Sreni noitikota
 ‌‌‌‍‍‌জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা

মেহনতের রাজনীতিকেই যদি 'সাম্য' অর্থে বিবেচনা করা হয়, তবে বুঝতে হবে সেটাকে আত্মিক করাটাকেই , বুঝতে হবে নিজ চিত্ত চালচিত্রে সাম্যকে গ্রহনের এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হোল। অন্যভাবে বলা যাবে, মনের আয়নাটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া গেলো।
এই আত্মিকতা যেমনভাবে নির্মিত হতে থাকবে, তেমনভাবেই মনের ঔজ্জ্বল্য বিচ্ছুরিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তখনই প্রয়োজনের বস্তু কিংবা ঘটনাকে দেখা এবং অপ্রয়োজনীয়গুলিকে পাশ-কাটিয়ে যাওয়া, আত্মিক করা যাকে  ইংরাজীতে আমরা বলি perceive  করা, বিশ্লেষন করা এবং সংশ্লেষন করার পর বিশ্বকে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটা যেমনভাবে চলতে থাকবে, বুঝতে হবে, বুর্জোয়া নৈ্তিকতাও যুগপদ শ্রেনী নৈতিকতার যায়গায় উঠে আসছে।

নৈতিকতার এই উত্তরন যে কোন সোজা কথা নয়, সেটা মার্ক্সবাদের জ্ঞান সত্তার অন্যতম বার্তা। এটা বোঝানো হয়েছে, দাতা-গ্রহীতা সম্পর্কটা সেই আদিম উৎপাদন সম্পর্কের কাল থেকে, মনুষ্য নৈ্তিকতার সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে, সেখানে সমাজতন্ত্র অতিক্রমনের পর, সাম্যের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রকৃ্ত অর্থে 'দাতা-গ্রহীতা'র নৈ্তিকতার উপরে সাম্যবাদী নৈ্তিকতা আধিপত্ত বিস্তারের সুযোগ পাবে।
----- সেই অর্থে নৈ্তিকতার পাচটি  স্তরকে বুঝে চলা উচিত কাজ হবে । প্রথমতঃ রাজনীতি যখন দাসত্বকেই অভিমুখে রেখে এবং সেটা ইতিহাসের অবচেতন সত্য, দ্বিতীয়তঃ  রাজনীতি যখন জমির মালিকানাকে ঘিরে, তখনো, চরিত্র বদল হলেও 'দাতা-গ্রহীতা সম্পর্কটি আগের জমানার মতোই সরাসরি 'প্রভু-ভৃত্য' সম্পর্কে বাধা। তৃ্তীয় স্তরেঃ বুর্জোয়া গনতান্ত্রিক বিপ্লবের পর, মেহনতের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ার কারনে, 'প্রজাতন্ত্রোও 'দাতা-গ্রহীতা' বা প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্কের আধারে নিয়ন্ত্রিত ।
------ এইভাবে মনুষ্য সম্পর্কগুলিতেও  নৈ্তিকতাবোধ, এই 'দাতা-গ্রহীতা সম্পর্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেই। পুজিতান্ত্রিক যুগের রেনাশাঁকালে এই সম্পর্ক কিঞ্চিত দুর্বল হয়ে গেলেও, সেগুলিকে সুক্ষতাসুক্ষ অনুভুতির তারে বেঁধে নেওয়ার প্রকৃয়া চলতে থাকে।


জ্ঞানতত্বের সুত্রধরে যদি বুঝতে হয়, সাম্য আসার পর থেকেই এই 'দাসত্ব বোধে' জর্জরীত বুর্জোয়া নৈ্তিকতার বিপরীতে প্রকৃ্ত লড়াইটা শুরু হবে, তবে আরো বুঝতে
------ এই লড়াইটা মেহনতি নৈ্তিকতা বনাম বুর্জোয়া নৈ্তিকতা হবে না। সেটা হবে, মেহনতি নৈ্তিকতার একেবারে মর্মমূলে যে 'দাসত্বের' নৈ্তিকতার জড় টিকে ছিলো , সেগুলিকে উৎপাটন করা। অর্থাৎ সাম্যের ভেতরে টিকে থাকা 'বুর্জোয়া নৈ্তিকতা' বনাম সাম্যের নৈতিকতা।

এই আলোচনা থেকেই বুঝতে হবে, কেন বিশ্বের সর্বোচ্চ দর্শন বলে দিচ্ছে, পুরানো সমাজের গর্ভেই নতুন সমাজের ভ্রুন বিকশিত হতে থাকে। কোন সচেতন শ্রেনী এসে যদি নতুন সমাজের প্রসব না করায়, তবে সেই ভ্রুন দরকচা মেরে যায়, যেমন ঘটেছে সমস্ত অনৈ্তিহাসিক কাল জুড়ে। এইভাবেই, রেনেশাঁ এসে দাড়ালো  এই সচেতন প্রচেষ্ঠা হিসেবে এবং ফরাসী বিপ্লব (১৭৮৯) হয়ে দাড়ালো বিশ্বের প্রথম সচেতন বিপ্লব।

----- এখান থেকেই বুঝতে হবে, পুজিতান্ত্রিক জঠরেই যদি সাম্যের ভ্রুনটি, সমাজতন্ত্র কিংবা জনগনতান্ত্রিক বিপ্লবের রুপ নিয়ে বিরাজমান থাকে, তবে সেই জঠরেই একটা সাম্যবাদী নৈ্তিকতার জন্ম হতেই হবে। এটাকে লেনিন বল্লেন, কারখানা কিংবা খনিমুখ হবে, সাম্যের নার্সিং হোম।
----  মজার কথা, বলা হয় নাই, সমাজতন্ত্র কিংবা জনগনতন্ত্রের নার্সিং হোম।এইজন্যেই বলা হয় নাই, কারন সাম্যটাই ভ্রুন, বাকি দুটি সেকর  যাকে ভড় করে একদিন বিশ্বকে আলো করে নতুন শিশু ভুমিষ্ট হবে।

এই সুত্রেই বুঝতে হবে, বিপ্লবের ধাপটি  সমাজতান্ত্রিক হোক, কিংবা জনগনতান্ত্রিক, নৈ্তিকতটি হতে হবে 'সাম্যবাদী"। কেন? কারন "বুর্জোয়া নৈতিকতা" এবং "সাম্যবাদী নৈ্তিকতার' মাঝামাঝি কোন নৈ্তিকতা নেই।
------ মাঝামাঝি সমাজ কিছু কিছু চলনসই নৈ্তিক বোধ নির্মান করে নেবে। সেখানেও প্রশ্ন একটাই
------- ৩৬ কোটি দেবতা এবং চিদানন্দ স্বামীদের মতো কয়েক লক্ষ গুরুর নৈতিকতার দিকে সমাজ ঝুকে পড়বে, অথবা পরে সাম্যের উত্তরনের পথটি খোলা রেখে মানুষ এগুবে, তা নির্ভর করছে অন্য সর্তের উপর।সর্তটি কী?
শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত শ্রমিক কমরেডদের মধ্যে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত থেকে আসা সংগঠিত শিল্প শ্রমিক নেতাদের মধ্যে সাম্যবাদী নৈতিকতা কত দ্রুত সংহত করা সম্ভব হচ্ছে।ওসব ফালতু কথা, যে যারা ঘোষনা দিয়ে সাম্যবাদী হয়েছেন, তাদের মধ্যে কারখানা রুট ব্যতিরেখে কোন সাম্যবাদী নৈ্তিকতা প্রবেশের সুযোগ পাবে।

এই সুত্রেই এখন এখন সেই বিপর্য্যয়কর ধারনার শেকরশুদ্ধু উৎপাটন প্রয়জোন, অন্যথায় কোন দিন পরিস্থিতির বদল ঘটবে না।

এই (ক) এই অল্পবয়সী অতিশিক্ষিতদের যারা তিন দিন কারখানা গেটে গেছেন, সেই 'আনুগত্য ঘোষনার' উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, ৩০/৪০ বছরের নেতাদের ঘারে চাপিয়ে দেওয়া। এটা বোঝা উচিত ছিলো, সাম্যবাদী আনুগত্য কোন 'ভগবান' দত্ত দান নয়, সেটা অর্জন করতে হয় এবং মেহনত করতে করতে আসে।
 (খ) ভালো সম্ভবনাময় কমরেডদের 'নেতা বানানোর' নামে ভলান্টারী রিটায়ারমেন্ট করিয়ে, 'বিশ্ব নেতা হিসেবে' বসিয়ে দেওয়া। যেহেতু, শ্রমিকদের মধ্যেও 'বুর্জয়া নৈ্তিকতা' এখনো প্রধান সেজন্য প্রকাশ্য প্রতিবাদ হয় না। কিন্তু তাদের অনুভূতির তারগুলিতে বেদনার ঝংকার উঠতে দেখেছি।
(গ) এমনো হয়েছে, পুরানো নেতাদের সায়েস্তা করতে, সম্ভাবনাময় কর্মীকে ঘারে চাপাতে গিয়ে, ভলান্টারী রিটায়ারমেন্ট তো বটেই, তার স্ত্রীর চাকরী দিয়ে, ইস্পাতের মতো কারখানার নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যিনি এটা করেছেন, তেনার শিল্প- সম্পর্ক তো বটেই, 'বুর্জোয়া নৈ্তিকতা' এবং 'সাম্যবাদী নৈ্তিকতার' অন্তসম্পর্কটি সম্পর্কে কোন ধারনা আছে বলে মনে হয় না। (ক্রমশ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours