কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
'জিসকি বিবি মোটি উসকা ভি বড়া নাম হ্যায়!"
একেবারেই। মোটা গোলগাল গিন্নি মানেই 'খুশি কা খজানা'। লাইফ ঝিঙা লা লা !
বিয়ে যদি করতেই হয় টেপিসুন্দরীর গলাতেই মালা পরান। দেখবেন, জীবন কেমন ফুরফুরে বাতাসের মতো বয়।
ওই রোগা, ফুরফুরে, বাতাসে ভাসা সুন্দরীরা কভভি নেহি।
খবরদার তাকাবেন না ওই তন্বী, ছিপছিপেদের দিকে। একবার যদি শাখা- সিঁদুর পরিয়ে ঘরে তুলেছেন, তাহলেই ফেঁসেছেন। এক্কেবারে সব্বোনাশ !
কী
বললেন, স্লিম- ট্রিম মেয়েই পছন্দ? মানে ওই ৩৪-২৬-৩৬। অঙ্কের হিসেবে
সুন্দরী হতে গেলে কিন্তু আরও একটা জিনিস জরুরি। তা হলো হাইট। পাঁচ ফুট দু
ইঞ্চি। সেটা খুব কম বাঙালি মেয়ের আছে। তার মানে, আপনি ঝুঁকি নিয়ে যদি
ছিপছিপেকেই মন দিয়ে বসেন, তাহলেও সে সুন্দরী এমনটা দাবি করতে পারবেন না
কোনও মতেই।
তাহলে কপালে অশেষ দুঃখ আছে বস আপনার। শিবেরও সাধ্য কী তাকে রোখে?
আরে মশাই চাইছেনটা কী, সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড? তারপর সবকিছু ঠিকঠাক চললে প্রজাপতির নির্বন্ধ। তাই তো?
তা একটু গোলগাল, টেপিসুন্দরী হলে চলবে না কেন?
ধুস,
ওদের তো নড়তে চড়তেই আধ ঘণ্টা। বড্ড কুঁড়ে। ল্যাদখাওয়া পাবলিক। শরীর মোটা
মানেই মোটামাথার মেয়ে। ঘিলু কম, চর্বি বেশি। অমন মেয়ের সঙ্গে মানিয়ে চলা
মুশকিল।
আরে মশাই, আপনার মানিয়ে চলতে হবে না। আপনার
ওই প্লাস- সাইজ সুন্দরীই আপনার সঙ্গে মানিয়ে চলবে। ভগবানের দিব্যি! একবার
প্রেম করেই দেখুন না। গবেষণা বলছে, এই ভারী চেহারার মেয়েদের প্রেমপর্ব এক
স্থায়ী বন্দোবস্ত। অক্ষয় হয় এঁদের সিঁথির সিঁদুরও। দীর্ঘজীবী হন স্বামী।
আর
হবেই বা না কেন, খোদ স্ত্রী যখন সহায়। আশ্বাস দুই মনস্তত্ত্ববিদের।
প্রথমজন ডক্টর ফিলেমন আলভার্দো, দ্বিতীয়জন ডক্টর এডগার্ডো মোরালেস। এঁরা
দুজনেই গবেষণার জন্য বিখ্যাত মেক্সিকোর নামজাদা ন্যাশনাল অটোনমাস
ইউনিভার্সিটির মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যক্ষ। সম্প্রতি এঁরা এক গবেষণা চালান
প্লাস- সাইজের স্ত্রী আর তাঁর স্বামীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে। সমীক্ষায় দেখা যায়,
নধরকান্তি মহিলাদের স্বামীরা অন্যদের তুলনায় প্রায় দশগুন বেশি সুখী।
মোটাগিন্নী-
কর্তার সম্পর্কটা হয় বেশ মাখোমাখো। তাই স্বামীরাও বেশ হাসিখুশি। সেই
তুলনায় ফুরফুরে মেয়ের স্বামীরা হাসেন কম। গোমড়ামুখো। হাসলেও যেন প্রাণহীন।
কাষ্ঠহাসি। কেন? সমীক্ষা বলছে, ছিপছিপেরা একটু মেজাজে থাকেন। হয়তোবা নিজেকে
সুন্দরী ভাবেন বলেই। বউ যদি হালকা মেজাজের না হয়, তাহলে স্বামী বেচারাই বা
একা, নিজের মনে হাসেন কিভাবে? তাও যদি কোনও বেপরোয়া আহাম্মক স্বামী বত্রিশ
পাটি প্রদর্শনের দুঃসাহস দেখান, কপালে অশেষ দুঃখ আছে।
"কথায়
কথায় অমন দাঁত কেলিয়ো নাতো," বউয়ের ডায়লগ শুনতেই হবে। অথবা গায়ে সিলমোহর
দেগে দেবে বাচালের। তখন সেই গানটা মনে পড়ে যাবে, 'ফুল সে হাসিতে হাসিতে
ঝরে!'
ওদিকে মোটা বউরা হন
অনেক খোলামেলা। রূপের বড়াই করা তাদের সাজে না। সমাজ এমনটাই শিখিয়েছে
তাঁদের। তাই নিজের অকপট ব্যবহারেই চান, স্বামীর মন জয় করতে। অন্যদিকে
ফুরফুরেরা ভোগেন আত্মগরিমায়। তৈরি করেন নিজেদের এক স্বতন্ত্র অবস্থান।
ভালবাসেন একটু দূরত্ব রেখে চলতে। কারণ তথাকথিত সুন্দরীদের গা-ঘেঁষে চলা
পুরুষসিংহের সংখ্যাও নেহাত মন্দ না।
যতই শপিং করুন না
কেন, চট করে খুশি হন না স্লিমট্রিমরা বিবি। আবার চট করে আনন্দেও গলে পড়েন
না। এই করতে গিয়ে স্লিমট্রিমদের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন যায় কমে। সমীক্ষা
এমনটাই বলছে। হিসেবকষা রিয়্যাকশন বলেই একসময় 'ঠান্ডাঘরে'র দিকে পা বাড়ায়
দাম্পত্য। হারায় সম্পর্কের উষ্ণতা।
মিসেস
যদি ওয়ার্কিং ওম্যান হন, তাহলে ঘরকন্না সামলানো মুশকিল। তখন ভরসা ওই কাজের
মাসিই। তবে মহিলারা সাধারণত খুব নিরুপায় অথবা জঘন্য রকমের আলসে না হলে,
অন্যের হাতে হেঁসেল তুলে দিতে রাজি হন না। কিন্তু সমীক্ষা সেখানেও জিরো
ফিগারের পক্ষে নেই। এগিয়ে রেখেছে গোলগালদের। তাঁদের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট
স্বামীর পছন্দ অপছন্দকে মাথায় রেখে চলা। ঘরকন্না স্ত্রীর হাতে চললেও,
নেপথ্যে কাজ করে পতিদেবের পছন্দ অপছন্দ। স্বামী 'হা' করলেই ধরে ফেলেন
'হামি' চায় নাকি 'হজমি গুলি' চায়। যে কোনও পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়
সেরা মোটা গিন্নি সদাবাহার।
স্বামীর
মনের খবর রাখেন বলে, দাম্পত্য চলে মসৃণ। মন কষাকষি হলে 'ইগো' সমস্যা হয়
না। মান- অভিমানের গোটা পর্ব নিপুন হাতে সামলান গিন্নি। সম্পর্কের
টানাপোড়েন কখনও চাপ হয়ে দাঁড়ায় না। আর হতাশার তো জায়গাই নেই টেপীসুন্দরীদের
মনে। দারুণ আত্মবিশ্বাসী। তাই মনে মুখে এক। চাপাচুপির ধার ধারেন না। মনের
কথা মুখে বলতে বাধে না। সহজেই মিশে যান পাঁচজনের ভিড়ে।
এই
প্লাস- সাইজ মহিলাদের আরও গুণপনার কথা বলতে গিয়ে, এক মজাদার তথ্য দিয়েছেন
আমেরিকার নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির গবেষক মার্টিন টোভি। যখন কোনও পুরুষ চাপে
পড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যান, তখন তিনি পাগলের মতো খুঁজে বেড়ান এক ভরা শরীরের
নারী।
সে সময় কন্ঠার হাড় বার করা, জিরো ফিগার
সুন্দরীদের একদম বরদাস্ত করতে পারেন না তিনি। মনে হয় ওই স্লিমট্রিমরা
অসুস্থ। পেটরোগা। বুকেপিঠে এক। অনুর্বর।
আবার
পেটে দানাপানির টান পড়লে, সেই ক্ষুধার্ত পুরুষকেও টানে ভরাশরীরের নারী।
আসলে কোন পরিস্থিতিতে আমরা কাকে, কিভাবে স্বীকার করবো তা ঠিক করতে প্রভাব
ফেলে ব্লাড সুগার, হরমোন স্তরের মতো বায়োলজিক্যাল মেকানিজম চালিকা শক্তি।
টোভি বলছেন, "মালয়েশিয়া, আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে পরিবেশ ভীষণ
খারাপ। খাবার-দাবার থেকে নিয়ে সব রিসোর্সেরই আকাল। সেখানে প্রতিটা পুরুষই
কামনা করে মোটা চর্বিওয়ালা শরীরের নারী। অবচেতন মনের এ এক বিচিত্র প্রকাশ।
আসলে ক্ষুধার্ত পুরুষের মন জানে, ওই নারীশরীরের চর্বি খাদ্যের আকালের
মোকাবিলায় প্রকৃতির দান। তাই ওই মোটা নারীশরীর তাকে এক সুখের অনুভূতি দেয়।"
তবে
গোটা ব্যাপারটাই কিন্তু উলটে যাবে আমেরিকা, ব্রিটেনে গেলে। ধনী দেশে সেই
পুরুষের শরীরের চাহিদাও যাবে বদলে। তবে স্বচ্ছলতার মধ্যে থেকেও, মনের ভেতর
কোথাও সুপ্ত হয়ে থেকে যায় সেই আকালের অভিজ্ঞতা। তাই সম্ভবত আজও ব্ল্যাক
আমেরিকান মেয়েরা যথেষ্ট গোলগাল। সাফ কথায় তারা জানিয়েও দিয়েছে- না মোটেই
রোগা হতে চাই না। আমরা মোটা, কারণ আমরা মোটা থাকতে চাই।
ব্ল্যাক
আমেরিকানদের সমাজে দারুণ কদর ওই শ্যামা মেয়েদের মোটা কালো থাইয়ের। সেই
কলাগাছের মতো মোটা থাইকে নিয়ে কবিরা কবিতাও লেখেন। তবে শুধু কালোরাই না, এই
মোটা থাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খান গোরারাও। শুধুই কি মন আর শরীরের আরাম,
তৃপ্তি ! নাকি শরীরে চর্বির আধিক্য ভালবাসার পেছনে অন্য কিছুও কাজ করছে?
জানলে
অবাক হবেন, এই ব্ল্যাক আমেরিকান মহিলাদের ভারী বুকের অন্তরালে লুকিয়ে আছে
এক প্রবল জেহাদি মন। তাঁদের ওই বড়সড় শরীরকে তাঁরা মনে করেন প্রতিবাদের
সূচক। লিঙ্গ, বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা ওই কালো নধর
নারীশরীর। আন্দ্রিয়া এলিজাবেথ শ তাঁর বই 'দ্য এমবডিমেন্ট অফ
ডিসওবিডিয়েন্স'য়ে এমনটাই জানিয়েছেন।
সবই
তো হলো। কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। আপনি সব বুঝে শুনে বিচক্ষণতার সঙ্গে
সিদ্ধান্তে এলেন। পছন্দ- টছন্দ করে বিয়ে করলেন এক বেশ পানপাতামুখ, নিটোল,
গাবদা- গোবদা চেহারার সুন্দরীকে। সুখী সংসার। এরপরেই আপনার সাধের মুটকি
গিন্নি পাড়ার জিমে নাম লেখালেন। ঝরঝর করে ঝরতে লাগল চর্বি। জিরো ফিগার হয়েই
ছাড়বেন তিনি, তখন ?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours