জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
হিটলারের পতনের পর, কেন্দ্রীভূত পুজি কাকে মুরুব্বি ধরবে, সে সম্পর্কে যে ভবিষ্যতবানীর জন্য স্তালিনকে মরতে হয়েছিলো, সে বিষয়টি পূর্বে উল্লেখ করেছি। আমেরিকার হাউস্টনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষনার পরিপ্রেক্ষিতেই সেই ঐতিহাসিক উক্তিটি আবারো সামনে এসে গেলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন প্রধানন্ত্রী, ভারতকে বিদেশের কোন নির্বাচনে সরাসরি এমনটি বলতে শোনা যায় নাই
----- আপকি বার রোনাল্ড ট্রাম্প।
এখানে ফিরে আসবো। তার পূর্বে অন্য একটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত হবে। আবার সেই ভিষ্ম পিতামহের সাথে একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যলাপ। আগের বিষয়ের সাথে একেবারে গা' ঘেষে কথাটি এসেছিলো
---- যখন তিনি বলেছিলেন,সেই প্রশ্নটার জবাব খোজ করো, সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে।প্রশ্নটা যে কী ছিলো, সেটা পূর্বের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, খুজতে - কেন দুর্গাপুরর কমরেড এবং মানুষজনের এতো আত্মত্যাগের পরেও, ইউনিয়নের সদস্যপদ মাত্র ৬০%।
তিনি খুজতে বল্লেন, কিন্তু অন্য একটা প্রশ্নের জবাবে, নিজেই উত্তরটা দিয়ে দিয়েছিলেন।
------ জিজ্ঞাসা করেছিলাম - আমাদের কমরেডর মরছেন - শ্রমিকদের ভালোর জন্য যা করার কমরেডরাই করছেন, অথচ অন্যরা কিছু না করে এবং এমন কী মাসিক চাঁদাটা পর্য্যন্ত তারা তোলেন না, তবু যে কোন নির্বাচনে ৪০-৪৫% ভাগ ভোট পেয়ে যায়, কোন যাদুবলে?
----- কিন্তু একটি ছোট উত্তরে যা সেদিন শিখিয়ে দিয়েছিলেন, সেটাই বহুকাল পরে, আজ 'অমৃতকূম্ভ' হয়ে দাড়ালো। এক বাক্যের উত্তর। ইংরাজীতেই বলেছিলেনঃ
----- " They need do nothing, but they will continue to get vote" অর্থাৎ ওদের কিছু করার প্রয়োজন নেই, তবু ওরা ভোট পাবে। কারন হিসেবে আরো একটা বাক্য যোগ করলেন " not they, system organise vote for them" অর্থাৎ ওরা কখনোই ভোট যোগার করে, না ব্যবস্থা ওদের হয়ে, ভোট যোগার করে দেয়।
ইংগীতটার অর্থ খুজেছি বছরের পর বছর, প্রায় চার যুগ পর, ধাপে ধাপে স্পষ্ট হোল। আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকার হাউষ্টন ভাষনের পর। সেই বাক্যটার পুর্নাংগ চেহারা পেলাম। প্রসংগত, সিপি আই এম দল এই ভাষনকে ভারতের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় অকল্পনীয় আখ্যা দিয়েছেন।
'ব্যবস্থা' শব্দটার অর্থ চলতি কথায় যতটুকু তখন বোঝার ছিলো বুঝেছিলাম। যে কোন নির্বাচনে, যে সরকার ক্ষমতায় থাকেন সেই সরকার, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এবং এবং ব্যবস্থার বাইরের স্বার্থভোগী অংশ, লুম্পেন প্রকৃ্তির লোকজন, সাংবাদিক কুলের একটা অংশ এবং বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধিভ্রষ্ট অংশ নিশ্চিতভাবে, ব্যবস্থার পক্ষে কোন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন।
পরবর্তীকালে, আরো বুঝলাম, দক্ষিনের কেন্দ্রে যারা রয়েছেন, তারা যেভাবে রেনেঁশার গনতান্ত্রিক অভিমুখ থেকে যেমনভাবে দূরে যেতে থাকবেন, তেমনভাবে, তারা নমনীয় ধর্মান্ধতার দিকে ঝুকবেন। কংগ্রেস দলের সমস্যা শুরু হোল এখান থেকেই।
ফ্যাসিস্ত-একাত্মতা, অন্যপ্রান্তে মিলিটারীতন্ত্রের মরিয়া প্রতিরোধ, কালের বিধান (২২ পর্ব)
কংগ্রেস দল তো বটেই তার ভেতরকের জমিদারতন্ত্র, সাম্যবাদীরা সুযোগ পেয়ে যাবেন এই ভয়ে রেনেশার গনতান্ত্রিক অভিমুখগুলি থেকে যেমনভাবে সরেছে, তেমনভাবেই দুই মহাকাব্যকে অবলম্বন করেছে ঠিক, কিন্তু একই গতিতে তার 'ধর্মনিরপেক্ষ' অবস্থান থেকে সরে আসা সম্ভব ছিলো না। ই গতিতে ধর্মান্ধতার দিকে ঝুকে পড়া সম্ভব ছিলো না । বোধ হয়, এই কারনেই, বাংলার ভূমীসংস্কারের বিরুদ্ধে আমেরিকান সমর্থন যোগাড় করা সম্ভব হয় নাই।
বিজেপির রামমন্দির আন্দোলন, এক ধাপে, ভারতের আনাদি অনন্তকালের সামাজিক পুজরক্তকে ফুলকি দিয়ে উঠিয়ে আনলো এবং এইভাবেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কেল্লাফতে করার চেষ্টা করেছে।
বিজেপি তার প্রথম পাচ বছরে, (২০১৪ থেকে ২০১৯) দুই মহাকাব্যকেই রাজনীতির অভিমুখ করে নিলো। এটা বোঝানো দরকার ছিলো, রামমন্দির নির্মান থেকেও, পূর্বে যে ব্যবস্থার কথা বলা হোল, সেই ব্যবস্থার সাথে সামন্তিক ব্যবস্থার পচনগুলিকে যুক্ত করে নিয়ে, যেন তেন প্রকারে ক্ষমতা দখল।
----- যদি কংগ্রেসের কথা ছেড়েই দেওয়া হয়, বাম পন্থীরাও, প্রবল সরকারীয়ানায় আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায়, একটা কথা বুঝতে চায় নাই এটা এখন বিজেপি কিংবা রামমন্দির নয়
------- ব্যবস্থার সাথে, রামায়ন-মহাভারত ধর্মীতার সাথে সাথে সমস্ত আদি-ভৌতিক, অনুমান ধর্মীতা পাতাল পুরী থেকে টেনে তুলে সমস্ত আধুনিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করার একটা জনরোলকে টেনে তুলেছে। এখন লড়াইটা আর বিজেপি বনাম বাম, অথবা কংগ্রেস নয়।
এখন সবরকম সুপ্ত আদিভৌতিকতা, কু-আছার এবং পশ্চাতপদ অবস্থানে বিরাজমান সাধু সন্ত, ঙ্গাগা সন্যাসী সব অন্ধুত্ব
বনাম
আধুনিক বিজ্ঞান সমেত অখন্ড জ্ঞান ও সংস্কৃতির সংঘাত।
----- এখন আর বিজেপি ওর সরকারের রক্ষাকর্তা নয়। সব রক্ম আদিভৌতিকবাদ, অজ্ঞতা , কু-সংকার এবং অসভ্যতা ওদের বাচিয়ে রাখবে। এখন যার 'গাজা খেলে ক্যানসার উপসম' কিংবা 'গংগাজল খেলে মেয়েদের সিজারের প্রয়োজন হয় না -- ইত্যাই নয়। বলিউডের এক মহিলা সাংসদ , (সম্ভবতঃ অনুপমের স্ত্রী) দাবী করেছে, বলাৎকার নাকি 'ভারতীয় সংস্কার'।
এইভাবে ধীরে ধীরে বুঝলাম, প্রকৃত অর্থে 'ব্যবস্থাটা' কি এব্বং কেমনভাবে 'রেনেশাহীনতায়' নিজের এলাকা ছেরে একটা ব্যবস্থা পুরো জাতিটাকে কাঁদায় নামাতে শুরু করলো। কিন্তু
------ সব শেষে শ্রীমোদির আমেরিকা ভাষন, "আপকিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প' ভারতকে স্তালিনের সেই নির্দেশের সেই যায়গাটিকে চিহ্নিত করে দিলো।
------- উনি বল্লেন, " HITLER IS DEAD BUT NOT HITLARISM' উনি বোঝালেন, পুজির কেন্দ্রিভবন যেমনভাবে জোড়ালো হতে থাকবে, তেমনভাবে, বিশ্বফ্যাসীতন্ত্রের চালিকা,
আমেরিকা মিলিটারীতন্ত্রের হাতে যেতে শুরু করবে।
------ এর পর দুই আর দুই এ চার। অংক মিলে গেলো। শ্রীমোদি এবং অমিত সাহ যতই ভারতে হিন্দু এব্বং ব্রাহ্মন্যবাদের নামে, মানুষকে উন্মত্ত করুন না কেন, যতই, পাকিস্থানকে কিংবা চিনকে বলির বখরা করুন না কেন,,
কিছুই হবে না, বিশ্ব ফ্যাসিস্ত একতায় যদি ইসরাইলের ভূমিকায় ভারতকে না নিয়ে যাওয়া যায়। শ্রীমোদির আমেরিকা ভাষন তারই প্রস্তুতি। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours