কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:


'হোম দে ব্রট হার ওয়ারিয়র ডেড!'
লর্ড টেনিসনের সেই বিখ্যাত কবিতার মতোই, ডাক্তার বলেছিলেন।
'টিনা হাইনসকে যখন হাসপাতালে আনা হলো, তখন তিনি মারা গেছেন।'

পথেই মৃত্যু হয়েছিল রোগীর। টিনা হাইনস। মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক। ঘটনা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের।
কে এই অজানা, অখ্যাত টিনা? দুনিয়ার মৃত্যুমিছিলে রোজ নাম লেখায় কমপক্ষে এক লক্ষ একান্ন হাজার ছশোজন। তথ্য ইকোলজি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের। প্রতি ঘণ্টার হিসেবে, ছ'হাজার তিনশো ষোলজন। এদের মধ্যেই একজন ক্যালিফোর্নিয়ার টিনা হাইনস। এক সুখী স্ত্রী। চার সন্তানের জননী। ব্যাস, এটুকুই তাঁর পরিচয়। এর বাইরে আর কিছুই নেই। এমন কোনও মহান অথবা ভয়ঙ্কর কাজ তিনি করেননি যে দুনিয়া তাঁকে একডাকেই চিনে ফেলবে। আসলে তাঁর এক বিচিত্র অভিজ্ঞতাই টিনাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে দিল।
খুব অদ্ভুত ভাবেই মৃত্যুপুরীর ডাক এসেছিল টিনার কাছে।
স্বামী ব্রায়ানের সঙ্গে পায়চারি করতে বেরিয়েছিলেন টিনা। সুখী দম্পতি। বেশ ফুরফুরে মেজাজ। হঠাত বিপর্যয়। বিপদ যেন ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছিল রাস্তার পাশেই। স্বামীর হাত ধরে চলতে চলতেই সারা শরীর জুড়ে অস্বস্তি হতে লাগল টিনার। স্বামীর হাত থেকে ছুটে গেল স্ত্রীর হাত। সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন টিনা।
"কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যেতে লাগল ও," বলেন ব্রায়ান। "নিঃশ্বাস ধীর হয়ে এলো। মুখে কোনও সাড়াশব্দ নেই। দেখতে দেখতেই কেমন নিথর হয়ে যেতে লাগল ও।" ততক্ষণে ঘটনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠেছেন ব্রায়ান। কোনওক্রমে স্ত্রীকে তুলে পৌঁছলেন সামনের হাসপাতালে। ততক্ষণে কেটে গিয়েছে কিছুটা সময়। নাড়ি দেখলেন ডাক্তার। গাঢ় হলো কপালের ভাঁজ। ততক্ষণে সব শেষ। থেমে গেছে হৃদস্পন্দন। চিকিৎসকরা জানালেন, হার্ট অ্যাটাক। তবু এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে, লড়াইয়ে নেমে পড়লেন জীবনযোদ্ধা বিশেষজ্ঞরা। রোগীর নাক মুখ ঢেকে গেল পাইপে। শরীরে অক্সিজেন জোগান দিলেন নার্সরা। মদত নেওয়া হলো জীবনদায়ী মেশিন ডেফিব্রিলেটর-এর। ছ'বার দেওয়া হলো ইলেকট্রিক শক। তাতে যদি ফের সচল হয় হার্ট। আবার ফিরে আসে স্পন্দন।
কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলেন না ডাক্তাররা। তবু তখনও হাত ধরাধরি করে জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি। শেষ দেখে তবেই ছাড়বেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও তাঁরা জানেন, কিছুক্ষণ আগেই লড়াই চলে গেছে হাতের বাইরে। তাঁরা কার্যত, মৃত ঘোষণা করে দিয়েছেন টিনা হাইনসকে। তবুও! হঠাতই চমক।

নড়ে উঠলেন ডাইন। বড় হয়ে উঠলো বেডের পাশে দাঁড়ানো নার্সের চোখ। একি দেখছেন তিনি? ততক্ষণে সবাই খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা। চোখের সামনে এক রূপকথার গল্পের ভিডিও সংস্করণ। কিছু লিখতে চান টিনা। ইশারায় জানালেন। কথা বলার উপায় নেই। কারণ তখন টিনার নাকে মুখে গোঁজা নল।
একজন চট করে কাগজ পেন এগিয়ে দিলেন। "ইটস রিয়্যাল!" সব সত্যি। ঘসঘস করে কাগজে লিখলেন টিনা। ঘরের সবার নজর তখন টিনার দিকে। একজন জানতে চাইলেন, "কী রিয়্যাল?" সত্যিটা কী? জলে টিনার চোখ টলটল। আনন্দাশ্রু। নীরবে আঙুল ওপরের দিকে ইশারা করলেনড টিনা। বুঝিয়ে দিলেন স্বর্গ, স্বর্গ সত্যি।
সাতাশ মিনিট ধরে নিস্পন্দ। তারপরেও প্রাণের স্পন্দন ফিরে পেলেন টিনা, দাবি ব্রায়ানের। সবাই তখন ব্যস্ত টিনাকে সুস্থ করে তুলতে। ওদিকে টিনা তখন এক অন্য জগতে। তাঁর অনুভূতি জুড়ে এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা। সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার পর টিনা বলেছিলেন, "প্রভু যিশু দাঁড়িয়েছিলেন। পেছনে উজ্জ্বল সোনালি রঙের এক আভা। অনেকটা সূর্যের মতো।"
গত সপ্তাহেই সোশ্যাল মেডিয়ায় এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন টিনার ভাগ্নি ম্যাডি জনসন।

যিশুদর্শনের কথা শুনিয়েছিলেন আরও একজন। তাঁর নাম ল্যান্ডন হুইটলি। বয়স তখন সবে আট। 1997 সালের ঘটনা। কোনও এক রবিবার সকালে মা জুলি কেম্প, বাবা অ্যানডির সঙ্গে গাড়িতে যাচ্ছিলেন ল্যান্ডন। রাস্তায় আচমকাই এক দুর্ঘটনা। অ্যামবিউলেনসের সঙ্গে ধাক্কা লাগল অ্যানডির গাড়ির। ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন তিনি। পুলিশ যখন জুলিকে বার করলো, তিনিও তখন কথা বলার অবস্থায় নেই। মারাত্মক জখম। স্বামী, স্ত্রীকে নিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটলো সবাই। ওই ব্যস্ততার মাঝে কেউ আর খেয়ালই করলো না, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটার মধ্যে আরও একটা ছোট্ট শরীর বন্দি হয়ে আছে। "আসলে অ্যানডি যখন গাড়ি চালাচ্ছিলেন," জুলি বলেন, "ঠিক তাঁর পেছনের সিটেই বসেছিলো ছোট্ট ল্যান্ডন। আর গাড়ির ওই দিকটাই পুরো তুবড়ে গেছিলো।"
গাড়িটাকে যখন রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে, ঠিক তখনই একজনের চোখে পরে ল্যান্ডনের ছোট্ট একটা জুতো। তাড়াতাড়ি অনেক কসরত করে বার করে আনা হলো নিথর ল্যান্ডনকে। শরীরে কোনও প্রাণের চিহ্ন ছিলো না। বুক ওঠানামাও বন্ধ। সামনেই ক্যারোলিনা মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হলো সবাইকে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালালেন ল্যান্ডনের নাড়ির গতি ফেরাতে। দুবার চিকিৎসায় সাড়াও দিলো ল্যান্ডন। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। কোমায় চলে গেলো সে।

"ল্যান্ডন বেঁচে থাকলেও, আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে না," জুলিকে বললেন ডাক্তার। জুলি তখন সবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসছেন। চিকিৎসকরা তাঁকে খোলাখুলিই জানিয়ে দিলেন, বয়স বাড়লেও ল্যান্ডনের বুদ্ধি বাড়বে না। মানসিক ভাবে সে আটকে থাকবে এখনকার আটেই। এমনকি তাকে নতুন করে শেখাতে হতে পারে হাঁটাচলা, খাওয়া- দাওয়া, সবকিছু। বলতে গেলে, ল্যান্ডনের ব্রেন পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে।

দু সপ্তাহ কোমায় থাকার পর একদিন চোখ মেলে তাকালো ল্যান্ডন। খুশির ঝিলিক দেখা গেলো ডাক্তার, নার্সদের ঠোঁটে। পরীক্ষা করে ডাক্তাররা বুঝতে পারলেন, তাঁদের ছোট্ট রোগীটির ব্রেন ঠিকঠাক কাজ করছে। সবাই তো অবাক। মিরাকল! গোটাটাই অদ্ভুত। নইলে এরকমটা হওয়ার কথা নয়। ছেলের খবর কানে যেতেই মা ছুটলেন ছেলেকে দেখতে।
"ল্যান্ডনের সারামুখে তখনও অসংখ্য আঁচড়ের দাগ। মাথায় একাধিক জখম।" বলেন জুলি। তবে তখন জুলির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, অসুস্থ ছেলেকে বাবার মৃত্যু সংবাদ দেওয়া। ছেলে একটু ভালো হতেই একদিন তিনি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, "জানিস তোর বাবা কোথায়?"
মাথা নাড়ল ল্যান্ডন। শান্তস্বরে বললো, "জানি। ড্যাড এখন স্বর্গে। দেখা হয়েছিল।"
এই পুঁচকে ছেলে বলেটা কী! আশ্চর্য হয়ে যান জুলি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ছেলের দিকে। তিনি ফের জিজ্ঞেস করেন, "বাবার সঙ্গে তোর দেখা হয়েছিল?"
"হ্যাঁ।" ধীরস্বরে ফের বলে ল্যান্ডন। তার কথায় কোনও অস্পষ্টতা ছিলো না। সে বলে, "দেখলাম, ড্যাডের সঙ্গে আঙ্কল ওলান পামারও ছিলো।" কে এই ওলান পামার? জুলি জানান, অ্যানডির খুব প্রিয় বন্ধু ছিলেন ওলান। মেরেকেটে এক মাস আগেই, তিনিও গাড়ি দুর্ঘটনায়  মারা গেছিলেন। তারও একবছর আগে একইভাবে প্রাণ গেছিলো ওলানের ছেলে নীলের।
ল্যান্ডন বলে, "জানো তো মাম,  আমরা চারজন চারকোণে দাঁড়িয়েছিলাম। ঠিক যেন জ্যামিতির বর্গাকার। কিন্তু আমরা কেউ কারও সঙ্গে একটা কথাও বলিনি।"

এরপর সুস্থ হয়ে উঠতে ল্যান্ডন আর খুব বেশি সময় নেয়নি। একদিন ছেলেকে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গেলো মা। তৃপ্তির হাসি হাসলেন হাসপাতালের সবাই। বেশ চলছিলো মা ছেলের সংসার। ফের একদিন আচমকাই চমক।
মা ছেলের গল্প জমে উঠেছে। কথায় ঘুরেফিরে এলো অ্যানডি। এমন সময় ল্যান্ডন বলে উঠলো, "জানো তো মাম্মি বলতে ভুলে গেছিলাম, তোমার দু'ছেলের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল স্বর্গে।"
- "প্রথমটায় কিছুই বুঝতে উঠতে পারিনি, ল্যান্ডন কী বলছে," বলেন জুলি। "ধাতস্থ হতে খানিকটা সময় লেগেছিলো। পরে বুঝলাম, আমার দুবার মিস ক্যারেজ হয়েছিল। ল্যান্ডন নিশ্চয়ই সে কথা বলছে।" চোখেমুখে অপার বিস্ময় জুলির। তিনি বলেন, "ওই ঘটনার কথা ল্যান্ডন কিভাবে জানালো? কারণ, ওই ঘটনা ঘটেছিল ওর জন্মের আগে। আর আমি বা অ্যানডি কেউ ল্যান্ডনকে ওই ঘটনার কথা কোনদিন বলেছিলাম বলে মনে পড়ে না।"
ওদিকে ল্যান্ডনের কথা তখনও ফুরায়নি। সে বলে চলেছে, "আমি ওদের ঠিক চিনতে পেরেছিলাম। তোমরা কেউ আমাকে ওদের কথা বলোনি। কিন্তু হাজার হলেও, রক্তের সম্পর্ক তো।"
হতবাক জুলি। অতীতের সেই অধ্যায় তখন তাঁর চোখের সামনে ভাসছে। মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়া সেই সন্তানেরা কেমন দেখতে? ওরা কি ল্যান্ডনের মতোই? নইলে ও চিনল কী করে! মনখারাপ পেয়ে বসলো জুলিকে।
ছেলে তখনও বলে চলেছে, "দেখা হলো প্রভু যিশুর সঙ্গেও। তিনি বললেন, আমায় পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে। একজন সাচ্চা ক্রিশ্চান হতে হবে। সবাইকে শোনাতে হবে যিশুকাহিনি।
ছেলের কথা শুনে তখন চোখের জলে ভাসছেন জুলি।

এতো শুধু ল্যান্ডনের অপার্থিব কোনও অনুভূতি নয়। রীতিমতো রহস্যজনক আচরণ, যা টিনার 'ইটস রিয়্যাল'-এর অনুভূতিকে ছাপিয়ে যায়।
টিনার বেলায় ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, প্রতি পাঁচজন হৃদরোগীর মধ্যে একজনের এরকম বিচিত্র 'নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স' হয়। 2013 সালে ইঁদুরের ওপর এক গবেষণা করেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তাঁরা জানান, অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঠিক আগেই এক বিস্কোরণে তোলপাড় হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে মগজের স্বাভাবিক কাজকর্মে। তখন অনেক বিচিত্র অনুভূতির জন্ম হয়। মৃত্যুর মুখ থেকে রোগী ফিরে এসে অনেক সময়, সেই অনুভূতির কথা শোনান।
কিন্তু টিনার তো নাহয় হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, ল্যান্ডনের তো তা হয়নি। তাহলে?
মগজের এক নির্দিষ্ট অংশের কাজকর্মে সামান্যতম ছন্দপতন হলেই এমন অপার্থিব অনুভূতি হয়। এই অংশের নাম টেম্পোরোপ্যারিটাল জাংশন(temporoparietal junction)। শরীরের অনুভূতি, আর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের থেকে তথ্য নিয়ে ওই জাংশন দেহের উপলব্ধি ঠিক করে। ফাংশনের কাজে সামান্য গোলযোগ দেখা দিলেই বিপত্তি। মনে হয়, শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেসে চলেছি। 'আউট অফ বডি এক্সপেরিয়েন্স'। কায়াহীন শরীর। 'নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স'- এর মূল সুরটাই লুকানো থাকে ওই 'অবয়বহীন শরীর'- এর অভিজ্ঞতায়।
নাছোড়বান্দা গবেষকরা। ওই বিচিত্র অনুভূতির স্বাদ কৃত্রিমভাবে চাখানোর উপায় সন্ধান করে ফেলেছেন। টেম্পোরোপ্যারিটাল জাংশনকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে উত্তেজিত করে তুললেই হলো। আপনার কল্পনার আকাশে ভেসে যাবেন আপনি কায়াহীন অবস্থায়।
"কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে !"
মনে আছে তো, টিনাকে ছ'বার শক দেওয়া হয়েছিল?

এছাড়াও আছে অ্যানাস্থেসিয়ার কামাল। একাধিক অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিলো ল্যান্ডনকে। মাত্রা প্রয়োগে এতটুকু ভুলচুক, রোগীকে পাঠিয়ে দিতে পারে তাঁর কল্পলোকে। অজ্ঞান করানোর পরেও, মগজের কোনও অংশ সক্রিয় থেকে যায়। সেসময় উল্টোপাল্টা অনুভূতির অভিজ্ঞতা হতেই পারে। আর ওই দেবদর্শন? বিজ্ঞান ওসব মানতে নারাজ।
আসলে মানুষের মগজ নামের এই সুপার কম্পিউটর বড় রহস্যময়। কখন যে কোথায়, কিভাবে কলকাঠি নেড়ে বসে, তা বোঝা মুশকিল।

তবু সবশেষে বলি শেক্সপিয়রের সেই বিখ্যাত  উক্তি। হ্যামলেট হরাশিয়োকে বলছে- "পৃথিবীতে স্বর্গে এমন অনেক কিছু আছে , যার কথা তোমার  দর্শন স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না।"
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours