প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
কল্পনার
আলতো বুক ছুঁয়ে যদি ঈশ্বর খুঁজেছি তখন তোমায় পেয়েছি ; আবার যখন প্রসন্নের
ছবিতে সহ্য করেছি আপন অন্যায়, তখন বোধ ভরে রেখেছি জীবন। শোক তাপ বিরহ সবই
প্রাকৃতিক, তা কি তোমার মধ্যে ঘটে নি!! বড়ো জানতে ইচ্ছা করছে তোমার
সৃজনশৈলী ছুঁয়ে কি, আসে নি চিন্তামগ্ন ক্রোধভূমি!! মায়াবী দরজাতেও তো আপাত
বিষ ক্রিয়া করে, তবে তোমাতেও সেই মুখচ্ছবি কি স্থান পায় নি!!
সময়টা
১৮৯৬, সুধাকান্ত বাবুর কলমে উঠে এলো তোমার মাঝি সখ্যতা জীবনী। জীবন দিয়ে
তুমি এঁকেছ প্রতিদিনের ভূমি। সেবার ভরা নদীতে মাছের আমুদে কথকতায় তুমি
মাঝিকে একটি বড়ো মাছের কথা জানতে চেয়েছিলে। মাঝে যখন মাছটির কানকোর ফাঁক
বেয়ে দড়ি ঢুকিয়ে নদীতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে, তুমি উৎকন্ঠিত হয়ে উঠেছিল।
খাদ্যখাদকের উজ্জ্বল গন্তব্যহীন যাতায়াত তো স্বাভাবসিদ্ধ, কিন্তু তুমি যে
প্রাণের আবেশে আকাশপটে বেঁধে রেখেছ সম্পর্ক, তা কি বিস্তৃত না হয়ে থাকতে
পারে!! তুমি তো জানো যে ব্যবধান কাজলদাগ, নিজেকে নিঃস্ব করেই মেটানো
সম্ভব।
তোমার কাছে
আত্মমর্যাদা যে প্রগাঢ়, তা বুঝেছি ১৯২১। এই তো সেই কেনসিংটনে এক ছেলের কাছ
থেকে জালিওয়ানাবাগের প্রতিবাদে সভায় সভাপতিত্ব হওয়ার আবেদন জেনে তুমি
অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিলে। হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে যাওয়া প্রাণের ভিক্ষা, নাকি
নির্বিচারে প্রাণদান - এও কি আন্দোলনের বিষয়বস্তু হতে পারে!! হাটে বাজারে
কি স্বজাতের মৃত্যু বিলিয়ে দিতে হয়! বড়ো আদর করে জড়িয়ে আছে সম্পর্কের
আঙুল; কপালজুড়ে আছে রক্তবিন্দুর সাধনা। আর সেই পাঁজরে ধাক্কা দিয়েই কিনা
প্রচার!! নৈব নৈব চ।
তুমিই
তো বলেছিলে কাঁদুনি আর্তি নিবেদনের ভিক্ষা ভারতকে দীনহীন করবে, তাই
সত্যতত্ত্বে ভারতকে প্রতিষ্ঠা দাও৷ তোমাকে না জানিয়ে তোমাকে বিব্রত করে ,
এমন বিব্রতকর সহজবোধ কি কারোর হয়!! শ্রীযুক্ত মুকুল দে এবং শ্রীযুক্ত
অরবিন্দ বোসের প্রতি তোমার উক্তি বলে দেয় যে সচেতনের ভূমিতে তুমি কিন্তু
কারোর মুঠোর মধ্যে সহাবস্থান করতে না। শুধু জীবন দিয়ে জীবনের ছায়া দিয়ে
যদি কেউ মহাপ্রস্থান গড়ে দেয়, তুমি কি রাগ বিভোর সৃজন সাথী হতে পারো!!
তোমার বহুমুখিতা যে, ভোলবার নয়। তোমার মুখে ঈষৎ রক্তাভ নৈর্ব্যক্তিক ভাব যে
ভোলবার নয়। তবে বিন্যস্তের ধারণা, সেতো অর্ধোক্ত বাক্যাংশ মাত্র।
তুমি
বলেছিলে যার লিখবার শক্তি নেই, তার ক্ষমতার ব্যবহার দেখলে দুঃখ হয় না,
কিন্তু যার কলম শক্তি আছে, তার ক্ষমতার ডাক দেখলে কষ্ট হয় বৈকি। তবে যদি
সেই কলমের ধার বলে, ওগো আমার ছায়াবট নয়, বট হতেই ইচ্ছা, তবে আর তোমার রাগ
থাকে না৷ তুমি যে সৃজন স্রষ্টা, তাই কাস্তের হাতে ক্ষতচিহ্নযুক্ত শব্দ তো
বড্ড বেমানান হবেই। তুমি যে বর্ণে বর্ণে ফোঁটা বৃষ্টি, অপরাধী সশরীরে
দাঁড়ালে কি তিরস্কার করতে পারো!! ও রাগ যে অভ্যাস রাগ নয় গো, তাই তো -
আলগা কথা, আলটপকা মন্তব্য, নির্বোধ উক্তিতে তোমার অনীহা কবি।।
তোমার
চোখের পাতায় দিঘিভরা জল কবি৷ যত্ন করে ধুয়ে নিয়েছ আত্মীয়তা। সকলেই তোমার -
তোমার ছাত্রছাত্রীরা তোমার সন্তান। ভোরের আলোর মুখে সূর্য শোক ভালোবাসার
অপেক্ষা হয়তো সম্ভব, কিন্তু বুজে আসা ভরা কোল যদি বিব্রতের প্রতিনিধি হয়,
তবে তো লজ্জামুখ অপ্রস্তুত হবেই। যেমন করে তুমি জন এন্ডারসনকে বলেছিলে, "I
had almost decided to send You a wire, requesting You to cancel your
visit. ", তুমি বলেছিলে, " Supercilious policeman wanted to take my
students into custody to ensure your safety. "
তোমার
বুকে ভরা আষাঢ়, তোমার বুকে ঝড় সেতো আবদ্ধ নয়৷ ভরা শ্রাবণেও তো তুমি সখা
তার৷ তোমার প্রত্যাখ্যানহীন স্নেহ, তোমার অপরাগ অগ্নিদগ্ধ বোধ, সংযুক্তি
আজ। কুন্তলা প্রেতচ্ছায়ার মতো ক্রোধ, আর্তনাদের আর্ত কলহ সংবাদ৷ অনাবৃত
শিল্পকারুতে তুমি তো বুদ্ধত্ব জ্ঞান, তারামূর্ত শ্রমণ অন্তস্তল আজ৷
Post A Comment:
0 comments so far,add yours