সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
পর্দায় ভেসে উঠলো সমাপ্ত।
বাস্তবে গড়পড়তা বাঙালি জীবনের খুব গতানুগতিক বাকী জীবনটুকু নিয়ে আলোচনা হয় কম সমালোচনা বেশী।
আজ বলবো সমাপ্তর পরের অধ্যায়।
তা
ঐ চার হাত এক হল। প্রকৃতির নিয়মে কোন এক চৈতালী দিনে কোল আলো করে এল তাদের
আত্মজ। সেই ছটফটে ছাত্রী এখন মা।তার ঝুলি ভরে আছে গানে, কবিতায়, ছড়ায়,
গল্পে। সারাদিন সে মনের আনন্দে খেলে চলছে সেই মানুষ পুতুলের সাথে।
মাস
যায়, বছর যায় মায়ের মুখের এতো গান, ছড়া ছেলেটা আধোবুলিতে বলে না।কপালে
চিন্তার ছাপ। হঠাৎই পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ট্রেনের আওয়াজে ছেলে তাকায় না। আর
হয়তো অপেক্ষার কোন জায়গা থাকল না। সারা দেশের নানা শহরে ঘুরে জানা গেল ছেলে
৯৫% শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
করনীয়?
তখনো
কম্পিউটার তথ্য প্রযুক্তি এত উন্নত নয়।তবু খবর পাওয়া গেল আমেরিকার
লসআঞ্জেলস এর জন ট্রেসি ক্লিনিকে এমন বাচ্চাদের কথা শেখানো হয়।চললো চিঠি
চাপাটি।ওখান থেকে খবর এলো চলে এসো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এর মধ্যে দ্বিতীয়
সন্তানের আগমন।
ছোট্ট শিশুটিকে আত্মীয়ের কাছে রেখে ঐ দম্পতি ছেলেকে নিয়ে আমেরিকা যাবার তোড়জোড় শুরু করলেন। প্রায় ঘটি বাটি বেচেই জোগাড় হল পথ খরচা।
ছেলেটি
তখন তিন।১৯৯২ সালে আমেরিকায় এই দম্পতি তাদের ছেলেকে নিয়ে পৌঁছে যা
দেখলেন,বুঝলেন তাতে সারা ভারত ঘুরে যে হতাশা তারা সঞ্চয় করেছেন, তা
নিতান্তই ভ্রান্ত।
শুরু হল সপরিবারে ট্রেনিং। মা
বাবাই বাচ্চার সবচেয়ে বড় টিচার।তাই মা বাবার শিক্ষার উপর জন ট্রেসি ক্লিনিক
ভীষন জোড় দেয়।তাই এরাও ওখানে ট্রেনিং পেলেন।
ছেলে চারবছর বয়সে কথা বললো।ওরা দেশে ফিরলেন।
ভাবছেন তো গল্প শেষ।
আরে
একটু সবুর করুন।সবেতো শুরু।১৯৯৩ সালে ১লা এপ্রিল ওদের সোনামানিকের পঞ্চম
জন্মদিনে দুর্গাপুরে খুলে ফেললেন একটি নন প্রফিট সিকিঙ অর্গানাইজেশন
"সাহস",স্পীচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাকশন সোসাইটি।যার সাত জন মেম্বারের সকলের
সন্তান শ্রবণ প্রতিবন্ধী।শুরু হল অন্য লড়াই। এক সন্তানের লড়াই থেকে হাজার
হাজার শিশুর জন্য লড়াই। আজ২৫ বছর ধরে সাহস হাজার হাজার শিশুর মুখে কথা
ফুটিয়ে চলেছে।জীবনের মূল স্রোতে মিশে অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত।
কাহানী আভি ভী বাকি হ্যায় দোস্ত।
সেই
ছেলেটি। ওহ, নামটা বলিনি না। অংশু জাজোডিয়া। দেশে ফিরে প্রথমে
সেন্টজিভিয়ার্স স্কুলে তারপর মালদা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্কুল শেষ করে।
বিশ্বভারতী থেকে সোসাল ওয়ার্ক এ স্নাতক, মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট থেকে
স্নাতকোত্তর ও অতি সম্প্রতি তার মুকুটের পালক ডক্টরেট। বিশ্বভারতী
বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট সম্মানে ভুষিত করে।
সেই শুরুর গল্পের ছাত্রটি শ্রী শম্ভুনাথ জাজোডিয়া ও ছাত্রীটি হলেন দুর্গাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা শ্রীমতি মধুমিতা জাজোডিয়া।
রবি ঠাকুরের পাদস্পর্শে বড় হয়ে ওঠা, এই জুটির জীবনের গান "বিপদে মোরে রক্ষা কর,এ নহে মোর প্রার্থনা...।
সাহসের হাত ধরে, ভবিষ্যতেও যেন আরও আরও অনেক অংশুর জন্য এমন কলম ধরার সুযোগ পাই এই বাসনা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours