প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

শীল জুড়ে আছে জীবন৷ শীল আবর্তনেই নিজেকে কেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব৷ সংযত মধ্যস্থ বিন্দুতেই জীবনের উপলব্ধি। 

 এক মহেন্দ্রক্ষণ... ; আজ আত্মাহুতি। মুক্ত করো- সহর্ষে যে, তোলপাড় কাম কুমির...তাই তো মৃত্তিকা ছুঁয়ে থাক সুপ্ত বীজ আমার। 

প্রণাম, পূর্ণমা আজ।  

মন যখন সংসারের বুকে কেবলই একা হয়ে যায়, তখন তোমাকে দেখি আমার তথাগত। বড়ো আপন তুমি আমার। এসো!  আলো!  আমার এই ভিক্ষাভাবের ক্ষীণ কলেবরে আজ তোমার চরণ ছুঁয়ে অশ্রুনিবেদনে বুকে আগলে নিয়ে আলোকিত হই। তোমাকে কোল ছুঁয়ে আজ আলোর গল্প করি। 

শাস্তা যখন জেতবন বিহারে অবস্থান করছেন, তখন এক সময়ে জেতবনবাসী পাঁচশত ভিক্ষু নিজেদের সাধন সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে জীবনযাপন করছিলেন। ঠিক এই সময় তথাগত বুদ্ধ পাপনিগ্রহ উপদেশ দান করতেন। কিন্তু, একদিন রাত্রে ভিক্ষুরা সেই উপদেশ অগ্রাহ্য করে ইন্দিয় সুখভোগ সম্বন্ধে তর্কবিতর্ক শুরু করলেন। 

শাস্তা প্রতিদিন দিবারাত্র ছয় ভাগই ভিক্ষুকদের চরিত্রের দিকে লক্ষ্য করতেন৷ সেই স্থিত লক্ষ্য অনেকটাই গহীন জীবনের প্রতিফলনের মতো উপমেয়৷ ঠিক সেইদিনই দিব্যচক্ষু দিয়ে তিনি দেখলেন যে, চক্রবর্তী রাজার গৃহে চোর ঢুকেছে আর তার সাথে লক্ষ্য করলেন যে, ভিক্ষুরা উচ্ছ্বসিত হয়ে বাক্য বিনিময় করছেন৷ আর ততক্ষণে তথাগত বুদ্ধ গন্ধকুটীরের দ্বার উন্মুক্ত করে আনন্দকে ডেকে ভিক্ষুদের কোটিসংস্তরে সমবেত হতে বললেন এবং সেখানেই আসন প্রস্তুত করতে আদেশ করেন। 

বুদ্ধ পার্ষদ ভিক্ষু অনাথপিণ্ডদ জেতবন ক্রয়কালে যে অংশ সুবর্ণ দ্বারা মণ্ডিত করেছিলেন সেই অংশটিকে কোটিসংস্তর বলা হত। সেই স্থানে সমবেত ভিক্ষুকগণকে বললেন, যে "দেখো!!পাপকার্য কিছুতেই গোপন থাকে না বলে, প্রাচীন পণ্ডিতেরা পাপ থেকে বিরত হয়েছিলেন। এবার তোমরা সেই গল্প শোনো!! 

এই বলে অতীতের কাহিনি বর্ণনা করলেন। পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের সময় বোধিসত্ত্ব ব্রাহ্মণিকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ সেই সময় কোনো এক বুদ্ধিধারী আচার্যের কাছে তিনি শিক্ষা নিতেন৷ সেই শিক্ষকের কাছে বোধিসত্ত্ব ৫০০ ছাত্র শিক্ষালাভ করতেন। এই আচার্যের এক প্রাপ্তবয়স্কা কন্যা ছিলেন। 

এরপর  একদিন আচার্যের মনে হলো যে, সর্বাধিক শীলসম্পন্ন বুদ্ধিমান ছাত্রকেই তিনি জামাতা হিসাবে নির্বাচন করবেন৷ তারপর তাঁর পাঁচ শিষ্যকে ডেকে মেয়ের বিয়ের জন্য বস্ত্র, অলংকার অপহরণ করার আদেশ দিলেন। তিনি উপদেশ দিলেন যেন কেউ দেখতে না পায়। সবাই নিয়ে এলেও, বোধিসত্ত্ব কিছুই আহরণ করলেন না৷ এবার গুরু তাঁর কাছে এর কারণ জানতে চাইলে, বোধিসত্ত্ব বললেন যে কোনও গোপন কাজই পাপানুষ্ঠানে জন্ম দেয়। প্রাণীশূণ্য স্থান বলে কিছু হয় না৷ আর তাই গুপ্তকর্ম কাজ করতে তিনি অক্ষম।

এই কথা শুনে আচার্য বুঝতে পারলেন যে, একমাত্র বোধিসত্ত্ব ই তাঁর পরম শীল সম্পন্ন সর্বধর্ম পারদর্শী শিষ্য, এই বলে নিজের কন্যাকে দান করেন। রাত্রির অন্ধকারেও কোনো পাপ চাপা থাকে না৷ অতএব তিনি তখন ভিক্ষুগণকে ধর্মচারী হয়ে নিজ ধর্ম পালন করতে নির্দেশ দেন"। 

আজ সেই শীলের বুকে মাথা রেখে, আলোর বুকে প্রাণ....  প্রণাম "


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours