জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:     

ভাষায়  ঝংকারের উপরে বিষয়ের অধিকার,  বিষয় গ্রন্থনায় যুক্তি  এবং  ইতিহাস গ্রাহ্যতার সাথে সাথে, জীবনবোধের আবেগের সাথে একাত্ম হওয়ার  সমস্যাটাই যদি সাম্যবাদী আন্দোলনে তত্বগ্রন্থনার সংকট বলে বিবেচিত হয়, 
---- সমস্যার চালচিত্রটি যদি তিন লাইনের হয়, সমাধানের পথ খুজতে আজকের লেখককে, ষাট বছর সময়ের  অভিজ্ঞতা  ঢেলেও সমাধানের উৎসকে এখনো খুজতে হচ্ছে। যতটুকু পাওয়া গেছে, সেটাও সাহস করে বলতে ভয় হয়।
সেই সুত্রেই শেষ বুঝাটা এমন ভাবেই বুঝেছি। , এই বিশ্বে সত্য এতো বিপুলার্থে সংখ্যালঘু, সেখানে সত্যকে সংখ্যাগুরু করায় যে সব বিপত্তি, সেটাকে অতিক্রম করার পেছনে যে যুক্তি-বিজ্ঞানকে সংহত করা প্রয়োজন,
সেটাই  যদি  সাম্যের সব থেকে বড় সমস্যা, বলে বিবেছিত হয়, 
------ মানব সভ্যতার সমস্যাটিও একই বিন্দুতে সমাহিত।

এবারে কিঞ্চিৎ প্রসংগান্তরে যাওয়া যাক। কিছুটা ব্যক্তিগত।
চৈতালীকে নিয়ে পার্লামেন্টের এনেক্সিতে বসে ছিলাম। হটাৎ করেই দেখলাম, সংসদের সব থেকে লম্বা সেই সহকর্মীটি পেছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরেছেন । বাম-পন্থী তবে, কোন সাম্যবাদী দলের নয়।  অবসর নেওয়ার পর, একবার দেখা হয়েছিলো।
এক কথায়, দু'কথার মুখে, আন্তরিকতার সাথেই তার, সংসদে জীবন রায়ের শেষভাষনটির কথা স্মরন করলেন। বল্লেন, সেদিনের সেই ভাষনটি এখনো তার বুকে আটকে আছে। 
সেই ভাষনে  জাতীয় স্তরের গুরিত্বপূর্ণ কিন্তু মুলতঃ তাত্বিক, তেমন কয়েকটি বিষয় যে উঠিয়েছিলাম এবং সর্বদলে সমাদৃত হয়েছিলো, সে কথা পূর্বে উল্লেখ করেছি। আজকের এই লেখা লিখতে গিয়ে, সে সব লেখায় যে বিষয়টি উল্লেখ করি নাই, কিন্তু গুরুত্বপূর্ন সেটা লিখে দেবো ভাবছি।

----- মনে আছে, সেই অনুল্লেখিত বিষয়টিতেই হাউসের সব দিক থেকে যে শুধু সমর্থন এসেছিলো তাই নয়, চারদিকে টেবিল চাপরে সম্বর্ধিত হয়েছিলামঃ যেন সংসদের সব পেছনের সারির সদস্যদের জন্যেই বলছিলাম। অবস্য আমার দলের কারুর কারু বিশেষ পছন্দ হয় নি বলে মনে হয়েছিলো।
------ ভাবের উপরে ইংরাজীর আধিপত্য কী করে সংসদীয় কাঠামোকে ক্রমাগত আভিজাত্যের স্বপ্ন বিলাশ হয়ে যাচ্ছে, সেটাই উল্লেখ করছিলাম। বলছিলাম, কী করে 'ইংরাজীতে ঝংকার উঠাণোটাই' দেশাত্মবোধের সমার্থক হয়ে যাওয়ায়,, জীবনবোধের কাহিনী কিংবা জীবনকে নিয়ে তত্ব উপরে উঠে আসার সুযোগ পাচ্ছে না সেটাই উল্লেখ করছিলাম।

তত্ব বিশেষ করে 'শ্রম'কে ঘিরে যে তত্ব, তা তো জীবনবোধের পারদে পারদে বিরাজমান থাকে, সেটাকে বোঝা এবং সব থেকে সরলতায় মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং মানুষের প্রতিক্রীয়া যাচাই করে নেওয়ার যোগ্যতাই তত্বপ্রনেতার দায়। সেখানে 'ইংরাজী' নামক 'ভগবান' টি যদি ঘারের উপরে লাঠি নিয়ে বসে থাকে তবে, তত্বের সাবলিল বিচরন অসম্ভব হয়ে যায়। 
----- তখনই সংসদ থেকে বিদ্যালয় কোন কিছুতেই দর্শন নামক বস্তুটি কোন দরজাই খুজে পায় না, যেখানে সে বিষয়ের সাথে একাত্ম হওয়ার সুযোগ পেতে পারবে।

অন্যপ্রান্ত থেকে যদি সত্য আবিস্কারের বিষয়টি যদি, সাম্য কিংবা শ্রমিক আন্দোলনে সাম্যের রুপটিকে খুজে বের করার প্রথম সর্ত হয়, তবে, ইতিহাসকে পরিমাপ করা এবং সেই পরিমাপের সুত্র ধরেই,
------ বিজ্ঞানর প্রধান তিনটি গতি যে কিভাবে  বিশ্ব চরাচরের সর্বোচ্চ  গতি 'মনের' সাথে একাত্ম হচ্ছে, তা যুক্তি এবং বিজ্ঞানের আলোতে যুগপদ যাচাই করার প্রয়োজনীয় জ্ঞানসুত্র গুলিকে
------ একপ্রান্তে মার্ক্সের জ্ঞান-তত্ব অন্যপ্রান্তে, অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাই করার যোগ্যতা টুকু খোজার চেষ্টা করতে হবে, কর্মজীবনের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে।

এখানেই চিত্তের প্রহেলিকা এবং বলতে হচ্ছে সমাজ বিজ্ঞানের আলোটা নতুন করে নিয়ে এসেই বর্তমানের ভাবগত বিকৃ্তিগুলির নিদান সম্ভব।অনেকটা বোনমেরু ক্যানসার নিরাময় পদ্ধতির মতো। এই চিকিৎসায় প্রথমে শরীরের সব রক্ত বের করে নিতে হয়,পরে পরিষোধনের মধ্যে পুনরায় ফিরিয়ে দিতে হয়, নতুন উপাদান যুক্ত করেই।
----  এটা আমাদের মতো কর্মীদের, যারা হোচোট খেতে খেতে নতুন প্রজন্মের যন্ত্রবিদদের শ্রমিক আন্দোলনের সাম্যের ধারায় নিয়ে আসা হয়েছিলো, আমরা সব শিখিয়েও কেন, বিশ্বকে এবং নিজেকে  যাচাই করে নেওয়ার পাঠগুলিকে শ্রমিক শিক্ষায় বাতিল করে চলেছি।
------ বলবো না কোন স্বরযন্ত্র, পরে বিদ্দ্যালয় শিক্ষার সাথে যুক্ত হওয়ার পর বুঝেছি সমস্যা কোথায়। বাচ্চাদের যেখানে অসুবিধা, তাদের বাবা দাদুদের একই বিন্দুতে। পাঠের জটিল বিন্দুগুলিকে 'বাই পাস' করে সোজা করে নেওয়ার প্রবনতা, আমাদের আন্দোলনের সর্বনাস করেছে। এটা প্রথম পুরুষের যন্ত্রবিদরাও করতো, ওরা অপারেশানের কিছু কিছু অংগ বাইপাস করেই চালিয়ে দিতো। চল্লতো কিন্তু প্রযুক্তির বারোটা বেজে যেতো। ...অনেকটা গলব্লাডারের মতো। কেটে দিলে চলে যায়, তবে হজমের অসুবিধা করে সময়কালে বিপত্তির কারন ঘটে।
------ শ্রমিকদের বাইরে রেখে শ্রমিক দল করার মতো অদ্ভুত যুক্তি দাড় করিয়ে, শ্রমিক পার্টী গড়ার মতোই যুক্তি। কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টোতে, যেহেতু, কমিউনিষ্টা শব্দ রয়েছে সেজন্য, ওটা বাইবেলের পর সর্ব বৃহৎ সাহিত্য হলেও, সেটা শিক্ষায় সেটা পরিত্যজ্য। অথচ, ম্যানিফেষ্টোই বিশ্বে এক মাত্র সাহিত্য, যা ইতিহাসের এক একটা ফুল মালায় জুরে বিশ্ব ইতিহাসটাকে এক নজরে দেখতে সাহায্য করে।
------ অনুরুপভাবে, মার্ক্সের জ্ঞান তত্ব কিংবা দ্বন্দ্ব তত্ব বাদ দিয়ে আমরা শ্রমিক বিপ্লব শেখানোর চেষ্টা করেছি, তারা 'সামের কথা  বলে' কমরেডদের সরকার তন্ত্রে পৌছুতে সাহায্য করেছি। (ক্রমশ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours