জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
কোন সাম্যবাদী দলকে যদি সাম্যের পরিচিতিতে পরিচিত হতে হয়, তবে তাকে কদাচিৎ নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রক হতে হবে, সাধারনভাবে তার প্রধান পরিচিতি হতে হবে 'সৃজনের' সাথে।
----- এখানেই সম্ভবতঃ কমরেড বি টি রনদিভের নেওয়া, বিশ্ব-নন্দিত ভারতীয় ঐতিহাসিক, অধ্যাপক বিপন চন্দ্রের প্রশ্নটির সর্বোত্তোম জবাব। উনি প্রশ্ন করেছিলেন, শিক্ষায়-দিক্ষায় ও ত্যাগে শ্রেষ্ট সম্পদের আধার হয়েও, দেশ কাপানো সংগ্রাম এবং সে সব সংগ্রামে বুনিয়াদী বিষয়গুলি সামনে নিয়ে আসা সম্ভব হলেও,
---- কেন ভারতীয় সাম্যবাদী আন্দোলন তেমনভাবে পাখনা তুলে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে নাই। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের পর, অনুরুপ প্রশ্নটি শ্রী প্রনব মুখার্জীও করেছিলেন।
এই প্রশ্নের অনেক ইতিহাসগত ব্যখ্যা নিশ্চিতভাবে থাকবে। কিন্তু বিপদ তারিনী কিংবা লক্ষভেদ করতে না পারার কারন হিসেবে, যদি কোন একককে চিহ্নিত করতে হয় তবে
------ এই বিন্দুটিতেই চিহ্নিত করতে হবেঃ প্রথমতঃ সৃজনের মুখ্ উন্মুক্ত করার অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়টির উপরে 'নিয়ন্ত্রন' নামক অতি ভয়ংকর শব্দের পেছেনে যে 'আক্রমনাত্মক' ভাব সদা নিয়ত তাড়া করে, সেটাই বোধ হয় প্রধান কারন।সারা জীবনে এটাই বুঝেছি, এই 'নিয়ন্ত্রন' থেকে সরে এসে ''সৃজনের বহুমুখীনতায় ফিরিয়ে আনাটাই সাম্যবাদী আন্দোলনের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই অভ্যাস নিশ্চিতভাবে, বুর্জ্যোয়া দাসত্বের সংস্কৃতি থেকেই ইতিহাসের চুঁইয়ে আসা নোংড়া জলের মতো সাম্যবাদী দলে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। এর সব পথ যখন বন্ধ না করা হয়, ক্রমে শুধু গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতায় 'গনতন্ত্রকে' এবং ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্রের আকাশ চুম্বী লেনিনবাদী ধারনাকেই 'অসম্ভাব্যতার লৌহাবরনে ঢেকে ফেলে তা নয়, একটা সময়ে দলের নেতাদের কাছেও 'হাস্যস্কর' বিবেচিত হয়েছে।
একটা সময়ে নেতারাও, 'সৃজনী' যে ভাবজগত পূনর্গঠনের প্রশ্নে 'সাম্যের' সমার্থক সেটাও মানতে অস্বিকার করতে থাকেন। পরিনামে, বুর্জোয়া শিক্ষা নিয়ে আবেগে ভর করে যে কোটি কোটি মানুষ সাম্যবাদি দলে আসতে থাকেন
------ তারা মার্ক্সের জ্ঞান তত্বে প্রবেশের দরজাটাই খুজে পান না। পরিনামে, জীবন বোধটাই, 'শারিরীক ক্ষুদার' শৃংখলে ঝুলতে থাকে যুগ থেকে যুগান্তরে। ক্রমে যেমনভাবে, এসব শিক্ষিতরাও 'দাতা-গ্রহীতার সম্পর্কে আষ্টে পৃষ্টে বাধা পড়তে থাকে, তারা অন্যান্য 'সেন্টার অফ দ্যা রাইট' দলে ঢুকতে থাকে। যদি কেউ হিসেব করে দেখেন, নেহেরুর কালে তো বটেই পরবর্তী সময়ে, কংগ্রেস দলের তথাকথিত প্রগতিবাদী অংশের প্রায় সবটাই এক দিন সাম্যবাদী ভাবাদর্শে উদ্ভুদ্ধ ছিলো।
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনেও দেখলাম একই রুপ। সত্যকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যত কষ্ট , তা থেকে সত্য- মিথ্যার হিসেবে না গিয়ে, হুকুম মেনে চলাটা অনেক অনেক সোজো। এই বিপত্তিরো যে প্রধান কারন, সাম্যবাদী আন্দোলনে, বিশেষ করে, শ্রমিক আন্দোলনকে সৃজনমুখীনতায় উত্তোরন ঘটানোর অস্বিকৃ্তি। এখানেই আসছে 'শরীর সর্বস্ব' ট্রেড ইউনিয়নবাদকে 'বৌদ্ধিক ক্ষুদা' পুর্তীর স্তরে উত্তোরনের চরম আপত্তির কারনে। আপত্তির স্তর এতো ভয়ংকর যে, যারা লেনিনবাদী পথে থাকার চেষ্টা করেছেন, তাদের পক্ষে আন্দোলনে টিকে থাকাও অসম্ভব হয়ে পরে।
এটা কখনো বুঝার চেষ্টাই হয় না যে 'শরীর সর্বস্বতা'তা খনো আবেগের প্রাচীর ভেদ করে বুদ্ধিতে উঠতে পারে না। সেখানে 'মেহনতের দুনিয়া'র সৃজনহীনতা, ক্রমে জীবনবোধের সর্বক্ষেত্রে এবং সর্বনেশে পথে সংস্কৃতির সব অভিমুখে কচুরীপানার মতো ছড়িয়ে পরে। পুরো সমাজটাই বন্ধ্যা হয়ে যায়, সৃজনীর দিক থেকে।
এই পরিস্থিতিটাই ক্রমে ফ্যাসিবাদের 'আতুর ঘর' হয়ে উঠতে থাকে।ইতিমধ্যে সমাজের শ্রেষ্ট ছেলে-মেয়েরা, বিশেষ করে শ্রমের সর্বচো শিখরে যারা প্রবেশ করছেন, তারা দল এবং ট্রেড ইউনিয়নে এসেছেন, অথচ শিক্ষাটা জ্ঞানের অখন্ড চালচিত্র ধরে যেহেতু এগুই নাই সে কারনে, বুর্জোয়া নৈ্তিকতা যেমন অতিক্রম করতে পারছে না
----- এদে যখন জ্ঞানতত্ব এবং সৃজনীর সাথে রসায়নের নিরন্তর প্রকৃয়ায় নিয়ে আসার মধ্যদিয়ে যদি বুর্জোয়া নৈ্তিকতা থেকে সাম্যের নৈ্তিকতায় আনার ভাবগত নেতৃ্ত্ব না দিয়ে নিয়ন্ত্রনের পথে যেতে শেখান নেতা-কর্মীদের কিছুই হতে পারে না, একটা কাজ ছাড়া। সেটা ধ্বংস কালে সমাজের শ্রেষ্ট লোকগুলিকে, ভারতের হিটলারের ঘড়ে পাঠিয়ে দেওয়া।
------ আরো সোজাসুজি বলতে হয়, ভাবগত নেতৃ্ত্ব বলুন, কিংবা কেন্দ্রিকতা, অথবা কেন্দ্রিকতার নামে নিয়নন্ত্রন বলুন, পরিনামটি হতে হবে সৃজনীর উন্মুক্তি। আর সে নেতৃ্ত্ব যে নামে, যে মুর্তীতেই করুন তার নামটি হবে, চিত্ত মুক্তির পথে শৃংখল মূর্তী।
----- সে পথে যদি সামাজিক সম্পর্কগুলিকে পরিচালিতে করতে অস্বিকার করতে থাকেন, তবে আপনি নিজেই ক্রমে 'প্রভু-ভৃত্ত' সম্পর্কের প্রতিভু হয়ে যাবেন। আপনিও 'প্রভু' হিসেবে থাকতে ভালোবাসবেন, 'যিনি ভৃত্য' না থাকতে সকাল থেকে 'দুনিয়ার মজদূর এক হোক' শ্লোগান দিচ্ছিন তিনিও সংগঠনে, গৃহে এবং সমাজে একটা 'প্রভুকে' ভালোবাসতে শুরু করবেন।
--- সৃজনীর সাথে শ্রমগুনের এক থেকে অন্যধাপে উত্তোরনের নিয়ম, আবার শ্রমের সাথে সাম্যের অন্তুসম্পর্ক এবং এগুলির সাথে 'চিত্ত চালচিত্রের' শরীর সর্বস্বতার অন্তসম্পর্কগুলিকে যে সব নেতারা বুঝতে চান নাই, তারা যে কবে, যে নিজেরা মালিক হয়ে যান নিজেরাই বলতে পারবেন না।
---- আসলে, উল্লেখিত অন্তসম্পর্কগুলিকে যদি সাম্যের অন্তসম্পর্ক বলে মানতে হয়, , তবে মানতে হবে, সেখান থেকে যখন এবং যেভাবে সরে আসা হবে, ফাকা যায়গা, পুঁজিবাদী বা সামন্তিক কিংবা এমনকি 'দাসকালীন দাসত্ব' নয় একেবারে সরাসরি ব্রাহ্মন্যবাদের বর্নাশ্রম এবং নারী বিদ্বেসী কার্য্যকারন সম্পর্কের শিকার হয়ে যাবে নেতা-কর্মী রা।
--- এদেশে কোথায়ো ইউরোপের মতো রাতের খাবার টেবিলে স্বামী-স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘরের গনতন্ত্রটা সেরে নেওয়া হচ্ছে, সে রকম সংস্কৃত গড়ে ওঠার সুযোগ পায় নাই। বরং এতোদিন যখন বাড়ীর কর্তা লম্বা গলা করে, প্রয়োজনে ধমক দিয়ে গনত্নত্র চালু রাখার নিয়মই ছিলো। আজকাল অবস্য বাবা-মা'দের উপরে উল্টোটা দেখা যায়। নেতারা জনগনকে কোনদিন পুরন হবে না এমন প্রতিশ্রুতী দিয়ে খোশামোদ করেন, অনেক সময় ধমক লাগাতেও দেখা গিয়েছে। অন্যদিক নেতাদের নেতাগিরি যতদিন থাকে লক্ষ সেলাম, নেতাগিরি চলে গেলেই তাকে ঝাটাপেটা - এসব কিছুই দেখেছি।
------ কিন্তু আজকাল সাম্যবাদের নামে রাজনীতি করেন, সেখানো দেখছি যুক্তি থেকেও গায়েরজোরে যখন এসার্ট করা হয়, তখন তা আমরা ভালোবাসি।
---- একবার মনে আছে, একজন ডাকসাইটে নেতাকে নেতাকে যখন, তার জনসভায় যাওয়ার সময় একঘন্টা দেরী হয়ে গেছে, বলে স্মরন করে দেওয়ায়, যে জবাবটা শুনেছিলাম, বহুবছর পরেও এখনো ভূলতে পারি নাই---- " ঠিক সময়ে যদি সভায় চলে যাই, কেউ কী আমায় নেতা হিসেবে মানবে?"
এইভাবে, রাজনীতি থেকে শুরু করে, জীবনবোধের প্রতিটি কোনাকে 'সৃজনী' কে সাম্যের পরিচিতি হিসেবে দেখে জীবনবোধে গনতন্ত্রের প্রত্যেকটি অভিমুখের মূল্যাংকন করা হয় বলেই
----- জ্ঞানতত্ব, যুক্তি শাস্ত্র, সংস্কৃতি, ইত্যাদির সর্বমুখীন শ্রোত গুলিকেই যে সৃজনী, সাম্য এবং শ্রমের পারস্পরিকতাতেই, লেনিনবাদ
-----, দলে গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা এবং সেই কেন্দ্রিকতার সাথে ট্রেড ইউনিয়নে সার্বজনীন সদস্যতার সাথে উল্লেখিত সম্পর্কগুলি, সাথে সাথে শ্রমিক আন্দোলনের গনতন্ত্রের আকাশচুম্বিত্র কথা এক অখন্ড একাত্মতায় সুত্রবদ্ধ করেছেন।
এই সুত্রবদ্ধতা নিয়মগুলি সম্পর্কে কার্য্যতঃ যারা অশিক্ষিত, তাদের যখন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন যেগুলি ঘটার কথা, সমাজবিজ্ঞানের রসায়নিক প্ৰকৃয়া - সেটাই হয়ে দাঁড়ায় 'নিয়ন্ত্রন' বা কনট্রোল। এটা যে 'সৃজনীর' দফারফা করে সাম্যের পথটাকেই আগলে দাড়ায়।
সবথেকে সর্বনাস হয়েছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের।আমরা কার্য্যতঃ ভূলেই গিয়েছি, সাত-সুরের আরধানা মাত্রেই, শ্রম এবং সৃজনী। সেখানে, অন্যসব ধারার মতোই, 'গনসংগিত' একটা ধারা। সেই ধারাও কিছুতেই সাবলিল হবে না, যদি না, সাত সুরের আরাধনা মাত্রকেই সাম্য এবং সৃজনীরই একাত্ম রুপ।
এই একাত্ম রুপটিতে যদি একাত্ম হওয়ার চেষ্টা হয়, তখন গননাট্টও যে সাম্যের কালগত অবস্থান থেকে দূরে গিয়ে সৃজন থেকেও দূরে যেতে চায়, সেটা স্বচক্ষে দেখতে গিয়েও বিড়ম্বনার কারন হয়েছি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours