জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

সামাজিক দ্বন্দ্বে যখন বুদ্ধির উপরে নির্বুদ্ধিতা এবং জ্ঞানের উপর অজ্ঞানতা প্রাধান্য, যখন বিজ্ঞানে উপর বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের উপর
উপর অধিবিদ্যার প্রাধান্য, 
------ ভারতীয় রাজনীতির রাজনীতিহীনতাকে যখন নিয়ন্ত্রন করছে, তখন তখন সেই 'ধমকটার কথা যেমন মনের অন্ধকারে অনেকটা আলোর ঝিলিক দিতে চাইছে, ঠিক তেমনি একটা পরম আত্মতৃপ্তি। জীবন রায় সেই 'ধমকটাকে' কোন অমর্য্যাদা হিসেবে না নিয়ে  আশির্বাদ হিসেবে মাথায় তুলে নিয়েছিলো।
পাঠকদের স্মরন করিয়ে দেওয়ার জন্য, সেই ধমকটা কি ছিলো কমরেড বি টি আর এর কাছ থেকে। ইস্পাত শ্রমিকদের জামসেদপুরে একটি সভায়, যেখানে উনার ভাষন দেবেন একটু পরে, সেই একই মঞ্চে তাকে বলতে বলায় সঙ্কোচ দেখানোর দায়  সেই ধমক
------ Jibon, a trade union leader should know every thing on earth and should be capable to answer every question.
সব  কিছু হাতের তালুতে থাকতে হবে, একজন শ্রমিক নেতার। তাকে তাৎক্ষনিক জবাব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যে কোন বিষয়ের উপরে।
প্রথমে কথাটা যদি না মেনে থাকি, তার কারন এই ছিলো না, যে  সেদিন তার পরমগুরুকে অস্বিকার করতে চাইছিলেন। আসলে আত্মবিশ্বাসের যে ভূমিতে দাড়িয়েছিলেন, সেটাই তাকে ছিটকে ফেলতে চাইছিলো। যে ছেলেটির ঠিকঠাক বিদ্যালয় পঠনপাঠনের সুযোগ হয় নাই, মাত্র ১৬ বছর বয়সে একটি ছোট বাক্সের উপরে, একটা বিছানা চাপিয়ে, বিহারের কোন কয়লা কেন্দ্রে দিন মজুরের চাকরী নিয়ে যেতে হয়েছিলো
------ কার্য্যকারন সম্পর্কের  পরিহাসে দেশের সর্ববৃহৎ কারখানার, সর্বোচ   
  শিক্ষার শ্রমিক মানের সাথে টাইপিষ্টের চাকরী নিয়ে এসে, ট্রেড ইউনিয়নে  'ফেসে' গিয়েছিলেন এবং উদ্যোগের ক্রম বিস্তৃৃতির কারনে দেশের এক উত্তম সংগঠকের মর্য্যাদা পেয়ে গেলেও
----- সেই ২৪/২৫ বয়সের যুবককে বিশ্বের সব কিছু জানতে হবে, সেই কথাটাই তো আতঙ্ক জনক।  
ক্রমে বুঝেছি শনৈঃ শনৈঃ  করে তিনি বুঝেছেন। যে দেশে শিক্ষাটাই টুকরো টুকরো করে দেখানো হয়, বিদ্যালয় কিংবা উচ্চ শিক্ষায় কদাচিত কোন অখন্ড সত্বায় মালা গাঁথার চেষ্টা হয়েছে সেখানে
----- তিনিই সেকান্দার যিনি কারখানায় শিক্ষা এবং শ্রমের মিলন সেতু পেয়ে গেছেন, আন্তরিকতার সাথে শ্রমিকদের প্রতি আত্মসমর্পন এবং শিক্ষকতা করার মধ্যে সামঞ্জস্য করতে পেরেছেন এবং সেই সামঞ্জস্য বিধানের সাথে সাথে, 
-----শ্রম বন্ধনের নিবিড়তার সব রকম বৈপিরত্বে মোকাবিলা করতে পালিয়ে আসেন নাই এবং পুলিশ-গুন্ডার উদ্যমতাকে মোকাবিলা করতে
গনশক্তিকে সচেতন প্রতিরোধে ভয় পান নাই
----- যুগপদ মার্ক্সের বিশ্ববোধের আলোকে নিজেকে খুজে পাওয়ার  চেষ্টা করেছেন এবং লেনিনকে শ্রমিকদের সর্বাধিনায়কত্বের যায়গায় উঠিয়ে আনার যোগ্যতাকে আত্মস্ত করায় সংগ্রামের নিরন্তনতায় নিজেকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন
----- তিনিই শেষ পর্য্যন্ত বুঝে নেবেন, মার্ক্সকে বাদ দিয়ে প্রথাগত শিক্ষার কোন কিছুই কাজের সময় কাজে লাগে না। অনেকটা অর্জুনের সাথে যুদ্ধের কালে কর্ণরথের চাকাঁ বসে যাওয়ার সামিল। একটা প্রশ্ন করলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। কেউ কী কোনদিন শুনেছেন, একবার রোজগারের রাস্তায় ঢুকলে পরে, প্রথাগত শিক্ষার গুরুতর বিষয়গুলিকে কেউ মনে রেখেছে? বস্তুত অর্থে, জীবিকার পথে আগের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়, শিক্ষাকে রোজগারের মতো করে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হয়েছে।
----- পারিপার্শিক কোন কোন বিষয় একজন কর্মীকে জ্ঞানের সামগ্রিকতায় টেনে তোলে, সে বিষয়ে পরে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই কোন দিন বলা যাবে। তবে নিশ্চিতভাবে শ্রমিকদের কাঠামোগত অবস্থান বিপুল গুরুত্ব নিয়ে চলে। ইস্পাতে যে উচুমানের নেতা নির্মানের সম্ভাবনা, অন্য কোথায়ো নেই । আবার কয়লায়, যে উচুমানের আন্তর্জাতীকতা লুকিয় অন্য কোথায় তেমনটি পাওয়া যাবে না। 
----- আবার যদি মেনে চলতে হয়, অখন্ড জ্ঞানে উত্তোরনের বিষয়টি জ্ঞানের অভিমুখের উপর নির্ভরশীল, তবে মানতে হবে সংগঠিত শিল্পে যারা নিরবিচ্ছিন্ন নিরন্তরতার সাথে সাংগঠনিক কাজকর্মের সাথে নিজেকে নিয়োযিত করেছেন,
----- তারাই মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের যুগলবন্দিতে পৌছে, বিশ্বকে তার প্রকৃ্ত রুপে খুজে পাবেন এবং নিজেই প্রকৃ্ত অর্থে বিশ্বপ্রবাহের একটা সাধারন রুপকে আবিস্কার করে ফেলবেন।অথচ সব থেকে বড় সাংগঠনিক এবং তাত্বিক সমস্যা এই বিন্দু থেকে নির্মান হয়। 
-----কর্মীদের অধিকাংশ যেমন গায়ে ঝুল কালি না লাগিয়ে, মেহনতির নিয়ন্ত্রক হতে চান, সাংগঠনিক কাজে হাত না লাগিয়েই অনেকে মার্ক্সবাদী  এবং বিশ্ব নেতা হতে চান। এ থেকে যে ওলট-পালট, তাকে সামলানোর ভাবাদর্শ এবং সাংগঠনিক ক্ষমতাটাই আন্দোলন সংগ্রহ করতে পারলো না।
আসলে, যখন ভীষ্ম পিতামহ, বলছেন একজন শ্রমিক নেতাকে বিশ্বের সব কিছু জানতে হবে তিনি, বিষয়গত ভাবে চলন্ত বিশ্বপ্রবাহের কোটি কোটি ঘটনাপুঞ্জ কিংবা সাগরের সামনে বসে ঢেউ গোনার পরামর্শ দেন নাই। --------তিনি কালপ্রবাহের সাধারন অভিমুখ এবং সেই অভিমুখে দাড়ীয়ে, প্রতিটি বাঁকের অতলে গিয়ে, ডুবুরীর মতো সব কিছুকে বুঝে বলেছেন এবং সেই বোঝার আলোকে, ঘটনাপ্রবাহের প্রতিটি ক্ষনের পেছনে যে সব শক্তি কাজ করছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করার যোগ্যতাকে বুঝিয়েছেন। 
---- এই কলমে ইতিমধ্যে যে পঞ্চাশেক লেখা এসেছে, তার প্রত্যেকটিকে যদি  কেউ বিশ্লেষন করেন, দেখা যাবে কোন লেখায়, সাধারনভাগে ঘটনা প্রবাহের পেছনে তাড়া করার চেষ্টা হয় নাই। বলে দিতে হয়, সেই যোগ্যতা, এই কলমের লেখকের নেই । পড়লেই দেখা যাবে একঁগাদা  পুস্তককে টেবিলে রেখে লেখার চেষ্টা হয় নাই।সে প্রয়োজন  লেখকের ছিলো না। সেরকম কেউ চানও নাই।
---- জগদীশ চন্দ্রের কথায়, ভাগিরথীর উৎস মুখের সন্ধানটাই করা হয়েছে। এ পথেই একজন প্রকৃ্ত কর্মী  মার্ক্স এবং লেলিনকে আত্মীক করে নেবেন। পেয়েও যাবেন। অন্য কোন পথে নয়।
এই প্রকয়া যেমন আত্মস্ত হবেন, তেমন আত্মবিশ্বাস তুংগে উঠতে থাকবে। মনে হতে থাকেব আপনি অজেয়। কেন এমন টি হবে? কারন মার্ক্সবাদের সবটা না হলেও তার প্রয়োগরীতি  অনেকটাই আপনার তালুতে।
----- তখন শুধু তালুতে নয়, পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসার যোগ্যতাও আপনি অর্জন  করেছেন। ভীষ্মপিতামহ, একদিন বোঝাচ্ছেন
" Look, never waste one bullet to book one target, one trigger tripping should target  many"
----- বিশ্বাস করুন, গতকাল পর্য্যন্ত এই সুত্রের অর্থটা আমার কাছে খুব সিমীত ছিলো। গতকাল, নির্ঝরের শিক্ষক ছাত্রদের সামনে যখন  মহামতি  ঈশ্বর চন্দ্র  বিদ্যাসাগর কে নিয়ে কিছু বলছিলাম, তখন হটাৎ একটি বিশেষ বিন্দু আমায় রোমাঞ্চিত করলো।
------ মনেহোল কী করে এই মহামানব একসাথে (ক) বাল্য বিবাহ (খ) মেয়েদের শিক্ষা (গ) বিধবা বিবাহকে এক বিন্দুতে  নিয়ে আসতে পারলেন। 
মাথায় ঝিলিক খেলে গেলোঃ 
-----  আসলে এটা তিন বিন্দু নয়। তিনে মিলে এক, আকাশের সীমান্ত রেখা আরো অনেক অনেক দূর। ঈশ্বর চন্দ্র  তখন কেবল বিদ্যার সাগর নয়। তিনি এখন ভারতের প্রথম যুক্তিবাদী সাগর, মার্ক্স বলে যে কেউ আছেন, সেটা না জানা সত্বেও তার যুক্তি বাদ, মার্ক্সবাদী প্রয়োগের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে আরোহন করেছেন।  
----- যুক্তিবাদের কল্যানেই ভারতের সমাজ সংস্কারকে তিনি একটা আন্দোলনে যেমন উঠে এসেছিলো তার অন্তরের মনিকোঠায়, তিনি বুঝেছিলেন, নারীর প্রতি যে নির্য্যাতনের বিষয়টিই, ভারতীয়  সমাজ কাঠামোর গভীর ক্ষত রেখা ধরে টান মেরেছিলেন ঈশ্বর চন্দ্র।
ক্রমে যেমনভাবে সংসদে কাজ করেছি, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অভিমুখ ধরে শিশু আন্দোলনের এবং শিক্ষা আন্দোলনের একতার অন্বেষনে কাজ করতে শুরু করলাম।
----- ক্রমে বুঝলাম, মার্ক্স এবং লেনিনের যুগলবন্দি শেষ বিচারে, সৃজনের এবং চিত্ত মুক্তির মহাতরঙ্গ  । মার্ক্সের পরিচিতিতে সৃজনের যতটুকু পরিচিতি তার থেকেও 'সৃজনের' পরিচিতিতে 'মার্ক্সবাদের' পরিচিতি।
নিজের চিত্তের আয়নাকে যেমনভাবে স্বচ্ছ হবে, তেমনভাবেই বিশ্বকে বদলের যোগদানে আত্মমর্য্যাদা, সাহস এবং যোগ্যতা - এই তিনটি উপাদান  একজন পেয়ে যায়। 
শিরোনামার বিষয়বস্তুর চালচিত্র হিসেবেই আজকের লেখাটি বিবেচনা করা উচিত হবে। আগামী কাল থেকে শিরোনামা আরো এগুতে থাকবে। (ক্রমশ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours