শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

পারস্যের (ইরান) পারসিকদের  ( অগ্নী উপাসক) সাথে  ভারতবর্ষের  সম্পর্ক  বহু পুরনো। এ সম্পর্ক কয়েক হাজার বছরের। আরব বনিকদের সাথেও ভারতবর্ষের বানিজ্য সম্পর্ক ছিলো ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের আগেই । এমন কি প্রফেট মোহাম্মদের সাথে ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণদের ছোট্ট একটি দলের  সাক্ষাত ও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছিলো বলেও শোনা যায়। আর কারবালার ইতিহাসের সাথে তো ব্রাহ্মণেরা জড়িয়েই আছে।  তা প্রমান করে "হুসেইনি ব্রাহ্মণ " নামের অতিক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব।  প্রফেট  মুহাম্মাদের  সময়কালে ভারতবর্ষে   রাজত্ব করতেন রাজা হর্ষবর্ধন।  

পৌত্তলিক বণিক আরবদের ভারতবর্ষে সীমিত আকারে  আসা যাওয়া আগেই ছিলো।
তবে অষ্টাদশ  শতাব্দীতে  সশস্ত্র আরবদের আগমন ঘটে। কেন না,  এবার তারা বনিক পৌত্তলিক নয়। , একেশ্বরবাদী  যোদ্ধা ও বণিক আরবরা  সিন্ধু দখল করে। খুলাফায়ে রাশেদিনের সময় অতিক্রম করলে বহু কূটকৌশলে মুয়াবিয়া "পঞ্চম  খলিফা" হিসেবে নিজেকে  অধিষ্ঠিত করেন। মুয়াবিয়া খলিফা হয়েই জলপথে শক্তিবৃদ্ধিতে নজর দেন। সেই ধারাবাহিকতায় আরবদের ভিন্ন রুপে আগমন করতে দেখে ভারতবর্ষ।
তার আগে সপ্তদশ শতাব্দীতে পারসিকেরা  ভারতবর্ষের বোম্বেতে বসতি গড়ে। 

পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ,ওলন্দাজ, ফরাসী  বনিকদের আগমনের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয়দের বিস্তৃতি ঘটে ঘটে। ভারতবর্ষে পর্তুগিজদের ব্যবসায়ীক দক্ষতা ও নৌশক্তির কাছে আরব বণিকেরা কুলিয়ে উঠতে না পেরে ভারতবর্ষ ছাড়তে শুরু করে।  পর্তুগিজদের দেখাদেখি ইংরেজরাও ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে আসে। প্রথমে তারা তাদের ইউরোপীয় অন্যান্য বানিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। তারপর এক সময় ভারতবর্ষই  দখল করে বসে! ভারতবর্ষে  কোনো  মোঘল শাসকেরা নৌশক্তিবৃদ্ধিতে মনোযোগী ছিলো না। ইংরেজ ও পর্তুগিজরা সে সুযোগ কাজে লাগায়। সারা ইউরোপ যখন  পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে  দেশ ও বানিজ্যিক অঞ্চল দখলে ব্যাস্ত।  ভারতবর্ষের মোঘল শাসকেরা তখন, স্থাপত্য,  বাগান,বেগম, দাসি  মহল ও হেরেম নির্মানে  সময় দিচ্ছিলেন।

 পর্তুগিজরা ভারতের সমুদ্র উপকূলে প্রথমে আসে ১৪৯৮ সালে। ভারতবর্ষে যখন পাশ্চাত্য পন্যসামগ্রিতে ভরে  উঠেছিলো তখন  দিল্লীর সম্রাট ছিলেন সিকান্দার লোদী। পর্তুগিজরা  ১৫১০ সালে গোয়া সমুদ্র বন্দরটি দখলে নেয়।গোয়া এবার  আরব মুসলিম  বণিকদের  হাত থেকে , পর্তুগিজ খৃষ্টান বণিকদের দখলে চলে যায়। সে সময় প্রায় ছয় হাজার মুসলিম হত্যা করে পর্তুগিজ খৃষ্টানেরা।

১৫৯৯ সালে লন্ডনের বিখ্যাত বণিক "জন মিডেল হল" ভারতে এসে বাড়িঘর গড়ে বসতি করেন। তার চেষ্টাতেই  রানী এলিজাবেদের কাছ থকে বানিজ্য করার সনদ পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। 

১৬০৮ সালে প্রথম ইংরেজরা ভারতবর্ষে ফ্যাক্টরি করা চেষ্টা,চালায়। দিল্লীর মসনদে তখন সম্রাট  আকবরের রাজপুত স্ত্রী জোধাবাইয়ের সন্তান জাহাঙ্গীর।  যোধা বাই এর ইসলামী নাম করন করা হয়েছিল "মরিয়ম জামানি " নামে।  যদিও ডিনি অনেক হিন্দু রীতি মেনে চলতেন৷ এননকি তার পাচক ছিলো  একজন ব্রাহ্মণ। 
 সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে ১৬০৯ সালে ইংরেজ দূত ক্যাপ্টেন "হকিন্স" ফ্যাক্টরী  নির্মানের আবেদন করে প্রত্যাখাত হয়। কিন্তু তারা ফেরত গেলেও আবার নানান উপঢৌকন দিয়ে ১৬১৩ সালে ফ্যাক্টরী করার অনুমতি আদায় করে নেয়। এমনকি বৃটিশ পার্লামেন্ট সম্রাটের দরবারে একজন ইংরেজ দূত রাখার অনুমতিও পেয়ে যায়! ১৬১৫ থেকে ১৬ ১৮ সাল পর্যন্ত  দূত হিসেবে ছিলেন স্যার টমাস রো। 

শাহজাদা খুররম, জাহাঙ্গিরের পর  শাহজাহান  নাম ধারন করে মসনদে আসীন হন। সম্রাট শাহজাহানের মেয়ে সুশ্রী  কন্যা জাহানারার  কোয়েল নামে এক বাঁদী ছিলো। সেই বাঁদির শরীরের আগুন নেভোতে গিয়ে খোদ  সম্রাট শাহজাহানের  কন্যা জাহানারা অাগুনে পুড়ে যায়। তার শরীর ঝলসে যায় আগুনে।  হেকিমদের কোন চিকিৎসা কাজে  আসছিলো না। তখন, ইংরেজ চিকিৎসক  'সার্জেন জাব্রাইল বাউটন"  ' আাবেদন জানায় শাহাজাদী জাহানারার চিকিৎসা করানোর।  ইংরেজ চিকিৎসকের আবেদন গ্রহন করা  হয় । ইংরেজদের  চিকিৎসায় শাহাজাদী সুস্থ হয়ে উঠে। এবং পিতা সম্রাট শাহজাহানকে অনুরোধ করেন ইংরেজ চিকিৎসককে পুরস্কৃত করতে। সম্রাট শাহজাহান ইংরেজ চিকিৎসককে পুরস্কার চাইতে বলেন। যথারীতি বেনিয়া ইংরেজ ব্যাক্তিগত ভাবে কিছু  না চাওয়ায় সম্রাট  ইংরেজ চিকিৎসকের প্রতি আরো বেশি মুগ্ধ হয়ে তার আবেদন মঞ্জুর করেন।  মি বাউটানের দাবী  ছিলো ইংরেজদের ফ্যাক্টরী করার জন্য  কিছু জমি! ১৬৩৩ সালে উড়িবার হরিহরপুর ও বালেশ্বরে বিনামূল্য জমি পেয়ে গেলো। তারপর পাটনা ও কাশিম বাজারেও কুঠি করার অনুমতি পায়। 

সম্রাট ফরুখ শিয়র,১৭১৩ সালে  তার পিতার বড় ভাই (জ্যাঠা) সম্রাট  জাহান্দার  শাহকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে মসনদ দখল করেন।  তিনি ছিলেন সৌখিন বিলাসি ও নারী আসক্ত। হিন্দু  এক রাজাকন্যার রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সম্রাট ফরুখশিয়র যৌন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তা এক দাসি সেই  রাজকন্যার নিকট ফাঁস করে দেয়। এবং বিয়েতে রাজি থাকার পরও  কৌশলে বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেন এবং যৌনরোগ থেকে মুক্ত হলে বিয়ে করবেন বলে  শর্ত দেয়। 

সম্রাটের কোন চিকিৎসাই যখন কাজে আসছিলো না।  এবং তার চিকিৎসকেরা একে একে পালিয়ে যাচ্ছিলো। তখন, এবারও এগিয়ে এলো ইংরেজ চিকিসক সার্জেন উইলিয়াম হ্যামিলটন । এবং  সম্রাটের  চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলা হলো। সম্রাট ইংরেজ চিকিৎসককে তার "পুরস্কার  চাইতে বললেন। সূচতুর ইংরেজ বেনিয়া অতিশয়  বিনয়ের সাথে জানালো, আগে সম্রাটের  বিয়েশাদী  হয়ে যাক তার পর  তারা পুরস্কার চাইবে। সম্রাট জানালেন, তার চিকিৎসক যখনই চাইবে;  ঠিক তখনই  তাদের পুরস্কৃতি হবে। সম্রাট একদিন, সেই ইংরজ চিকিৎসক কে দরবারে করজোড়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝলেন তারা পুরস্কার চাইতে এসেছে।  সম্রাট তাদের পুরস্কার চাইতে বললে, ইংরেজ চিকিৎসক একটি আবেদন পেশ করেন । তাতে ছয়টি অনুচ্ছেদ ছিলো। দরবারে তা পেশ করা হলে খোদ দরাবারে উপস্থিত আমত্যরা তাতে ভেটো দেন। এমনকি ইংরেজ চিকিৎসকের আবেদন নিয়ে বিতর্কও হয়।  শেষ পর্যন্ত সম্রাটের নির্দেশে ইংরেজ চিকিৎসকের সকল আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এবার ইংরেজরা অনেক স্বাধীন ভাবেই ব্যবসা শুরু করে।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours