fiture
সুদেষ্ণা দাশগুপ্ত, লেখিকা, কলকাতা:

৭৩তম স্বাধীনতা দিবসের কিছুদিন আগে থেকেই ভারতের আকাশ-বাতাসে বেশ একটা থমথমে ভাব। সদ্য জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫র এ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আর তারপরেই সরকারি পক্ষের উল্লাস ও বিরোধীদের স্বভাবজাত  বিরোধিতা। এটাই গণতান্ত্রিক ধারা, এধরণের বিরোধিতাই আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে অভ্যস্ত। যদিও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, এই কথাটা ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো ভাবে উচ্চারণ করেই থাকে। কিন্তু সারা দেশকে এক করার কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথেই চারিদিকে এর বিরোধিতায়  উস্কানিমূলক ঘটনাক্রমও আমরা রোজই দেখছি। নেট দুনিয়ার দৌলতেও এসব বেড়ে গেছে প্রচন্ড পরিমানে। বিপুল উৎসাহে বেশ কিছু বাঙালির এ ব্যাপারে অগ্রগণ্য ভূমিকাও আমরা দেখছি। আছে প্রতিবেশি কিছু দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের নোংরা ভারত-বিরোধী পোস্ট। 

এসব অগ্রাহ্য করে স্বাধীনতার আসল যে অর্থ বা যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধে ভারতের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মানুষ ভোগ করছেন সেই সমস্ত  যেন জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাকের মানুষরাও পায় সে দিকেই আমাদের সবার নজর থাকা দরকার। ওই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অবস্থা স্বাভাবিক হতে হয়ত খানিক সময় লাগবে। স্বাধীনতা দিবসে এই কামনা আমাদের সবার হওয়া উচিৎ যাতে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাকের অবস্থা দ্রুত একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। 

স্বাধীনতার প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমেই যে কটি দিক মনে পড়ে সেগুলির মধ্যে মুখ্য হচ্ছে শিশু ও নারীদের অবস্থার উন্নতিকরণ। ক’দিন আগের ভয়ানক এক খবর শুনে আমরা আতঙ্কিত। উত্তরাখণ্ডে নাকি গত তিনমাসে একটিও কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করেনি। এর অর্থ জন্মাতে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই যে লিঙ-নির্ধারণ পরীক্ষার পর কন্যা-ভ্রুণ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।  স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও মেয়ের বিয়েতে পণের চিন্তায় বাপ-মায়ের এক হত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। 

শিশুশ্রম বেয়াইনি তবু যে কোনো ছোটখাটো খাবার দোকানে গেলেই দেখা যায়, চায়ের গেলাস, খাবারের প্লেট টেবিল থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে বছর দশ-বারোর এক শিশু। - কিরে ইস্কুল যাস না? বড়জোর এই প্রশ্নটি করে আমরা  চলে যাই। আজকাল ফেসবুকে অনেক ছোট ছোট গ্রুপের দাক্ষিণ্যে গরিব শিশুরা পুজো ইত্যাদিতে নতুন জামা, ব্যাগ, টফি, বিস্কুট পায় বটে কিন্তু তাদের অবস্থার সার্বিক উন্নয়ন এতে তেমন কিছু হয় বলে মনে হয় না। স্বাধীন দেশে এই শিশুদের বিকাস হোক সুস্থ পরিবেশে। নানা সরকারি প্রকল্প আছে বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির। সেসব যেন ঠিকমত ঠিক জায়গায় পৌঁছয়। এ বছর রাখি-বন্ধনও পড়েছে এই ১৫ই অগাস্টে। সেইজন্য আমাদের পতাকার তিন রঙ এবং অশোকচক্রের সমন্বয়ে তৈরি রাখির বিক্রি এবার বেশি। ভাই-বোনের এই পবিত্র উৎসবটি সারা দেশের পাশে  এখন বাংলার ঘরে ঘরেও সমান আদৃত। ভায়ের হাতে বোন পরায় রক্ষাকবচ। আর ভাইও নেয় বোনের সুরক্ষার দায়িত্ব। এই সুরক্ষা আজকাল বদলাতে দেখা যাচ্ছে অনার-কিলিং এর দিকে। বোন নিজের পছন্দে ভিন্নজাতি কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে চাইলে কোনো কোনো দাদার দেখা যায় এক ভয়ংকর রূপ। জাতমাহাত্মের গর্বে সে ভাই রাখির বন্ধন ভুলে বোনকে খুন করতেও পিছপা নয়। ৭৩তম স্বাধীনতা দিবসের পর আশা করব  সেই বোনেদের নিজের পছন্দে বিয়ের স্বাধীনতাটুকু আসবে।

 আমরা সবকিছুই ভাবি সরকার করে দেবে বা যে কোনো দুরবস্থার জন্য সরকারকেই দায়ী করি। আমার কি কোনো দায়িত্ব নেই? আমি কি করি আমার বাড়িটুকুর মানবর্ধন ছাড়া? বাড়ির বাইরে বেরোলেই ব্যাস আমার আর কোনো দায় নেই। আমি প্লাস্টিক ফেলব রোজ কিন্তু নর্দমা জমে বৃষ্টির জল উপচোলে স্থানীয় নেতার পিন্ডি চটকাবো। আমার সুন্দর ফ্ল্যাটে বুড়ো বাবা-মা বড়ই বেমানান তাই তাঁদের ঠাঁই  কোথাও নেই। কোনো স্বামী-স্ত্রী বেড়াতে যাবেন দার্জিলিং। অসুস্থ মা কোথায় থাকবেন, বেশি ওঠা-হাঁটা করতে পারেন না। অগত্যা এক প্যাকেট মুড়ি, দু বোতল খাবার জল মাথার পাশে রেখে দরজায় তালা দিয়ে ছেলে আর ছেলের বউ ড্যাং ড্যাং করে বেড়াতে চলে গেলেন। তার পরের অবস্থা সকলেই দেখছি আমরা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours