যুদ্ধপরাধীদের বিচারের জন্য। লন্ডন চুক্তির দুই নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন, এক্তিয়ার, এবং কার্যক্রম চুক্তির সাথে সংযুক্ত চার্টারের মোতাবেক অনুযায়ী ঠিক হবে। এবং বলা হয় চার্টারটি হবে চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। লন্ডন চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও চুক্তিটি ন্যুরেনবার্গ চার্টার হিসেবে সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত।  এই চার্টারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, যুদ্ধ সংক্রান্ত অপরাধের সংজ্ঞা নির্ধারণ। এই দুই নম্বর অনুচ্ছেদে শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, ও মানবতাবিরোধী অপরাধ কে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের যাবতীয় সুযোগ দেওয়া হবে। যে কেউ অভিযোগ করলেই হবে না। সেই অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে অভিযোগকারীকে, এবং বিচারের সময় অভিযুক্তের বোধগম্য ভাষায় বিচারকার্য সম্পাদন করতে হবে। যেহেতু বেশির ভাগ অভিযুক্তই জার্মান ছিলেন। তাই তাদের মাতৃভাষাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিচার কাজ চালাতে হয়েছে। যাতে তারা বুঝতে পারেন। তবে দোভাষীর ব্যবস্থাও ছিল। কারণ বিচারক এবং সরকারি প্রসিকিউটর রা জার্মান ভাষায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। তবে ন্যুরেনবার্গ চার্টারে অভিযুক্তদের শাস্তির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ বা আপিলের সরাসরি ব্যবস্থা ছিল না। আর্টিকল ২৯ অনুযায়ী জার্মানির নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সাজা বৃদ্ধির অধিকার কমিয়ে এনে সেই প্রদত্ত দন্ড কে পুনর্বিচার করার অধিকার দেওয়া হয়। 
আসলে ন্যুরেনবার্গ চার্টারের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে শত্রুপক্ষকে একটি বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে এনে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের মধ্যে দিয়ে যাদের প্রতি তারা অপরাধ করেছে, তাদের কে উপযুক্ত বিচার প্রদান করে অপরাধীকে যথাযুক্ত শাস্তি প্রদান করা। মোটামুটি ভাবে তৎকালীন ইউরোপীয় সিভিল এবং কমন ল কে মিলিয়ে এই বিচার কার্য সম্পাদন করা হয়।

ন্যুরেনবার্গ আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের মূল বিচারক ছিলেন ব্রিটেনের কর্নেল স্যার জিওফ্রে লরেন্স। আমেরিকার ফ্রান্সিস বিড্ডল,সোভিয়েত ইউনিয়নের মেজর জেনারেল ইওনা নিকেচেনকো এবং ফ্রান্সের হেনরি দনেদি দ্য ভ্যাবরাস। এদের বিকল্প বিচারক হিসেবে মাঝে মাঝে দায়িত্ব সামলাতেন, ব্রিটেনের স্যার নরমান বিরকেট, আমেরিকার জন জে পার্কার, সোভিয়েতের আলেকজান্ডার ভলচকভ আর ফ্রান্সের রবার্ট ফ্যালকো। এছাড়া বাদী পক্ষের চীফ প্রসিকিউটর ছিলেন ব্রিটেনের এটর্নি জেনারেল, স্যার হার্টলি শওক্রস, আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রবার্ট এইচ জ্যাকসন। সোভিয়েতের  লেফটেন্যান্ট জেনারেল,রোমান আন্দ্রভিচ রুডেনকা,এবং ফ্রান্সের ফ্রান্সিসকো দ্য মেন্থন। এছাড়া বিবাদী পক্ষের এটর্নি গণ মূলত ছিলেন জার্মান আইনজীবী।

ন্যুরেনবার্গ ট্রায়ালের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯৪৫ সালের ২০ শে নভেম্বর,সকাল দশ টায়। অন্যতম বিচারক স্যার লরেন্স বলেন " This trial ,which is now begin , is unique in the annals of jurisprudence." 
মোট ২৪ জন শীর্ষ স্থানীয় জার্মান নাৎসি অভিযুক্তকে ডাকা হয়েছিল। তার মধ্যে ২০ জন উপস্থিত ছিলেন। এক জন আত্মহত্যা করেছিলেন। হিটলার, এবং গোয়েবেলস তিনজনই ধরা পড়ার আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন। আর হিমলার ধরা পড়ার পর আত্মহত্যা করেছিলেন। ফলে তারা অপরাধী হয়েও বাদ গিয়েছিলেন। আর বাকি ২১ জনের মধ্যে মার্টিন বোরম্যান পলাতক থাকায় তার বিচার হয় নি। আর বিচারের প্রাককালে, রবার্ট লেভ আত্মহত্যা করেন। আবার এই ২০ জনের মধ্যে, বিশিষ্ট জার্মান শিল্পপতি গুস্তাব ক্রপ কে প্রাথমিক শুনানিতেই বাদ দেওয়া হয়। 

এই শুনানি চলা কালে বিচারক তথা সরকারি প্রসিকিউটররা অবাক বিস্ময়ে দেখেছিলেন কিভাবে জার্মানির বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক রা এই সংগঠিত অপরাধের মধ্যে নিজেদের কে অনেকটাই সজ্ঞানে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। একটা গোটা দেশ তথা সমাজ কে কিভাবে নাৎসিরা নিজেদের অনুকূলে এনে ফেলেছিল। বিশ্ব ইতিহাসে এই ধরণের সংগঠিত মানব জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ দেখা গিয়েছিল কিনা যা যায় না। যার অন্যতম অংশ ছিলেন বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক শিল্পপতি প্রমুখ।  অথচ এই নাৎসিরা কিন্তু গণতান্ত্রিক ভাবেই জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছিল। সাড়ে ছয় কোটি ইহুদিদের তার জন্যে বলি দিতে হলো নির্মম ভাবে, এবং সব দেখেও জার্মানির বুদ্ধিজীবীরা চুপচাপ রইলেন নির্বিকার ভাবে। ধরা পড়ার পর সব দোষের দায়ভার চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেন উপর ওলার ঘাড়ে। অর্থাৎ হিটলারের কাঁধে। নিজেদের কোন দায়বদ্ধতা স্বীকার করলেন না। একমাত্র দায়ভার স্বীকার করলেন, এলবার্ট স্পিয়ার। যিনি অসাধারণ আর্কিটেকচার ছিলেন এবং হিটলারের মন্ত্রী সভার অন্যতম যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।

যে কয়জনের বিচার হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাইখমার্শাল হ্যারম্যান গোয়েরিং যিনি যুদ্ধের সময় রুডলফ হেস ইংরেজদের হাতে বন্দি হওয়ার পর ছিলেন হিটলারের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি। যদিও আত্মহত্যা করার আগে হিটলার তিতি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন গোয়েরিং এর প্রতি। তাই সমস্ত জার্মান জাতির দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন, জার্মান নৌবাহিনীর প্রধান গ্র্যান্ড এডমিরাল দোয়েনিৎজ এর হাতে। বিচারে এমন ভাবে গোয়েরিং নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন, এবং যেভাবে যুক্তি সাজিয়েছিলেন, যে বিচারকরা পর্যন্ত দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলেন, ওর বিষয়। গোয়েরিং ছিলেন অসম্ভব বুদ্ধিমান ও ব্যাক্তিত্ববান মানুষ। শেষ সরকারি প্রসিকিউটর আমেরিকার রবার্ট জ্যাকসনের প্রশ্নবানে বিক্ষিপ্ত হয়ে নিজে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন যে তিনিও গণহত্যার ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারেন না। তাই বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়। কিন্তু তার আগেই আত্মহত্যা করেন। বিচার চলাকালীন আদালতে এমন সব দস্তাবেজ, এবং গণহত্যার ভিডিও দেখানো হয়, যার ফলে অনেক অপরাধী এবং সাক্ষী সহ অনেকেই মূর্ছা যান।

শেষ পর্যন্ত ন্যুরেনবার্গ ট্রায়ালের বিচারকরা রায় ঘোষণা করেন ১লা অক্টোবর ১৯৪৬ সালে,এবং তা কার্যকর করা হয় ১৬ ই অক্টোবর।

দোয়েনিৎজ, স্পিয়ার সহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ নাৎসি পদাধিকারীদের ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। রুডলফ হেস কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।  এই বিচার নিয়েও যথেষ্ট সমালোচনা হয়। অনেকে একে যুদ্ধজয়ীদের একপেশে বিচার প্রক্রিয়া বলে সমালোচিত করেছেন। এই বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক সময় সোভিয়েত প্রতিনিধি আমেরিকান এবং ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের সন্দেহের চোখে দেখতেন। বিশেষ করে যে সব জার্মানরা সোভিয়েতের উপর আক্রমণের সময় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বন্দি হয়েছিল। তাদের প্রতি সহানুভূতির চোখে বিচারকরা দেখতেন, বলে সোভিয়েত দের সন্দেহ ছিল। এই সব প্রতিকূলতার কারণে, নাৎসি জার্মানির ধৃত নাৎসি বিদেশমন্ত্রী জোয়াকিম ভন রিবেনট্রপ ২০শে নভেম্বর ১৯৪৫ সালে বলেছিলেন, "You'll see . Agee years from now the lawyers of the world will condemn this trial.You can't have a trial without law."

সমালোচনা সত্ত্বেও এই বিচারের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়, এই বিচারে ১২জনকে মৃত্যুদন্ড, ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৭৭ জন কে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত করা হয়। বাকিরা খালাস পায়।

একথা কোন মতেই অস্বীকার করা যায় না, যে মানবতা বিরোধী গণ হত্যা প্রতিরোধে,বিশেষত যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধে, ন্যুরেনবার্গ ট্রাইবুনাল আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী সংযোজন। 

এই ট্রাইব্যুনালের কারণে বহু নতুন আইনের সৃষ্টি হয়েছে, মানবতা রক্ষার ক্ষেত্রে। একটি বিষয় এই ট্রাইবুনাল পরিষ্কার করে দিয়েছে, যে যতই উচ্চপদে থাকুন না কেন, তার ব্যক্তিগত আচরণের জন্যে তিনি কখনোই দেশকে বা তার সামরিক বিভাগ কে দোষ দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। তার আচরণের দোষ তাকেই বহন করতে হবে, দেশ কে নয়। এ এক যুগান্তকারী বিশ্লেষণ।

ন্যুরেনবার্গ বিচার বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম বহুজাতিক ট্রাইবুনাল। কোন রাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রনায়ক তথা সহকর্মীদের কে বিশেষ আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতে বিচার করে যথপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার নজির প্রথম ন্যুরেনবার্গ ট্রাইবুনালই করে দেখায়। তাই বলা যায় মানবতা রক্ষা তথা গণহত্যা প্রতিরোধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যেকোন গণহত্যার তথা যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের বিশেষ অগ্রগতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ন প্রভাব বিস্তার করেছে। তাই বলা যেতে পারে, আধুনিক যুদ্ধ আইন তথা মানবতা রক্ষার ক্ষেত্রে ন্যুরেনবার্গ ট্রাইবুনাল এক অনন্য ঐতিহাসিক দলিল, মানব জাতির ইতিহাসের ক্ষেত্রে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours