দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

নানুর থানার রামকৃষ্ণ পুরের গড়াই পাড়া থম থমে। একটা পতাকার দাম ভেবেছিল কতটাই বা! কিন্তু সেটার জন্য এতটা দাম দিতে হবে ভাবতে পারেন নি গড়াই পাড়ার লোকজন। নির্দিষ্টভাবে কোন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন না আহত ভুবন গড়াই বা তাঁর নিহত ছেলে স্বরূপ গড়াই। তরতাজা বাড়ির ছেলেটা অকালেই ঝরে গেল!  ভুবনের   ডান পা কি কাটা যাবে? ইস! জটলার মাঝে  এই সব কথাবার্তা বলতে বলতে মৃতর  দূর সম্পর্কের ভাই সুনীল গড়াই এগিয়ে এসে জানালো, মৃতদেহ নিয়ে টানা টানি পুলিশ আর বিজেপির! কখন দেহ আসবে কে জানে!  

গড়াই পাড়ার নিহতর বাড়ির পাশেই প্যণ্ডেলে ম্যারাপ বাঁধা চলছিল। থেমে গেছে।  ছয় পুতুলি প্রতিমার মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা। মূর্তি গড়ার কাজ প্রায় শেষ। শুধু বাকি খড়ি মাটি দেওয়া। আর  বাকি  মূর্তির গায়ে রঙের পোঁচ!

বাড়ির ভিতরে মৃতর স্ত্রী চায়না গড়াই। মা রেণুকা গড়াই। কে কাকে সামলাই! আরও করুন অবস্থা ছোট্ট দুই মেয়ে বৈশাখী গড়াই ও অন্তরা গড়াইয়ের। তাদের চেয়েও ছোট ভাই আকাশ গড়াই বুঝে উঠতে পারছে না, তাদের বাড়িতে এত ভিড় কেন! সবাই তাদের এত আদর করছে কেন! তারা বুঝে উঠতে পারছে না,  বাবার হাত ধরে নতুন জামা পড়ে পুজো মণ্ডপে আর তাদের যাওয়া হবে না। এতদিন বৃথায় গড়াই পাড়ায় অর্থাৎ বাড়ির পাশে মূর্তি গড়ার তদারকি সব মাঠে মারা গেল বাবার সাথেই।  অন্যদিকে, বাড়ির সামনে মহিলাদের জটলা। গড়াই বাড়ির দোতলার সার্সির ভাঙা কাঁচ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে গতরাতের তাণ্ডবের চিহ্ন। এর সাথে আছে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ। বুকে কালো ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদ।  যে পতাকার জন্য এত কাণ্ড। সেই এবার পত পত করে উড়ছে গ্রামে!

সুনীল গড়াই  বলেন, নির্দিষ্টভাবে কোন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন না আহত ভুবন গড়াই বা তাঁর নিহত ছেলে স্বরূপ গড়াই। বাড়ির ভাইপোটা পতাকা টাঙালো। তাও খুব সিরিয়াস ভাবে না। হুমকি। তারপর আক্রমণ। জমিজমা যৎসামান্য। বিঘে চার পাঁচেক জমি আছে।   ওদের বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। কি করে চলবে?  জানা গেল,    মৃত গড়াই পরিবারের এই পুজোটায় সব থেকে বড় আনন্দ।  শরিক হিসেবে পুজোর চার দিন পালি পড়ে। এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলেটা ছোট। সব বছর চার পাঁচের মধ্যে বয়স। কে জানতো, একটা পতাকা টাঙানোর জন্য এত দাম দিতে হবে! পুজো এবার হবে না। মন ভালো না থাকলে, কিসের পুজো!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours