কাশ্মীর ওপর থেকে 370 ও 35A ধারা প্রত্যাহার করার পর প্রায় পঞ্চাশ দিন পার হয়ে গেছে, বিতর্ক চলছে, "কাশ্মীরে বসবাসকারী সাধারণ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের উপর বর্তমান সরকার অন্যায় অত্যাচার চালাচ্ছে, তাদের মানবাধিকার ভিষন ভাবে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে,"...এ ব্যপারে সবথেকে বেশি সোচ্চার কাশ্মীর দরদী ইসলামিক পড়সি দেশ পাকিস্তান, তারা কাশ্মীরের মুসলিমদের জন্য সত্যিই কি খুব চিন্তিত!!! ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা মানবাধিকার সংগঠন ছাড়াও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাও কিন্তু এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে সহমত! আমরা সবাই জানি পাকিস্তানের সবথেকে প্রিয় ও একমাত্র বন্ধু দেশ হলো চীন আর অবশ্যম্ভাবী ভাবে সব কমিউনিস্টদের ও অত্যন্ত প্রিয় দেশ এই গণ-প্রজাতন্ত্রীক চীন!! এবার আলোচনা করা যাক চিনে বসবাসকারী বিরাট সংখ্যক মুসলিম মানুষ কেমন আছে, চীনে যে লক্ষ লক্ষ মুসলিম মানুষ বসবাস করে তারা কি আদৌ খুব শান্তিতে আছে? স্বাধীন ভাবে কি তাদের ধর্ম পালন করতে পারছে? জানলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হবে,পাকিস্তান দরদী চীন সরকার চীনে বসবাসকারী মুসলিমদের মানবাধিকারকে শুধু লঙ্ঘন করে নয় সম্পূর্ণ হত্যা করে তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করার জন্য চরম অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, এবং এই সমস্ত অত্যাচারের ঘটনা সম্পূর্ণ আড়াল করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক চেষ্টাও করে যাচ্ছে, অভিযোগ উঠলে সরাসরি তা অস্বীকার করছে। জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদনে সরাসরি উল্লেখ করেছিল, চীনের পশ্চিমাঞ্চলে শিনজিয়াং অঞ্চলে যে উইগর প্রজাতির মানুষ বাস করে এদের বেশির ভাগই মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং এদের প্রায় এক লক্ষেরও বেশি উইগরবাসিকে আভ্যন্তরীণ চরমপন্থা বিরোধী শিবিরে (Counter-Extremism Centre) বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং অন্তত দু লক্ষ মুসলিমকে পুনঃশিক্ষা শিবিরে (Re-Education Camps) জোর করে আটকে রাখা হয়েছে। বিবিসির একটি অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে চীনে হাজার হাজার মুসলমানকে বিনা অভিযোগে শিনজিয়াং এর পশ্চিমাঞ্চলে আটক করে রাখা হয়েছে। চীনা সরকার অবশ্য এই দাবিকেও যথারীতি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে, এবং হাস্যকর ভাবে জানিয়েছে, যেসব মুসলিম সন্ত্রাসবাদী ধর্মীয় চরমপন্থার সাথে জড়িত তারা স্বেচ্ছায় এই বিশেষ কারিগরি স্কুলে অংশগ্রহণ করেছে!!!
আর একটি স্চ্ছোসেবী সংগঠনের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে চীনের লোক দেখানো রি-এডুকেশন ক্যাম্প গুলোতে মুসলিমদের জোর করে মদ্যপান এবং শুকরের মাংস খেতেও নাকি বাধ্য করা হচ্ছে, ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে ওই রি-এডুকেশন ক্যাম্প গুলোতে মুসলিমদেরে উপর নিরন্তর মানসিক চাপ শৃষ্টি করা হয়, যাতে তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা গুলোকে অস্বীকার করে নিজের ধর্মের সমালোচনা করতে বাধ্য হয়। যদি ভেবে থাকেন এগুলো নিছক কোনো সংবাদ বিশ্লেষণী প্রতিবেদন বা কাশ্মীর ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতে অপপ্রচার তাহলে ভুল ভেবেছেন!!! জেনে নিন এই ঘটনার নিন্দা করে ব্রিটেনের বিদেশ সচিব জেরেমি হান্ট সংসদে বিশদে এই স্পর্শকাতর বিষয়টি উপস্থাপন করেন। একটি বৃটিশ কূটনৈতিক দল,যারা শিনজিয়াং প্রদেশে ভ্রমণ করেছেন, তারা এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে অন্তরীণ শিবিরগুলোতে উইগর মুসলিমদের ওপর অত্যাচার সম্পর্কে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন গুলো অনেকাংশেই সত্য। ওয়াশিংটন পোস্টে Josh Rogin এই একই প্রসঙ্গে বলেন, চীনে প্রতিদিন রীতিমতো ষড়যন্ত্র করে লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে চীনা সরকার জোর করে এই অভ্যন্তরীণ শিবিরগুলিতে আটকে রেখেছে এবং প্রতিদিন তাদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা তো হচ্ছেই, এমনকি তাদের নিজস্ব ধর্ম-সংস্কৃতি কে একেবারে নিশ্চিহ্ন করার সব রকম চেষ্টাও চলছে। বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে যে হোতান অঞ্চলের কেরিয়া মসজিদটি যেখানে অবস্থিত ছিল, সেই জায়গা এখন একদম ফাঁকা, মানে মসজিদটি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। প্রায় 800 বছর আগে 1237 সালে অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন এই মসজিদটির নির্মাণ হয়েছিল,1980 থেকে 1990 সালের মধ্যে এই মসজিদটির ব্যাপক সংস্কারও করা হয়। 2016 সালে তোলা একটি ছবিতেও দেখা যায়, একটি উৎসবের দিনে ওই মসজিদের সামনের অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছে উৎসব পালান করতে। অথচ 2018 সালে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে মসজিদটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে শুধুই খালি জমি পড়ে আছে। বেশ কিছুদিন আগে কুমুল এলাকায় গিয়ে একজন প্রতিবেদক স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, ওই অঞ্চলের প্রায় 800 টি মসজিদের মধ্যে 200 টি ইতিমধ্যেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং আরও জানা যায় যে 2018 সালের মধ্যে মোট 500 টি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল!!!
আশ্চর্য এবং মজার বিষয় এই যে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, "সত্যি কথা, আমি ওই সম্পর্কে (চীনে মুসলমানদের নির্যাতন) তেমন কিছুই জানি না।" ওই সাক্ষাৎকার অবশ্য প্রকাশিতও হয়েছে। ইমরান খান যদি এখনও না জেনে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে চীনের মুসলিমরা নেহাত হতভাগ্য!!! আর কাশ্মীরের মুসলিমরা সৌভাগ্যবান!!! তবু আশা রাখবো ভবিষ্যতে নিশ্চয় তিনি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন, চীনের অসহায় মুসলিমদের পাশে দাঁড়াবেন! বুদ্ধিজীবী বা মানবাধিকার সংগঠন গুলো সাধারণত রাষ্ট্র বিরোধীতা করেই জনপ্রিয় হতে চায় তাই ওদের কথা বাদই দিলাম। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের হয়তো চীনের কাছে ভারতের থেকেও বেশী দায়বদ্ধতা আছে! কিন্তু মানবাধিকারের প্রশ্নে তারা অন্তত আরও একটু দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবেন, আর একটু সহৃদয় হবেন, চীনে ঘটে চলা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার যাতে বন্ধ হয়, তাদের মানবাধিকার যাতে রক্ষা হয়, তারা যাতে তাদের নিজস্ব ধর্ম-সংস্কৃতি সঠিক ভাবে বজায় রেখে চীনে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্তরে জনমত গঠন করবেন, আন্দোলন করবেন, তা না হলে মানুষ ধরে নেবে শুধু মাত্র কিছু রাজনৈতিক মুনাফা অর্জন করার জন্যই কাশ্মীর নিয়ে কমিউনিস্টদের কুম্ভীরাশ্রু!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours