সীমন্তী দাস,লেখিকা,দুর্গাপুর:
(আমেদাবাদ থেকে)
আমরা
বিপ্লবী বাঙালি। আমাদের নেতাজি, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন আরো অনেক অনেক অগনিত
বিপ্লবীর রক্ত আমাদের শরীরে। সেই রক্ত এখনো ফুটছে। তার প্রকাশের মোক্ষম
জায়গা ফেসবুক। জল সঙ্কট, আপনার ডি পিতে কলসি উল্টানো কাক, ব্যাগের বোঝায়
স্পাইট ভেঙে যাওয়া শিশু, তাই দেখে আতঙ্কিত মাতৃকুল সন্তানের পিঠের বোঝা
মাথায় নিয়ে আকাশে,বাতাসে, হরেক জীবন উন্নতির সেন্টারের দরজায় হত্তা দিয়ে
পরে থাকা।
তা এহেন পর্যায়ে আমাদের স্বাধীন দেশের
কেন্দ্রীয় সরকার (সে যেই হোন না কেন) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পৌরসভা স্তরে
বেশ ভালো টাকা দেন। সে স্কিম কখন JNNURM, AMRUT, SMART CITY যে নামেই হোক
না কেন।
জহরলাল বা অটল যে নামেই হোক টাকা আসে।
দেশ
তার শিশুদের কথা ভেবে পার্কে করতে প্রত্যেকটি পৌরসভাকে কোটির অঙ্কে অর্থ
দেওয়া শুরু করেন ২০০৫-২০০৬ থেকে। এরপর টাকা না আসায় কাজ বন্ধ এমন হতে দেখা
যায়নি। বিপ্লবী বাঙালি কাউন্সিলররা নিজেদের মধ্যে বিস্তর মারামারি করে
প্রত্যেক এলাকায় প্রভাব অনুযায়ী পার্ক করেন।
তাতে
চারটি বেঞ্চ, দুটি দোলনা, দুটি ঢেকি, আর একটি স্টেজ ও আলো। পরবর্তীতে
ত্রিফলার যুগে আলোর তলায় লন্ডন বাতি, তাতে আবার নীল,সাদা টুনি।
আজ এই পার্কের গুলি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বেশীর ভাগই অসামাজিক কাজের আখরা।
আমেদাবাদ পৌরসভা এমনই এক প্রকল্পে টাকা পায় ঐ সময়। এখানকার একটি স্বাভাবিক জলাশয় কাঙ্কারিয়া।
প্রায় ৫০০বছর পুরানো, যা এতদিন আমেদাবাদ শহরের ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার হতো।
ব্যবসায়ী
গুজরাটি মাথারা এই লেকটা ঘিরে স্বপ্ন দেখলেন। একটি অত্যাধুনিক ডিজনি
ওয়াল্ডের।দু বছর সময়ে তারা পাশ্ববর্তী বস্তি পুনর্বাসন ও বনসৃজন একসাথে
করলেন। গাছ হলে আর নতুন বস্তি হবে না। লেক পরিষ্কার হলো। আড়াই কিমির লেকের
পার সাজানো হল। যেখানে বাঙলার একটি পৌরসভা একশো পার্ক বানালো এরা একটা। আর
সরকার যে টাকাই দিলো পার্ক খাতে সবটাকাই এখানে এল। লেকটি গোলাকৃতি। এর
সাতটি প্রবেশ পথ। শহরের বিভিন্ন দিক দিয়ে। আপনি আজ বাচ্চাকে চিড়িয়াখানা
দেখাবেন জু গেট দিয়ে ঢুকলেন।
বর্তমানে এখানে তেইশ
ধরনের বিনোদন আছে।কিডস্ সিটি, বেলুন সাফারি, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, টয়
ট্রেন, স্পিড বোট, ট্রি ওয়াক,গল্ফ কোর্স ও আরো আরো। এছাড়া প্রজাপতি, মাছের
জন্য আলাদা পার্ক। জুতে অল্প পশু আছে । ভবিষ্যতে আরো আসবে।
কিডস্
পার্ক। এক অদ্ভুত শিশুমনের ইচ্ছা পুরনের জায়গা। বড়দের দেখে এটিএমে টাকা
তোলা নিয়ে যে স্বপ্ন রাজ্য আছে তাদের মনে, সেটার এক বাস্তব রূপ। এখানে এসে
ওদের ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা ভরতে হবে চেক লিখে।(আপনি সন্তানকে যে মূল্যের
টিকিট কিনে দিয়েছেন) এবার ওখানে সে এটিএম কার্ড পাবে। তাতেই সে ঐ পুরো
কিডর্স সিটি ঘু্রবে।ভালো কাজের জন্যে আর্ন করা যায়। খারাপের জন্য পয়েন্ট
লুজ। ভালো কাজ কি? একটি অপারেশন থিয়েটার। সেখানে ডাক্তার সেজে অপারেশন করলে
ভালো কাজ। পয়েন্ট এল।ভিডিও গেম বাজে কাজ পয়েন্ট লুজ। আদালত আছে, দমকল আছে,
হাসপাতাল আছে, বাস পরিষেবা আছে। সবই হাতে কলমে খেলার ছলে শেখানো। বিপদ হলে
করনীয় কর্তব্য কি।
আর স্বপ্ন পুরন? এফ এম রেডিও।রেডিও জকি একটি কিশোর। মন খুলে সেপ অফ ইউ গাইছে।রেকর্ডিং হচ্ছে। সেটা বাজছে।
পৃথিবীতে আমি ৪০কেজি। টপ করে চাদে গেলে ওজন কমে গেল। অন্য গ্রহে কত? কি আনন্দ।
শেষে হাতে কলমে আইসক্রিম বানিয়ে সেই আইসক্রিম খাওয়া। এ যেন ইচ্ছে পূরনের গল্প।বিদেশে নয়। আমার ভারতে। একদম দেশীয়।
কঙ্করিয়া লেক। আমেদাবাদ।
ছোটদের
ইচ্ছে পূরণের স্বপ্ন নিয়ে আমেদাবাদ পৌরসভা। মাসিক আয় এই প্রকল্পে সাড়ে ছয়
কোটি টাকা। খরচ ছয় কোটি। বেনিয়া গুজরাটি দিনের শেষে জানে খয়রাতিতে ঘর চলে
না।
আর আশ্চর্যের বিষয় পার্কের ফি কিন্ত্ত খুবই কম। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ। ১টাকা থেকে ২৫০টাকা বিভিন্ন রাইডে খরচ।
স্কুলের টিচার সহ বাচ্চাদের প্রায় বিনামূল্য।
তাই আমরা বাঙালিরা একটু কাগুজে বিপ্লব ও নাক সিটকানো কম করলে আমাদের বাচ্চারাও এমন এক বাস্তবধর্মী স্বপ্ন রাজ্য পেতেই পারে।
কিন্তু পেল কৈ?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours