ভবানী প্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

ভারতবর্ষের  স্বাধীনতা  সংগ্রামে  অগ্রনী  ভুমিকা  ছিল  বাংলা  ও পাঞ্জাবের ! আবার  বাংলার মধ্যে  অবিভক্ত মেদিনীপুর  এবং  ভাগীরথী নদীর  তীরবর্তী   গ্রাম  ও শহর  এবং  অধুনা  বাংলাদেশের  চট্টগ্রাম  এলাকার  মানুষের! সম্ভবতঃ  ভৌগলিক  অবস্হান  এর  মুখ্য  কারন! তবে  পশ্চিম  বঙ্গ  বা  অধুনা  বাংলাদেশের  অনান্য  এলাকার  মানুষ  স্বাধীনতা  সংগ্রামে একেবারেই  ছিল  না  একথা  ঠিক  নয়!  বাংলার  প্রতিটি  প্রান্তের  মানুষের  মনে  তীব্র  দেশাত্মবোধ  যেমন  ছিল, তেমনই  বিচ্ছিন্নভাবে  হলেও  একদল  তরুন তরুনী  দেশমাতৃকার  মুক্তি  সংগ্রামে  ঝাঁপিয়ে  পড়েছিল!
         বাদ ছিল  না  সেই  সময়ের  শাল  পিয়াল  পলাশের  বনভুমতে ঢাকা দুর্গাপুরও , বর্ধমানের  ( অবিভক্ত)   স্বাধীনতা  আন্দোলনের  প্রথম  শহীদ  সুকুমার  বন্দ্যোপাধ্যায়! বর্তমান  পশ্চিম  বর্ধমান  জেলার   কাঁকসার জঙ্গল  মহল  বলে  খ্যাত  কুলডিহা  গ্রামে  তাঁর  পিতৃভুমি! রাখালদাস  বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুশীলাদেবীর  জ্যেষ্ঠ পুত্র!   পিতা  কট্টর কংগ্রেসী   হওয়া  সত্বেও  ছাত্রাবস্হায়  বামপন্হী  রাজনীতিতে  জড়িয়ে  পড়েন! সময়টা  ১৯৩৮  সাল   স্বাধীনতা  সংগ্রামে  উত্তাল  ভারতবর্ষ, অন্যদিকে  শ্রমিকদের   নিদারুন  শোষন চলছে! রুখে  দাঁড়ালেন  তরুন  শ্রমিক নেতা সুকুমার  বন্দ্যোপাধ্যায়! রানীগঞ্জের  বল্লভপুর  পেপার  মিলে  ধর্মঘট  ডাকা  হলো ১৪ই  নভেম্বর  ১৯৩৮, ধর্মঘটের  দ্বিতীয়  দিন  ১৫  ই  নভেম্বর  জোর  করে    ট্রাক  বাইরে থেকে মিলে  ঢোকাতে চেষ্টা করতে চাইলে  ট্রাকের  সামনে  শুয়ে  পড়েন  সুকুমার,  ট্রাক  ড্রাইভার বীর  সিংহ  ট্রাক  থামিয়ে  দিলে, মিলের  চীফ  ইঞ্জিনিয়ার  সুকুমারের  বুকের  উপর  দিয়ে  ট্রাক  চালিয়ে  দিলেন! শহীদ  হলো  কুলডিহার  সুকুমার  বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন তাঁর  বয়স  মাত্র  ২৫  বছর  ,সদ্য  বিয়ে করেছিলেন! সুকিমারের  রক্তে  পরাধীন  ভারতবর্ষের  শ্রমিক  আন্দোলনের  নতুন  ইতিহাস  রচিত  হ'লো!
             দুর্গাপুরে  বহু  তরুন  স্বাধীনতা  আন্দোলনের  সেই  রক্তঝরা  দিন গুলিতে  দেশ মাতৃকার  মুক্তিযুদ্ধে  সামিল  হয়েছিলেন! চট্টগ্রাম  অস্ত্রাগার  লুন্ঠনে  মাষ্টারদা  সূর্য সেনের  সহযোগী  রাজেশ্বর  চক্রবর্তী, যদিও  তাঁর  আদি  নিবাস  ছিল  চট্টগ্রামে,! তিনি  বহু  বছর  দুর্গাপুরবাসী !
 
               উখরার  সুকুমার  বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশীল  ঘটক, গিরিজা  প্রসাদ,সুধীর  রুদ্র, ধবনী  গ্রামের  হাজারীলাল  মুখোপাধ্যায়  প্রমুখ  একঝাঁক  তরুন  স্বাধীনতা  আন্দোলনের  অগ্নীমন্ত্রে  দীক্ষিত  হয়েছিলেন! ভিরিঙ্গী  স্কুলের  শিক্ষক  রামবন্ধু  পট্টনায়েক! তিনি  ছাত্রদের  স্বাধীনতা  আন্দোলনে  উদ্বুদ্ধ  করতেন! তাঁর  অনুপ্রেরনায়  এক  ঝাঁক ছাত্র   ঝাঁপিয়ে  পড়ে  ছিলেন  স্বাধীনতা  সংগ্রামে! হাজারীলাল  তাঁর ছাত্র  ছিলেন !  " মাদক ও বিলাতী  দ্রব্য  বর্জন " আন্দোলনে অংশ  নেওয়ায়  গ্রেপ্তার  হন  হাজারীলাল! ১৯৪২  সালে  " ভারত  ছাড়ো " আন্দোলনে  যোগদান  করায়  ৬৩  দিন  কারাবরন  করেন  তিনি!ধবনী  গ্রামের  আর  একজন  স্বদেশী  ছিলেন  বিশ্বনাথ  মুখোপাধ্যায়!

           দুর্গাপুর  মহকুমার  আর  একজন  স্বাধীনতা  সংগ্রামীর  কথা  না  বললে  অসম্পু্র্ন  হবে  এই  দুর্গাপুরের  স্বাধীনতা  আন্দোলনের  ইতিহাস! তিনি  মানকরে  সন্নিকটে  মাড়ো  গ্রামের  পাঁচকড়ি  সরকার! তিনি ছাত্রাবস্থায়  বিপ্লবীদের  খবর  ও চিঠি  আদান  প্রদান  করতেন! পরে  স্বামী  বিবেকানন্দের ভাই  ভুপেন্দ্রনাথ  দত্তের  সংস্পর্শে  আসেন  এবং  ' অনুশীলন  সমিতি' তে  যোগ দেন! পরে " ভারত ছাড়ো " আন্দোলনে  যোগ  দিয়ে  কারাবরন  করেন! তিনি  কিছুদিন  নেতাজী  সুভাষ চন্দ্রের  সহযোগীরূপে   কাজ  করার  বিরল  সৌভাগ্যের  অধিকারী  ছিলেন!
 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours