জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
ঈশ্বরেরো যদি ঈশ্বর থাকে
বিশ্বের বাইরে যদি কোন বিশ্ব থাকে
ভারতের বোধজগতের নবজাগরনে
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন
সেখানকারো ঈশ্বর।
আজ সেই মহামানবের জন্মদিনে, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকে প্রনাম জানাতে গিয়ে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ। আরো গৌরব বোধ করছি এই কারনে - বিদ্যা এবং জীবনবোধের দিক দিয়ে এই দীন মানুষটি, তার ' ঈশ্বরের' দ্বিশতবার্ষিকী জন্মতিথীর সাগরতীরে সমবেত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এর পরবর্তী প্রজন্মগুলি যদি তাকে স্মরনে রাখে, এমন একটি দিনকে পেতে অন্ততঃ আরো একশ' বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এই মহামানবকে বুঝে ওঠার যোগ্যতা আমার নেই । তবু তার জীবন রেখা ধরে যৎকিঞ্চিৎ চিনেছি, শুধু তাকেই নয়,
----- একজন ব্যক্তি যে কিভাবে ইতিহাস হয়ে যায় এবং জাতির জীবন ও মানবিকবোধের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়ে ঈশ্বর হয়ে বসে থাকেন, বিদ্যাসাগর মহাশয়কে দেখে নতুন করে চিনলাম।
ওইকোপিডিয়া যখন তার জীবনচরিত লিখতে গিয়ে বলবে, ঈশ্বর বাংলার রেনেঁশার জন্মদাতা। লিখবে মাত্র ১৯ বছর বয়সে আইন শাস্ত্রে বিপুল উত্তির্ন হওয়া, ২১ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে, সংস্কৃত বিভাগের প্রধান এবং ২৬ বছর বয়সে সংস্কৃত কলেজের সহ সম্পাদক হয়ে এবং বর্ণ পরিচয় সমেত বাংলায় নয়টি গ্রন্থম যার মধ্যে বেশ কয়টি কয়েকটি গবেষনামুলক পুস্তক এবং তার সাথে বাংলার এক সংবাদপত্র প্রকাশ করে, ঈশ্বর চন্দ্র, বিদ্যাসাগর হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলছেন, বিদ্যাসাগর যদি না আসতেন, রবীন্দ্রনাথ তো বটেই, ঈশ্বর উত্তরকালে অন্য কোন সাহিত্য কিংবা ভারতীয় সমাজে পরবর্তীকালের সমাজ সংস্কার ডুবে যেতো।
তিনি ঈশ্বরচন্দ্রকে ভারত পথপ্রদর্শক হিসেবে বর্ণন করেছেন। অবশ্য এখন যদি তাকে অন্ততঃ বাংলাও তাকে অন্তরে স্থান দেয় আমরা গদ গদ হবো। বিশ্বকবিকেও তো আজকাল, বংগজেরাও বাংগালার এবং নাচ-গানের কবি হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
ব্যক্তিগত ধারনা, যদিও ঈশ্বর চন্দ্র সম্ভবত কিঞ্চিত অগ্রজ হিসেবে চিন্তার জগতকে যুক্তি-তর্কের পায়ের উপরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে, রামকৃষ্ণ পরমহংশের ধর্মসংস্কার এবং পরবর্তীকালের বিবিকানন্দের ধর্মে মানবিকতার ধারাটির জন্ম দিয়ে গেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র কালের পর পরেই রামকৃষ্ণের সমসাময়ীক কালেই সারা ভারতে ধর্মসংস্কারের এক প্রবাহ চলছিলো।
এই যুক্তিবাদের জনক হিসেবেই আমি এগিয়ে যেতে পারতো না। গেছেন এবং এ কাজটাকেই তার শ্রেষ্ট অবদান হিসেবে মেনেছি। সেটা না মানলে, তিনি বিদ্যার সাগর, তিনি দয়ার সাগর, তিনি মানবিকতার সাগর, তিনি জীবনবোধের সাগর - এসব কোন বিশেষন কাজে লাগে না।
আরো ভাবতে আনন্দ লাগে, এই কলমের লেখক যাকে তার ভাবজগতের ইতিহাসে রোমান্টি হিরো হিসেবে মানেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র ব্যতিত , ডিরোজিও এবং সমকালে হিন্দু কলেজে সমবয়সী ছাত্র-শিক্ষকের (বেঙ্গল ক্লাব) সেই মহাসম্মেলনের নজীর কোন দিনই ভারত খুজে পেতো না। প্রসংগত বলে রাখি, সেকালের হিন্দু কলেজই আজকের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
সমাজ বিজ্ঞানের সুত্র ধরে, যারা সমাজ সংস্কারমূলক রাজনীতি করেন, তাদের একটা সাধারন নিয়মকে মেনে চলতে হয়। নিয়মটা হোল-
এমন একটি বিষয়কে চিহ্নিত করা, যা কালের সবগুলি সামাজিক দ্বন্দ্বের মুখগুলিকে চিহ্নিত করা যায়। তিনি যে কী করে বুঝলেন, নারীমুক্তির বিষয়টিই পুরো ভারতীয় সমাজের কর্দমাক্ত দিকগুলিকে চিহ্নিত করে দেবে।ঈশ্বর চন্দ্রকে যদি রামমোহন রায়ের ধারাবাহীক সত্বা বলে মানা যায়, তবে দেখা যাবে, সবে সতীদাহের অসভ্য রীত কিঞ্চিত ছাই চাপা পরেছে। ঈশ্বর প্রথমে মেয়েদের অল্প বয়সে বিবাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন। যুগপদ তার তীরে ধরা পরলো, নারী শিক্ষা এর পর মেয়েদের স্ব-ভিমানকে চিরঞ্জীব করতে বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন।
তাই বলি অন্য কেউ না হোক, ভারতীয় নারী জাতি ঈস্বরচন্দ্রকে ঈশ্বরজ্ঞানে সাধনা করবে, তাদের পূর্ণমুক্তি না হওয়া পর্য্যন্ত।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours