জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

মোক্ষম এক জবাবে, প্রায়ত শিক্ষাবিদ, অশোক মিত্র বলেছিলেন, "যদি কমিউনিজমের ভবিষ্যত না থাকে তবে, ভারতেরো কোন ভবিষ্যত নেই।" আজকের লেখায় সেই কথাটাই বলার চেষ্টা করবো, 'সত্য  ইতিহাসের অন্তিম অভিমুখ হলেও' সত্য অনেক সময়েই অনৈতিহাসিকতার সামনে 'অসত্য', এমন কি হাস্যস্কর বিবেচিত  হবে।
আরো সমস্যা দাড়ায় তাদের কাছে,  যারা অতীত দিনের সামাজিক সম্পর্কগুলির  আধারে,বর্তমানকে যাচাই করতে চাইবেন। তখন অধিকাংশ সময়  'মিথ্যা'ই সত্য বলে বিবেচিত, হবে।

আবার  তখন যদি কেউ 'সত্য'টাকে সরাসরি বলে দেন,  'সত্যের' পরিমাপ করতে গিয়ে 'সত্যদর্শী'কেই বিচারকের ভূমিকায় দাড়ীয়ে স্বিকার করতে হয়----এই যে বলা হোল, 'সাম্যের' যদি ভবিষ্যত না থাকে তবে ভারতবর্ষেরো ভবিষ্যত নেই', কথাটা প্রক্ষিপ্ত। প্রক্ষিপ্ত কথাটার অর্থ সাধারনভাবে সবাইকার জানা। সত্য হলেও কোন জনিষ সত্য বলে বলা যাবে না, বিষয়ের বাইরের 'কোন কারনে' । সেটা  অন্য কিছু নয়, ভাব জগতের দিক থেকে, সমাজের পশ্চাতপদ অবস্থান। 

'সত্য'টাকে  'সত্য' বলে স্বিকার করার মতো  বিজ্ঞানবোধ থেকে কোন সামাজিক রাজনীতি সহস্র যোজন দূরে বিরাজমান থাকে, তবেই 
---- 'সাম্যের ভবিষ্যতা না থাকলে, ভারতের ভবিষ্যত নাই, সত্য কথার     বন্ধনীটলে হয় গায়ের জোর-খাটিয়ে হয় 'মিথা' বলিয়ে নেওয়া হবে, নয়তো   অন্ততঃ  প্রক্ষিপ্ত বলে স্বিকার করতে হবে। কিন্তু, 'ভবিষ্যত যে একেবারে নাই' সে রকম 'মিথ্যাটাই" শ্বাশ্বত সত্যের মতো জ্বলতে থাকবে। কেউ এসে প্রক্ষিপ্ত চিহ্নিত করেও  ব্যাখ্যা চাইবেন না।
 
এসবের যে আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারন রয়েছে এবং বিষয়টি নানা রুপে আলোছায়ার পথ ধরে নতুন করে ছড়ানো হচ্ছে, সোভিয়েত ভেংগে দেওয়ার পর থেকে । এ দেশে আগেও ছিলো,  এখন দেশে আদিভৌতিকবাদের উপযোগী রাজনীতির বিস্তার হওয়ার কারনে, আরো ক্রঢ় ভাবে আসচে এবং সেসব কিছুকে মানিয়ে নেওয়ার মতো করেই, সামাজিক সম্পর্কগুলিকে বিজ্ঞান এবং যুক্তি-তর্কহীনতায়  ঢেলে সাজানোর চেষ্টাও চলছে।উল্কার গতিতে। 

সাধারন বিজ্ঞানের নিয়মগুলিকে পেছনে রেখে, বিজ্ঞানকে যখন সমাজবিজ্ঞানর পর্য্যায়ে উঠিয়ে এনে বিজ্ঞানীরা যুক্তি- তর্কের আলোকে বিষয়টি দেখেছেন, তখন নিশ্চিত হয়েছেন 
------- বিজ্ঞান এবং অধিবিজ্ঞানর সংঘাতে একজন, কিংবা গোষ্টিবদ্ধ অথবা কোন দেশের মানুষ, এমন কি বিশ্বের মানুষ অধিবিদ্যার সাথেই থেকে যাবে যতদিন সাম্যবাদীরা, মানুষের মধ্যে 'অধিবিদ্যার
 গ্রহনযোগ্যতাকে শিকর শুদ্ধু উৎপাটন করতে না পারবেন। তত্বগতভাবে, মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদ এই বিন্দুতেই নিশ্চিতভাবে মিলেছে। এখানেই বিশ্ববিক্ষা হিসেবে মার্ক্সবাদ এবং প্রয়োগ শাস্ত্র হিসেবে লেনিনবাসদ একাত্ম।

এইবিন্দুতেই নিশ্চিত হয়েছে, পুজিতন্ত্রের আত্মসর্বস্বতার কারনে, রেনেশার পতন যখন সমাসণ্য তখন উদারবাদের প্রাসংগিকতাও সমাপ্ত বলে বিবেচনা করে
--- ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে , বিজ্ঞানের বিপরীতে আদিবৌতিকবাদকে প্রথমে যুক্তি হিসেবে পরাজিত করে, তাদের রাজনৈ্তিক ধারক এবং বাহকদের নির্মুল করার মধ্য দিয়েই, 'সত্যকে' সামাজিক কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এখান থেকেই, বিশ্বসত্বা হিসেবে যেমন মার্ক্স---লেনিনের সেতুবন্ধন বিসেবে বিবেচিত। 

---- সাম্যকে যারা সত্য বলে মানবেন না, তবে তাকে নিশ্চিতভাবে চিরদাসত্বকে 'সত্য'  বলে মানতে হবে। ইউরোপে, কাউকে এ রকম জলজ্যান্ত মিথ্যাকে মুর্খের মতো বলতে শোনা যায় না, অনেকে আমেরিকার  বুদ্ধিসত্বার অনুকরনে বলেন - বিশ্বে মার্ক্সবাদের ভবিষ্যত নাই। জবাবটা সেখানে, এখানেই শেষ হয় না, যে তবে 'দাসত্ব' এবং আত্মমর্য্যাদাহিনতাকেই চিরন্তন হিসেবে মেনে নিন।
---- এগিয়ে গিয়ে বলতে বা লিখতে দেখা যায়, মার্ক্সসবাদের যদি ভবিষ্যত না থাকে, তবে বিশ্বের অস্তিত্বের ভবিষ্যত নাই। মার্কাসবাদের মৃত্যুর সাথে যদি বিশ্ব ধ্বংসের প্রশ্নের সাথে এক বিন্দুতে মিলে যায় - তখন তো কেউ  কারুর দার্শনিক অভিব্যক্তির যায়গাটাই হারিয়ে ফেলেন।   

অর্থটাকে যদি এমনভাবে বোঝা হয়, 'ভারতের যে ভবিষ্যত নেই'  কথাটা বুঝতে বা বোঝাতে ব্যখ্যার অপেক্ষা রাখে। 
---- অথচ দেখুন,  যারা এই ভেবে বলছেন "সাম্যের ভবিষ্যত নেই', তারা কিন্তু এই বিজ্ঞান বহির্ভূত,  অধিবিধ্যায় নির্ভর করে ' মিথ্যাটাকে'ই সত্য বিশ্বাসে বলে যাচ্ছেন এবং আরো ভয়ংকর এখানে, সোভেয়েত ভেংগে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী যে সমাজতন্ত্রের সংকট চলছে কিংবা ভারতের বিগত কয়েকটি নির্বাচনে, সাম্যবাদীরা যে ভালো ফল করতে পারে নাই
----  তার অন্ধকারে দাড়ীয়ে  দেশের অনেকেই  এই' ডাহা ' মিথ্যাটাকেই'  'সত্যের' মোহর লাগিয়ে দিচ্ছেন। 

আসলে এটা কেবল ভারতের নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সেই  সব দেশ যারা এককালে প্রথম সভ্যতার আলো দেখেছিলো কিন্তু পরে উন্নত সভ্যতার কাছে পদানত হয়ে ছিলেন দীর্ঘকাল
----- যদি বিশ্বের দিকে তাকিয়ে, দেখা হয় দেখা যাবে, সে সব দেশের যারাই   চুক্তি করে স্বাধীনতা পেয়েছেন,  প্রত্যেক দেশের যে রাজনৈ্তিক সংকট চলছে, সে সবের উৎস সেই এক যায়গায়। বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদের উপরে অধিবিদ্যার প্রাধান্য। এই দ্বন্দ্ব যেখানেই  অমীমাংসিত থাকতে দেওয়া হয়েছে, সর্বত্র, পুঁজিতন্ত্র ও সামন্তবাদীরা এর দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে মানুষকে মায়াতন্ত্রে ডুবিয়ে রেখে কার্য্যসিদ্ধি করেছে। সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর আরো বিপুলভাবে, 
----- বিদ্যা, বুদ্ধি এবং জ্ঞান এবং সংস্কৃতির উপর এই 'বলাৎকার' বিপুল্ থেকে বিপুলতর হচ্ছে। 

যুক্তি-তর্ক কিংবা বিজ্ঞানের আলোতে,  যে সব বিষয়কে,   উন্নত দেশগুলি বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য বলে মেনেছেন এবং সামাজিক সংস্কৃতিতে ইতিমধ্যে স্থান করে দিয়েছেন 
------ , উল্লেখিত দেশগুলিতে সে সব ভাবনার অনেক কিছুকে পুথিগত বিচারে সত্য মানলেও বিবেচনার দিক থেকে 'মিথ্যা', মেনে যে চলবেন, সেটা সে সব দেশের মানুষের ইচ্ছা নির্ভর নয়। বরং বলা যাবে, অতি-অতীতের অনুমান ধর্মীতার বাধ্যবাধকতা। নয়তো, ভারতের কোন মুখ্যমন্ত্রি দাবী করতে পারেন, গাজা খেলে, ক্যান্সার চলে যায় কিংবা নিউটনের বহূ পূর্বেই নাকি, ভারতে মধ্যাকর্ষন আবিস্কৃত হয়েছিলো।

একথা স্বচ্ছন্দে দাবী করা যায় 
------- , চিন কিংবা ইউরোপে ভাব জগতের যে অংশ এখন বিজ্ঞান কিংবা যুক্তি তর্কের অধীন, তার ১০ ভাগো,সত্যের' অধীন বলে মনে করার কারন নেই। তাই এসব দেশে মায়াবাদের প্রাধান্য এতো বিপুল। সেই তুল্যমূল্য, ' চুক্তি করা স্বাধীনতার'  দেশগুলিতে, ' মিথ্যা জগতে অধীন হতে বাধ্য প্রকৃ্তিগত কারনেই। সে কথা  এই লেখক হলফ করে বলতে পারেন। 
সে কারনে অধিকাংশ মানূষ যদি মনেও করেন, এসব দেশে 'সাম্যের'  ভবিষ্যত নেই, কিন্তু অল্প সংখ্যক যদি মনে করেন 'সাম্য' বিশ্বের সাথে ভারতেরো অন্তিম ভবিষ্যত, তবে বিজ্ঞান এবং যুক্তি-তর্কের আলোতে মানতে হবে, দ্বতীয়োক্তোরাই সত্যের পথে।

এসব কারনেই মার্ক্সবাদের ছাত্রদের বাধ্যতামুলক ভাবে, ইল্যুশানের বাস্তবতা এবং বিজ্ঞানর বাস্তবতার দ্বন্দ্বকে ডাল্-ভাতের মতো বুঝতে হয়। জনগনের এই অংশ যখন সমাজ বিজ্ঞানের এই জটিল বিষয়টি আয়ত্ব করতে পারবেন, তারপরেই সাধারন মায়াবাদের বিপরীত অবস্থান নিতে শুরু করবেন। 
 বিষয়টি অনুমান ধর্মীতার সাথে বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব হিসেবেও বুঝানো যেতে পারে। এর গতিপথও কোন সরল রেখা ধরে চলে না।  
------ ভারতের ২০ ভাগ মানুষ যদি যুক্তি বা পুথিগত বিদ্যার আলোকে মেনেছেন, 'পৃথিবী সূর্য্যের চারদিকে ঘোরে' , নিশ্চিতভাবে মানতে হবে     অন্ততঃ  এই বিশ ভাগের পঞ্চাশ ভাগ,  মনে মনে মনে মেনে চলেন উল্টো টা। সকালে ঘটা করে, হাজার হাজার মানুষের  সূর্য্যপ্রনামের পেছনে এই রহস্যটা কিভাবে লুকিয়ে থাকে, তা চিহ্নিত করা যায়। । আরো স্পষ্ট করে বলতে হয়, বিশ্বের  যে সব দেশে গনতান্ত্রিক বিপ্লব হওয়ার সুযোগ না পেয়েই স্বাধীনতা পেয়েছে,
---- এরকমদের সাথে চিন্তনের দিক থেকে একটা পার্থক্য ত আদের সাথে থাকবেই , যারা  কোন দিন পরাধীন হয় নাই এবং ইতিহাসের স্বাভাবিক গতিতেই জীবন সত্বার স্বাভাবিক গতিতেই বিজ্ঞান কে আয়ত্ব করেছেন   কিংবা গনতান্ত্রিক বিপ্লব (রেনেশাকে আত্মস্ত করেই) ং স্বাধীনতাকে জনশক্তির চাপে -এক সাথে  আদায় করে নিয়েছে.....।
 এইভাবে প্রথোমোক্তদের কাছে গনতান্ত্রিক বিপ্লবের সুযোগ কোনদিন ঘটে নাই বলেই, চিন্তন প্রকৃয়াতেই আদিভৌতিক বা মায়াবাদ ইনবিল্ট হয়ে বিরাজমান।
-----   একারনেই, সাম্যবাদীরা বলতে চেয়েছেন, গনতান্ত্রিক বিপ্লবটা শেষ না করতে পারলে, চিন্তনের সাধারন মুক্তিটাই সম্ভব নয় - যা এক কালে ইউরোপে ঘটেছে সপ্তাদশ কিংবা অষ্টাদশ শতাব্দীতে কিংবা চিন দেশে ঘটেহে মাও সে-তুং এর নেতৃ্ত্বে , দ্বিতীয় যুদ্ধের সমান্তরাল ভাবে। (ক্রমশ)
 

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours