স্বপন সেন, ফিচার রাইটার হালিশহর:
একটা সময় ছিলো যখন সংসদে রাজনীতিকদের ভাষণ শোনার জন্য ভীড় জমাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, মুগ্ধ হতো তাদের বাগ্মীতায় । এ বিষয়ে আবার অগ্রণী ছিলেন বাঙালি সংসদ সদস্যেরা, ষাট কিংবা সত্তরের দশকে ভূপেশ গুপ্ত, রনেন সেন কিংবা ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের সংসদে বক্তৃতা এখনও পুরানো দিনের মানুষের স্মৃতিতে জাগরুক। এদের পাশাপাশি সাড়া জাগিয়েছিলেন জ্যোতির্ময় বসু ও গুরুদাস দাশগুপ্তরা। আমার বয়েসীরা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী বা বাসুদেব আচার্যের ভাষণ ?
দিল্লিতে বাঙালির সেই স্বর্ণযুগ কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে ! এখন যারা বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন হয় মূক ও বধির নয় তোতলা !
এর মধ্যেও আশা জাগিয়েছিলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র..... । মাসখানেক আগে NRC বিতর্কে অংশ নিতে গিয়ে রাহত সিং ইন্দোরির কবিতা উদ্ধৃত করে ভরা সংসদে বললেন......
সভি কা খুন হ্যায় সামিল ইহাঁ কি মিট্টি মে, কিসি কে বাপ কা হিন্দুস্তান থোড়ি হ্যায়!'
ভাবলাম যাক কিছু বাগ্মী অন্তত এবারে গেছে সংসদে । কিন্তু দু একটা কোকিল কি বসন্ত আনতে পারে ?
তবে দেবীপক্ষের শুরুতেই অকাল বসন্ত আনলেন আরেক বঙ্গললনা....ইনিও মৈত্র তবে বিদিশা , রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি।
নিউইয়র্কের মাটিতে পাক রাষ্ট্রপ্রধানের জবাবী ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, পাকিস্তানই একমাত্র দেশ যারা রাষ্ট্রপুঞ্জের কালো তালিকায় থাকা এক জঙ্গিকে পেনশন দেয়। ৯/১১ হামলার মাথা ওসামা বিন লাদেন কে নিজের দেশে লুকিয়ে রাখে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিশানা করে বলেন, 'কেউ একজন যিনি একসময় ক্রিকেট খেলতেন, জেন্টলম্যানস গেমে বিশ্বাস রাখতেন, তিনি এখন হিংসা ও বন্দুকের খেলায় ভরসা রাখছেন। অস্বীকার করতে পারেন মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার ? দেশভাগের পর পাকিস্তানে অমুসলিম জনসংখ্যা যে ২৩% থেকে ৩% এ নেমে এসেছে সেটাও উল্লেখ করতে ভোলেন নি।
তবে কথায় আছে ওস্তাদের মার শেষ রাতে, আর সেটাই করে দেখিয়েছেন এই বাঙালি IFS অফিসার । পাক প্রধানমন্ত্রী কে তিনি সম্বোধন করেছেন ইমরান খান নিয়াজী বলে, মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি নিয়াজী সম্প্রদায়ের মানুষ ।
এই নিয়াজীরাই একাত্তরের বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঘৃণ্য অত্যাচার চালিয়েছিল। এই নিয়াজীদের নিয়েই পাকিস্তানে এক সময় আগুন জ্বলেছে এবং এখনও জ্বলছে। নিয়াজিদেরই দেশছাড়া করার ডাক উঠেছে খোদ পাকিস্তানের মধ্যে থেকেই।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী । তিনি ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশেষ গভর্নর এবং পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক হাই কমান্ডের সর্বশেষ কমান্ডার। তিনিও যে একজন নিয়াজি সম্প্রদায়ের, সেকথাও ইমরান খানকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বিদিশা। সব শেষে বলেছেন ভারতের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে দয়া করে নিজেদের ইতিহাসটাকে একটু ঝালিয়ে নিন৷'
Post A Comment:
0 comments so far,add yours