শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
"নাথিং ইজ ইমপোসিবল ইন সেক্স"" হেভলকের যৌনবিষয়ক বইয়ে বাক্যটি পড়েছিলাম। " এক ঢাকি ধান দিলে মেয়ে আসবে। দুই ঢাকি ধান দিলে মেয়ের বোনও আসবে। তিন ঢাকি দিলে মেয়ের মা ও আসবে। " এই বাংলা প্রবাদটিতে পুরুষতন্ত্র ও পু্ঁজির ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এখানে কোন প্রকার মানবিকতা প্রকাশ পায়নি। বিষয়টি এজন্য তুলে ধরলাম, গত ২০ সেপ্টেম্বর "ক্যাফেটেরিয়াতে" আবু হানিফ সরকার একটি পোষ্ট দিয়েছেন, তাতে তিনি লিখেছেন;
" প্রশ্ন- ধর্ষণ কিভাবে বন্ধ হবে ?
উত্তর- পতিতালয়ের মাধ্যমে সমাজে ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে। এই বক্তব্য হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিমের।সম্প্রতি সময় টিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলে,“প্রত্যেকটা মানুষের এটা সহজাত প্রবৃদ্ধি জৈবিক চাহিদা মেটানোর। এখানে যদি তারা ব্যবস্থা না পায় তাহলে তারা অন্য পথে যাবেই। শিল্প এলাকায় এবং বড় বড় শহরে জৈবিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা থাকতেই হবে। "
অধ্যাপক নেহাল করিমের দাবির সত্যতা কতটুকু? তিনি কি কোন নতুন দাবি করেছেন? নাকি প্রথা বিরোধীতা করেছেন? সত্যিই কি পতিতালয়ের সংখ্যা বাড়ালে ধর্ষন কমে যাবে?
আসলেই কি জৈবিক চাহিদা মেটানোর ব্যাবস্থা থাকলে পুরুষ মানুষ ধর্ষক হবে না!
পতিতালয়ে যারা যায় তাদের কতজন জৈবিক চাহিদা মেটাতে না পেরে পতিতালয়ে যায়? আমি জানি না, অধ্যাপক নেহাল করিম কখনো পতিতালয়ে গিয়েছেন কি না! আমার জানা মতে পতিতালয় ও যে সকল হোটেল বাসাবাড়িতে পতিতাবৃত্তি চলে তাদের অধিকাংশ খদ্দের বিবাহিত। এমন কি খোজ নিয়ে দেখুন, যারা ধর্ষক তাদের অধিকাংশেরই স্ত্রী বা জৈবিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ রয়েছে। তার প্রমান পাওয়া যাবে ধর্ষকদের জীবন যাপনের খোজ নিলেই। আমি বাংলাদেশের অনেক নারী ও মেয়ে শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছি। তারা অনেকেই বিবাহিত পুরুষদেরই বেশি ভয় পায়! কেননপায়? কারন বিবাহিত ও বয়স্ক পুরুষ দ্বারাই তারা বিভিন্ন সময় আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। (ফৌজদারী আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে অনেক কিছুই বলা গেলো না। কেন না, কোন অপরাধের সাক্ষী হলে তা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানানোও একধরনের অপরাধ)।
সকল ধর্মীয় নিয়মনীতি অনুযায়ীও পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ। নৈতিকতার দৃষ্টিকোন থেকেও পতিতালয় সমর্থন করবে না অনেকেই। কমিউনিজমে বিবাহকেই বুর্জুয়া ব্যাবস্থা বলা হয়ে থাকে। তাহলে পতিতা ও পতিতাবৃত্তি কে কমিউনিজমের দৃষ্টি কোন থেকে সমর্থন করার কোন সুযোগ নেই। কমিউনিস্ট ম্যানিফেষ্টোতে উল্লেখ করা হয়েছে; "বুর্জোয়ারা তার স্ত্রীকে কেবল উৎপাদনের হাতিয়ার মনে করে।" ( "The bourgeois sees his wife a mere instrument of production." London, January 21, 1882
Karl Marx, Frederik Engels )
পতিতাবৃত্তি ও পতিতালয় গড়ার ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রত্যেক প্রাচীন সভ্যতায়ও "পতিতা"র সন্ধান পাওয়া যায়। দাসী তো ছিলোই। আজকের যুগেও পতিতাবৃত্তি রয়েছে। কোন কোন দেশে পতিতাবৃত্তির উপর কঠোর আইন থাকার পরও পতিতাবৃত্তি চালু আছে। আবার অনেক দেশে পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ। কেন একজন নারী পতিতাবৃত্তি করে? নিশ্চয়ই কেবল যৌন চাহিদার জন্য নয়। অর্থের জন্য। যারা পতিতালয়ের মালিক সাজে বা যারা নারী পাচারে জড়িত তারাও অর্থের জন্য তা করে থাকে। অধ্যাপক নেহাল করিম, পুরুষেরতন্ত্রের ধারক বাহক ও পুঁজিবাদের নিবেদিত দাস। তাই তার হিম্মত হয়নি নারীর পক্ষে কথা বলার। আর তিনি প্রথাবিরোধীতো ননই। তার বক্তব্য পুরুষতন্ত্রের পক্ষে এমনকি প্রথার পক্ষেও। তিনি নিজেও পুরুষে মুখপাত্র ও প্রথাবাদী। তাই তার পক্ষে বলা সম্ভব হয়নি; নারীপুরুষের লিভ টুগেদার করার কথা। তাহলে পুরুষতন্ত্র ও প্রথা মারাত্বক ভাবে আহত হয়। তিনি জানেন পতিতালয়ের পক্ষে বললে, রাষ্ট্র, সমাজ, প্রথাবাদীরা তার বিরুদ্ধে যাবে না। এমনকি ধর্মবাদীরাও নিরব থাকবে। কিছু কথিত সুবাধাবাদী প্রগতিশীল তার বক্তব্য সমর্থনও করবেন বুঝে না বুঝেও। তিনি বলেছেন, জৈবিক চাহিদার ব্যাবস্থা রাখতে হবে তাহলে ধর্ষন কমবে(?)। লিভটুগেদার কি ধর্ষন কমাবে না! প্রশ্ন থেকে যায়। পতিতালয়ে তো নারীদের বেশিরভাগ সময় পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করে। লিভটুগেদার তো বাই চয়েজে ঘটবে৷ তিনি কিন্ত মানুষের স্বাধীনতাকে পছন্দ করেননি, নারী স্বাধীনতায় তো তার আস্থা নেইই। পছন্দ করেছেন পুরুষতন্ত্র ও নারীর বন্দী জীবন। তিনি বিশ্বাস করেন যৌনতা ক্রয় -বিক্রয়ে। প্রেম, ভালেবাসা, সঙ্গম বিনিময়ে নয়। এটাই পুঁজিবাদী শিক্ষা, সব কিছুই টাকার বিনিময়ে পেতে চায়। এতে কারো স্বাধীনতা, পছন্দ, মানবাধিকার লংঘিত হোক তাতে পুঁজি ও পুঁজিবাদীদের ধারক বাহকের যায় আসে না। আরো একটি ভয়ংকর বার্তা দিলেন তিনি। তা হলো যৌন চাহিদা যেন কেবল পুরুষেরই আছে নারীদের নেই! নেহাল করীমরা নারীদের আজো মানুষ মনে করেন না মধ্যযুগীয় বর্বর অসভ্য মানুষদের মতই। তাই তারা বলতে পারেন, পতিতালয় থাকলে ধর্ষন কমবে! যদি পতিতালয়বাদীদের বলা হয়, ঐ পতিতালয়ে কার কার পরিবারের নারীরা থাকবে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য? যারা পতিতালয় রাখতে চান। তারা কি চাইবেন তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা পতিতাবৃত্তি করুক? নিশ্চয়ই তাদের উত্তর হবে, 'না'। কি করে একজন অধ্যাপক পতিতালয়ের মত একটি অমানবিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উকালতি করেন তা আমার এ ছোট্ট মাথায় ধরে না। পতিতালয়ের বিকল্প কি তা নিয়ে কথা বলতে হবে। অবশ্য তার আগে পুরুষতান্ত্রিক ও পু্ঁজিবাদী মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। লালনের গানের একটি লাইন রয়েছে, " হাতের কাছে ভরা কলস লালন মরলো জল পিপাসায়" পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষের অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় বস্তুকে পণ্য করে রেখেছে। এমনকি জল ও সঙ্গমকেও পরিনত করেছে পণ্যে; পণ্য করে রাখতেও চায়। যা থেকে পৃথিবীর মানুষের মুক্তি জরুরী। পতিতালয় যদি ধর্ষন কমাতো তাহলে ঢাকা, কোলকাতা, বা দিল্লী, লাহোরে কখনো ধর্ষন হতো না। এই চার শহরে কবে, কোথায় পতিতা পাওয়া যায়নি? বা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না! তাতে ধর্ষন কিন্তু কমেনি। বরং বেড়েছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours