শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

মিডিয়া তাকে যত কভারেজই দিক ; কমরেড কানাইয়া বিহারে গো হারা হারবেন অনেকেই জানতো।  বিজেপির গিরিরাজ সিং এর কাছে বিপুল ভোটের ব্যাবধ্যনে ভারতে এবার লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন কমরেড কানাইয়া। তাকে টিভি চ্যানেলগুলো চেহারা দেখানো ও পরিচিত হওয়ার বিশাল সুযোগ করে দিয়েছিলো।  যে তুলনায় গিরিরাজ সিং ৫% ও পাননি। চকলেট হিরো  কানাইয়ার পক্ষে কথা বলছেন, নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন জাভেদ আখতারের মত বিখ্যাত ব্যাক্তিও। জাভেদ আখতার আমার খুব প্রিয় ও পছন্দের ব্যাক্তিদের অন্যতম।  আমি তার ও তার পিতার উর্দূ কবিতা পড়েছি। ইউটিউবে তার টিভি সাক্ষাতকার, লেকচার শুনে অনেক কিছুই শিখেছি, জেনেছি।
জাভেদ আখতার এমনই একজন লেখক, কবি, গীতিকার কাহিনীকার ও রাজনীতিক যিনি প্রকাশ্য অডিটরিয়ামে  উপস্থিত হাজারো দর্শক শ্রোতার সামনে লাইভ  টিভি শোতে  বলেন, তিনি একজন নাস্তিক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন; সারা পৃথিবীতে মসজিদ মন্দীর উঠে গেলেই তিনি খুশি। কোথায় রাম মন্দীর বা বাবরী মসজিদ থাকলো কি বা না থাকলো এ নিয়ে তার কোন ম্যাথা ব্যাথা নেই। কমরেড কানাইয়া এভাবে কখনোই বলতে পারবেন না বস্তুবাদী রাজনীতির নেতা ও কর্মি দাবী করারও পরও। বিজেপির কঠোর  সমালোচনা করেন জাভেদ আখতারও নিজেও। কিন্তু কমরেড কানাইয়া আর জাভেদ আখতারের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যাবধান। জাভেদ আখতার ভারতীয় জাতীয়তাবাদের রক্ষকও। যা কমরেড কানাইয়া নন। তিনি " ভারত ভেঙ্গে টুকরো" করার পক্ষে! আর জাভেদ আখতার, বিভক্ত  ভারত অখন্ড রেখেই  এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সে অর্থে  কানাইনার বিজেপি ও মোদী সমালোচনা শিশু সূলভ। জাভেদ আখতারের নিকট কানাইয়ার  শেখা উচিত  কিভাবে কোন  দল ও ব্যাক্তির সমালোচনা করতে হয়। কানাইয়ার অনেক কথা জাকির নায়েকের মত। প্রশ্ন এক, তো জবাব দিয়ে থাকেন  আরেক। একজন কমরেডের বক্তব্য থাকা উচিত পরিস্কার  ও স্পষ্ট। ধর্মবেত্তাদের মত গোজামিল ও ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নেয়ার সুযোগ নেই কোন কমিউনিষ্টের। যা, কমরেড কানাইয়া করে থাকেন। 
অবশ্য,জাবেদ আখতার আর চকলেট হিরো কমরেড কানাইয়ার তুলনা হয় না। করা উচিতও নয়। তবে উদাহারন দিতে গিয়ে জাভেদ  আখতারকে টেনে আনলাম। জাভেদ আখতারকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিলো; ভারতের কোথাও কোথাও শহরের নাম বদলের তিনি পক্ষে না বিপক্ষে।  তিনি সরাসরি বলেন, নাম বদলের পক্ষে। তবে নতুন নামে  নতুন শহর করারও পক্ষে তিনি।

আজ কমরেড কানাইয়ার একটি লেকচার শুনলাম; তিনি তাতে তিন তালাক বিলের  বিরুদ্ধে কথা বললেন। একজন কমরেড কি ভাবে তিন তালাক বিলের বিরোধীতা করেন তা আমি বুঝি না! কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো না পড়েই কি কমরেড কানাইয়া, কমরেড হয়েছেন! নাকি জেনে বুঝেই বিতর্ক সৃষ্টি করতে চান? 
আমাদের বাংলাদেশের গ্রাম্য কমিউনিস্টরা না হয় কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর ইংরেজি 
ভার্সন পড়তে পারে না। তিনি তো শুনেছি ডক্টরেট। এবং একটি ভারতীয় অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট নিয়েছেন।
। কমরেড কানাইয়া কি জানেন না, তার মহান ভারতে ( অবশ্য তিনি নিজে তার মাতৃভূমিকে মহান মনে করেন কি না তা সন্দেহজনক কারো কারো মতে) কিছু দিন আগে  তিন তালাক বাতিল করলেও ;পাকিস্তানের মত "মেলেটারি " ও  "মোল্লার দেশেও আইয়ুব সরকার আজ থেকে  ছয় দশক আগেই তিন তালাক বাতিল করে দিয়েছিলো। বাংলাদেশেও তা বাতিল। 

কিন্তু ভারতে এই রকম একটি অনিয়ম, যা নারীকে অবহেলার পাত্র করে তুলে। ইনিয়ে বিনিয়ে সেই তিন তালাকের পক্ষে কথা বলেন কমরেড কানাইয়া। তাতে কেবল বিস্মিতই হইনি লজ্জাও লাগছে। একজন কমরেড দাবীদারের  তিন তালাকের পক্ষে কথা বলা দেখে। ভারত ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এত নিম্নমানের কমরেড তৈরি করে বলেই হয়তো ভারত উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির আজ এই দুরাবস্থা! আরে ভাই, বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী বিরোধীতা করার জন্য কি বিষয়ের অাকাল পরেছে? যে, তিন তালাকের মত মধ্যযুগীয় প্রথার পক্ষে নিতে হবে! অথচ তিন তালাক ইসলাম ও কোরআন সুন্না বিরোধী। তা কমরেড কানাইয়ার জানার কথা নয়। কেন না, তার কথাতেই বুঝা যায় তিনি কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতে পরিবার প্রথা নিয়ে লেখা অংশটুকু পড়েননি। তো, তার আর কোরআন হাদীস পড়ার সময় কোথায়? আমি তার মত " ডক্টরেট ",  " ব্রিলিয়ান্ট " ও "সেলিব্রিটি" না হলেও কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো ও কোরআন হাদিস পড়ে দেখেছি।  তাতে একজন  কমিউনিস্ট হিসেবে তো নয়ই , কোরআান হাদিসের আলোকেও  তিন তালাক বিলের বিরোধীতা করার সুযোগ নেই। অবশ্য, মগজ যদি কেবল বিজেপি ও মোদী বিরোধীতায় আচ্ছন্ন থাকে তাহলে অন্য কথা। আমি সেই কমিউনিস্টদের সঙ্গে নই যারা মনে করে  নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি বিরোধীতা আর কাশ্মীরের জঙ্গিদের পক্ষ নিলেই পৃথিবীতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে যাবে! কানাইয়ার কাশ্মীরের "মুসলিম জঙ্গি" প্রীতির কথা নাই বা বললাম! আমি এও বুঝি না  কমরেড কানাইয়ারা "রাম রাজত্ব" চাহনেওয়ালাদের গলা ফাটিয়ে সাম্প্রদায়িক বললেও,  "নেজামে মোস্তফা " চাহনেয়ালারা কি ভাবে অসাম্প্রদায়িক ভাবেন! ভারতে কানাইয়াকে এ প্রশ্নটা করার কি কেউ নেই ? কানাইয়াকে বোধয় তার উাস্তাদ কমরেডবৃন্দ ইরানের কমরেডদের পরিণতির ইতহাসের পড়তে দেয়নি। 
ইউপিতে, মোঘল সরাই স্টেশনের নাম পাল্টে দিন দয়াল উপাধ্যায় জংশন রাখা হয়েছে তাতে কমরেড কানাইয়ার শরীর কেন জ্বলছে তা বুঝা গেলো না! রেল ষ্টেশনটা কি মোঘলেরা বানিয়ে ছিলো উজবেকিস্তান বা কাবুল থেকে এসে!  নাকি কানাইয়ার বংশধরেরা কাবুলের? নাকি কানাইয়া মনে করেন মোঘলরা কমিউনিস্ট ছিলো!

কমরেড কানাইয়ারা জনগন ও জনমতের  কথা বলেন! তা জনগন তো এখন নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে। আপনাদের পক্ষে জনগন ও  জনমত নেই বলে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীকে গালি দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চান? তাহলে ভিন্ন কথা। তবে যে, অটল বিহারী বাজপায়ীকে আপনারা সাম্প্রদায়িক বলেন; তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিন বিজেপি যখন হেরে যায়,তখন বলেছিলেন; "হেরেছে বিজেপি, জিতেছে ভারত"। কই, তাকে তো নোবেল বিজয়ী  অমর্ত্য সেনের মত বলতে শোনা যায়নি, জনগন ভুল (?) করেছে  !  বিজেপির মত "সাম্প্রদায়িক ' দল গনতন্ত্র ও জনগনের মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? আসলে, জেদ, বাগারম্বর, হিডেন এজেন্ডা আর বাস্তবতা  সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়।

কেবল টিভিতে মুখ দেখালেই কেউ পন্ডিত ও মান্যবর হয়ে উঠে না। তাই বোধয়  বাংলাদেশের অধ্যাপক, ডক্টর হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন;
"বাংলাদেশের প্রধান মুর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোন অালোচনা অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে উপাস্থাপকটি হচ্ছেন, মূর্খশিরোমণি।"  তিনি আরো বলেছেন, "আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো অসংখ্য শুয়োরবৎসকে মহানবরুপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।"  আমি ভারতীয় টিভি ও উপস্থাপক নিয়ে এমন মন্তব্য  করতে চাই না। কেন না, আমি ভারত ও পাকিস্তানের টিভি চ্যাানেলগুলোতে কিছু স্কলারও দেখেছি।
তবে ডক্টর আজাদের একটি কথা না বললেই নয়, তা হলো 
 "আমাদের প্রায় প্রতিটি মার্কসবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি করে মৌলবাদী বাস করে।"

বিভিন্ন কুযুুক্তি সামনে এনে কেবল একটি দল ও এক ব্যাক্তির বিরোধীতা করা মত ছেলে মানুষি কোন কমিউনিস্টের কাজ নয়। কমিউনিস্টদের কাজের পরিসর অনেক বড়। চকলেট হিরো কমরেড কানাইয়া তা যত তাড়াতাড়ি তা বুঝে ততই মঙ্গল।  কেন না, কিছু  হঠকারী সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের কারনে কেবল, ভারত নয়, পুরো  ভারত উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির অবস্থান খুবই করুন। শ্রমজীবী মানুষদের মুক্তির আন্দোলন এগিয়ে নিতে হলে ;প্রথমে  কমরেডদের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’র বাইরে যত "পেস্ক্রিপশান " আছে তা ফেলে দিতে হবে। 
তা না হলে কমিউনিস্টরা না হবে ঘরকা না ঘটকা।
 

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours