কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

দিনটা কেমন যাবে তা সকালেই বোঝা গেছিল।
আবেদন শুনানির একদিন আগেই কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ, রাজীব কুমারের আইনজীবীকে বলেছিলেন, "যান। গিয়ে মক্কেলকে আত্মসমর্পণ করতে বলুন।" তবে শুক্রবার সওয়াল- জবাবের পরেও, শুনানি সম্পূর্ণ হলো না। আগামী সোমবার ফের মুখোমুখী হবেন দু'পক্ষের আইনজীবীরা।
"আইনের ওপরে কেউ নেই।" ওদিকে মঙ্গলবারই রাজ্য গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমারের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কারুর নাম না করে জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল।

সোমবার ফের সেই কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন রাজীব কুমার। দু'সপ্তাহ আগে, এই হাইকোর্ট থেকেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিলো রাজীব কুমারের আইনজীবীকে। খারিজ হয়ে গেছিলো জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারের আবেদন। এবার আর্জি আগাম জামিনের। এর আগে এই একই আবেদন খারিজ করেছে আলিপুর জেলা আদালত।

এরপর গত মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা। বিচারপতি সাহিদুল্লা মুন্সি, শুভঙ্কর দাসগুপ্তর বেঞ্চে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন শুনানি শুরু হয়। তারপর থেকে লাগাতার শুক্রবার পর্যন্ত শুনানি চলে রুদ্ধদ্বার কক্ষে।

এদিকে ইতিমধ্যেই গত পঁচিশ তারিখেই ছুটি শেষ হয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা প্রধানের। এর আগে রাজীব কুমারের আইনজীবীকে বুক ফুলিয়ে বলতে শোনা গেছিল, পঁচিশ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে আছেন তাঁর মক্কেল। আর সে খবর সিবিআইকেও আগাম জানানো হয়েছিল। ছুটি ফুরনোর আগেই আগাম জামিনের রক্ষাকবচ পেতে আদাজল খেয়ে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেন রাজ্য গোয়েন্দা প্রধানের আইনজীবী। কিন্তু আশার আলোটা যখন নিবু নিবু ঠিক তখনই, শুনানির চব্বিশ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার শোনা গেছিল, রাজীব কুমারের ছুটির মেয়াদ আরও পাঁচ দিন বাড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এদিকে রাজীব কুমারের অবস্থা জানতে চেয়ে রাজ্য পুলিসের ডিজি'র কাছে তৃতীয় চিঠি দিয়েছে সিবিআই।

সিবিআই জুজুর ভয় আজও সমানে তাড়া করে বেড়াচ্ছে রাজীব কুমারকে।
রাজ্য গোয়েন্দা প্রধানের অবস্থাটা হয়েছে, 'চোরকা দাড়ি মে তিনকা'র মতো। চোরের দাড়িতে খড়কুটো। রাজীব কুমার নিজেই ধরে নিয়েছেন সিবিআই তাঁকে পেলেই ধরবে। আর তাই জেরার নাম শুনেই হাওয়া। ওদিকে সমানে শহরে চরকির মতো পাক খেয়ে বেড়াচ্ছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। আরেক দল গাড়ি ছুটিয়েছে শহরের বাইরেও। হানা দেওয়া হয়েছে শহরের বাইরে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার মতো জায়গাতেও।

ওদিকে স্বামীর কীর্তির খেসারত দিতে একাধিকবার জেরার মুখে পড়তে হয়েছে রাজীব কুমারের  স্ত্রী সঞ্চিতা কুমারকে। তবে ঝানু গোয়েন্দা প্রধানের ঘরণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তেমন কিছু সুবিধা করে উঠতে পারেনি সিবিআই। অন্তত তদন্তের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই মনে হচ্ছে।

রাজীব কুমারের সন্ধান পেতে তাঁর দেহরক্ষী, আবাসনের পরিচারককেও জেরা করা হয়। শহর ছেড়ে বাইরে কোথাও গা- ঢাকা দিয়ে আছেন কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয় প্রাক্তন নগরপালের ট্র্যাভেল এজেন্টকেও।

কিন্তু এত কিছুর পরেও সিবিআই যে তিমিরে সেই তিমিরেই। যেন অন্ধকারে হাতের যাওয়াটাই সার। সব দেখেশুনে সাধারণ মানুষের মনেও সন্দেহের ছায়া, সত্যিই সিবিআই রাজীব কুমারের চোরপুলিস খেলা চলছে নাতো? নইলে এতদিন ধরে কিভাবে বেপাত্তা আছেন রাজীব কুমার। দিল্লি থেকে পাঠানো বাঘা গোয়েন্দাদের অক্ষমতা ভালো চোখে দেখেননি সংস্থার দিল্লির কর্তারাও। বৃহস্পতিবারই তাঁদের দিল্লিতে ফেরানো হয় বলে খবর।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours