সোমা নাথ, লেখিকা, কলকাতা:
আজকাল মানুষের জীবনে একাকীত্ব খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
যাদের বাইরে থেকে খুব ব্যস্ত - ভরভরন্ত সংসার বলে মনে হচ্ছে, তাদের ভিতরে ঢুকে দেখলে বোঝা যায় তারা কোথাও একটা প্রচন্ড একা।
অনেকে এটা উপলব্ধি করে না বা নিজেও কোথাও একা বলেই অন্যকে আঘাত করে। এই তো সেদিন আমায় "solo" বলে তির্যক মন্তব্য করলো আমার সদ্য পরিচিত এক মহিলা "পথের সাথী" - তবে বন্ধু নয়! "বন্ধু" শব্দটি চিরকাল আমি মনে করে এসেছি অনেক বড়। "উৎসবে, ব্যাসনে চৈব , দুর্ভিক্ষে, রাষ্ট্র বিপ্লবে, রাজদ্বারে শ্মশানে চ - য তিষ্ঠোতি স: বান্ধব:"! তাই "বন্ধু" পাতানো আর আমার হলো না! সব 'পথের সাথী"! - তাদের সবাই কে "নমি বারম্বার"! কারন সবার প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ! যে মানুষটি আমায় সমর্থন করে, কোনো কিছুতে আমায় সাহায্য করে তার প্রতি তো কৃতজ্ঞ থাকতেই হয় ! আর যে মানুষটি আমার নিন্দা করে, বিপদে ফেলে, আঘাত দিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত, সে মানুষটির কাছেও আমি কৃতজ্ঞ - যতই তাকে এড়িয়ে চলতে চাই না কেন। কারণ প্রতিটি আঘাত মানুষ কে আরও সমৃদ্ধ করে।
হ্যাঁ আমি "solo", আমি প্রায় একা! মা বাবা র সাথে আমার সংসার। সামাজিক জীবনে যা নিজের সংসার বলে স্বীকৃত নয় ! বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে আমি উৎসাহিত হইনি, বা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি আকর্ষিত হয়ে উঠিনি। আর বিবাহ বহির্ভূত বন্ধনেও না। কাজেই আমি সম্পূর্ণ মুক্ত, স্বাধীনচেতা , মুক্তমনা মহিলা!
প্রাচীনকালে একা জীবন কাটানো মহিলাদের পক্ষে সমাজ স্বীকৃত ছিল না। আর পুরুষরা তো সামাজিক দায়বদ্ধতা মেনে নিতে অনেক ক্ষেত্রেই বিবাহ করতে বাধ্য হতেন ! মানে তাকে একা থাকতে দেওয়া হত না - তারা চাইলেও। ঠিক কোন একটি নারীকে "উদ্ধার" করে নিজের একাকীত্ব ভাঙতে হত!
কিন্তু আজ নারী বা পুরুষ - যে কেউ এই একাকী জীবন যাপন করতে পারেন স্বচ্ছন্দে, কেউ বাধা দেবে না - তবে ভবিষ্যত সম্পর্কে নিরন্তর জ্ঞানের বাণী আসতেই থাকবে। পুরুষের কোনো দায় নেই কোন নারীকে উদ্ধার করার!
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার "দেবী চৌধুরানী" উপন্যাসে লিখেছিলেন, মানে উপন্যাসের চরিত্র ভবানী পাঠকের মুখ দিয়ে বলেছিলেন প্রফুল্লমুখির উদ্দেশে - তুমি একা !- একা কি সম্পদ ভোগ করা যায় ? সুতরাং হয় বিস্তর পাপ করবে, আর নয় পূণ্য করবে। - হ্যাঁ সে যুগটা এমন ছিল ঠিকই, কিন্তু আজ নয় ! আজ নারী একা যাবতীয় সম্পদ ভোগ করতে সক্ষম , হ্যাঁ একাই, আর সৎ পথে, কোনো পুণ্যের কাজ না করেও ! আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ ছিল! আর আমি এটা করতে সম্পূর্ণ ভাবে পারঙ্গম হয়েছি!
আমি একা চলি, রেস্তোরায় একা খাই, একা মেলাতে ঘুরি বা কোনো উৎসবে যোগ দেই , বেড়াতেও যাই - সেও সম্পূর্ণ একা ! সেটা নিয়ে আমার নিজের কোনো আক্ষেপ নেই, বরং এতেই আমি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি ! আমার নিজেকে নিজে অনুভব করতে অনেক সুবিধা হয় - এই একাকি সত্ত্বার জন্য , অন্য কে বুঝতে, অন্যের যন্ত্রণা, তার ভালোলাগা, না লাগা - এগুলোকে সম্মান করতে পারি - বোধ হয় এই একাকি সত্ত্বার জন্যই।
যে মানুষটি আমার এই একাকী সত্তাকে আঘাত করলো , সেও কোথাও ভীষণ একা ! কিন্ত সে তার এই একাকীত্ব উপভোগ করতে পারে নি , তাই আমায় আঘাত করেছে। কিন্তু নিজের একাকীত্ব যন্ত্রণাদায়ক , বা বেদনার বলে মনে না করে যদি সেটা উপভোগ করা যায়, তবেই নিজের পরিপূর্ণতা লাভ হয়!
যখন আমি একাকি বেড়াতে বেরোই - অতি সহজেই অন্য যে কোন মানুষের সাথে মিশে যেতে পারি, জানতে পারি অনেক অজানাকে, হয় তো এই একা হবার জন্যই। কোনো কিছু ভালো করে দেখতে বা উপলব্ধি করতে - ভিতর থেকে অনুভব করতে গেলে, সেটা একা হয়েই করতে হয়। ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনো কিছুর উপরটাই দেখা সম্ভব, ভিতর থেকে অনুভব করা সম্ভব নয়!
এই "solo", একা হওয়া, সম্পূর্ণ আমার নিজের সিদ্ধান্ত, কারো চাপিয়ে দেওয়া না। কথায় আছে "সৎ সঙ্গে সর্গ বাস - অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ" ! এই অসৎ সঙ্গ গুলো ত্যাগ করতে করতে, জীবন থেকে ব্লক করতে করতে, জীবনটা আজ "solo" - একা হয়ে গেল , তবে এ নিয়ে আমার আক্ষেপ তো কিছুই নেই ই - বরং আমি খুব আনন্দিত - এই একাকী সত্তার জন্য!
✔️ধন্যবাদ জানাই তাকে । আবার নতুন করে অনুভব করলাম, আমি একাই আমার একার জন্য যথেষ্ট!
যারা সত্যিই একা ! বা ভিড়ের মাঝে ও নিজেকে একা অনুভব করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ - হতাশ হবেন না ! উপভোগ করুন নিজের একাকীত্ব! ছড়িয়ে দিন নিজেকে আরও বৃহৎ কাজের মধ্যে। এ পৃথিবীতে সবার জন্ম একা হয়েই ! এ বিশ্বের প্রতি আপনার একারই কিছু দায়িত্ব- কর্তব্য বর্তায়। সে গুলো একাই পালনের চেষ্টা করুন, পাশে যদি কোনো সৎ কাউকে পান - স্বাগত জানান ! আর না পেলে আপনি একাই একশ!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours