শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
(তথ্যসূত্র: পাকিস্তান টিভি টক শো থেকে নেয়া!)
নওয়াজ
শরীফ, হাসান নিসার, পারভেজ হুড ভয়, তিনজনই পাকিস্তানী। একজন সাবেক
প্রধানমন্ত্রী । একজন লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অন্যজন বিজ্ঞানি ও
অধ্যাপক
প্রখ্যাত পাকিস্তানী বুদ্ধিজীবী হাসান নিসারের কিছু কথা শুনি।
.... " ম্যায় নে পহলেই কাঁহা মাজহাব ইয়া মুলক্, মুলক্ আওর মাজহাব ইনসান কো বেওকুফ বনাতে হ্যায়!"....
২০১৮
সালে পাকিস্তানে বসে, পাকিস্তানের টিভিতে প্রখ্যাত কলামিষ্ট, লেখক
সাংবাদিক, শ্রদ্ধেয় হাসান নিসার আরো বলেন, ৭০ বছর ধরে পাকিস্তানে যে
রাজনীতি চলছে তা সঠিক নয়। ধর্ম নিরপেক্ষতা ছাড়া পাকিস্তানের কোন ভাবিষ্যত
নেই। রাষ্ট্র হলো একটি যন্ত্রের মত। যন্ত্র কখনো যেমন হিন্দু ইহুদী,
মুসলিম খৃষ্টান হয় না। তেমনি রাষ্ট্রেরও কোন ধর্ম পরিচয় থাকে না।
ভারতের
গনতন্ত্র চর্চায় বিভিন্ন পুঁজিপতিরা এগিয়ে এসেছিলো সরকারকে সহযোগীতা করতে।
আমাদের দেশে (পাকিস্তান) সব লুটেরা! যারা দেশের রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনা
চুরি করে বিক্রি করে দেয় ও আর একশ্রেনী কিনে নেয়! আর সবরকম অপকর্ম করে ধনী
হয় তারা দেশের চালিকা শক্তিতে পরিনত হয়ে যায়। ২০০ অষুধ কোম্পানী ভেজাল
অষুধ বানায়! এ সব অষুধ কারা খায়, আমরা সাধারন জনগন।
রাষ্ট্র শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে না। কেবল কেরানী ও আমলা তৈরী করে। সরকার ও রাষ্ট্র চালাতে যতটুকু দরকার ততটুকুই তৈরী করে।
বৃটিশরা এদেশের নেতৃত্বকে ধ্বংস করে গেছে। বৃটিশরা কেবল তাদের গোলামদের শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে দিয়ে গেছে!
তিনি অন্য এক জায়গায় বলেন,
এই
যে বাংলাদেশ হয়ে গেলো, আমাদের (পশ্চিম পাকিস্তান) থেকে ১২০০ মাইল দুরে।
আরে বেকুব কে বলেছে ওটা আমাদের দেশ? ওদের সাথে আমাদের কোন বিষয়েই মিল নেই।
আমরা ( পশ্চীম পাকিস্তানীরা) বাঙালীদের (পূর্ব পাকিস্তানিদের) বলতাম ওরা
কালো, খাটো, অশিক্ষিত। সম্পদ নয় বোঝা! আমরা নিজেদের উচ্চ ও বাঙালীদের নিচ
ভাবতাম। হাসান নিসার জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব কে ভুল মনে করেন।এবং আজকের
বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ করাকে হাস্যকর মনে করেন। অথচ, আজো বাংলাদেশে
কোন কোন দল ও ব্যাক্তি দ্বিজাতিতত্ত্বকে সঠিক মনে করে। আর ১৯৭১ এ
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম মেনে নিতে পারে না!
জাকির
নায়েক ও পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর কি অদ্ভূত মিল! জামায়েত ইসলামী
পাকিস্তান, ওসামা বিন লাদেনকে সন্ত্রসী বলতে নারাজ!!?? তুমুল তর্ক
পাকিস্তানের টিভ টক শো তে। "ফরীদ পার্চা "কোন অবস্থাতেই বিন লাদেন
সন্ত্রাসী তা মেনে নিচ্ছেন না!৷ জাকির নায়েকও ঠিক একই রকম। তার দৃষ্টিতে
ওসামা সন্ত্রাসী নয়!
পাকিস্তানেরই
প্রখ্যাত দুইজন ইনটেলেকচুয়াল ডক্টর পারভেজ হুদভয় ও হাসান নিসার বলছেন,
ওসামা সন্ত্রাসী। উপস্থাপকও তাই বলেতেছেন। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী
পাকিস্তানের নেতা "ফরীদ পার্চা" ওসামাকে একবারও সন্ত্রাসী বলতে নারাজ!?
জামায়াত ইসলামী পাকিস্তান ও জাকির নায়েকের চোখে ওসামা সন্ত্রাসী নয়। এ মিলটা প্রশ্নবোধক বটে।
ডক্টর
পারভেজ হুড ভয়, বিশ্বখ্যাত পাকিস্তানী বিজ্ঞানী, অধ্যাপক,লেখক,কলামিষ্ট।
তিনি বিজ্ঞান, ধর্ম ইতিহাস নিয়ে কথা বলছিলেন,ছাত্র ছাত্রী সহ বিভিন্ন
পেশার মানুষের সাথে। আমি তার বক্তব্য শুনলাম ইউটিউবে। তিনি ধর্ম,বিজ্ঞান,
ইতিহাস, নিয়ে যা বললেন, এসব কথা বাংলাদেশে, বাংলাদেশের কোন অধ্যাপক বললে,
এতক্ষন খুন করে ফেলা হতো। অন্তত পক্ষে এ বক্তব্যের পর ১ ঘন্টার মধ্যে দেশ
ছাড়তে হতো। কিন্তু, তিনি পাকিস্তানে অধ্যাপনাও করছেন! টকশোতে আসছেন। তার
স্বাধীন মত প্রকাশ করছেন। ৪৬ বছরে বাংলাদেশে কোন বিজ্ঞান শিক্ষকের সাহসে
কুলোবে না, তার মত বক্তব্য দেয়ার। যেমন, একটা উদাহারন দেই তিনি ইসলামী
"মোজেজাকে" ( ইসলামের অলৌকিকত্ব) অস্বীকার করেছেন, বলেছেন, "মোজেজা" সত্য
হলে পদার্থ বিজ্ঞানের সব সূত্র ভুল প্রমানিত করতে হবে! এ রকম আরো বিভিন্ন
বিপদজনক, বিতর্কিত বিষয়ের অবতারনা করেছেন।
তাকে
দীর্ঘ বক্তৃতার এক পর্যায়ে পাকিস্তানে ৫ জন ব্লগারের আটক,নির্যাতন,
মশালখান সহ ব্লগারদের খুন নিয়ে সরাসরি মতামত চাওয়া হয়। আমি অবাক হয়ে গেলাম
পাকিস্তানের এই অধ্যাপক, ব্লগারদের প্রশংসা করলেন। এবং তরুনদের সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে আরো বেশি ও জোড়ালো ভাবে লিখতে বললেন। ডক্টর পারভেজ, বললেন,
ব্লগ একটা শক্তিশালী মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ কত শক্তিশালী যে পাঁচজন
ব্লগার পুরো পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের আইনশৃঙ্খলা
বাহীনির ঘুম হারাম করে দিয়েছে। শব্দ ব্যবহারে কৌশলী হতে বলেন, যাতে আইনের
মার প্যাচ থেকে বেঁচে থাকা যায়। শব্দ ব্যবহারে সতর্ক হয়ে নিজের চিন্তা ও
চেতনা তথা নিজের মেসেজটা, ছাত্রসহ সমাজের কাছে যেন পৌছে যায়। ব্লগার
লেখকদের জীবনের ঝুকির প্রশ্ন তুললে, তিনি বলেন ; যারা বলার, বলবে, যারা
লেখা তারা লিখবেই। জীবনের ঝুকি সব কাজে, সব জায়গাতেই আছে। থামা যাবে না।
মুখ বন্ধ রাখা যাবে না। তাহলে পরিবর্তন আসবে না।
আমাদের
বাংলাদেশে মেলেটারি ও মৌলভীদের শাসন চলে না। তবুও একজন অধ্যাপককে এমন কথা
বলার সাহস আজও দেখাননি। বরং উল্টোটা বলেছেন, ব্লগারদের ঘাড়ে দোষ
চাপিয়েছেন। নিজেরা তো স্রোতের বিপরীতে যাবেনই না। কিছু বামপন্থী তো আরো
দুকদম আগ বাড়িয়ে বলেছেন ; ব্লগারদের জন্য সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন নষ্ট হয়ে
গেল! আলোচনায় পাকিস্তানের প্রগ্রেসিভ ব্যাক্তিদের কথাও সামনে আসে। একজন
প্রশ্ন কারী তো বলেই ফেললেন, তিনজন কমিউনিস্ট একসাথে হলে পাঁচটা দল হয়ে
যায়!! ভাগ্যিস তারা বাংলাদেশের ৩৯ টি (সম্ভবত) বামদলের খবর জানে না! অথচ
ডক্টর পারভেজ বামপন্থি কোন ব্যাক্তি নন, রাজনীতিকও নন। একজন অধ্যাপক
হিসেবে, বিজ্ঞানী হিসেবে নিজ দায়িত্বে, নিজেকে সেকুলার বলেন, এবং
পাকিস্তানসহ পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রকে সেকুলার হতে পরামর্শ দেন। এমনকি তিনি
বলেন, কোথাও যদি ৩% অমুসলিম থাকে আর ৯৭% মুসলিম থাকে তবুও সে রাষ্ট্রের
সেকুলার হওয়া উচিৎ এবং সেকুলার হওয়া উচিত ঐ ৯৭% সংখাগরিষ্ঠের এর স্বার্থেই!
তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা উপর জোড় দিতে বলেন। তার ভাষায় পড়, জান
এবং প্রশ্ন কর ও আবিস্কারে মনোযোগী হও। ডক্টর পারভেজ মনে করেন প্রশ্ন করা
শিখতে হবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যাতিত কোন জাতীর উন্নতি অসম্ভব।
পাকিস্তান
টিভির না হলেও আরো একটি ঘটনা উল্লেখ করছি; পাকিস্তানের সাবেক
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ একজন শিল্পপতি ও জমিদার। একবার গার্ডিয়ান
পত্রিকার প্রতিনিধি তার বাস ভবনে যান। গার্ডিয়ানের পত্রিকার সাংবাদিককে
সারা ঘরে দামিদামি জিনিস দেখান। গার্ডিয়ানের সাংবাদিক এক পর্যায়ে জানতে
চান অনেক কিছু তো আপনার ঘরে আছে দেখছি! তা কি কি বই রয়েছে আপনার ব্যাক্তিগত
সংগ্রহে? পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি বইও তখন দেখাতে পারেন নি!
এমনকি একটি দৈনিক পত্রিকাও না। কোন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর আাবাসিক
ভবনে ব্যাক্তিগত গ্রন্থাগার তো দুরের কথা একটি বই এমনকি, একটি পত্রিকা
পর্যন্ত নেই। তা যে কোন জাতির জন্যই লজ্জার বিপদজনক তো বটেই।
পাকিস্তানী ও পাকিস্তানের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours