প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
কান্নাধারা সাথে নিয়েই ছায়া ছায়া আলোয় আঁচলে চোখের জল মুছেছিলেন, মা। ছেলে কি আর সত্যিই আসবে না!! জীবনের আলো তাৎক্ষণিকের জন্য নিভে গেছে তাঁর। প্রজ্জ্বলিত হোমকুণ্ডের বিশুদ্ধ বিরজাহোমেই মুছে দিলো স্মৃতিক্লিষ্টতা। উদ্ভাসিত ব্রহ্মমুহুর্ত যাপন আজ। সেদিন ললাট ছুঁয়ে গেছে দিব্যজ্যোতি। হৃদয় থেকে উৎসারিত হল সেই অদ্ভুত মানুষের কথা৷ প্রত্যক্ষ অনুভূতিতে আছে তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তাই তো সাধনা ; ঈশ্বর লাভের একটি পথ হলে তো অধিকাংশই অন্ধকারে। তাই সেই সাধক মুখনিঃসৃত কথা - "যত মত তত পথ ", তাঁকেই তো পরম বলে নিলেন।
এমন করেই তো আবেগ আর দ্বিধাহীন স্বীকারোক্তি। গুরুর পা জড়িয়ে ধরে আজ তো আর সঙ্কোচ নেই। কুন্ঠা নেই, লজ্জা নেই - আজ তো বলাই যায়, ভালোবাসি বলেই তো আসি। " পাহাড়ের বুক চিরে জলরাশির মতো তো স্রোতোধারা তো স্বাধীন, গতিশীল। অদ্ভূত আলোর দ্যুতি তো স্বার্থহীন ভালোবাসা। মহাপ্রলয়ের রাতে তো মনের হিল্লোল রূপক হয়৷ কিন্তু বিবেকানন্দ তখন একটু শান্তি চান৷ আসলে শান্তি তো হৃদয়ে। মাস্তুলের উপর নির্ভর করে যেমন পক্ষী গতিতেই গতি পায়, তখন ঈশ্বরই সার। আশ্রয় করে থাকাটা তো ততক্ষণ, যতোক্ষণ না সেই বিন্দুতে পৌঁছানো সম্ভব৷ অনিত্য তো সবটুকুই, নিত্য শুধু সৎকর্ম।
জলের মধ্যে হাজার ডুবরির খোঁজ, তবু তো ফিরে চাওয়া - এতো মায়া।। মনপ্রাণ জুড়ে ক্ষণিকের অসার জীবনী আলাপ, সন্তুষ্ট নয় - সময়ের নিরিখে দেখা। সেদিন বিবেকানন্দ তো নির্বিকল্প সমাধি চেয়েছেন৷
বিশ্বভুবন জুড়েই যখন ঈশ্বর, নেতি " মানে তো সব বাদ দাও, এখানে জীব নন, জগৎ নন, চতুর্বিংশতি তত্ত্ব নন। সমাধতেই তো ডুবে থাকতে চান তিনি। দেহটা তো নৌকা, তাকে কোনোরকমে দেহটাকে বাঁচিয়ে কেবল সাধনাই - পথ।
আসলে গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ যে অসামান্য কথক। আর উপযুক্ত পাত্রে ভরে দিয়েছেন ব্যাকুল সাধনার ফসল৷ এ দোঁয়াশ মাটিতে বন্ধনের সংসার নয়, সান্নিধ্যের গভীরে আটকে যায় নির্বিকল্প। মন যে মায়াময়। ধ্যানের বুকে যে জ্যোতি, তাতেই যে ভুবন ভরা আলোর সংযোজনী৷ তাই তো ভালোবাসার শুচি হয় না, এই আধারেই ভরে থাকে অমৃতময় মাধূর্য।
নিজের ভাষায় বলতে ইচ্ছা করে,
কড়া নেড়ে গেছে তরঙ্গ হিল্লোল। বালুরাশি আজও অন্তহীন সঙ্গী হয়ে আছে আমার। অপেক্ষার জাগরণ কি জন্ম নেয় নি আজও!! শব্দের আশ্রয় গ্রহণ করি রোজ৷ ক্লান্তিহীন অগ্নিবর্ষণ করছে সূর্য। আত্মার শক্তি অনন্ত। শরীর নয়, মন জুড়ে নববল আর বোধের উদয়... বুকজুড়িয়ে কন্ঠ, পবিত্র হিরন্ময়।
অমৃতময় মাধূর্য ছুঁয়েই আলোর বুকে ঝড়ে পড়ে আলোর ফুল। অনুভবের বুকে জেগে ওঠে উপনিষদের সন্তান।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours