জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আজ ৫ই সেপ্টেম্বর 'শিক্ষক দিবস' এবং সর্বপলি ডঃ রাধাকৃষ্নানের জন্মদিনঃ উভয়ের প্রতি একজন অতি অল্প শিক্ষিতের সহস্র প্রনামঃ

" নাগরিক জীবনকে এই বিবর্ন বিবষতা থেকে মুক্তির পথটাই , পড়ুয়া-শিক্ষক সম্পর্ককে 'ডিরোজিয়ানেে উঠিয়ে আনাটা, একই পথে সম্পৃক্ত "

 - উপরের উল্লেখিত  শিরোনামায় গত বছরের  এই দিনে একটা লেখা পাঠিয়েছিলাম।সেটার সুত্র ধরেই আজকের লেখাটি  বিশ্বের সব শিক্ষক এবং গুরুদের কাছে, এই লেখাটা নিবেদন করছি।

ভারত এখন এমন কাল ধরে এগুচ্ছি যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থাগুলিই ক্রমে, একমাত্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে। একটু চোখ নিবদ্ধ রাখলেই দেখা যাবে, বোধ হয় কল-কারখানার বাইরে, ছাত্র-শিক্ষক-অভিবাবকদের সামাজিক সত্বাকেই ভারতের দ্বিতীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান  হিসেবে মানা যাবে। একমাত্র পঠন-পাঠন ব্যবস্থাতেই --   নতুন প্রজন্মের কিশলয়েরা সামাজিকভাবে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
 গভীরে গেলে বোঝা যাবে, এই সামাজিক অবস্থান টুকুও,
----- রাষ্ট্রের এবং রাজনীতির  ভাবাদর্শগত  সংকট গভীর হওয়ার  সাথে সাথে, সমাজ ও পরিবারে যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, হয়তো বা তারই পরিনামে
--------  শিক্ষার জ্ঞানগত বিযুক্তির কারনটি ক্রমাগত গভীর ক্ষতে বদলে যাচ্ছে। এতে  শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির সামাজিক চরিত্র ভেঙ্গে যাচ্ছে। নিজে যে বিদ্যালয়টির সাথে যুক্ত রয়েছি, সেখানেও এই ক্ষতের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি।শত চেষ্টাতেও, ২০/২৫ ভাগ  অভিবাবকদের বোঝানো যায় না, বিদ্যালয়ের সামাজিক চরিত্র থেকে উঠিয়ে এনে,
----    প্রাইভেট টিউশানের শিক্ষা জ্ঞানহীন তো হবেই, সমরকালে কর্ণের রথের চাকা বসে যাওয়ার মতো পরীক্ষাতেও কোন কাজে লাগবে না।   জ্ঞান থেকে শিক্ষার বিযুক্তি যখন রাষ্ট্রীয় নীতি হয়ে দাড়াচ্ছে, তখন মাস্টার মশাইরা যদি এই 'শূণ্যতা' পুরনে সর্বোতো মুখী ব্যবস্থায় না গিয়ে, নিজেরাই নিজেদের 'শিক্ষক' থেকে 'গুরুর' স্থানে ' উত্তোরনের আকাংখ্যাকে বিসর্য্যন দিতে থাকেন, তখন ছাত্র-শিক্ষক এবং সমাজ সব তলিয়ে যাবে। 

নিজেদের এই 'গুরু সত্বায়' উত্তোরনে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কক যে  দুই  বিপরীতের পারস্পরিক একতার  সম্পর্কে বাধা 
----- সেটা যেমনভাবে শিক্ষকরা ভূলতে বসবেন এবং ছাত্রদেরকেও নিজেদের শিক্ষক জ্ঞানে বিবেচনা না করবেন, ক্রমে সে কথাটাই ভূলে যেতে বসবেন 
-----  শিক্ষকতা সর্বজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ট গবেষনা কেন্দ্র। এইভাবে, বিদ্যালয়ের উপস্থিতি যত সময় বাধ্যতামুলক না করতে চাওয়া হবে অভিবাবকদের পক্ষ থেকে, শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা যত সময় শিক্ষাকে জ্ঞান ও সংস্কৃতির সাথে একাত্মকরার গবেষনা মুলক ব্যবস্থার দিকে মাথা না ঘামাতে পারছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সামাজিক সত্বা  বিপদগ্রস্ত হয়ে পুরো শিক্ষার কাঠামোটাকেই ভেংগে দেবে।

আজকের লেখক ব্যক্তিগতভাবে, সে কালের শিক্ষা্র তুল্যমানে নিজে পড়াশুনায় নিম্নমানে চিহ্নিত থাকা এবং পরবর্তী জীবনে
----- এক বিচিত্র বাধ্যবাধকতার কারনে, খারখানা জীবনে   আজকের ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা কিংবা দাদুদের, সেই জ্ঞান মূখীনতায় শিক্ষকের ভূমিকায় কাজ করার সুযোগ পাওয়া এবং চার প্রজন্মের যোগসুত্রের ভিত্তিতে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি
------ জ্ঞানকে যতদিন শিক্ষা ও জ্ঞানের সম্পর্কে প্রাথমিকতা দেওয়া না হবে, শিক্ষার যত আয়োজন হোক, পাচ হাজার বছরের অনুমান সত্বাকে ভেদ করে, রবীন্দ্রনাথ যাকে বদ্ধ কারাগার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, 
-----  মনে হবে ভাগ-ভাল্লুক ছাত্রকে তাড়া করছে। সেখানে ছাত্র - বাবা কিংবা ঠাকুর্দা  কিংবা শিক্ষক নিজে হোন না কেন।

এই সুত্রেই কোন রাষ্ট্রের সভ্য সমাজে উত্তরনের প্রশ্নে 'জন শিক্ষার' সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যোগ সুত্রের বিষয়ে রবীন্দ্রনাথকে তো মনের মণিকোঠায় এক অখন্ড নিরন্তরতায় জীবন্ত রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
"নিজেরটিকে যতই বাক্সবন্দী করে ডিস্ট্রক ম্যাজিষ্ট্রেট' করার চেষ্টা করুন না কেন
----- অজ্ঞানতা এবং অশিক্ষার সমুদ্র তাকে সেই বন্দীদসা থেকে টেনে নেন চুবিয়ে মারবেই শেষ পর্য্যন্ত। পরিনামে অন্য কিছু না হোক, বুড়ো বয়সে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে বাস নিতে হবে। এটাই ভারতীয় ইতিহাসের চরম বিড়ম্বনা দেশটা আজ এমন একটা কালে পরে গেছে, যখন মানুষ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝতে না বুঝতেই
------ , সার্বজনীন শিক্ষার সুযোগটাই কার্য্যত চলে গিয়েছেো।সেটা যখন চলে গেলো, তখন ইতিমধ্যে  ' শিক্ষার 'সার্বজনীননতা' ধারনাটাও জ্ঞান সত্বার পথে না ঠেলে  সেই 'ভাগ ভল্লুকে তাড়া খাওয়া শিক্ষা হিসেবেই এগিয়ে দিয়েছি। তা না হলে, সেই গ্রাম বাংলা বিপুল অঞ্চল যখন এখনো পাচ হাজার বছরের অজ্ঞানতায় ধুকছে, তার উপরে 'মধ্যম বর্গীয়' বাবুদের আত্মপরতার প্রতিক হিসেবে ইংরাজী চাপিয়ে দিতে গিয়ে  বলে দিলাম
------   রবীন্দ্রনাথ বড় সেকেলে। অথচ, তিনি যখন লিখছেন ' আকাশভরা সূর্য্য-তারা... তাহার মাঝে পেয়েছি মোর স্থান" এই লাইনটি সামনে রেখেই  এক বছর পড়ানো যায়, প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম পর্বে। বলে রাখি, এসব বিবেচনাতেই 'নির্ঝর' বিদ্যালয় ব্যবস্থা, এই গানটিকেই তার পার্থনা সংগীত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রোজ চাত্রদের এই গানটি গাইতে হয়।

যাইহোক এই সুত্রেই, যার জন্মদিনের উপরে শিক্ষক দিবস, তার সম্পর্কে দু'চারটি কথা বলে, লেখাটি শেষ করবো;
----- এই যে বলছিলাম, রবীন্দ্রনাথের " আকাশ ভরা সূর্য্য তারা' কে সামনে রেখেই, একজন সুযোগ্য শিক্ষক, গনশিক্ষার ক্লাসে একবছর ক্লাস নিতে সক্ষম , তবে নিশ্চিত শিক্ষকের জ্ঞানগত  যোগ্যতা থাকলেই তেমনটি সম্ভব।‍‍
শুনেছি, ভারতে দর্শনের শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসেবে, যখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। ক্লাস রুমে এসে প্রথম দিনেই ব্ল্যাকবোর্ডে  একটা বাক্য লিখে দিতেন। 
----- তারপর সেই বাক্যকে সামনে রেখেই সারাস বছরের পাঠ পড়াতেন।
এখান থেকেই সেই প্রশ্নটা উঠবে, কার পক্ষে এই মাপের শিক্ষকতা করা সম্ভব? উত্তরটা এখানেই - অন্যকোন জ্ঞান একা, জ্ঞানর অখন্ড সত্বাকে উন্মোচীত পারে না।
-----  যে জ্ঞান সেটা পারে সেটার নাম 'দর্শন'। সম্ভবতঃ সেই মানুষটির সাথে, যিনি চিত্ত মুক্তির প্রশ্নে মার্ক্সের সাথে একাত্ম হয়েছিলেন, তার শিষ্য হতে পেরেছিলেন বলেই সর্বপলি রাধাকৃষ্ণান এতো তালগাছের মতো উচ্চতার দার্শনিক হতে পেরেছিলেন। কাজেই, উচুমাপের একজন শিক্ষক হতে হলে একজনকে 'দর্শন' শাস্ত্রের জীবন মুখীনতায় পৌছূতে হবেই।

সেটাই শিখলাম সেদিন, 
---- অন্য একজন বিপুলকায়, শিক্ষাবিদের মুখ থেকে। তিনি সর্বপলিকেই উদ্ধৃতি দিয়ে বল্লেনঃ 
" NO EDUCATION IS AN EDUCATION SO LONG IT IS  DIRECTLY OR INDIRECTLY IMPREGNATED WITH A SOCIAL CONSEQUENCE"
বাংলার প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, যিনি সম্প্রতি জাপান সরকারের কাছ থেকে শ্রেষ্ট শিক্ষাবিদের সম্মান পেয়েছেন, সেই শ্রদ্ধেয় পবিত্র সরকারের মুখথেক এই উক্তিটি কয়েক মাস পূর্বে দুর্গাপুরের তার দেওয়া  এক ভাষনে শুনেছিলাম।
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours