জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

জেএনইউ নির্বাচনে বামপন্থীদের বিপুল জয় থেকেও, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য্যকে মোহিত করেছে।

এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে এভিপির আদিভৌতিকবাদকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াটার সাথে,
------  দিল্লী ইউনিভারসিটির ছাত্র সংসদ  নির্বাচনে, ভাবাদর্শের দিক থেকে যারা মানবিক দিকে বিচরন করেন, গায়ের জোর আরোপ করে, তাদের নমিনেশন তুলতে না দেওয়াটা যদি যুক্ত করা যায় এবং তার সাথে হিমাচল এবং রাজস্থানে ছাত্র রাজনীতিতে যে ঝোক দেখা যাচ্ছে তা থেকে,
-----   মানবিক ভাবাদর্শ, যদি বিজ্ঞান এবং জনসংগ্রামের আলোকে  এগিয়ে দেওয়া যায়, সেটা যে  অপ্রতিরোধ্য, সেটাই নতুন করে প্রমানিত হচ্ছে। এই প্রবাহের সাথে দিল্লী বিশ্বাবিদ্যালয়ের, প্রায় দু'শ অধ্যাপকের সেই বিবৃতি যা অধিবিদ্যার আরাধকদের হৃদকম্প তুলেছিলো, সেটাকেও যুক্ত করা যেতে পারে। তাদের মতে, ভারত নাকি, স্বাধীনতার পর এমন নিকৃ্ষ্ট মানের প্রধান মন্ত্রী কোন দিন পায় নাই। এই বিবৃতিতে, কাকে কিভাবে সম্বোধন করা হোল, সেটা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এদেশে আদি-ভৌতিকবাদ জনমতের দরবারে এখনো শক্তিশালী হলেও, ভৌতিকবাদ বা যুক্তিবাদী ধরনাও যথেষ্ট জমাট রয়েছে।

এসব বিচারে, ভারতীয় রাজনীতির কোন শাখায় কে কতটুকু এগিয়ে রয়েছে বর্তমানে, কোন দল কোন নামে  রাজ্যে অথবা কেন্দ্রে শাসন করছে, সমাজ বিজ্ঞানের কাছে কম গুরুত্বপূর্ন, যতটা না গুরুত্বপূর্ন, 
----- অনুমান ধর্মীতা বা আদিবৌতিকবাদ বনাম ভৌতিকবাদ, অমানবিকতা বনাম মানবিকতার সংগ্রামে, সামাজিক অবস্থানের সন্তুলনের বিষয়টি। বিশ্বে তো এমন অনেক দল রয়েছে, যাদের সাইনবোর্ডটি কমিউনিষ্ট পার্টির, কিন্তু উল্লেখিত শিরোনামায়, ভৌতিকবাদের পক্ষে সংগ্রামকে আপোষ করার কারনে, ইতিমধ্যেই নিজেদের একটি খাটি 'উদারবাদী ' দলে বদলে দিয়েছেন এবং অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে উদারবাদীদের 'রেনেশাঁ' বিরধী অবস্থানে পা' মিলিয়ে, কমিউনিষ্ট নৈ্তিকতা থেকে নিজেদের বিবর্জীত ঘোষনা করবেন। 
---- আর সমাজ বিজ্ঞান জানে, জয় একবারেই আসবে শত সহস্ত্র ছোট-বড় জয়-পরাজয়ের সংখ্যবৃত্ত অতিক্রমনের ভেতর দিয়ে।

আসলে জে এন ইউ এর এই বিজয়ের সাথে সাথে উত্তরভারতে ছাত্র আন্দোলনের সাথে সাথে, রাষ্ট্রনীতিতে 'আদিভৌতিকবাদ' এবং তার সাথে সাথে' 'আদিমতার' আমদানীতে, 
---- ব্যবস্থার মধ্যেও যে বিদ্রোহের সংকেত দেখা দিচ্ছে, সেগুলিও যে শক্তির এক একটি উপাদান, সে কথাটি স্মরনে রাখলে, মানুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি হবে, সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে তফাৎকে চিহ্নিত করার যোগ্যতা বাড়বে। ইতিমধ্যে, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কিছু প্রাক্তন অফিসার যদি ৩৭০ ভেংগে দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট গিয়ে থাকেন, একের পর এক আই এ এস অফিসার যদি এই 'আদিম প্রবৃত্তি' সমুহের বিরুদ্ধে বাইরে বেড়িয়ে আসতে শুরু করে থাকেন, তবে 

----  বুঝতে হবে, খোদ প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যকার ডাইনামিজতেই বিজ্ঞান এবং মানবিকতার মধ্যে একটা যুগলবন্দি ঘটতে থাকবেই।

এতো কথা আরো একটা কথাকেই সামনে আনতে চাইবে। সেটা এই, বিদ্যা যেখান জ্ঞানে রুপান্তরনের সুযোগ পাচ্ছে,  বুদ্ধির সৃজনীতে রুপান্তরনের প্রকৃয়া যেখান শক্তি পাচ্ছে, তবে
----- কোলকাতা কিংবা দক্ষিনের রাজ্যগুলিতে, যেখানে তুল্য বিচারে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত, সেখানে জ্ঞান কিংবা বুদ্ধির ভাবগত রুপান্তরন প্রকৃয়া কেন কিছু কিছু দ্বীপে আটকে থাকবে? সেখানে নিশ্চিতভাবে 'জ্ঞান' এর চলমান ধারা  শ্রমিক ডাইনামিজমকে অবলম্বন করে, ভৌতিকবাদকে সমাজ বিজ্ঞানের  অভিমুখে সামিল করার দরজাটি খুজে পাচ্ছে না। 
------  এখানেও আমার অভিজ্ঞতার ধারনা, সাম্যবাদী ভাবাদর্শে, অসি এবং মশির সম্পর্কটাকে সমাজ বিজ্ঞান এবং লেনিনবাদের আলোতে নিয়ে আসার প্রশ্নেই বিরাট গোলযোগ হয়ে রয়েছে। সি পি আই এম , ১৯৬৪ তে গৃহীত কর্মসূচীর ১১৪ নম্বর ধারায়, বিষয়টির সমাধান করে দিলেও, কোন সামন্তিক ভাবসত্বায় আচ্ছাদিত, যে কোন জনপদের যৌবনের ভাবাবুলতার কারনে, ক্রমে উভয়ের সম্পর্কের সন্তুলতার ভেংগে দেওয়ার কারনে ক্রমে - মসি এবং অসি, দুটোই অকেজো হয়েছে। মসি তার গুরুত্ব একেবারে পায় নাই, যতটুকু পেয়েছে, তা যেমন সমাজ-বিজ্ঞানের সাথে সনযুক্তি পায় নাই, তেমনি জ্ঞানের ভৌতবাদি অভিমুখের সাথে।

 এ সব বিচ্ছেদ কেমনভাবে, ব্রাহ্মন্যবাদীতের পুজ-রক্তকে শিক্ষার  জ্ঞান মুখীনতাকেও বিষাক্ত করতে পারে, তার ইংগীত জে এন ইউ নির্বাচনেও পাওয়া গেছে। লিখে নিন, সাম্যবাদী আন্দোলনে, বিশেষ করে শ্রমিক আন্দোলনে এবং শিল্প সম্পর্কে যে সব  বর্ণবাদিতা এখনো জাপটে রয়েছে, সেগুলির বিনাশ না ঘটাতে পারলে, 
------ আদিবাসি, দলিত এবং সংখ্যালঘুর একাত্মতার ঝোক ক্রমে এসব জাতিগোষ্টিকে ধর্মান্ধতা এবং আদিভৌতিকতার দিকে ঠেলতে থাকবে। 
এদের উপরে ভয়ংকর আক্রমন যেমন চলছে, তেমনি নেতাদের তরফ থেকেও বিশ্বাসঘাতকতার সম্ভাবনা বজায় থেকে। 

এই সুত্রেই  জ্ঞানতত্বের আলোকে নিজের জ্ঞানভান্ডারকে বিজ্ঞানের পথে সংহত করতে, সাম্যকে 
-----   দাসত্বের সাথে নারীকে বানিজ্যিক সামগ্রী এবং ভোগ্য  বানিয়ে ফেলার, ঝোকটিকেও গবেষনার বিষয় করে নেওয়া অতি-প্রয়োজনীয় হবে। (ক্রমশ)
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours