সুজয় মন্ডল, প্রাক্তণ কমান্ডো, সিআরপিএফ, মুর্শিদাবাদ:
আমি সুজয় মণ্ডল আমি আপনাদের সামনে একটি সত্য ঘটনা নিয়ে সাধারণ জনগণকে আমার নিজের মর্মান্তিক কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আমি একজন এক্স কমান্ডো সিআরপিএফ জওয়ান। সাধারন জনগন ও কমান্ডো জওয়ানদের জীবনী সম্পূর্ণ আলাদা। সাধারন জনগন জানতেই পারেন না যে একজন সৈনিক কে কত মাসুল দিতে হতে হয়।
সালটা ২০১৪, ৯ এপ্রিল । ছত্তিশগড়ে ২০৬ নং কোবরা ব্যাটেলিওন জওয়ানদের সঙ্গে নকশালবাদী মাওবাদিদের মুখমুখি সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় ৩ জওয়ান নিহত হন । আহত হন আরও ৫ জওয়ান। যাদের সময় নষ্ট না করে তক্ষনাৎ হেলিকপটারে রাইপুরের রামকৃষ্ণ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন আহত জওয়ানদের মধ্যে আমি ছিলাম। আমার বাড়ি খরগ্রাম, মুর্শিদাবাদ জেলা। তখন আমার বয়স মাত্র ২৭ বছর। আমাকে ১১ এপ্রিল ওই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর দ্বিতীয় বার আমাকে বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। এই ঘটনা সাংবাদিকরা জানতে চান তাই আমি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হই। সাংবাদিকদের আমি যা সত্য তাই জানিয়েছিলাম। ছত্তিশগড়ে মাওবাদিদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিকল্পনায় ঠিক কি কি গলদ ছিল এবং আহত জওয়ানদের চিকিৎসার মধ্যে কিকি খামতি ছিল।
সেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ! ঠিক যেমন তেজ বাহাদুর কল্পনা করতে পারেননি তাঁর একটা ফেসবুক পোস্ট তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনে কতটা অন্ধকার ডেকে আনতে চলেছে ঠিক তেমনই আমি তখনও জানতাম না আমার এই সত্যিটা সবার সামনে আসাতে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে!
এরপর বাড়ি বা কর্মস্থলে না ফিরে আমার ঠাঁই হয় জেলে। যেখানে আমার উপরে চলে অকথ্য অত্যাচার! কেড়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা আমার মোবাইল ফোনও ।এত কিছুর পর যখন আমাকে ছাড়া হয় এবং আমার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় তিন মাসের সাসপেন্সনের চিঠি!তিন মাস পার হবার পর আবার যখন কর্মস্থলে যায় পুনরায় আবার আমাকে তিন মাসের সাসপেনশনের চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়।
চমকের এখানেই শেষ নয়! বাড়ি থেকে ছয় মাস পর আমি যখন আমার কর্মস্থলে যাই আমাকে সেখানে জানানো হয়, আমার বাড়িতে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ‘ডিসমিস লেটার’ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আপনারাই বলুন আমার মতো যে জওয়ান একদিন দেশের জন্য লড়াই করতেন , সেই জওয়ান কে বিগত ৫ বছর ধরে ন্যায় পাওয়ার জন্য লড়াই চালাতে হচ্ছে!
সেদিন যা ঘটেছিল তা আরো বিস্তারিত জানালাম...
সেদিন আমাকে এবং আমার অসুস্থ সহকর্মীদের ঠিকঠাক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে বেরিয়ে আমাকে বাইরের হসপিটালেও বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করাতে হয়। আমাদের ব্যাটেলিয়নে সিস্টেম ঠিক করাটা অন্ততই প্রয়োজন ছিল। যারা নতুন জয়েন্ট করছিল তাদেরকে পুরোপুরি ট্রেনিং না দিয়েই যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে দেওয়া হতো। উল্টে পিছন থেকে সেরকম কোনও ব্যাকআপও দেওয়া হত না।"
আমার মতে, পুরো সিস্টেমটাই গড়বড়ে। কারণ সিস্টেম ঠিক থাকলে সেদিন এই দুর্ঘটনা হতোই না। ঠিক যেমনটা আমি মনে করি পুলওয়ামা কান্ডও এই গলদ সিস্টেমের পরিণাম । যার যেরে প্রাণ যায় বাবলু সাঁতরাদের মত জওয়ানদের।
আমি নিজে (ডিআইজি, আইজি, ডিজি) উচ্চপদস্থ অফিসারদের কাছে দরখাস্তও জমা দেন। কিন্তু তাতেও তিনি কোন ন্যায় বিচার পাইনি। তারপরই আমি কিছুটা বাধ্য হয়েই সংবাদ মাধ্যমের দারস্থ হয়েছি। আর আজও তিনি ৩ বছর ধরে লড়াই করে যাচ্ছি সেই অন্যায়ের বিচার পাওয়ার জন্য।
তেজ বাহাদুরের কথা দেশবাসী জানতে পারলেও আমার খবরটা সেভাবে খবরের শিরোনামে আসেনি আজও, অথচ তেজ বাহাদুরের অনেক আগেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা করেছিলাম আমার মতো এক বাঙালি যুবকই।
বহিস্কৃত বিএসএফ জওয়ান তেজ বাহাদুর যাদব এবং কমান্ডো জওয়ান আমি সুজয় মন্ডল প্রতিবাদে সরব বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের সাফ কথা, " বর্তমান সরকার সেনাদের নামে ভোট চাইলেও তাদের জন্য কিছুই করেনি।
যারাঁ দেশের জন্য লড়াই করেন,প্রাণ বাজি রাখেন তাদের প্রতি আরেকটু বেশি সংবেদনশীল হওয়াটাই সরকারের কাছে কাম্য।একজন সেনা জওয়ানকে যখন প্রধানমন্ত্রী 'র বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে নামতে হয় তখন বুঝতে অসুবিধা হয়না সিস্টেমের গলদটা।আর এই সিস্টেমের বিরুদ্ধেই তো লড়াইয়ে নেমেছি আমি।
(প্রতিবেদকের নিজ দায়িত্বে প্রতিবেদনটি লেখা)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours