দেবর্ষী মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
আস্ত
পুরু গোঁফের নিচে চওড়া হাসি একজনের মুখেই মানায়! সেটা অনুব্রতর!
রাজনীতিতে পোড় খাওয়া নেতা, এক কথায় দুঁদে বলতে যা বোঝায়! বামফ্রন্টের
বিরুদ্ধে বুক ঠুকে নানুরে লড়াই করেছেন। সেই লোক যদি রাজনৈতিক শ্লোগান দিতে
গিয়ে "বন্দেমাতরম" এর জায়গায় "ইনকিলাব জিন্দাবাদ" বলেন, চমকাবেন না?
নিশ্চয়ই চমকিত হবেন! যদিও সেটা ঘটে নি। কিন্তু যা ঘটেছে সেটাই বা কম কিসে!
তারাপীঠে
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে ২৯ অগাষ্ট থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত লক্ষাধিক
ভক্তের সমাগম ঘটে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল তুঙ্গে। সমস্ত দল নিজের মতো করে
জনসংযোগ করার চেষ্টা করেছে। তৃণমূলের তরফে লক্ষাধিক মানুষকে প্রসাদ
খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়। যাগযজ্ঞ কোন কিছু ত্রুটি নেই। এত গঙ্গা জলে ওই
একফোঁটা...যা..
বড় বড়
ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছিল মনসুবা মোড় থেকে তারাপীঠে। একেবারে ছয়লাপ।
ফ্লেক্সের উপরে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। ঠিক তার নিচেই পুরু গোঁফের নিচে চওড়া
হাসিতে অনুব্রত মুখ। লেখা--কৌশিকী অমাবস্যায় আগত সকল পূন্যার্থীদের
জানাই-- গৌরিক অভিনন্দন। তার নীচে সৌজন্যে অশ্বিনী তেওয়ারি, পুরপিতা
রামপুরহাট পুরসভা।
অভিধানে
গৈরিক শব্দ পাওয়া গেছে। যার একটি অর্থ গেরুয়া রঙ। আবার গৌরিকের অন্য
অর্থ। বাবা গণেশের এক নাম গৌরিক। যার অর্থ - পর্বতে জন্ম যার। পুত্র
সন্তান লাভের লোভে সাধারণত কোনো ভক্ত শ্রী গণেশের পঁচাত্তর নামের মধ্যে এই
গৌরিক নাম জপ করে থাকেন। সব দিক ভেবে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ওখানে গৈরিক
বলতে চাওয়া হয়েছে। গৌরিক নয়। যদিও গৌরিক লেখা হয়েছে। আর সেটি বুঝতে
কারো অসুবিধা হয় না।
কিন্তু
কেন? এর উত্তর খুঁজতে খোদ জেলা সহ-সভাপতি তথা অনুব্রত মণ্ডলের মস্তিষ্ক
বলে দলের অন্দরে পরিচিত অভিজিৎ সিনহাকে ফোন করা হয়। সব শুনে তিনি বলেন,
এটা তৃণমূলের অভিনন্দনের ভাষা হতে পারে না। জানে না, বোঝে না। ভুল ভাল
করেছে।
বিজেপির জেলা
সাধারণ সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায় আবার একে ভুল বলতে নারাজ। অভিজিৎ
সিনহার কথার পিঠে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার চোখে পড়েছে। ভুল
কেন হবে? সবাই এখন গৈরিকীকরণের দিকে ঝুঁকছে। ভেতরে ভেতরে সব গেরুয়া রঙে
রঙিন হয়েছে। শুধু মুখে কিছু বলতে পারছে না। ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন।
খোঁজ নেওয়ার জন্য, যার সৌজন্যে এই ফ্লেক্স, সেই অশ্বিনী তেওয়ারিকে বেশ
কয়েকবার ফোন করা হয়, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বা কল ব্যাক করেন নি।
বামফ্রন্টের
পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র ডোমকে এব্যাপারে ফোন করা হয়। তিনি বলেন,
"বিজেপি সংঘ পরিবারের সাথে তৃণমূলের আদর্শ গত কোন ফারাক নেই। রাজনৈতিক
বোঝাপড়া আছে। তাই এক উঠোন থেকে আরেক উঠোনে যেতে বেশি সময় লাগে না।
তৃণমূলের গৈরিকীকরণ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো একবার
আর এস এসের মিটিংয়ে গিয়ে ওদের গুণগান করে এসেছেন। আদর্শগত দৃঢ়তা না
থাকলে শ্লোগান, ফ্লেক্সের ভাষা গুলিয়ে যায়"।
বামফ্রন্টের
রক্তিম অভিনন্দন যেমন চিরায়ত, তেমনি বিজেপির গৈরিক অভিনন্দন। তাবলে,
গৈরিক অভিনন্দন তৃণমূলের তরফে? সঠিক শব্দ বন্ধের কী অভাব পড়েছে তৃণমূলের
শব্দ ভাণ্ডারে? না কি নিছকই ভুল? উত্তর যাইহোক, বিজেপি ঘরানা অভিনন্দন
তৃণমূলের ফ্লেক্সে, হেব্বি খেয়েছে আগত পূন্যার্থীরা! যদিও রাজনীতিতে কোন
কথায় শেষ নয়। তবুও জোর তামাশার খোরাক পেয়েছে তারা। শেষমেশ অনুব্রতর
গৈরিক অভিনন্দন! ধরণী দ্বিধা হও!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours