সোমা নাথ, লেখিকা, কলকাতা:
ধর্মের সৃষ্টি - উৎপত্তি , স্রষ্টা সম্পর্কীয় বিভিন্ন ধ্যান - ধারণা সম্পর্কিত আমার বক্তব্য জানিয়েছি আর এর আগের লেখা গুলিতে।
এবার আমার আলোচ্য বিষয় ঈশ্বরের প্রতি ভয় এবং ধর্ম ভয়!
প্রথমে এই ভয় বিষয়ে রবি ঠাকুরের কিছু কথা এখানে উল্লেখ করি।
" পৃথিবীতে ভয় কে যদি কেহ সম্পূর্ণ অতিক্রম করিতে পারে, বিপদকে তুচ্ছ করিতে পারে, ক্ষতিকে অগ্রাহ্য করিতে পারে, মৃত্যুকে উপেক্ষা করিতে পারে, তবে তাহা প্রেম। স্বার্থপরতা কে আমরা জগতের একটা সুকঠিন সত্য বলিয়া জানিয়াছি , সেই স্বার্থপরতার সুদৃঢ় জাল কে অনায়াসে ছিহ্নবিচ্ছিন্ন করিয়া দেয় প্রেম"।
"যে হতভাগ্য দেশবাসীরা পরস্পরের সুখে দুঃখে, সম্পদে, বিপদে এক হইয়া মিলিতে পারে না, তাহারা জগতের সর্ব শ্রেষ্ঠ সত্য হইতে ভ্রষ্ট হইয়াছে বলিয়া শ্রী হইতে ভ্রষ্ট হয়, - তাহারা ত্যাগ করিতে পারেনা , সুতরাং লাভ করিতে জানে না..."
"তাহারা পৃথিবীতে নিয়তই ভয়ে ভীত হইয়া , অপমানে লাঞ্চিত হইয়া দীন প্রাণে, নত শিরে ভ্রমণ করে। ইহার কারণ কী ? ইহার কারন এই যে, তাহারা সত্যকে পাইতেছে না , প্রেম কে পাইতেছে না, এই জন্যই কোনোমতেই বল পাইতেছে না।"...রবি ঠাকুর
অর্থাৎ মানব জাতি একটি অত্যন্ত স্বার্থপর জাতি। সবাইকে সম্পূর্ণ দোষ না দেওয়া গেলেও কম বেশি স্বার্থপরতা আমাদের গ্রাস করে রেখেছে। প্রতি মুহূর্তে কি যেন হারাবার ভয় আর কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা মানুষকে ঘিরে রেখেছে। আজ এই মুহূর্তে যা পাওয়া হয়ে গেলো, পর মুহর্তেই আরও কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা ! সেই সাথে আবার কিছু হারাবার ও ভয়!
এই পাওয়া ও হারাবার নিয়ন্ত্রক হিসাবে আমরা সৃষ্টিকর্তাকেই কল্পনা করি, তাই বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ ধর্মমত অনুযায়ী সৃষ্ট সর্বশক্তিমানকে , সেই ধর্মের দেখানো পন্থা অনুযায়ী প্রচণ্ড ডাকাডাকি করে তাকে তুষ্ট রাখার কারণে বিভিন্ন বিচিত্র আচরণ করে থাকি। - ভয় ! - যদি সর্বশক্তিমান কুপিত হন, বা ধর্মে আঘাত লাগে।
কাছেই রবি ঠাকুরের কথা মত " মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর নিজেরে কর জয়....." বা " নিজের পরে করিতে ভর না রেখ সংশয়"! আর এ গুলি নিজের মধ্যে রাখতে প্রয়োজন সততা ও সংযম। নিজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান লোভ যদি কেউ সংযত করতে পারে তবেই সম্পূর্ণ ভয় মুক্ত হওয়া সম্ভব।
আর যত দিন না আমরা মন থেকে এই ভয় মুক্ত হতে পারব , ততদিন নিজেকে ছাড়া কাউকেই আপন করে নিতে পারব না। নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকতে থাকতে আমরা কাঁকড়ার মত, শামুখের মত নিজের মধ্যে ভয়ে গুটিয়ে থাকব । বাইরের কিছুই জানতে তো পারবই না, নিজেকেও নিজে আপন করে নিতে পারব না। প্রতি মুহূর্তে আত্মহনন করে চলব।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours