শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

২৫ আগষ্ট "তসলিমা পক্ষ" ঢাকার পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে তসলিমা নাসরিনের  ৫৭তম জন্মদিন পালন করেছে। অতিথি ও  আয়োজকদের বক্তব্য, গান এবং  কবিতা পাঠের মাধ্যমে আলোচিত সমালোচিত নারীবাদী  লেখিকা তসলিমা নাসরিনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি ছিলো চোখে পরার মত। তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন পালন ও  বই পাঠের জন্য আয়োজকদের অন্যতম একজন আমাকে হল রুম ভারা করার ব্যাবস্থা কর দিতে বলেন। আমি বেশ আত্মতৃপ্তি ও আগ্রহের সাথেই দায়িত্বটা নিই। তিনি আমাকে একটি সুনির্দিষ্ট হলের কথা বলেন। আমি "জলবৎ তরলং" মনে করে  এগিয়ে যেতেই হোচট খাই! ব্যার্থ হই। অতপর আমি নিজ দায়িত্বে আরো দুটি হল রুম ভাড়া করার জন্য চেষ্টা চালাই। খবর নিয়েছিলাম ২৫ আগষ্ট দুটি হলের কোনটাই বুকিং ছিলো না। হল কর্তৃপক্ষ আমাকে এডভান্স করতে বলে দুটি হল রুমেই। তসলিমা পক্ষ আমাকে টাকা দিতে বলেনি। ভাবলাম, এডভান্স মানি জমা দিয়ে আয়োজকদের সারাপ্রাইজ দেবো। কিন্তু হল রুম বুকিং দেয়ার  সময় "তসলিমা পক্ষ" শব্দটি উচ্চারণ করতেই  দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিটির মাথায় যেন আসমান থেকে বাজ  পরলো। আমাকে এমন ভাবে দেখতে থাকলেন, যেন আমাকে এই প্রথম দেখা। আর আমি বোধয় কোন অপরাধ করে ফেলেছি। ভিষণ অপরাধ যেন তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন ও তার কবিতা পাঠের  জন্য কোন হল ভাড়া চাওয়া! আামকে বলেন, "শেখ ফরিদ আমি দুঃখিত। বোধয় তোমাকে হল বুকিং দিতে পারছি না।"  আমি তার অসহায়ত্ব  বুঝতে পারলাম। ২য় ব্যাক্তির নিকট আমি আর যাইনি, হল বুকিং নিতে। ফোনও করেনি। 
কেন না, ফলাফল তো একই হওয়ার কথা৷ আমাকেই উল্টো ফোন করেছিলেন। জানতে চাইলেন, আমি কেন হল বুকিং দিচ্ছি না। আমি বললাম, আমাদের তো হল বুকিং দেবেন না আপনারা। প্রতিত্তোরে বলেন, কেন দেবো না? আমি বললাম, আমরা তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন পালন, তার কবিতা ও বই পাঠের আসর করবো। সে জন্য আমি "তসলিমা পক্ষ" নামের সংগঠনের পক্ষে বুকিং দিতে চেয়েছি৷ তারা কয়েক বছর ধরেই ঢাকায় তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন পালন করে আসছে। গত বছরও হয়েছে আমিও তাতে উপস্থিত ছিাললাম। আমার কথা শুনে উচ্চশিক্ষিত মানুষ হয়েও তিনি; যে শব্দটি প্রথমে উচ্চারণ করলেন এবং পরে যে বাক্যটি বললেন  তা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই! আমি "তসলিমা পক্ষ"র সেই অন্যতম  আয়োজকের নিকট আমার ব্যার্থতার কথা জানাই। তবে তিনি অনুরোধ করেন, আমি  আমার ব্যার্থতা ও তার কারন নিয়ে যেন তাসলিমা নাসরিনের জন্মদিন পালন করার আগে কোন কিছু না লিখি। তাতে ২৫ আগষ্ট জন্মদিন পালনে কোন গোষ্ঠী  অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে! 
১৯৬২ সালে ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহে তসলিমা নাসরিনের জন্ম। তার বাবাও একজন ডাক্তার ছিলেন। তসলিমা নাসরিন ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহন করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে। ১৯৯৪ পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজেই কর্মরত ছিলেন। ৮০ র দশকে তিনি কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ,  তসলিমা নাসরিনের  প্রথম স্বামী।৮১ থেকে ৮৮  তাদের সংসার জীবন। ২য় স্বামী বিশিষ্ট  সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান। ৯০ থেকে ৯১ তাদের সংসার জীবন। পুনরায় ৯১ এ  বিয়ে করেন মিনার মাহমুদকে । এ বিয়েও ভেঙে যায় ৯২ সালে। 
তসলিমা নাসরিনের পাঁচটি বই নিষিদ্ধ হয়েছে।  লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, ক, মাতাল তরণী ।এছাড়া "সেই সব অন্ধকার ' বই এর আংশিক নিষিদ্ধ করা হয় ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে। পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট শাসিত রাজ্যেও তসলিমা নাসরিনের বই ২০০৩ সালে নিষিদ্ধ  করা হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সেন্টিম্যান্টে আঘাত লাগবে বলে।
 ৯৩ এ তার 'লজ্জা' উপন্যাস প্রকাশিত হয়৷   ১৯৯২ সালে ৬  ডিসেম্বর  অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে  ভারতে হিন্দু  মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়।  সেই উপজীব্যকে  কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু  সনাতন সম্প্রদায়ের (হিন্দুদের) উপর হামলা ও তাদের মন্দির ভাঙ্গচুর করা হয়। লজ্জা উপন্যাসে সে বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। ৯৩ এ  লজ্জা বইটি প্রকাশ করা হয়। ৯৪ সালে ইসলামপন্থী দলগুলোর চাপে লজ্জা বইটি নিষিদ্ধ হয়।
তসলিমা  নাসরিন মামলার ঝামেলা ও আটক হওয়া এড়াতে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রথমে এক দশক ইউরোপ, আমেরিকা নির্বাসনে থাকার পর সুইডেনের নাগরিকত্ব গ্রহন নেন। তারপর তিনি মাল্টিপল ভিসা নিয়ে ভারতে বসবাস শুরু করেন। ভারতেও তিনি তার লেখা  ও চিন্তা চেতনার কারনে উগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা আক্রান্ত হন। তবে তার লেখা নিয়মিত চালিয়ে যেতে থাকেন।
তার বই এর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়; 
কবিতা গ্রন্থ: শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা, নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে, আমার কিছু যায় আসে না , অতলে অন্তরীণ, বালিকার গোল্লাছুট, বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা, আয় কষ্ট ঝেঁপে জীবন দেবো মেপে, নির্বাসিত নারীর কবিতা, জলপদ্য, খালি খালি লাগে, কিছুক্ষণ থাকো, ভালোবাসো? ছাই বাসো!, বন্দিনী। 
প্রবন্ধ সংকলন
নির্বাচিত কলাম, যাবো না কেন? যাবো, নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প, ছোট ছোট দুঃখ কথা, নারীর কোন দেশ নেই, নিষিদ্ধ, তসলিমা নাসরিনের গদ্য পদ্য, 
উপন্যাসঃ 
অপরপক্ষ শোধ, নিমন্ত্রণ, ফেরা , লজ্জা , ভ্রমর কইও গিয়া, ফরাসি প্রেমিক ,শরম,,
ছোট গল্প ; দু:খবতী মেয়ে, মিনু,।
আত্মজীবনী
আমার মেয়েবেলা, উতাল হাওয়া, ক,  (পশ্চিমবঙ্গে দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত)সেই সব অন্ধকার, আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো প্রিয় দেশ,  নির্বাসন।
তসলিমা নাসরিন উদার ও মুক্তচিন্তা,মত প্রকাশ করার জন্য ; দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন  পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।  
আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার ১৯৯২ এবং ২০০০। , নাট্যসভা পুরস্কার বাংলাদেশ, ১৯৯২
 ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক শাখারভ পুরস্কার , ১৯৯৪ ফ্রান্স সরকার প্রদত্ত মানবাধিকার পুরস্কার, ১৯৯৪ ফ্রান্সের  এডিক্ট অব নান্তেস পুরস্কার, ১৯৯৪ সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল পেন কর্তৃক  কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার, ১৯৯৪  যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক  হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ  কর্তৃক হেলম্যান-হ্যামেট গ্রান্ট সম্মাননা, ১৯৯৪ নরওয়ে ভিত্তিক হিউম্যান  এটিস্ক ফরব্যান্ড কর্তৃক মানবতাবাদী পুরস্কার, ১৯৯৪। 
তসলিমা নাসরিন আইনি জটিলতার কারনে তার সম্পদ  বিক্রি করতে পারছেন না, বা দেশে ফিরতে পারছেন না তা নিয়ে এই লেখা বড় করবো না। 
বই মেলা করার সুবাদে কয়েক মাস আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ  হয়েছিলো আমার। কোন সন্দেহ নেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চায় এ সময়ে এগিয়ে। সেই বিশ্ব বিদ্যালয়ে বই মেলার স্টলগুলোতে  আয়োজকদের দেয়া ব্যানার থেকে "মুক্তচিন্তা " শব্দটি কেটে ফেলে দিয়ে তারপর টাঙ্গায় একটি প্রকাশনা! কোন প্রকাশনা  বিশ্ববিদ্যালয়ের বইমেলাতে "মুক্তচিন্তা "শব্দটি নিষিদ্ধ করে রাখে  ভাবা যায়? তা হলে সারা দেশে মুক্তচিন্তা চর্চার কি অবস্থা তা অনুমান করা কঠিন কাজ নয়।
তসলিমা নাসরিনের লেখা যখন মৌলবাদীদের চাপে  এ দেশে  সরকার নিষিদ্ধ করে। তখন তার পক্ষে অসংখ্য মানুষ ছিলো। বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মিছিলও হয়।  এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনে  আজো তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে  লেখা একটি কবিতা  দেখতে পাবেন ।  সেই  ১৯৯৪/ ৯৫ সাল আর  আজকের ২০১৯ এর কত পার্থক্য কেউ এখন কল্পনাই  করতে পারবে না তাসলিমা নাসরিনের পক্ষে কোথায়ও কেউ একটা মিছিল বা মানব বন্ধন করবে। অথচ ১৯৯৯ সালেও আমার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের উপস্থিতে সরিষাবাড়ি উপজেলায় ( জামালপুর জেলা) তসলিমা নাসরিনের পক্ষে মিছিল করা হয়েছিলো। তসলিমা নাসরিনের বই, বিএনপি  ও আওয়ামী লীগ দুই সরকারের সময়ই নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ করা হয়, কোলকাতায় কমিউনিস্ট পন্থীদের শাসনের সময়েও। যা  অনেকেই বিস্মিত করে।
তসলিমা নাসরিনের যেমন কট্টর বিরোধী ও সমালোচক রয়েছে। তেমনি দেশে, বিদেশে রয়েছে তার অসংখ্য পাঠক। মৌলবাদীদের রক্তচক্ষু ও সরকারের আইনি বাধা  ডিঙিয়ে অনেকেই তাসলিমা নাসরিনের বই কিনছে। অনেকেই বিক্রিও করছে। কোন সভ্য দেশে সাধারনত বই নিষিদ্ধ করাই হয় না!  তা যতই সমালোচনা বা ভিন্ন মত থাকুক।  গনতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত বলে দাবি করা হবে আবার কারো মত পছন্দ না হলে ; তা নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে।  আমি আমার মত প্রকাশ করবো। এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মত বলে তা সঠিক ও বৈধ  ; আর অন্যের মত সংখ্যাগরিষ্ঠের চিন্তাভাবনার সাথে সামঞ্জস্য নয় বলে তার বিরোধীতা করে নিষিদ্ধ করে দেবো। এমনটা গনতান্ত্রিক  চেতনা নয়। ভিন্নমত প্রকাশে  বিরোধীতা  থাকবে তা স্বাভাবিক ।  তবে তা নিষিদ্ধ করা একটি রোগ। এ রোগের নাম ফ্যাসিজম। কোন ব্যাক্তি বা সরকার  যত বেশি ফ্যাসিষ্ট তারা ততবেশি ভিন্নমত দমন করে থাকে। বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন পন্থায়। এমনকি ফ্যাসিস্ট ব্যাক্তি বা রাষ্ট্র ভিন্নমতের বিরুদ্ধে  যুক্তি দিতে না পারলে হত্যা- খুনেও মেতে উঠেতে পারে। ব্যাক্তির ফ্যসিস্ট আচরন বিপদজনক যে কোন স্বৈরশাসকের মতই।  ক্ষমতার লোভ, ব্যাক্তি স্বার্থ, সুশিক্ষার অভাবে মানুষ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে। যে কোন  মৌলবাদী ব্যাক্তিও  স্বেচ্ছাচারী তাতে কোন সন্দেহ নাই।  নিজের মত ও নিজেকেই কেবল শ্রেষ্ঠ ভেবে থাকে। পাশাপাশি যদি সরকার ও রাষ্ট্র স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে। তখন দুর্বল,সংখ্যালঘু, দরিদ্র, ভাবুক ও মুক্তচিন্তার মানুষদের  মত প্রকাশের সুযোগ কমতে থাকে। এমন কি বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে দাড়ায়।
গনতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তা লেখায় হোক বা বলায় প্রত্যেকটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আর গনতন্ত্রে কোন ব্যাক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে সুপিরিয়র ঘোষণা করার সুযোগ নেই। তা দেয়া যাবওে না  কোন শর্তে।  তাহলে জঙ্গল আর সভ্য সমাজের ফারাক থাকে না।
 মজার বিষয় হলো, তসলিমা নাসরিন বিরোধীদের অধিকাংশই তার রচনা পড়েনি। তাকে কেবল পুরুষ নয়, নারীরাও গালি দেয়। আমি এমন কজন নারীকে চিনি যে কখনো গাইড বই ছাড়া নিজের পাঠ্যবইও পড়ে না!  আবার এমন লোককে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। যিনি গত ২০ বছরে একবারও বই মেলা থেকে একটি বই ভুলেও খরিদ করেননি, এমনকি পড়েননিও একটি বই!  তিনিও তসলিমা নাসরিনের সমালোচনায় মুখর। কেন তবে তসলিমার সমালেচক এরা ? এই শ্রেনীর  "সমালোচকদের"  প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায়, "তসলিমা নাসরিন পুরুষের মত খাড়াইয়া মুতে চায়!" "তসলিমা একজন বেশ্যা!"  "পুরুষের মত চারটা বিয়ে করতে চায়!"  "তসলিমা বহুগামী! " "তসলিমা ইসলাম বিদ্বেষী"  এরকম আরে নানা  অভিযোগ করে থাকে যারা, তারা আসলে তার বই পড়েনি।  আরো মজার বিষয় বই পড়তে পারে না তারাও কেউ কেউ তসলিমার কট্টর সমালোচক! এরা আসলে ওয়াজ শুনে শুনে তসলিমা বিরোধী। এই শ্রেনীরা  মাদরাসার হুজুরদের দ্বারা  ছাত্র ছাত্রী  বলৎকারের  কথা শুনলে বলে থাকে ওসব ইহুদী নাসারার টাকা,খেয়ে পত্রিকায় ছাপে!  আর যারা তসলিমার  জশ খ্যাতির কারনে ক্ষুব্ধ,  এবং কিছু বই পড়েছেন; তাদের অভিযোগ, "তসলিমা তৃতীয় শ্রেনীর লেখক, " জশ ও খ্যাতির পুজারি। "যাক তবুও লেখক বলে মেনে নিয়েছে তা ই বা কম কিসে!  আর কেউ যদি খ্যাতি ও জশ কামনা করেও থাকে তাতে কি সমস্যা! জশ ও খ্যাতিও চাওয়া কি অন্যায়? বে আইনি?  আরেক দল বলে থাকে তসলিমা নাসরিন জরায়ুর স্বাধীনতা চায়। তসলিমা  নাসরিন যদি জরায়ুর স্বাধীনতা চেয়েও থাকে তা তাকে দিয়ে  দিন। সমস্যা কোথায়? নারী  যখন মাথা উচু করে কথা,বলে বেগম রোকেয়া বলেছেন, তখন শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে নারীকে থামিয়ে দেয়া হয়। আর তসলিমা বলেছেন, নারী রুখে দাড়ালে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তাকে দাবিয়ে রাখতে বেশ্যা বলা হয়!  আসলে প্রচলিত প্রথা ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বললে, লিখলে, পুরুষতন্ত্র, ক্ষমতাবান ও সংখ্যাগরিষ্ঠের অনেক অজুহাত শঠতা  ধরা পরে। পুরুষতন্ত্র, ক্ষমতাবান ও সংখ্যাগরিষ্ঠ যখন তাদের প্রতিষ্ঠিত চিন্তাচেতনাকে  অনিরাপদ মনে করে। তখন তারা তাদের সলল অস্ত্র প্রয়োগকরে ভিন্নমতকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পরে লেগে যায়। বই  নিষিদ্ধ করে কোন লেখককে নিষিদ্ধ করে এ সময়ে আর কারো লেখা, মত, চিন্তা চেতনাকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।  লেখক, লেখা ও ভিন্নমত যে সমাজে, রাষ্ট্রে  নিষিদ্ধ হয়ে উঠবে। নিঃসন্দেহে সে রাষ্ট ও সমাজে মৌলবাদ ও  স্বৈরাচার জেকে বসবে তার উত্তম উদাহারন আজকের পাকিস্তান  আফগানিস্তান  ও ইরান। মুক্তচিন্তা চর্চা নেই বলে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আজ কেউ  "হায়ার মাদরাসা" বলে চিহ্নিত করেন। অথচ পু্র্বপাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়কে  পাকিস্তানি জেনারেলারাও বলতো  " স্বাধীন দ্বীপ"।  কেন না,সেই পরাধীন সময়েও এ অঞ্চল এত বন্ধ্যা ছিলো না  মুক্তবুদ্ধি চর্চায়। তখন রাষ্ট্র মৌলবাদী ছিলো। সমাজটা ছিলো মৌলবাদ চর্চা বিরোধী। নাচ ছিলো, গান ছিলো, নাটক ছিলো,সাহিত্যা ছিলো, খেলধুলা ছিলো।  
তসলিমা নাসরিন এখন আর একটি ব্যাক্তি নেই। তিনি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে গেছেন।  তসলিমা নাসরিন একটি প্রতিবাদদের নাম। 
তবে সংশয় ও ভয়ের কারন এই যে ১৯৯৩ সালের থেকে ২০১৯ সালের পার্থক্য অনেক। দেশটি ধীরে ধীরে লেখক, লেখা, মুক্তচিন্তার পক্ষে না গিয়ে  দিনে দিনে মৌলবাাদী হয়ে উঠছে।  এই গড্ডালিকা প্রবাহে কেবল পিছিয়ে পরা শ্রেনী নয়। এগিয়ে থাকা শিক্ষিত মানুষগুলোও মৌলবাদিতা ও ফ্যাসিজম ডুবে আছে। একটি সমাজ মৌলবাদ ও স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবে গেলে রাষ্ট্র তাকে টেনে তুলে। কিন্তু রাষ্ট ও সমাজ একসাথে ডুবতে থাকলে কে কাকে টেনে তুলবে?

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours