স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায় ?
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।।
কে বাঁচিতে চায় ?
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।।
কোটি কল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে,
নরকের প্রায়।
দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গ-সুখ তায় হে,
স্বর্গ-সুখ তায়।।…
নরকের প্রায়।
দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গ-সুখ তায় হে,
স্বর্গ-সুখ তায়।।…
কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় এই কটি ছত্রের প্রতিটি শব্দের মাঝে লুকিয়ে আছে নানা কথা। সেই সময়কার প্রেক্ষাপটে । অনুভূতির এই অভিব্যাক্তি কতটা হৃদয় থেকে ঝরে পড়ত সেটা সেই সময়কার সমস্ত লেখক বলা যাক বা কবি। সে যিনিই হন না কেন, দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনের জন্য নিজের নিজের মত করে জাগ্রত করে তুলতেন আপামর মানুষের হৃয়ের মধ্যকার পুরুষকারকে। চেতনার মধ্যেকার বিবেক কে। ১৯৪৭ এ আমরা পেয়েছিলাম কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্ত হয়েছিল দেশ মায়ের পায়ের শিকল। এভাবেই আপামর ভারতবাসী দেশটাকে নিজের বলে চিৎকার করে জানান দিয়েছিল, সেই সদ্য প্রসব হওয়া শিশুটির মত, যে সশব্দে নিজেকে প্রকাশ করে জানায় নিজের অস্তিত্বকে।ঠিক তেমনি করে। কেটে গেছে ৭২টা বছর । ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস এই ১৫ আগাস্ট।
বয়েস ৮২পেরিয়েছে । তখন গোবিন্দদার বয়েস দশ। বাংলাদেশের বরিশালে নিজেদের বাড়ি হলেও,বাবা কর্মসুত্রে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। বাবার বাবা, ভবানিপুরে একটা বাড়ি করেছিলেন। ঠাকুরমার কাছে গোবিন্দদা শুনেছেন। ঠাকুরমাও দেশের বাড়ি বলে কিছু শুনলেও , সেখানে জাননি কোনদিন। একেবারে এদেশীয় বলতে যা বোঝায় ঠাকুমা তাই ছিলেন। তিনি নাকি আবার একটু আধটু স্বদেশিও করতেন। দেশ স্বাধীন হবার পর গোবিন্দদার ঠাকুরমার কাছে নাকি সরকারি তরফে তাম্রপত্র নেবার জন্য কারা সব এসেছিলেন। ঠাকুরমা তাদেরকে না বলে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন , তিনি নাকি দেশের জন্য করেছেন। এর আবার পুরস্কার কিসের ?
দাশুদার চায়ের দোকানে গোবিন্দদার মত প্রনবদাও আছেন,সামান্য ছোট গোবিন্দদার থেকে। অনার বাবাও স্বাধীনতার সময় লড়াই করেছিলেন। কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাম্রপত্র। এরা সবাই বয়েসে প্রবীণ হলেও ,সর্বজনীন দাদা। আমিও মাঝে মধ্যে দাশুদার দোকানে যাই চা খেতে। চা খাওয়াটা বাহানা মাত্র। আসলে ওনাদের তর্ক ও বিতরকের মাঝে কিছু রসদের সন্ধান করতে যাই।
গত কয়েকদিন আগেকার কথা। গোবিন্দদার সঙ্গে প্রনবদার খুব তর্ক। সেই তর্কের মুল বিষয়টা । খুবই স্পর্শ কাতর। গোবিন্দদার কথায় , আবার ফিরে আসুক কোন বিদেশি শক্তি। আমাদের দেশটাকে দখল করে , একটা আইনের শাসন ফিরিয়ে আনুক। প্রনবদার বক্তব্য , আমাদের রাজ্যটাকে দিয়ে সারা দেশের কথা বললে চলবে না। রাজ্যে যেটা চলছে সেটা একেবারেই আইন না মানার পথে চলা কিছু মানুষের তৈরি অরাজকতার রাজত্ব। যেখানে পিস্তল বা ওয়ান শটারের শ্যুট আউট নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। রাজনৈতিক হানাহানিতে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাবার ঘটনা রোজ নামচার বিসয়। উস্কানির রাজনীতির আবর্তে ভেঙ্গে গেছে সামাজিকতার বাঁধন। প্রাণ খুলে কথা বলার গণতান্ত্রিক বিষয়টা সংবিধানের পাতাতেই আটকে গেছে। চাপা ভয়ে থাকতে হয় সব সময়। মন জুগিয়ে চলতে হয় সবাই কে । এমনকি সংবাদ মাধ্যমকেও। তাহলে আর রইলটা কি ?
স্বাধীনতার ৭২ টা বছর পেরিয়ে গেছে। কি উন্নতি হয়েছে এই রাজ্যটার ?
স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় সমস্ত বীর সৈনিকদের অস্ত্র যোগাড় করতে হিমসিম খেতে হত। স্বয়ং নেতাজি বা রাসবিহারি বসুরা বিদেশে ঘাঁটি গেড়ে , ভিক্ষে করে অস্ত্র নিয়ে আসতেন সশস্ত্র সংগ্রামকে পরিচালনা করতে। গত কয়েক বছরে , আমাদের রাজ্যে তো অস্ত্র তৈরি একটা কুটির শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কোথায় বা কোন আন্দোলনে ব্যবহার হচ্ছে এই বেআইনি অস্ত্র ( যদিও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা রাজনৈতিক সৈনিকদের এটি থাকা বাধ্যতা মুলক বলে মনে করে সাধারণ মানুষ। কেননা একমাত্র এটাতেই তো দেখানো যায় বাহুবল।) এলাকায় ক্ষমতা দখল , নয়ত শ্যুট আউট।
গোবিন্দদা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।“ ছোটবেলায় সিংহ বলে মনে করতাম পুলিশকে, আজো তাই মনে করি। কিন্তু যারা আমাদের শাসন করে নিয়ন্ত্রণ করবেন তাদের কি হাল দেখেছ ? আলিপুরে , ইস্লাম্পুরে, আর গত রবিবার টালীগঞ্জে কেমন ঠ্যাঙানি খেল পুলিশ। যাদের রাখা হয়েছে আমাদের নিরাপত্তা দেবার জন্য। তারাই যখন মার খাচ্ছে। তাহলে আর আমরা নিরাপদ কোথায় ? এই বলতে গেলে এখুনি আমাকে বলবে দেশদ্রোহি ? আগের জমানা হয়ে বলত মাওবাদি , এখন বলবে , পদ্মফুলের লোক। কোন প্রতিবাদ কেউ করতে পারবেনা। সঙ্গে সঙ্গে দাদারা এসে পড়বে। মনের মত না হলে হুমকি। নইলে নিরপেক্ষ থাকার ভান করে , পরোক্ষে এমন চমকানি দেবে যে , প্যান্টে এই বয়েসে হিসু করে দিতে বাধ্য হতে হবে।‘’
গোবিন্দদার কথা বেশ ভাবিয়ে তুলল । “এ আজাদি ঝুটা হ্যায়” স্বাধীন ভারতে বলাটা অন্যায় বলে মনে করি আমিও। কেননা আমরা আজ বিশ্বে শৌর্যে , বীর্যে নিজেকে একজন ভারতীয় বলতে গর্ব বোধ করি। কিন্তু নিজেদের অস্তিত্বকে রক্ষা করা বা বাচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমরা যে তিমিরে ছিলাম , এখনও সাধারণ মানুষ সেই তিমিরেই কিছুটা হলেও রয়ে গেছি” । গোবিন্দদারেই কথাগুলি মনের মধ্যে শেলের মত বিঁধছিল । তাই শেয়ার না করে থাকা গেল না।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours