জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
সমাজ বিজ্ঞানে নিজেকে জানা এবং সেই আলোকে একটা কালকে নিজ হাতের তালুতে নিয়ে আসা যে কত জরুরী, তা আজকের শিরোনামায় স্পষ্ট না হলেও, ভাবাদর্শ এবং তার প্রয়োগের প্রশ্নে একটা বড় প্রশ্ন তুলবেই।আরো বলে দেওয়া যায়, গনতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ নির্মানের প্রশ্নেই এর ইতিহাসগত জবাবটি স্পষ্ট করতে হবে। বিষয়টি এখানে সাম্যে ভাবাদর্শগত প্রস্তুতি এবং প্রয়োগের প্রশে যে স্ববিরোধীতা থাকবে, তার সমাধান, একই যাত্রায় মেপে মেপে ঠিক করে ভাবাদর্শের প্রয়োগ প্রয়জন হবে। ।
যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলবো, আধুনিক ইতিহাসের তিনটি বিপ্লবের মধ্যে সব থেকে জটিল হোল, সাম্যের অভিমুখে গনতান্ত্রিক বিপ্লব। যেহেতু জটিল সে কারনেই, তাকে বুদ্ধিদীপ্ত হতে বাধ্য। বুর্জোয়া গনতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রধান দায় যেহেতু, জামির উপরে আধিপত্ব বিস্তারে করে জমিকে সরকারের অধিন নিয়ে এসে কারখানা শিল্পের বিস্তার ঘটানো এবং সে জন্য যতটুকু সাংগঠনিক প্রয়োজন ততটুকুই করবে। , সেটা মূলতঃ সরকারী। জাগরনের স্তরটাও মোটামুটি হলেই চলবে।
----- কিন্তু একটা বুর্জোয়া বিপ্লবকে যখন আপনি সাম্যের আধারে, জনগনের প্রকৃত গনতন্ত্রে পৌছে দিতে চাইছেন, তখন পুজিতন্ত্র ইতিমধ্যে যখন একচেটে পর্য্যায়ে উঠে এসে মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং সে একপ্রান্তে সনাজের অতি-তলদেশ পর্য্যন্ত ছড়িয়ে থাকা সামন্তিক শক্তির সাথে সাথে, তাদের সব বিকৃত, আর্থিক-সামাজিক ব্যাভিচারিতা, আচারন এবং সংস্কৃতিগত বিকৃতি সব কিছুর সাথে যখন তাকে চাগিয়ে তুলতে হচ্ছে, তখন তাকে আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্র এবং তার সব অপছায়ার পেছেনে এসে দাড়াতে বাধ্য।
------ ১৯৬৪ সালে সিপি আই এম যখন কর্মসূচীটি গ্রহন করা হয়েছিলো এবং সেটিকে সামনে রেখে, যখন সাম্যবাদী আন্দোলনে ইতিহাসের প্রথম ভাবাদর্শগত সংগ্রামের নেতৃ্ত্ব দিয়েছি, আজ মনে হচ্ছেঃ বুঝে বিতর্ক যতটুকু করেছি, অনুপাতে তার বেশী ছিলো আবেগ। এখন ২০১৪ সালে যখন ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব-মিলিটারীতন্ত্রের বিশ্বকেন্দ্রে দাড়ীয়ে, বিশ্বপ্রতিক্রিয়ার মূলকেন্দ্রের পক্ষে একাত্ম হয়ে ঘোষনা করে দাবী করেন
---- আপকিবার ডোনাল্ড ট্রাম, তখন যেন ১৯৬৪ কর্মসূচীটির প্রতিটি শব্দ জীবন্ত হয়ে উঠে। জাতীয় ক্ষেত্রে সংসদের চেহারা যখন, লেনিনের কথায়, শুঁয়োরের খোয়ার হয়ে দাঁড়ায়, তখন বোঝা যায়, ভারতীয় রাজনীতির সন্তুলনে কে কোথায় রয়েছে এবং শ্রমিক শ্রেনীর কোন কাজটাকে সামনে রাখতে হয়।
এখান থেকেই, বুঝে নিতে হয় একজন কর্মীর মধ্যে, কেমনভাবে তার সাংস্কৃতিক অভিমুখে দুটি মুখ এক চালচিত্রে মেলাতে হবে। সেখানে চালচিত্রের ভিত্তি, সর্বোচ্চ মাপের স্বচ্ছতা, গ্রহন করার যোগ্যতা (perceive) , বিশ্লেষন (chemistry) এবং প্রতিবিম্বিত (reflection),করার যোগ্যতা থাকতেই হবে।
----- অন্যথায়, একটা সামন্তিক ও দাসগত ভাবাত্মক অবস্থানে যখন পুজিতন্ত্র কার্য্যতঃ নিজেকে, ভেতরে এবং বাইরে আত্মসমর্পন করে ছেড়েছে, সেখানে যখন স্বরযন্ত্র পদে পদে, কোনায় কোনায় ওৎ পেথে থাকছে, সেখানে,
----- মার্ক্সের জ্ঞানতত্বে বর্নীত উল্লেখিত তিন সর্ত এবং সেই সর্তগুলি পুরনে তত্বের দ্বান্দিক নিয়মটি প্রয়োগের যোগ্যতা একটা উচ্চতর স্তরে বিরাজমান না থাকলে, সাম্যের সংস্কৃতি এবং সাম্যের অভিমুখে গনতন্ত্রের সংস্কৃতি সেতুবন্ধন ঘটানো অসম্ভব। সেই সেতুবন্ধনের পথেই, সাম্যের অভিমুখে, বুর্জোয়া গনতন্তগ্রের শিক্ষা-সংস্কৃতির একটা উন্যত ধারা খুজে বের করা সম্ভব হবে।
---- এই বুর্জোয়া সংস্কৃতিকে এগিয়ে দেওয়ার প্রশ্নটিকে স্পষ্ট করে স্তালিন বোঝালেন, রেনেশাকে ডুবিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে, যারা নিজের পতাকাকে (গনতন্ত্রের) ভূলুন্ঠিত করেছে, সেটিকে এগিয়ে দেওয়ার কথা যখন বল্লেন
----- তখন মানুষকে কতকগুলি অন্তর্বর্তীকালিন ধারা অতিক্রম করেই, পূন মর্য্যাদায়, বুর্জোয়া গনতন্ত্র এবং রেনেশাকে সাম্যের সিংহ দরজায় পৌছুতে হবে। সে সুত্রেই বুঝে নিতে হবে, কেন মার্ক্স বল্লেন, প্রকৃ্ত অর্থে মুক্তির কাজটা শুরু হবে, শাম্য আসার পর।
এখান থেকেই বুঝতে হবে, সাম্যবাদীরা যখন সাম্যের জীবন ধারায়,
ক্রমাগত নিজেদের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে থাকবে এবং সেই ঔজ্জ্বল্যতায় দাড়িয়েই সে মন্দির, মসজিদ এবং চার্চ সমেত হিন্দুদের ৩৬ কোটি দেবতা, সাথে সাথে আরো কয়েকলক্ষ জীবন্ত দেবতা সম্পর্কে সিদ্ধান্টটি নেবেন।
----- এই অবস্থানটি এক অখন্ড বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগুবে আর্থ-সামাজিক কাঠামোর বৈপ্লবিক রুপান্তরনের সাথে সাথে। তার পর সমাজতন্ত্র এমন কী সাম্য আসার পরেও মন্দির, মসজিদ কিংবা চার্চের অবস্থান কোথায় যাবে সেটা চিত্তমুক্তির পথে সমাজেই ঠিক করবে, কোন সাম্যবাদী দল কিংবা কমরেডরা নয়। কখন কী হবে, সেটার সব এইভাবে কালের বিধান হয়েই থাকবে।
এই অন্তবর্তীকালিন অবস্থানে একটা তো ঠিক হয়ে আছে, সাম্যবাদী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা এবং মার্ক্সবাদী নিদান থেকেঃ মন্দির, মসজিদ কিংবা চার্ছের পুজাপাঠ ইত্যাদি কিংবা বিশ্বাসীদের ধর্মাচরনে যারা বাধা দেবে, তাদের সাম্যবাদীরা সব সময় জনশত্রু হিসেবেই আন্যতা দিয়েছে এবং দিতে থাকবে
------ এই সুত্রেই আবারো বলে রাখি, আমার প্রথম দিনের সাম্যবাদী শিক্ষায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, এই বলেঃ The Acid Test of a Communist , is whether he is capable to sacrifice his life for defending the minority and their religious practice.
এতোদিন পূজো, নামাজ কিংবা গীর্জায় ধর্মাচরন সম্পর্কে এতোদিন যে রেওয়াজ ছিলো
------ যেমন আছে চলতে দাও, সাম্যবাদীরা দুরত্ব বজায় রেখে চলতে থাকবে। আর মাঝে মাজে নাস্তিক্যবাদের হয়ে সাওয়াল করবে, সেখানে প্রশ্ন উঠেছে
-----, রাজনীতির প্রতি অনীহা বাড়তে থাকায়, সংখ্যাগরিষ্টদের ধর্মাচারনে যে উদ্দামতা দেখা দিয়েছে, যে ভাবে দেবতাদের ৩৬ কোটির আবির্ভাব দেখা দিচ্ছে এবং যেভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে একেবারে পশ্চাতপদদের মধ্য থেকে লাখে লাখে গুরুর আবির্ভাব ঘটছে, সেখানে সাম্যবাদীরা চোখ বুঝে দেখবে অথবা যে সব বারোয়ারীতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছে, সেগুলিতে অংশ নিয়ে, যতটা সম্ভব , পুজোকে ঘিরে সুস্থ্যা আনন্দ চর্চার পথ উমুক্ত করবে এবং মানুষের সামাজিক চেতনাকে এগিয়ে দেওয়ার পথ খুজবে।
এখানেও সেই একই বিষয় আসবে। কমরেডরা
(ক) পুজার লোকসংস্কৃতি এবং পুজা আচারের মধ্যে একটা সীমারেখা রেখে অংশ নিয়ে জনগনের সাথে থাকার পথটিকে কি চিহ্নিত করতে পারবেন। লেখক নিজে, অনেক কালিপুজোর উদ্বোধন করেছেন, ভাষন দিয়েছেন কিন্তু কখনো ফিতে কাটেন নাই। কিন্তু সেখানেও যোগ্যতার প্রশ্ন আসবেই, দেবতাদের কোন অংশ কিভাবে লোকাচারের অংগ হয়েছে সে ধারনা কমরেডদের থাকতেই হবে। বুঝতে হবে, তারাপীঠের কালী উদ্ভবের সাথে কালীঘাট কিংবা দক্ষিনেশ্বরের কালীর উদ্ভবে ইতিহাস এবং কালগত তারতম্য বিপুলভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।
(খ) একই ভাবে অংশ গ্রহনের মানষিকতা যদি সর্বক্ষেত্রে না থাকে তবে একদেশীয় অংশ গ্রহন, ব্রাহ্মন্যবাদকেই প্রশ্রয় দেবে।
সব শেষে বলতে হয়ঃ
যদি সংখ্যাগরিষ্ট অংশ থেকে উঠে আসা সাম্যবাদীরা সমভাবে পুজো, ক্রিসমাস কিংবা ঈদের উৎসবে নিজেধেরকে মানুষের সাথে যুক্ত করার
যোগ্যতা অর্জন করতে না পারেন, তবে কোন রকম একদেশদর্শিতা সংশ্লিষ্ট কমরেডের বিশেষ দুর্বলতাই প্রতিবিম্বিত হবে। সংখ্যাগরিষ্টদের পক্ষে সেটা হবে ব্রাহ্মন্যবাদ এবং বর্ণাশ্রমের প্রতি দুর্বলতা।
সব শেষে বলতে হয়, বিগত তিন দশকে আস্মাদের সরকারীয়ানাকালে যদি,সাম্যের কর্মীদের মধ্যে এক দেশদর্শীতার লক্ষন বেশীমাত্রায় দেখা গিয়ে থাকে, তার পেছনে কারন একটাই।
--------এই সময়ে, সরকারীয়ানার সাথে সাথে শ্রেণীর প্রতি আনুগত্য কমে যাওয়ার সাম্যের প্রতি আনুগত্যও কমেছে।সে সুত্রে নিজেদের অগোচরেই, বর্ণাশ্রমের প্রভাব এবং জেন্ডারগত ডিসক্রিমিনেশনের ঝোক দক্ষিন দিকে ঝুকে পরারই কথা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours