Biswabidyalaya ar somporkhe Kichu totthyo
অপর্ণা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও সমাজকর্মী, আসানসোল: 

১৯৭৯ সালের গল্প। আজ ও মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। ভাল রেজাল্ট হলেই ঝাঁপাও যাদবপুর  বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।
যেদিন ভাইবার জন্য ডাক পেলাম, কি প্রবল উত্তেজনা। আহার, নিদ্রা ত্যাগ করে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। দুরুদুরু বক্ষে বিশাল হলঘরে প্রবেশ, টেবিলের চারপাশে চারজন বাঘা বাঘা পরীক্ষক বসে রয়েছেন। বুকে গুরুগুরু দুন্দুভি বেজে চলেছে, নিজেকে নিজেই শান্ত করছি, মনে মনে বলে চলেছি এই একটাই সুযোগ। বাইরে অসংখ্য পরীক্ষার্থী মানে অসংখ্য প্রতিযোগী ,ভয় পেলে চলবে না। সত্যিই ভয় নিমেষে উধাও হল চার জন স্যার ও ম্যাডামের মধুর ব্যবহারে। প্রশ্নবান ছুটছে, পারছি,  পারছি না কিন্তু নির্ভীক হয়ে গেছি।
সেটা সম্পূর্ণ তাঁদের কৃতিত্ব।
যথাসময়ে সুযোগ পেলাম। রাজনীতি তখনও ছিল কিন্তু কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। ৯০ শতাংশ পড়াশোনাটাই করতেন ১০ শতাংশ রাজনীতি করতেন কাউকে বিরক্ত বা বিব্রত না করে।
দেশ বিদেশের উচ্চ পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে ওঠাবসা, যত পার শিখে নাও। কি মধুর সম্পর্ক সুকুমারী দি, সীতানাথ স্যার, কবি শঙ্খ ঘোষ, নবনীতা দেব সেন, পবিত্র দার সঙ্গে। প্রথম গল্প লিখতে শিখলাম নবনীতাদির সান্নিধ্যে। স্বপ্ন দেখতে শিখলাম শঙ্খদার কবিতা পড়ে। জীবন থেকে অহেতুক ভয়টা চলে গেল। এই বিশাল মাপের মানুষেরা আমাদের গড়ে পিটে ছেড়ে দিলেন ব্যবহারিক জীবনে। আমৃত্যু তাঁরা থাকবেন আমাদের মননে প্রতিদিনকার যাপনে।
হঠাৎ কি যেন কি হয়ে গেল। রাজনীতি নামক বিষয়টি যেটিকে আমরা সম্মান করতাম, সম্ভ্রমের চোখে তাকাতাম, কখন যে সর্বগ্রাসী দানবে পরিনত হল জানতেই পারলাম না। অথবা বলা যায় জানলেও প্রতিরোধ করি নি। যে কলা বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা দুনিয়া কাঁপিয়েছে আজ শুনি সেই কলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির আঁতুড় ঘর। আমরা নিজেদের " যদু বংশ" বলতাম। তবে কি যদু বংশ ধ্বংসের দিকে? এ মেনে নেওয়া যায় না। অভিভাবকরা সাবধান হন। গভীর কূপ খনন করা হয়ে গেছে। আপনার সন্তান কূপের অন্ধকার অতল গহ্বরে ঝাঁপ দেবে নাকি সন্তর্পণে মরণ ফাঁদ এড়িয়ে সার্থকতার দিকে এগিয়ে যাবে তা আপনিই নির্ধারণ করুন। এই নোংরা রাজনীতিকে ঘেন্না করতে শেখান। বাঁচান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। সুস্থ রাজনীতিতে দোষ নেই। কিন্তু যে রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের স্বার্থে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় তাকে ঘেন্না করতে শেখান।
যে য়ু এর প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা পৃথিবী ময় যারা ছড়িয়ে আছ এবার সরব হওয়ার সময় এসেছে। বাঁচাও আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে। বড় কষ্টের দিন আজ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours